উগান্ডার চেয়ে তিন পয়েন্ট কম পেয়ে বাংলাদেশ মোবাইল ইন্টারনেট গতিবেগে ১৪০ দেশের মধ্যে ১৩৬ তম হয়েছে। পিছন থেকে ৫ম।

বাংলাদেশের পক্ষে মোবাইল ইন্টারনেটে ভালো করা সম্ভব না।

মাত্র তিন বা পাচ মেগা হার্জ তরংগ দিয়ে ফোর জি নামে যা চালানো হয় তা আসলে প্রথম প্রজন্মের ত্রিজি। ১ম প্রজন্মের ত্রিজিতে ৫, ২য় প্রজন্মে ১০ আর তৃতীয় প্রজন্মের ত্রিজিতেও ১৫ মেগাহার্টজ তরংগ ব্যবহার হয়।

ছবিতে দেখুন গড় ল্যাটেন্সি ৩৮ মিলি সেকেন্ড, একটা আদর্শ ত্রিজি নেটওয়ার্ক এ গড় ল্যাটেন্সি ১৫ থেকে ২০ মিলি সেকেন্ড থাকে। ফোরজি তে এটা ১০ থেকে ১৫ আদর্শ। বাস্তবে কিছু কম থাকে, তবে ৩৮ কোন ভাবেই ভালো মান নয়।

৩৮ মিলিসেকেন্ড গড় ল্যাটেন্সি দিয়ে ফোরজি নামে যা বিক্রি হচ্ছে তা টেকনোলোজির ব্যবহৃত ইকুইপমেন্টের দিকে থেকে ফোরজি হতে পারে, তবে মানের দিক থেকে ফোরজির মর্যাদা পেতে পারে না। এটা গ্রাহক ঠকানোর মাধ্যম।

১৮ কোটি দেশের মানুষকে কোন অপারেটর ঠিক কয়টা বেজ ষ্টেশন দিয়ে ফোরজি সেবা দিচ্ছে? এক্সেসিবিলিটি, রিটেইনেবিলিটি, ইন্টেগ্রিটি, আপ্লিংক-ডাউনলিংক স্পীড এগুলার কোন রেগুলেটরি কেপিআই আছে?

এখন এর দায় কাদের! মূলত সরকারের। স্পেকট্রাম বরাদ্দের পলিসি যারপর নাই ভুল। দ্বিতীয়ত, বিটিয়ারসির- যোগ্য লোকের বড় অভাব। তৃতীয়ত- কোম্পানি গুলোর, কম বিনিয়োগ করেই লাভ হাতানোর ধান্ধা, কোন অপারেটরের সরকারের লেজুড়বৃত্তি এবং স্পেক্ট্রাল প্ল্যানিং টেকনিক্যালি চ্যালেঞ্জ না করা।

তরংগ লাইসেন্স ফি এশিয়ার মধ্যে প্রায় সর্বোচ্চ। তাই কেউ বেশি বিনিয়োগ করতে চায় না। উন্নত সেবা দিতে বেশি তরঙ্গ কেনা বাধ্যতামূলক না। কারণ তরঙ্গ কম দামে বিক্রি করে, বেশি তরঙ্গ দিয়ে ভাল সার্ভিস দিয়ে সেখান থেকে রেগুলেটরি ট্যাক্স ও ভ্যাট আদায়ের পলিসি নাই।

বেঞ্চ মার্ক ও মানের বাধ্যবাধকতা নেই বলে তাই খুরুচে স্পেকট্রাম কিনে না অপারেটররা। অন্যদিকে স্পেকট্রাম আজে বাজে জায়গায় বরাদ্দ করে ইউজলেস ফেলে রাখা আছে। দেড়, তিন বা ৫ মেগা হার্টজ তরংগ দিয়ে ফোরজি চলে না। ত্রিজি চালাতেও নূন্যতম ৫ জি লাগে। (ভোডাফোনে আমরা ৭০ মেগাহার্টজ নিয়ে কাজ করি। সাথে আরো আসছে ২৫ মেগা, যার পাইলট চলছে।)

বিষয়টা এমন, আপনি আধা বা এক লেইনের রাস্তা বানিয়ে করে সেগুলোকে সিংাপুরের কানাডার অথবা ইউরোপের রাস্তার মত উন্নত দাবি করছেন।

বিটিআরসির কোন নিয়মিত বেঞ্চ মার্কিং নাই। যদিও উক্লা স্পীড টেস্টের মত ফ্রি ক্লাউড বেঞ্চমার্ক ব্যবস্থা রয়েছে, সেগুলাও ফলো করে কিছু রেগুলেটরি নির্দেশনা আনার বাধ্যবাধকতা নাই।

বেঞ্চমার্ক কেপিয়াই স্টান্ডার্ড করতে হলে বেশি তরংগ বরাদ্দ করা লাগবে, তার আগে দুটা জিনিস লাগবে। তরংগ ফাকা করতে হবে, দাম কমাতে হবে। বাংলাদেশের তরংগ বরাদ্দ ব্যবস্থা নিকৃষ্টতর। সব হাবিজাবি কোম্পানিকে তরংগ দিয়ে বসে আছে যার কোন কাজ নাই।

অর্থাৎ স্পেক্ট্রাম প্ল্যানিং ঠিক নাই। আন্ডার টেবিল নেগোসিয়েশানের ধান্ধাটা যদি সব জায়গায় বহন করা হয়, তাইলে এসব প্ল্যানিং ফ্ল্যানিং আর বেঞ্চমার্ক করার দরকারটা কি!

সাধারণ নিয়ম হচ্ছে, যে কোম্পানি স্পেক্ট্রাল এসেট বেশি ব্যবহার করবে অর্থাৎ বিনিয়োগ করবে তাদের ট্যাক্স বেনিফিটটা বেশি দিতে হবে। বাংলাদেশের পলিসি ঠিক উলটা।

টেলিটক স্পেকট্রাল এসেট নষ্ট করছে। অন্য কোম্পানির কেউ কেউ মফঃস্বল শহরে/উপজেলায় নামমাত্র ২-৪টা সাইট দিয়ে টেকনোলোজি অন-এয়ার করে বিপননে নেমে পড়েছে। অথচ ফোরজি কভারেজ কোন বছরে দেশের কত শতাংশে উন্নীত করতে হবে, স্পীড ক্যাপাসিটি ও ড্রপ বেঞ্চ মার্ক কি হবে- এগুলার কোন বালাই নাই।

সকাল বিকাল জিবি বেচার ধান্ধায় ব্যস্ত কোম্পানি গুলো, সরকার ব্যবস্থা টুপাইস খাওয়া আর রাজস্ব নিয়ে। পত্রিকা গুলা ব্যস্ত বিজ্ঞাপনের আয় নিয়ে। গ্রাহক ছাড়া সবাই হ্যাপি।

দেশের ডুউইং বিজনেস সূচক যে ১৬৮ তার দিকে কারো নজর নাই, প্রধানমন্ত্রী বিদেশীদের বলবেন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করো, আর হুড় হুড় করে সবাই এসে পড়বে?

দেশের বেসরকারি বিনিয়োগ যে ব্যাংকিং-ঋণ, জ্বালানি-বিদ্যুত, জমি-অফিস, ইন্টারনেট এক্সেস অবকাঠামো, পেমেন্ট সার্ভিস-অর্থ সালিশি, ইন্টারনেটের দামের মত কৌশলগত বাঁধার কারনে বাড়তে পারছে না, সেটা এনালাইসিস করার কোন তাড়া আছে কি?

পাপ্পানা ভাইকে দিয়ে বিজয় নামের বাংলা ফন্টের সফটওয়্যার বানানোর কাজ করিয়ে তার টাকা মেরে দেয়া লোক, মাছ ব্যবসায়ী, নাটকের অভিনেত্রী আর এডভোকেট এই চার পেশার লোক গত এক যুগে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী হইসে।

অথচ ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে ছাত্রলীগ করা সুনামধারী বড়ভাই ইঞ্জিনিয়ারদের অভাব নাই। যাই হোক, এগুলারে দিয়ে নিকৃষ্ট তালিকায় ৫ এ না থেকে যে এক এ আসেন নাই তাতেই শুক্রিয়া।

উগান্ডা ১৩৩ তম!

শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রকল্প উদ্ভোদন আর সংবাদ সম্মেলন করেই দেশ ডিজিটাল হয়ে গেছে দাবি করেন। সেটা আবার ডিজিটাল সিকিউরিটি কালো আইনের জাস্টিফিকেশানও।

আন্ধার দেশে লাইট বিক্রি খুব সহজ মেডাম! এতে আন্তর্জাতিক বেঞ্চ মার্কিং এ নিজেদের কুৎসিত চেহারাটা ঢাকা যায় না!

ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীর মধ্যে এমন পশ্চাৎপদ এক দেশ যেখানে ব্রডব্যান্ডের গ্রাহক মোট ইন্টারনেট গ্রাহকের সম্ভবত ৪%

অর্থাৎ দেশের ১৮ কোটি মানুষের মধ্যকার ইন্টারনেট ব্যবহার কারীরা ব্যক্তি, কর্ম ও ব্যবসার জন্য মোবাইল ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল। এমন একটা দেশ ডিজিটাল টেকনোলজির সান্ডে মান্ডে ক্লোজ করে বিশ্বে রোল মডেল হইয়া গেসে শুনতে কি ভালো লাগে! বলদের সুখ মনে মনে!

– ফাইজ তাইয়েব আহমেদ
ভোডাফোন, নেদারল্যান্ড