৫৯ বছর পরে বাটার প্রথম লোকসান করার মধ্যে মেসেজ কী?
১। বাটা সাধারণ মধ্যবিত্তের জুতা কোম্পানি। তাদের লাক্সারি ব্রান্ড হাস-পাপি ছাড়া বাটার জুতা সাধারণ মধ্যবিত্ত, কিছু ক্ষেত্রে নিন্ম মধ্যবিত্তের প্রধান ভরসা। দেশের প্রায় সবগুলো গবেষণা সংস্থা বলে প্রান্তিক, নিন্মবিত্ত এবং মধ্যবিত্তের আয় প্রায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সংকুচিত হয়েছে।
এমতাবস্থায় জুতার বিক্রি পড়া মন্দার একটা ইন্ডীকেশান মাত্র, প্রায় সব সাধারণ ভোগ্য পণ্য ও বিলাস পণ্য খাতেই বিক্রয় কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে।
******
সানেম, সিপিডি, উন্নয়ন অন্বেষণ, পিআরআই, বিআইডিএস, পিপিআরসি, বিআইজিডি সহ বাংলাদেশের সরকারি বেসরকারি গবেষণা সংস্থার জরিপ গুলোর মধ্যে দরিদ্র্য বাড়ার সবচেয়ে নিন্ম সংখ্যাটা দিয়েছে বিআইডিএস, করোনার প্রথম ধাক্কার কারনে এক কোটি ৬৪ লক্ষ মানুষ নতুন করে দরিদ্র্য হয়েছেন।
চাকরি ও কর্ম হারিয়ে, আয় সংকোচনে পড়ে, সঞ্চয় হারিয়ে এবং চিকিৎসা ব্যয়ে দরিদ্র্য হয়েছেন। সানেমের হিসাবে দারিদ্রের হার ৪২ শতাংশ, এটা এমন এক ভয়ানক সংখ্যা যার অর্থ হচ্ছে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের ১৫ বছরের অর্জন হারিয়ে যাওয়া।
খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত ব্যয় কমানো, সঞ্চয় ভেঙে চলার মতো পদক্ষেপের পরও ৬০ দশমিক ৫ শতাংশ পরিবার দেনার মধ্যে পড়েছে বলে জানিয়েছে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরম। এশিয়া ফাউন্ডেশন বলেছে ৫০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা করোনাকালে ব্যবসা বন্ধ করেছেন। সিপিডি বলেছে ৫৪ শতাংশ গৃহকর্মী এবং ১৯ শতাংশ তৈরি পোশাক শিল্প শ্রমিক বেকার হয়েছেন।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) ও সুইডেনের ওয়েজ ইন্ডিকেটর ফাউন্ডেশন (ডব্লিউআইএফ) এর যৌথ জরিপে দেখা যাচ্ছে, করোনাভাইরাসের প্রভাবে তৈরি পোশাক, চামড়া, নির্মাণ ও চা-এই চার শিল্প খাতের ৮০ শতাংশ, অর্থাৎ প্রতি ১০০ জন শ্রমিকের মধ্যে ৮০ জনেরই মজুরি কমেছে।
পিপিআরসি-বিআইজিডি জরিপ মতে, কোভিডের আঘাতে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ। দ্বিতীয় ধাক্কা শুরুর আগেই এ বছরের মার্চ পর্যন্ত যেখানে শহরাঞ্চলে নতুন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৫৯ শতাংশ, সেখানে গ্রামাঞ্চলে তা ৪৪ শতাংশ।
গতবছর ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ বস্তিবাসী শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যান, যাদের ৯ দশমিক ৮ শতাংশ এখনো ফেরেনি।
******
এমতাবস্থায় গ্রাহক কমে, সেইল হারিয়ে বাটার মধ্য মধ্যবিত্ত গ্রাহকের কোম্পানি লোকসানে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। এই সাধারণ সত্য সরকার অস্বীকার করে উল্টো দাবী করে মানুষের নাকি আয় বাড়ছে? টাকার অভাবে মানুষ জুতা কিনতে পারছে না, আর আপনি বলছেন মাথাপিছু আয় বেড়েছে। কালো টাকা দিয়ে এই ফাইজলামি কতদিন চালিয়ে যাবেন?
৮ শতাংশ জিডিপি’র বাজেট আর আষাড়ে গল্প বন্ধ করে বাজারে যান, বাস্তবতা দেখেন।
২। বাটার লোকসানে পড়া আরেকটা ডীপ লার্ণিং আছে করে। সেটা হচ্ছে সংকটেও কমপ্লায়েন্ট কোম্পানির গলায় পাড়া দিয়ে কর-ভ্যাট আদায় করা। বাটা একটা কমপ্লায়েন্ট কোম্পানি। এপেক্সের মালিক পক্ষ পরিষ্কার বলেছেন- ছেড়ে দেন আল্লাহ্র ওয়াস্তে ব্যাবসা গুটিয়ে চলে যাই।
সেল কমে গেলেও কোম্পানি গুলোর ফিক্সড কষ্ট কমছে না, অপারেশন কষ্ট, এমপ্লয়ি কষ্ট চালিয়ে যেতে হচ্ছে কোম্পানি গুলোকে। এর মধ্যে আছে অপরিকল্পিত লকডাউনের ইদুর-বেড়াল খেলা।
বিষয়টা হচ্ছে, করোনাকালে ৫ হাজার লোক কোটি পতি হইসে, রাজস্ব চুরি করে। দলীয় লোকে কর ভ্যাট চুরি সরকারকে রাজস্ব না দিয়ে বছরের প বছর পার করছে, কিন্তু যারা কমপ্লায়েন্ট তাদের এই করোনা কালেও ছাড় দেয়া হচ্ছে না।
এর ফল হচ্ছে বাটা, এপেক্স। দেশের শ্রমবাজারের ৮৯% অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত, বাকি যে ১১% এর মধ্যে আছে বাটা, এপেক্স।
এদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এই নাভিশ্বাসের সাথে সরকারের বাজেট প্রণয়নের কোন সম্পর্ক নাই। শুরুতেই ৩৫% ঘাটতি বাজেট, যা ১০ মাস শেষে ৪৪% বাস্তবায়িত, এ ধরণের বাজেট, ষ্টুপিড, নন্সেস।
করোনাকালে ক্রাইসিস বাজেট দরকার ছিল, ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে হাতে টাকা, ক্ষুধার্তদের ঘরে ঘরে ত্রাণের বিকল্প আর্থিক ঋণ প্রকল্প। কিন্তু সরকারের ঋণ অভিজাতরা নিয়ে ভোগ করছে, বিনিয়োগে আনছে না।
ব্যাংকে অতিরিক্ত তারল্য জমলেও এসএমই খাতে সহজে ঋণ দেয়াকে বাধ্যবাধক করতে পারেনি সরকার। ফলে মানুষের আয় ফেরানো এবং ব্যয় সক্ষমতা তৈরির কোন পথ নেই।
৩। একটা কোম্পানি লোকসানে যেতেই পারে। কিন্তু একই ইন্ডাস্ট্রির টপ প্লেয়ারদের সবাই লোক্সান করে তাইলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানোর অর্থনৈইতিক সংস্কারের মেসেজকে ড্রপ করা যাবে না।
মন্দাকে স্বীকার করে, ন্যাশনাল ক্রাইসিস রিস্টোরেশান প্লানের আওতায় বিশেষ বাজেট ঘোষণা করেন।