American Concrete Institute (ACI) আয়োজিত ‘কংক্রিট প্রজেক্ট কম্পিটিশন ২০২১’-এ সেরাদের সেরা হয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের একদল শিক্ষার্থী। স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের এই প্রতিযোগিতায় প্রথমবারের মতো সেরা তিনটি পুরস্কার অর্জন করেছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় – চুয়েট এর শিক্ষার্থীরা।
[the_ad_placement id=”body”]
প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছে পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের তিনটি দল। এর আগে কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সবগুলো পুরষ্কার অর্জন করার কৃতিত্ব দেখাতে পারেনি বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। সনদ ছাড়াও পুরস্কার হিসেবে তারা পাবে মোট ১৫০০ ডলার। বিখ্যাত ‘কংক্রিট ইন্টারন্যাশনাল ম্যাগাজিন’-এর পরবর্তী সংখ্যায় তাদের কাজ নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদনও প্রকাশিত হবে।
চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক জি এম সাদিকুল ইসলাম বলেন, ‘শুধু চুয়েটের জন্য নয়, এটা গোটা দেশের জন্যই গৌরবের বিষয়। এই প্রতিযোগিতায় এর আগে বাংলাদেশ থেকে কেউ পুরস্কার পায়নি। আর এবার অন্য কোনো দেশে পুরস্কার যায়নি।
কারণ, মূল্যায়নের সময় কোনো নাম-ঠিকানা ছিল না, শুধু শিক্ষার্থীদের কাজটাই দেখতে পেরেছেন বিচারকরা। তিনি আরো যোগ করেন, ‘এই প্রতিযোগিতার গুরুত্ব বোঝার জন্য আরেকটা তথ্যের উল্লেখ করা দরকার।
সেটা হলো, দীর্ঘদিন পর চলতি বছর আমাদের জাতীয় ইমারত নির্মাণ বিধিমালা সংশোধন করা হয়েছে। এই বিধিমালার সিংহভাগই আমেরিকান কনক্রিট ইনস্টিটিউটকে ফলো করে করা।’ ১৯০৪ সালে গঠিত হয় আমেরিকান কনক্রিট ইনস্টিটিউট (এসিআই)। যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানভিত্তিক সংগঠনটির সদস্য বিশ্বের প্রায় ১২০টি দেশ।
[the_ad_placement id=”body”]
সংগঠনটি প্রতিবছর সদস্য দেশগুলোর শিক্ষার্থী ও গবেষদের মধ্যে কনক্রিট প্রজেক্ট কম্পিটিশানের আয়োজন করে। মার্চে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গবেষণাপত্র আহ্বান করা হয়। আঞ্চলিক পর্যায়ে যাচাই-বাছাই শেষে নির্বাচিত প্রজেক্টগুলো পাঠানো হয় মূল প্রতিযোগিতায়। বাংলাদেশ থেকে এবার চারটি প্রজেক্ট লড়েছে সেখানে। এর মধ্যে তিনটিই পুরস্কার পেল।
মোট দুই ধাপে অনুষ্ঠিত চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল গেল ২১ মে। শেষ হয়েছে ২৬ জুলাই। মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) প্রকাশিত হয়েছে চূড়ান্ত ফল। সেখানে ১২০টি দেশের প্রতিযোগীদের হারিয়ে বাজিমাৎ করেছে বাংলাদেশ।
পুরো প্রতিযোগিতায় হয়েছে অনলাইনে। মূল্যায়ন করা হয়েছিল ‘ব্লাইন্ড’ পদ্ধতিতে। মানে মূল্যায়নের সময় প্রতিযোগী এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা জানতেন না বিচারকরা। প্রতিযোগিতায় নিয়ম ছিল, ‘শিক্ষার্থীরা তাদের গবেষণাকর্মের দুটো অনুলিপি পিডিএফ ফরম্যাটে পাঠাবে। দ্বিতীয় কপিতে শিক্ষার্থী কিংবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা কিছুই উল্লেখ থাকবে না। এই কপিটিই বিচারকদের কাছে যাবে।’
অ্যা ক্রিটিক্যাল রিভিউ অন দ্য পারফরম্যান্স অব মাইক্রোবায়াল কনক্রিট ডেভেলপড ইউজিং ই. কলি ব্যাকটেরিয়া শিরোনামের প্রজেক্টের জন্য প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজুল ইসলাম ও ইমতিয়াজ ইবনে গিয়াস। তাদের উপদেষ্টা ছিলেন একই বিভাগের অধ্যাপক মঈনুল ইসলাম।
প্রথম রানার আপ হয়েছেন এজাজ আহমেদ ও সৈয়দ মারুফ-উল হাসান। তাদের প্রজেক্টের শিরোনাম, ইফেক্ট অব কমপেকশন অন দ্য প্রপার্টিজ অব ইকো ফ্রেন্ডলি বিল্ডিং ব্লক ইউজিং ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাইপ্রোডাক্টস।
[the_ad_placement id=”body”]
দ্বিতীয় রানার আপ হয়েছেন জান্নাতুল ফেরদাউস ও তাবাচ্ছিমা ফারিয়া। তাদের প্রজেক্টের শিরোনাম, ‘টারনারি কম্বিনেশন অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়েস্টেজ ফর সাইটেইনেবল জিওপলিমার মরটারস। এই দুটি দলের উপদেষ্টা হিসেবে ছিলেন অধ্যাপক জি এম সাদিকুল ইসলাম।
প্রথম পুরস্কার পাওয়া মাহফুজুল বললেন, ‘মাইক্রোবিয়াল কনক্রিটের অগ্রগতি বাংলাদেশের নির্মাণ ক্ষেত্রের গবেষণার নতুন একটি বিষয়। গবেষণাকালে অধিকতর শক্তিশালী ও টেকসই কংক্রিট তৈরির লক্ষ্যে ই-কোলি ব্যাকটেরিয়াল স্ট্রেন ব্যবহার করেছি যা ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ফাটল নিরাময়ে সহায়ক।’
দ্বিতীয় পুরস্কার জয়ী দলের সদস্য এজাজ আহমেদ বলেন, ‘ইটভাটাগুলো একদিকে যেমন বিপুল পরিমাণে ক্ষতিকারক গ্যাস নিঃসরণ করছে পরিবেশে, অন্যদিকে ইট তৈরির কাঁচামাল জোগান দিতে চাষাবাদযোগ্য উর্বর জমি নষ্ট হচ্ছে।
তাই আমাদের উদ্দেশ্য ছিল কয়লাকেন্দ্রিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফ্লাইঅ্যাশ এবং অন্য বড় বড় শিল্প-কারখানা থেকে উৎপন্ন আবর্জনাকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে পরিবেশবান্ধব ইট তৈরি করা সম্ভব সেটা দেখা।’
[the_ad_placement id=”content”]
আরেকজন প্রতিযোগী জান্নাতুল ফেরদাউস বলেন, ‘নির্মাণশিল্পে সিমেন্টের পরিবর্তে শিল্পবর্জ্যের ব্যবহার নিশ্চিতকরণই ছিল আমাদের গবেষণার লক্ষ্য।’ এ বিষয়ে অধ্যাপক সাদিকুল ইসলাম বলেন, এখানে বিজয়ী হয়ে আমরা প্রমাণ করলাম বাংলাদেশ থেকেও ভালো গবেষণা করা সম্ভব। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এগিয়ে এলে এ ধরনের গবেষণার বাস্তব প্রয়োগ সম্ভব।
ইঞ্জিনয়ার’স ডায়েরি পরিবারের পক্ষ থেকে বিজয়ীদের আন্তরিক অভিনন্দন।