ফেসবুক সরকারের কোনো কথা শোনে না উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটিকে ‘গোঁয়ার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। সবার আগে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এর জন্য প্রয়োজনে ফেসবুকের বিরুদ্ধে আরও কঠোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলেও আভাস দিয়েছেন মোস্তাফা জব্বার।
গত শনিবার (২৭ মার্চ) থেকেই সারাদেশে বিঘ্নিত হয়ে আসছে ফেসবুক।
ব্যবহারকারীরা হয় একেবারেই ফেসবুক ব্যবহার করতে পারছেন না আর নয়তো ধীর গতিতে এটি ব্যবহার করতে হচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতৃত্বে কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সংগঠন আন্দোলন-হরতালের মতো কর্মসূচি দিলে ফেসবুকের ব্যবহার সীমিত করে সরকার।
এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরামর্শে ফেসবুক বন্ধ রাখা হয়েছে। পুরো বিষয়টি তারাই দেখভাল করছেন।
ফেসবুককে ব্যবহার করে নাশকতা করা হচ্ছে।
কবে নাগাদ ফেসবুক স্বাভাবিকভাবে খুলে দেওয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, এটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেখবে। কোনো অনুমান নির্ভর দিনক্ষণ দিতে পারছি না।
এদিকে ফেসবুক ব্যবহার সীমিত থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ফেসবুকভিত্তিক ব্যবসায়ীরা। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী উদ্যোক্তারাও রয়েছেন।
আবার বিভিন্ন ফেসবুক পেজের অ্যাডমিনরা বলছেন, সীমিত ফেসবুকের এ সময়ে তাদের অনেকেরই ‘মনিটাইজিং’ অনুমতি বাতিল করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি। অনেকেই আবার তাদের ফেসবুক বিজনেস অ্যাকাউন্টে থাকা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অর্থের ব্যালেন্স ‘শূন্য’ দেখছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ফেসবুকভিত্তিক এফ-কমার্স ব্যবসায়ীরা। শারমিনা ইসলাম নামে এক নারী উদ্যোক্তা বলেন, আমাদের সেল বেশি হয় ফেসবুক থেকেই। সামনে ঈদকে কেন্দ্র করে গত শুক্রবার (২৬ মার্চ) ফেসবুকে কিছু পোস্ট বুস্ট এর জন্য দিয়েছিলাম। প্রায় ১০০ ডলারের মতো। কিন্তু শনিবার থেকেই ফেসবুক ডাউন। প্রচারের জন্য আমার এ বিনিয়োগ একদম বিফলে গেল। ফেসবুক ঠিকই টাকা কেটে নিচ্ছে কিন্তু কোনো অর্ডার আসছে না।
এসব বিষয়ে ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে নতুন করে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। ফেসবুক তার আগের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে বলছে, বাংলাদেশে আমাদের একাধিক সেবা সীমিত করার বিষয়টি আমরা জানি। আমরা এটি বোঝার চেষ্টা করছি। আমরা আশা করি, দ্রুতই পূর্ণাঙ্গ সেবা পুনরায় সচল হবে।
বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণে ফেসবুককে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো অনুরোধ করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা কিছু বললেই কী তারা শুনবে? তাদের গোয়ার্তুমির তো শেষ নেই। তারা সরকারের সঙ্গে কোনো সহযোগিতা করে না।
আজকেও একটা প্রতিবেদন পেয়েছি যে, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের কোনো পোস্ট এলে তারা সেটি সরিয়ে ফেলে। কিন্তু বিপক্ষের কোনো পোস্ট এলে সেটি রাখে। এভাবে তো হবে না।
রেডিকালাইজেশনের প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠছে ফেসবুক অনেকের কাছে। এক্ষেত্রে ফেসবুককে আরও কঠোরতার মধ্যে আনার কথা ভাবছি আমরা।
সেক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার মতো বাংলাদেশেও ফেসবুক কার্যক্রম বন্ধ করে দিলে সরকারের অবস্থান কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফা জব্বার বলেন, বন্ধ করে দিলে বন্ধ করবে।
আগে যখন ফেসবুক ছিল না তখন এদেশে মানুষ ছিল না? ফেসবুকের গোয়ার্তুমির কাছে তো আমার দেশের নিরাপত্তা বিসর্জন দিতে পারি না। সবার আগে দেশ, দেশের নিরাপত্তা, দেশের মানুষের নিরাপত্তা।