কয়েকদিন আগে বুয়েটের কম্পিউটার সাইন্স বিভাগের এক শিক্ষার্থীর থিসিস ডিফেন্সের বহিরাগত পরীক্ষক হিসাবে জ্যুমে যুক্ত ছিলাম। এই থিসিস সুবাদেই জানতে পারি বাংলাদেশে গ্রাফ থিওরিতে একজন বিশ্বমানের গবেষক আছেন। উনার নাম অধ্যাপক সাইদুর রহমান।

১৭৭৫ সালে কোনিগসবার্গ এর সেভেন ব্রিজ প্রব্লেম সল্ভ করতে গিয়ে লিওনার্ড ইউলার গ্রাফ থিওরির জন্ম দেন। এরপর প্রায় ২০০ বছর এটি ডিসক্রিট গণিতের অংশ হিসাবে রয়ে যায়।

১৯৯৯ সালে হাঙ্গেরিয়ান গবেষক বাড়াবাসীর হাত ধরে প্রথমবারের মত একজন পদার্থবিদের হাত ধরে একটা প্যারাডাইম শিফট হয়। তখন থেকে গ্রাফ থিওরি নতুন নাম “কমপ্লেক্স নেটওয়ার্ক থিওরি” হিসাবে ব্যাপক পরিচিটি লাভ করতে থাকে।

২০১৫ থেকে আমিও আমার ছাত্রদের নিয়ে নেটওয়ার্ক থিওরির ওপর কাজ শুরু করি। তখন থেকে ভাবতাম এই বিষয়ে বাংলাদেশে আমি বুঝি একাই কাজ করি।

অধ্যাপক সাইদুর রহমানের কাজ দেখে আমি মুগ্ধ। বাংলাদেশে বসে ক্লাসিক্যাল গ্রাফ থিওরি নিয়ে কেউ কাজ করছে এইটা জেনে আমার যে কি ভালো লেগেছে বলে ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।

ছাত্রীটির নাম সুজয় দাস। সে আসলে কাজ করেছে নেটওয়ার্ক থিওরি ও ক্লাসিক্যাল গ্রাফ থিওরির ইন্টারফেসে। সুজয় বাংলাদেশের স্টক মার্কেট এবং সিডরে ক্ষতিগ্রস্তদের যারা কাজ করছে সেই সাহায্য সংস্থাদের ম্যাপ করে নেটওয়ার্ক তত্বের মাধ্যমে বিষয়টাকে বোঝার চেষ্টা করেছে।

কাজটি কেবল তত্ব না বরং একই সাথে রিয়েল ডাটা নিয়ে কাজ করাও যা বেশ জটিল। এই জটিল কাজটি সুজয় দাস এবং অধ্যাপক সাইদুর রহমান বাংলাদেশে বসে করেছে।

অধ্যাপক সাইদুর রহমানের গবেষণা পত্র এবং সাইটেশন সংখ্যা প্রমান করে উনি একজন বিশ্বমানের গবেষক।

গ্রাফ থিওরির ওপর উনার একটি বইও সিঙ্গাপুর based ওয়ার্ল্ড সাইন্টিফিক প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। গ্রাফ থিওরি ও কমপ্লেক্স নেটওয়ার্ক থিওরি এখন একটি ইন্টারডিসিসিপ্লিনারি গবেষণা ফিল্ড।

এই ফিল্ডে পদার্থবিদ, কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট, ইকোনোমিস্ট, সোসিওলজিস্টসসহ অনেক বিষয়ের গবেষকরা মিলেমিশে বা আলাদাভাবে কাজ করছে।

লেখকঃ কামরুল হাসান মামুন
অধ্যাপক
ঢাবি