দেশে রিসার্চের অগ্রগতি এবং সম্ভাবনা কতটুকু?
প্রসংগ- রিসার্চ প্রতিষ্ঠান (সরকারী এবং বেসরকারী)
ডিসক্লেইমার- এটা রিসার্চ এনালাইসিস নয়। অনেক বছরের দৌড়ঝাঁপের আলোকে ব্যক্তিগত নির্মোহ এনালাইসিস । ব্যতিক্রম সব জায়গায় আছে এটা মনে রেখে পড়বেন।
দেশে বেসরকারী রিসার্চ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান হচ্ছে আইসিডিডিআরবি। সরকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিএসআইআর, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব বায়োটেকনোলজি, এটমিক এনার্জি কমিশনের আন্ডারের ল্যাব, বারি (কৃষিক্ষেত্রে) অন্যতম।
আইসিডিডিআরবি’র জন্ম ১৯৬৫ সালে। শুরু থেকে এটি সরকারী সাপোর্ট পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে আসছে। এটা আমেরিকার আর্মি প্রতিষ্ঠান এবং তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের কলাবোরেশনে (সিয়েটো চুক্তি) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
আমেরিকান সৈন্যরা বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ করতে গিয়ে পেটের পীড়ার সমস্যা ভুগে। এর সমস্যা সমাধানে খাবার স্যালাইনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য মূলত এই প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়েছিল। এরপর এটি অন্যান্য সংক্রমিত রোগ নিয়ে কাজ করেছে যা মূলত ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল নির্ভর। পিওরলি বেসিক রিসার্চ মুখ্য নয়।
এই প্রতিষ্ঠানের মতলবে রিসার্চ অফিসার হিসেবে এক বছর কাজ করেছি। মাঠ লেভেলে কিভাবে কাজ হয় তার হাতেখড়ি হয় আইসিডিডিআরবিতে। এখানে পাবলিক হেলথ ফিল্ডের অনেক বড় বড় ফাইন্ডিংস তৈরী হয়েছে।
আমার প্রশ্ন এত সুনামধন্য একটি রিসার্চ প্রতিষ্ঠান ৫৫ বছর কাজ করলেও তারা দেশে রিসার্চ বেইজ তৈরীতে অনুঘটকের ভূমিকা রাখতে পারেনি কেন?
ব্যক্তিগতভাবে এখানে বেনিফিটেড (জব, পাবলিকেশন) হলেও সর্বোতভাবে দেশের রিসার্চ সেক্টরকে আগাতে কাজ করেনি।
আইসিডিডিআরবি বাংলাদেশে অবস্থান করলেও এটা মূলত আমেরিকা-ইউরোপের আইল্যান্ড এর মত, যার ফোকাস হচ্ছে পাবলিক হেলথ রিলেটেড ডাটা কালেকশন এবং ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। এখানের বেশিরভাগ ডাটার মালিক বাংলাদেশ নয়। ফান্ডার দেশগুলো এগুলোকে ওউন করে।
এখানের রিসার্চাররা দেশের অন্য প্রতিষ্ঠানের সাথে সহজে কলাবোরেশন করে না। স্যাম্পল কালেকশনের প্রয়োজনে করে থাকে, বাস্তবিকভাবে যুক্ত করতে চায় না।
পাবলিক হেলথ ফিল্ডে অনেক বড় বড় ফান্ড পেতে সরকারের প্রতিষ্ঠান বা লোকদের জড়িত করতে হয়। সেই হিসেবে নামকওয়াস্তে যুক্ত করে, এক্টিভ রিসার্চ পার্টনার হিসেবে নয়। এসব কারনে আশানুরূপ প্রভাব ফেলতে পারেনি।
সরকারী রিসার্চ প্রতিষ্ঠানগুলোতে (যেমন বিসিএসআইআর) লোকবল অনেক, বিশাল বিশাল বিল্ডিং এবং এলাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে ইম্পেক্টফুল রিসার্চ করার পরিবর্ততে অন্য যেকোন সরকারী প্রতিষ্ঠানের সাধারন জব হিসেবে রিসার্চকে বিবেচনা করা হয়।
রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে কিছু প্রজেক্ট করে যেগুলো বড় জার্নালে পাবলিকেশনের পরিবর্তে প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে মাঝে মাঝে নীজদের উপস্থিতির জানান দেয়। বেশিরভাগ প্রকাশ করে লোকাল জার্নালে।
কৃষি সেক্টর নিয়ে অনেককে বড়াই করতে দেখি যে রিসার্চের মাধ্যমেই নাকি দেশ খাদ্যে স্বয়ং-সম্পূর্ন হয়েছে। কিছু অবদান তো রয়েছে নতুন নতুন জাত বা প্রজাতি দেশীয় পরিবেশে খাপ খাওয়াতে। উন্নত বিশ্বের যেমন রিসার্চ হয় সেরকম চোখে পড়েনি। বর্তমানে হয়ত কেউ কেউ চেষ্টা করছে।
আমার জীবনের একটা বড় অংশ কেটেছে বিএডিসি’র খামারে আব্বার চাকুরীর সুবাধে। কিছু নতুন ভ্যারাইটি কৃষিতে যোগ হলেও আশানুরূপ বলা কঠিন। প্রযুক্তি ডেভেলোপ হয়েছে উন্নতদেশগুলোতে।
আমাদের উন্নতির মানদন্ড হওয়া উচিত অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের(যেমন থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্ডিয়া) আলোকে, আফ্রিকার অবহেলিত দেশগুলোর আলোকে নয়।
দেশের রিসার্চ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়, রিসার্চ প্রতিষ্ঠান-সবকিছুতে শুধু হতাশার চিত্র।
কোয়ালিটি রিসার্চের জন্য সরকারকেই পরিকল্পনা নিতে হবে। রাষ্ট্র চাইলে অনেক কিছু পারে।
লেখকঃ মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন
মাইক্রোবায়োলজিস্ট ও গবেষক