আমেরিকার উন্নতির পেছনে একটা বড়ো অবদান রাখে বিদেশি তরুণরা। আমেরিকার বড়ো বড়ো বিশ্ববিদ‍্যালয়গুলোতে ভারতীয়, চাইনিজ, কোরিয়ান, ল‍্যাটিন আমেরিকার ছেলে-মেয়েদের জয়জয়কার।

ভারতের ছাকা-ছাকা মেধাগুলো আমেরিকায় কাজ করে। চীনের সবচেয়ে ট‍্যালেন্টেড স্টুডেন্টগুলো আমেরিকা-কানাডা কিংবা ইউরোপের ল‍্যাবরেটরিগুলোতে কাজ করে।

শুধু ভারত-চীনের দশ লক্ষের বেশি স্টুডেন্ট আছে আমেরিকায়। এই ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্টগুলো যখন দিন-রাত শ্রম দেয়ে, সেটা শেষ পর্যন্ত আমেরিকারই লাভ হয়। তাদের গবেষণা সংস্কৃতি সমৃদ্ধ হয়। তাদের উদ্ভাবন সংস্কৃতি শক্তিশালী হয়। অর্থনীতিতে একটা বড়ো প্রভাব পড়ে।

আমাদের দেশটা যদি বৈশ্বিক চ‍্যালেঞ্জ নিতে চায়, যদি অপ্রতিরোধ‍্য হতে চায়, তাহলে বিশ্ববিদ‍্যালয়ের ক‍্যাম্পাসগুলোকে আরো আন্তর্জাতিক করতে হবে।

দেশের পাবলিক-প্রাইভেট স্কুলের ক‍্যাম্পাসগুলোতে ভারত, চীন, শ্রীলংকা, নেপাল, ভূটান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার সহ বহু দেশের স্টুডেন্টদের আগমনের উপযোগী করতে হবে। সারা দুনিয়ার শিক্ষার পরিবেশটাই এখন আন্তর্জাতিক। শিক্ষাঙ্গনে যখন অন‍্যদেশের স্টুডেন্টদের স্বাগত জানানো হবে, তাতে দেশের শিক্ষা-গবেষণা ও উদ্ভাবনের সংস্কৃতিতে অনেক বড়ো প্রভাব পড়বে। দেশেরই লাভ হবে।

আমরা বিদেশ থেকে মেধাবী স্টুডেন্ট আনবো। মেধাবী শিক্ষক আনবো। আমাদের তরুণদের মধ‍্যপ্রাচ‍্য ও ইউরোপে শ্রমিক হিসেবে পাঠিয়ে যদি কর্পরোট জবের জন‍্য ভারত-শ্রীলংকা থেকে লোক এনে দেশ ভর্তি করি, তাহলে ভবিষ‍্যত অন্ধকার! বিদেশি মেধাবী স্টুডেন্টদেরকে স্বাগত জানালে, তাদের সংস্পর্শে দেশের বহু তরুণ সৃষ্টিশীল হয়ে উঠবে। বহু তরুণের ভাবনার জগৎ পরিবর্তিত হবে।

বিদেশ থেকে নিয়মিত গবেষকদের এনে সেমিনার করতে হবে। তারা এসে তরুণদের ভাবনার জগতে স্ফূরণ ঘটাবে। গিনিস রের্কডের পেছনে একশো কোটি টাকা খরচ করে কোন লাভ নেই। এগুলো দুনিয়ার কেউ মনে রাখে না। কেয়ার করে না। ভারতের যে কয়েক শত গিনিস রেকর্ড আছে, সেগুলোর একটাও কী আপনার জানা আছে? —নাই। কিন্তু ভারত যে চন্দ্রাভিযান করেছে, সেটা সারা দুনিয়ার মানুষ জেনেছে।

ক‍্যাম্পাসগুলোকে আন্তর্জাতিক করার প্রধাণতম শর্ত হলো, ক‍্যাম্পাসে স্থিতিশীলতা। সেশন-জট মুক্ত ক‍্যাম্পাস। উন্নত মানের গবেষণার সূচনা। বিশ্ববিদ‍্যালয়ের জন‍্য বাজেট বৃদ্ধি। বিশ্ববিদ‍্যালয়ের পাঠ-পরিক্রমা আন্তর্জাতিক মানের করা। দেশের শিক্ষকদের পাশাপাশি বিদেশের শিক্ষক-গবেষকদেরও খণ্ডকালীন বা স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেয়া। এগুলো হলে একেবারে মৌলিক বিষয়। পঞ্চাশ বছরে এই মৌলিক বিষয়গুলোরই সূচনা হয়নি! আফসোস!

ভারত থেকে শিক্ষক আনেন। গবেষক আনেন। মেধাবী ছেলে-মেয়েদের আসতে আকৃষ্ট করেন। তারা এদেশে পড়াশুনা করে চাকরি করুক। কিন্তু কর্পোরেটের চাকরীর জন‍্য লক্ষ এমপ্লয়িকে এনে, দেশের ছেলে-মেয়েদের কে বিসিএস মুখী হতে বাধ‍্য করাটা একটা অন্ধকার ডেকে আনা।

দেশের তরুণদের বেকার করা, একটা অস্থিরতার লক্ষণ। বিশ্ববিদ‍্যালয়ের শিক্ষাকে কর্মমুখী না করলে, এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি মিলবে না। ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করেও বহু ছেলে-মেয়ে বেকার হয়ে যাচ্ছে। সংখ‍্যা হয়তো আরো বাড়বে। ইউনিভার্সিটি থেকে ডিগ্রি নিয়েও অসংখ‍্য স্টুডেন্ট যে কায়িক শ্রমজীবি হয়ে যাচ্ছে—সেটা কী আমাদেরকে নাড়া দেয়? সেটা কী আমাদের নীতি-নির্ধারকরা ভাবে?

Rauful Alam,

পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চার, নিউইর্য়ক, যুক্তরাষ্ট্র।