আফ্রিকার একটি প্রচলিত প্রবাদ হলো “ঘরের পুরুষ মানুষটি যদি ঘরে না খায় তাহলে ঘরে এক বাটি স্যুপ রান্নার জন্যও যথেষ্ট টাকা তার স্ত্রীকে দিবে না (he may never give his wife enough money to cook a good pot of soup)! একই কথা খাটে শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে।

যেই দেশের সরকারের মন্ত্রী আমলারা নিজ দেশের সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের ভোক্তা না সেই দেশের মন্ত্রী আমলারা কেন শিক্ষা ও হাসপাতালের উন্নয়নে যথেষ্ট টাকা বরাদ্দ দিবে?

কখনো শুনেছেন সরকারের বড় বড় মন্ত্রী বা আমলা কিংবা তাদের পরিবারের সদস্যরা কোন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। যদি কখনো নিয়ে থাকেও সেটা বিদেশে যেতে না পেরে বিপদে পরে হয়ত ভর্তি হয় তবে দ্রুত সময়ে এয়ার এম্বুলেন্স-এ করে বিদেশেও চলে যায়।

একই কথা খাটে শিক্ষা ক্ষেত্রে। সরকারের সরকারের প্রায় সকল বড় বড় মন্ত্রী বা আমলার ছেলেমেয়েরা সরকারি স্কুল, কলেজে পড়ে না।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে যদি সত্যিকারের উন্নতি চাই তাহলে আমাদের এখন একটি আইন করার জোরালো দাবি উঠা উচিত। মন্ত্রী এবং সরকারি কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসা এবং স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলের পড়াশুনার জন্য বিদেশে যেতে পারবেন না।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে উন্নতির জন্য এই একটি আইনই যথেষ্ট। দেখবেন দেশের হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কত সুন্দর হয়। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে আমাদের কোন সরকার যথেষ্ট বরাদ্দ দেয়নি।

যতটুকু দেয় সেটাও সঠিক ব্যবহার হয় না। এই দুই মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি সবচেয়ে বেশি।

আফ্রিকার এই প্রবাদটি এমনি এমনি প্রচলিত হয়নি। সেই দেশগুলোর বড় বড় আমলা রাজনীতিবিদরা জনগণের ট্যাক্সের টাকায় চিকিৎসার জন্য ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়াতে যায়।

জানা যায় নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ বুহারি ২০১৭ সাল থেকে নিজ দেশের চেয়ে ইংল্যান্ডেই কাটিয়েছে বেশি। নাইজেরিয়ার আমলা আর রাজনীতিবিদরা বছরে ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি খরচ করে শুধু বিদেশে চিকিৎসার জন্য। আমাদের সরকারের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। যদিও জানিনা বছরে কত ডলার বিদেশে চিকিৎসার জন্য ব্যয় হয়।

আর শিক্ষা খাতে? যেখানে ইউনেস্কো বলে একটি দেশ তার জিডিপির ন্যূনতম ৫.৫% শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়া উচিত। আমাদের বাংলাদেশের সরকারেরা জিডিপির ১.৮ থেকে ২.১% বরাদ্দ দেয়। উচ্চ বিত্তের সকলের ছেলেমেয়েরা হয় প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে পড়ে নচেৎ বিদেশে পড়ে।

যদি তাই হয় তাহলে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নে তারা কেন যথেষ্ট কেয়ার নিবে? কাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসাবে সরকার নিয়োগ দেয় সেইটা দেখলেও বোঝা যায় সরকার সত্যি সত্যি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভালো লেখাপড়া হোক সেটা চায় কিনা।

এইটা বোঝার জন্যতো গবেষণার প্রয়োজন নাই। এই অবহেলাগুলো দিবালোকের মত স্পষ্ট। তথাপি জনগণ চুপ। কেউ জোরালো দাবি জানাচ্ছে না। বরং সরকারকে বাহবা দেওয়ার মানুষের অভাব নেই।

আসলে আমরা এমন নেতা আমলাই deserve করি। আমরা এমন বাংলাদেশই deserve করি।