এই যুবকের নাম লুআই আল-বাসিওনি।
জন্ম ফিলিস্তিনি বাবা-মার ঘরে জার্মানিতে। কিন্তু ছয় বছর বয়সেই বাবা-মার সাথে ফিরে যান মাতৃভূমি ফিলিস্তিনে। গাজা উপত্যকার খান ইউনুস শহরে। দখলদার ইসরায়েলি সৈন্যরা তাদের পাসপোর্ট, কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করে নিলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন সেই অবরুদ্ধ শহরে।
সেখানে ইসরায়েলি সৈন্যদের হয়রানির মধ্য দিয়ে, তাদের জীপ আর চেকপয়েন্ট এড়িয়েই কাটতে থাকতে তার জীবন। প্রথম ইন্তিফাদার সময় স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে ঘর বসেই চলতে থাকে তার পড়াশোনা।
অসলো চুক্তির পর পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে ফিলিস্তিনের সম্পর্ক সহজ হলে ১৯৯৮ সালে লুআই ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনার জন্য আমেরিকায় পাড়ি জমান। কিন্তু টাকা-পয়সার টানাটানির কারণে চাকরির ফাঁকে ফাঁকে পড়াশোনাটা তার জন্য সব সময়ই কঠিন ছিল।
২০০১ সালে ইসরায়েলি সৈন্যরা যখন খান ইউনুসে তার বাবার কমলা বাগান দখল করে নেয়, তখন এক বছর পুরোপুরি পড়াশোনা বন্ধ রেখে পুরোদমে কাজে লেগে যেতে হয় তাকে। সপ্তায় ১০০ ঘন্টা করে পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করতে হয় পরিবারকে পাঠানোর জন্য এবং নিজের পড়াশোনা শেষ করার উদ্দেশ্যে জমানোর জন্য।
শেষপর্যন্ত লুআই তার পড়াশোনা শেষ করে চাকরি জীবনে প্রবেশ করেন। একাধিক চাকরি পরিবর্তন করে বর্তমানে তিনি একটি অ্যারোস্পেস কোম্পানির সিনিয়র ডাইরেক্টর অফ ইঞ্জিনিয়ারিং। এই কোম্পানির মাধ্যমেই তিনি সুযোগ পান নাসাতে কাজ করার। তার নেতৃত্বে তার টিম নাসার জন্য ডিজাইন করে ক্ষুদ্র একটি হেলিকপ্টার, যেটাকে ভিন্ন গ্রহ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
অবশেষে এই বছর ফেব্রুয়ারি মাসে তার টিমের এই কাজ ইতিহাস সৃষ্টি করে। Ingenuity নামের তাদের ডিজাইন করা ক্ষুদ্র রোবটিক হেলিকপ্টারটি মঙ্গল গ্রহের বুক থেকে সেখানকার আকাশে ওড়ে এবং এরপর আবার সফলভাবে ভূমিতে অবতরণ করে। পৃথিবীর বাইরে অন্য কোনো গ্রহে নিয়ন্ত্রিত ফ্লাইট উড্ডয়নের এটাই প্রথম ঘটনা।
লেখাঃ মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহা
আরো তথ্যঃ