“কেন্দ্রীয় ভর্তিপরীক্ষায় সম্মত ঢাবি-রাবি-জাবি-চবি-বুয়েট”!

এইটা একটা disastrous সিদ্ধান্ত হতে যাচ্ছে। অনেক কারণ আছে। বিস্তারিত অন্য একদিন বলব তবে সহজ দুইয়েকটা কথা না বলে পারছি না। এত বড় একটি সিদ্ধান্ত এত তড়ি ঘড়ি করে নেওয়া কি ঠিক? আমাদের ভিসিরা কি সত্যি ছাত্রদের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন নাকি উপরের মানুষকে খুশি করতে রাজি হয়েছেন?সিদ্ধান্তটা যদি শিক্ষকরা অনেক চিন্তাভাবনা করে নিচ থেকে আলোচনা করে উপরে যেত তাহলে একরকম হতো। এখন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার মত হয়ে গিয়েছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি সাধারণ দৃষ্টিতে কেবল ছাত্রদের আপাত কষ্টের বিষয়টি ডেকেছেন। আমরা যারা শিক্ষক আমাদেরতো আরো তলিয়ে ভাবা উচিত।

১. একজন ছাত্র এখন একটি ভর্তি পরীক্ষা দিবে। ওই দিন কোন কারণে শরীর খারাপ থাকলে বা অন্য কোন কারণে কেন্দ্রীয় পরীক্ষা দিতে না পারলে ওই ছাত্রের ভবিষ্যৎ কি?

২. অভিন্ন বা সমন্বিত নামটি আপাত যত সুন্দরই লাগুক না কেন এবং ছাত্রদের দুঃখ দুর্দশা লাঘবের একটি বহিরাবরণ থাকুক না কে এর ভেতরে ছাত্রদের দঃখ কষ্ট বরং আরো বাড়বে যে কোন কারণেই হউক ওই একটি পরীক্ষা কোন কারণে খারাপ হলে ওই ছাত্রের ভবিষ্যৎ কি? প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা ভর্তি পরীক্ষা তার অপসন থাকে।

৩. এত বড় কলেবরে পরীক্ষা নেওয়ার মত সক্ষমতা কি আমাদের আছে? এর নিয়ন্ত্রণে কে থাকবে? বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষকদের কার কি রোল থাকবে। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কতজন এর সাথে সম্পৃক্ত থাকবে?

৪. প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার সম্ভবনা বাড়বে এবং ফাঁস হলে এর ক্ষতিটা হবে ব্যাপক।

৫. ইউজিসি হলো দুর্নীতির আঁতুরঘর। মনে আছে মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁসের সাথে ইউজিসির কর্মকর্তারা জড়িত ছিল? ইউজিসির সদস্যরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির খবর মাঝে মাঝেই পাই। তাদের হাতে তদারকির ক্ষমতা গেলে সর্বনাশের মাথায় বাড়ি।

৬. সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ক্লাস বিভাজন আরো প্রকট হবে। অলিখিতভাবেই ছাত্রদের প্রথম পছন্দের জায়গা দ্বিতীয় পছন্দের জায়গা ইত্যাদির একটি ক্রম তৈরী হয়ে যাবে এবং এর ফলে সমাজে এর একটি নেতিবাচক প্রভাব পরতে পারে।

৭. কিছুদিন আগে সরকার এবং ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপর অভিন্ন শিক্ষক নিয়োগ এবং প্রমোশন নীতিমালা চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। সেটা আমরা আন্দোলনের মুখে থামাতে সক্ষম হয়েছি। ওখানে ব্যার্থ হয়ে এবার নিয়ে এসেছে অভিন্ন ছাত্র ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে।

– কামরুল হাসান মামুন
অধ্যাপক
পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়