কিছুদিন আগে বিখ্যাত পদার্থবিদ্যার #জনক স্যার আইজ্যাক নিউটনের (Sir Isaac Newton) ৩৭৭তম জন্মদিন🎉 পেরিয়ে গেল। তার জন্মদিনের তারিখ নিয়ে ছিল বিভিন্ন মতবাদ, তর্ক-বিতর্ক। এই তর্ক-বিতর্কের ভিড়ে এই পোস্টটি আর দিয়ে পারেনি। তাই তার সবকিছু শেষ হওয়ার পর দেওয়া হলো। যে বিষয়টি নিয়ে সচারাচর অনেকেই আলোচনা করে না। তাই আজ জেনে নেওয়া যাক তার কিছু পাগলামির ইতিহাস।
🎊ইতিহাসের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন। পদার্থবিজ্ঞান এবং ক্যালকুলাসে তার অবদান অনস্বীকার্য। তবে তার মেধার আলোয় ঢেকে গেছে তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। তিনি ছিলেন কিছুটা অপ্রকৃতিস্থ। বয়স বাড়ার সঙ্গে নিউটনের আগ্রহ ভাগ হয়ে যায় যুক্তিবিজ্ঞান এবং অযুক্তিক বিশ্বাসে। এসব বিশ্বাসকে তাড়া করে কম পাগলামিও করেননি তিনি।
🎁তাহলে এবার শুরু করা যাকঃ
🎈প্রথমে আসি, নিজের মাকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারতে এসেছিলেন নিউটন।
নিউটন বেশ ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন। বিজ্ঞানের প্রতি যতটুকু ভালোবাসা ছিল, বাইবেলের প্রতি তার চেয়েও কম নয়। ২০ বছর বয়সে নিজের ধার্মিক চিন্তা থেকে নিজের ৫৭ টি অপরাধের তালিকা বানান। এর মাঝে বেশিরভাগই ছিল ছোট ছোট কাজ, যা অপরাধ ভাবতেও দ্বিধা হয়। যেমনঃ চার্চে বসে আপেল খাওয়া, ছোট বোনকে ঘুষি মারা ইত্যাদি। কিন্তু এসব কাজকে পাপের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার মধ্যেই হয়তোবা লুকিয়ে ছিল তার ভবিষ্যৎ পাগলামির আভাস। এই তালিকার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ছিল নিউটন তার মা এবং সৎ বাবাকে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন বলে ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
💎এরপর আসি, পরশপাথরের খোঁজে নিউটন।
নিউটনের সময়ে পরশপাথর নিয়ে হৈ-হুল্লোড় কম হয়নি। অনেকের বিশ্বাস ছিল পরশপাথরের অস্তিত্ব আছে। আর বিশেষ প্রক্রিয়ায় তা তৈরি করা সম্ভব। এই অনেকের তালিকায় একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিও ছিলেন তিনি হলেন নিউটন। পরশপাথর এমন বস্তু যার ছোঁয়ায় সাধারন ধাতু সোনায় পরিণত হয়। তার স্পর্শের পানি খেয়ে মানুষ হতে পারে অমর। জীবনের শেষের দিকে তার বিশ্বাস ছিল পরশপাথর আজগুবি কিছু নয় বরং পরিপূর্ণ বিজ্ঞান। অ্যালকেমির উপর যেখানে যে কাগজ পেয়েছেন পড়ে শেষ করেছেন। নিজের গবেষণাগারে তো সবসময় চেষ্টা করেই গেছেন অমরত্তের ঔষধ বানানো। ধারণা করা হয়, নিউটন পারদকে পরশ পাথরের মত ভাবতেন। নিজের কিছু লেখায় তিনি অন্য অ্যালকেমিস্টদের পারদ থেকে তৈরি বিশেষ ঔষধ এর কথা বলেই গেছেন। দিনের পর দিন তিনি নিজের ল্যাবে পারদ বাষ্প শুষে গেছেন। আরও ধারণা করা হয়, পারদের বিষাক্ত গ্যাসের প্রতিক্রিয়াতেই তার মাথা বিগড়ে গিয়েছিল। পারদের বিষ সারা শরীরে ছড়িয়ে গিয়েছিল। ১৯৭০ সালে নিউটনের চুলের নমুনা পরীক্ষা করে তাতে স্বাভাবিকের তুলনায় ৪০ গুণ বেশি পারদ পাওয়া গিয়েছিল।
💊এরপর আমরা আসি,
#এমারেল্ড ট্যাবলেটের রহস্য।
আইজ্যাক নিউটনের টুকরো অনেক লেখার মাঝ থেকে পাওয়া যায়, নিউটনের হাতে লেখা এমারেল্ড ট্যাবলেটের অনুবাদ। এখানে সংক্ষেপে জানিয়ে রাখা ভাল যে, এমারেল্ড ট্যাবলেট হলো আরেক রহস্যময় জিনিস। পান্নার চৌকো এ পাথর কিছু লেখা খোঁদাই করা আছে। কিংবদন্তি অনুসারে এ লেখা স্বর্গীয়। কেউ কেউ বলেন এটা তৈরি করেছিল হার্মিস ট্রাইসমেজিস্টাস। তিনি হলেন পাগান অবতার। যিনি কিছুটা গ্রিক দেবতা হার্মিস, মিশরীয় দেবতা থর। বলা হয়, এ পাথরে খোদিত আছে বিশ্ব সৃষ্টির রহস্য। মহাবিশ্বের আকারহীন প্রাথমিক উপাদান, যা কিনা সময়ের শুরুতে শুণ্যে গড়ে তুলেছিল সৃষ্টি। এমারেল্ড ট্যাবলেটের অনুবাদ অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি করেছে। নিউটন সৃষ্টির রহস্য জানতে এমারেল্ড ট্যাবলেটের উপর ভরসা করেছিলেন। আর সেটি যে বড় ঠুনকো নয়, আর তিনি কেবল সময় কাটাতে অনুবাদ করেছেন তা কিন্তু নয়। তার প্রমাণ তিনি প্রাথমিক উপাদানের রহস্য ভেদ সবসময় করতে চেয়েছিলেন। কারণ সে উপাদান থেকে রূপান্তরিত হতে পারে যে কোন পদার্থই। নিউটনের এই অনুসন্ধানটিও পরশপাথর ধরনের কিছু তৈরিতে নিয়োজিত ছিল।
🔮সর্বশেষে, ২০৬০ সালে কেয়ামত।
🔎বাইবেল ঘেঁটে অংক কষে কেয়ামতের সাল জানতে পেরেছিলেন বলে দাবি করেছিলেন নিউটন। তিনি বলেন, “২০৬০ সালে গেরস্থ থেকে ফেরেশতা নেমে আসবে। ব্যাবিলনের সাম্রাজ্য পতন হবে আর যীশুখ্রীষ্ট পুনরুজ্জীবন পাবে।” এ কথাগুলো মোটেও কোন ছদ্দবেশী বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ছিল না। বরং তিনি আক্ষরিক অর্থে দাবি করেছিলেন ফেরেশতা নেমে এসে আকাশে উড়ে বেড়াবে। আত্মবিশ্বাসের সাথে নিউটন দাবি করেছিলেন কেয়ামত কিছুদিন পরে হতে পারে কিন্তু ২০৬০ সালের আগে হবে না। তার কাছে এটা ছিল আর দশটা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের মত। শেষের দিকে নিউটন একেবারে অপ্রকৃতিস্থ হয়ে পড়েন। বেশিরভাগ সময় কাটাতেন আজগুবি সব রহস্যের পেছনে। বন্ধুদের সাথে দেখা হলে এমন সব কথা বলতেন, যার ফলে বন্ধুমহলে নিউটন খুব অপ্রিয় হয়ে পড়ে। ২৪ ঘন্টায় খুব বেশি হলে ১ ঘন্টা ঘুমাতেন। কখনো কখনো টানা পাঁচ দিন না ঘুমিয়েই পার করতেন। তেমন কিছু খেতেনও না। সম্ভবত এ কারণেই অনেক বেশি ঘোপ বা হ্যালুসিনেশনে পড়তে শুরু করেন তিনি। বন্ধুদের সাথে মাঝেমাঝে আক্রমনাত্মক ব্যবহার করে বসতেন। দার্শনিক জন লক (John Locke) অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দেখতে গিয়েছিলেন নিউটন। বলেছিলেন, “তুমি মরে গেলেই খুশি হব।” এর কারণ হিসেবে নিউটন বলেন, “লক তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।” মেরে ফেলার নয় বরং এই বয়সে নিউটনকে আবার বিয়ে দেওয়া। লককে দেওয়া এক চিঠিতে নিউটন আগের লেখা চিঠির বিষয়ে ক্ষমা চেয়ে বলেন, “তিনি আগে যা বলেছেন তার কিছুই মনে নেই, যদি খারাপ কিছু হয় লক যেন তাকে ক্ষমা করে।”
⚗️বিজ্ঞানকে শতবর্ষে এগিয়ে দেওয়া নিউটনই কত রকম কুসংস্কারে বাধা হয়েছিল ভাবতে অবাক লাগতে পারে। কিন্তু তার অবদানের কল্যাণে এত সব পাগলামি অনায়াসে ভুলে যাওয়া যায়।
পোস্টটি যাতে খুব বড় না হয়ে যায় এজন্য অনেক তথ্য বাদ দেওয়া হয়েছে। আপনাদের কোন বিষয়ে জানার আগ্রহ থাকলে কমেন্ট বক্সে নক করতে পারেন।
পরিশেষে বলা যায় যে, “যেখানে পাগলামি সেখানেই আবিষ্কার।”😁