ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটা ইম্পরট্যান্ট সাইড হচ্ছে সার্চ এঞ্জিং মার্কেটিং (SEM). গুগল, বিং বা অন্যান্য সার্চ এঞ্জিনে যদি কেউ কিছু সার্চ করে তাইলে অনেক সময় সার্চ রেজাল্ট পেইজের সবচাইতে উপরে আর সবচাইতে নিচে ৩/৪টা স্লটে গুগল যেই রেজাল্ট দেখায় সেইগুলা পেইড অ্যাডভার্টাইজিং হয়। কোম্পানিগুলা গুগলকে টাকা দেয় কোন একটা সার্চ টার্মের এগেইন্সটে তাদের ওয়েবপেজ সার্চ ইঞ্জিনে শো করার জন্যে।
সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং অনেক বিশাল একটা ডিসিপ্লিন। যেকোন মার্কেটিয়ারের ডিমান্ড অনেক বেড়ে যায় যদি তার প্রফাইলে সার্চ এঞ্জিন এক্সপার্টিজ থাকে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে যে এসইএম করতে হলে আপনাকে মাল্টিপল স্কিলের অধিকারী হতে হয়।
সার্চ এঞ্জিন মার্কেটিং এর বেসিক প্যারামিটার তিনটাঃ কীওয়ার্ড, অ্যাড কপি, আর ল্যান্ডিং পেইজ। এই তিনটা স্কিল মাস্টার করতে পারলেই আপনি সার্চ এঞ্জিন মার্কেটিং এর জন্যে মোটামুটি রেডী। এছাড়াও অ্যানালাইটিক্স আর বাজেটিং এর উপরেও বেসিক আইডিয়া থাকতে হয়।
একটা উদাহরণ দেইঃ ধরেন, আপনি একটা সফটওয়ার কোম্পানির মালিক। আপনার সফটওয়্যার কম্পিউটার থেকে মেশিনে ফ্যাক্স পাঠানোর সার্ভিস দেয়। এখন ধরেন একজন কাস্টমার এইধরনের সার্ভিস খুঁজছে তার কোম্পানির জন্যে। সে তখন কি করবে? গুগলে বা অন্য কোন সার্চ এঞ্জিনে সে ওই ধরণের সার্ভিস খুঁজবে।
ধরেন, তখন সে সার্চ করলো “Best computer to fax software”। এখন, আপনি যদি একটা অ্যাড চালান “Computer to Fax Software” কীওয়ার্ডের এগেইন্সটে তাইলে গুগল আপনার অ্যাড সার্চ রেজাল্টে শো করবে।
সেই কাস্টমার যদি অ্যাডে ক্লিক করে আপনার অ্যাডের সাথে এটাচড ওয়েবসাইটে যায়, তাহলে গুগল আপনাকে কিছু ডলার চার্জ করবে যেইটাকে বলে পে-পার-ক্লিক।
বুঝা গেলো ব্যাপারটা! এইবার আপনি এই সাধারণ জিনিসটাকে স্কেল আপ করেন! কীওয়ার্ড কি শুধু একটা? এইরকম হাজার হাজার কীওয়ার্ড আছে। কিছু কীওয়ার্ডের সার্চ ভলিউম অনেক হাই। মানে আই কীওয়ার্ড প্রতি মাসে মিলিয়ন মিলিয়ন বার সার্চ হয়। আবার কিছু কীওয়ার্ড আছে যার সার্চ ভলিউম অনেক কম।
ইউজুয়ালি কীওয়ার্ড যত লম্বা হয়, তার ভলিউম তত কমে। কীওয়ার্ডের পপুলারিটির উপরে তার খরচ বেড়ে যায়। আবার কীওয়ার্ডের রেলেভেন্সির ব্যাপার আছে, কনভার্শনের ব্যাপার আছে। ধরেন, ১০টা কীওয়ার্ডের মধ্যে ৯টার ভলিউম অনেক হাই আর ১ টার ভলিউম নাই বললেই চলে।
একজন সাধারণ মানুষ বলবে ওই ৯টার মধ্যে কয়েকটার উপরে বিড করতে। কিন্তু একজন মার্কেটিয়ার হয়তো সেই ১টা লো ভলিউমের উপরে বিড করবে কারণঃ ১) সেইটার কস্ট হয়তো অনেক কম, আর ২) সেই ১টা কীওয়ার্ড যারা সার্চ করে, তারা হয়তো জিনিস কেনার জন্যেই সার্চ করে।
আবার, ধরেন, এই ট্যাক্টিক্স ওই ফ্যাক্স সার্ভিসের মত অন্যান্য কোম্পানিরাও ধরে ফেলেছে তো তারাও ঐ ১টা কীওয়ার্ডের উপরে বিড করবে। তাইলে যদি ২০টা কোম্পানি সেইম কীওয়ার্ডের উপরে বিড করে, গুগল সার্চ রেজাল্ট পেইজের সবচাইতে উপরের তিনটা স্লটে কাদের জায়গা দিবে?
এইখানে চলে আসে অ্যাড কপি আর ল্যান্ডিং পেইজের কথা! গুগল বা যেকোন সার্চ এঞ্জিনের বিজনেসের মূলমন্ত্র হচ্ছে রিটার্নিং ইউজার। মানে ধরেন, আপনি গুগলে সার্চ করলেন ফ্যাক্স সার্ভিসের জন্যে। টপ তিনটা রেজাল্টের দুইটা অ্যাড আপনার ভাল্লাগলো না। আপনি তিননাম্বার অ্যাডে ক্লিক করে সেই অ্যাডে গেলেন।
গুগল কিন্তু এইটার হিসাব রাখতেসে যে কতজন ইউজার অ্যাড দেখার পরে সেই অ্যাডে ক্লিক করে নাই। সেইটা হিসাব করে আপনার অ্যাড দেখানো কমায়ে দিবে। ইউজুয়ালি গুগল কনসিডার করে আপনার অ্যাড কপিতে যেই সার্চ টার্ম ইউজ করা হয়েছে (কীওয়ার্ড), সেইটা আছে কিনা।
কীওয়ার্ড না থাকলে গুগল সাধারণতঃ ধরে নেয় যে সেই অ্যাড রেলেভেন্ট না। ফলে সেই অ্যাড দেখানো কমায়ে দেয়। কারণ সার্চার যদি কোন কীওয়ার্ড সার্চ করে রেলেভেন্ড অ্যাড না পায় তাইলে সে গুগল ফিউচারে ইউজ নাও করতে পারে। গুগল এই রিস্কটুকুও নিতে চায় না।
আবার ধরেন, তিনটা কোম্পানি একদম টায়ে টায়ে অ্যাড কপি লিখসে সেইম কীওয়ার্ডের এগেইন্সটে। তিনটা অ্যাডই ফার্স্টক্লাস। ইউজার তিনটা অ্যাডেই ক্লিক করতেসে। এইখানেও গুগল হিসাব টানে! ধরেন প্রথম দুইটা অ্যাডে ক্লিক করার পরে ইউজার দুই কোম্পানির ওয়েবসাইটে গেলো। গিয়ে বোকাচোদা হয়ে গেলো কারণ কোম্পানির ওয়েবসাইট অনেক ব্যস্ত।
একটা কোম্পানি ল্যান্ডিং পেইজে (যেই ওয়েবপেইজে অ্যাড ক্লিক করার পরে সার্চার ল্যান্ড করে) তাদের মেইন ওয়েবসাইট দিয়ে রাখসে যার সাথে কীওয়ার্ডের সম্পর্ক নাই। আরেকটা কোম্পানি সিঙ্গেল ল্যান্ডিং পেইজ তৈরি করসে কিন্তু তাদের সার্ভিস আসলে ফ্যাক্স মেশিন বিক্রির। ইউজার কি করবে? দুইটা পেইজে গিয়ে কোন ইন্ট্যারাক্ট না করে বের হয়ে আসবে।
মানে পেইজের বাউন্স রেট বেড়ে গেলো। গুগল এইগুলা হিসাব করেও ঐ দুই কোম্পানির অ্যাড সার্চ রেজাল্টে দেখানো কমায়ে দিবে। আবার ওইদিকে তিন নাম্বার কোম্পানির অ্যাডে ক্লিক করে ইউজার ল্যান্ডিং পেজে গেলো।
ঐখানে কনটেন্টো ফার্স্ট ক্লাস। ইউজার কনভিন্সড হয়ে সেইখানে সাইনআপ করলো আরো ইনফরমেশানের জন্যে। গুগল এইটা মনে রাখবে।
এছাড়াও ল্যান্ডিং পেইজের লোডিং স্পীড, এইচটিএমএল ফরম্যাটিং, কীওয়ার্ড ডেন্সইটি, কনটেন্ট ডাইভার্সিটি ইত্যাদি ইত্যাদি ফ্যাক্টর অনেক কিছু মীন করে ল্যান্ডিং পেইজের জন্যে!
মাথায় ঢুকলো ব্যাপারটা? অলরেডি আউলায়ে যাবার কথা। এইবার আরেকটু আউলায়ে দেই!
এই পুরো বিষয়টা কিন্তু আট দশটা কীওয়ার্ড, দুইটা ল্যান্ডিং পেইজ আর দশ পনেরোটা অ্যাডের বিষয় না। একটা সাধারণ প্রোডাক্টের জন্যে আমি ২০টা ল্যান্ডিং পেইজ ডেভেলপ করেছি, ১৫০ এর উপরে অ্যাড লিখেছিলুম, আর ১০০+ কীওয়ার্ড নিয়ে কাজ করেছিলুম। এই মিক্সে সেই প্রোডাক্টের ১০ রকম ভ্যারিয়েশান থ্রো করেন আর ওই প্রোডাক্টের মত আরো ১০/১২টা প্রোডাক্ট থ্রো করেন!
এইটাই হচ্ছে একজন সার্চ এঞ্জিন মার্কেটিয়ারের ডেইলী লাইফ!
এখন, আপনি কীওয়ার্ড রিসার্চ করে, অ্যাড কপি লিখে, ল্যান্ডিং পেইজ রেডী করে ক্যাম্পেইন রান করলেই হবে না। ক্যাম্পেইন রান করার পরে আপনার রেগুলারলি মনিটর করতে হবে প্রত্যেকটা জিনিস। আপনার ক্যাম্পেইন বাজেট মনিটর করতে হবে কারণ গুগল আপনার ডেইলি বাজেটের উপরে ভিত্তি করে অ্যাডের পিছনে ডলার চার্জ করবে।
আপনার কীওয়ার্ড কোনটা বাজেট খেয়ে ফেলতেসে কিন্তু রেজাল্ট দিচ্ছে না। কোন অ্যাড পারফর্ম করতেসে না আবার কোনটা ফাটায়ে ফেলতেসে। ল্যান্ডিং পেইজ দেখা গেলো মোবাইলে সেই লেভেলের কনভার্শন করতেসে কিন্তু ডেস্কটপে লবডঙ্কা!
আবার, দেখা গেলো একগাদা ক্লিক কিন্তু আপনার ল্যান্ডিং পেইজের ভিজিটর নাই বললেই চলে। মানে আপনার ল্যান্ডিং পেইজের টেকনিক্যাল এসইও (সার্চ এঞ্জিন অপটিমাইজেশান) এর ইস্যু আছে। এইগুলা মনিটর করতে করতে আপনার চলে আসবে রিপোর্টিং টাইম।
তার উপরে খালি মনিটরিং না। আপনাকে অ্যাড মডিফাই করতে হবে। ল্যান্ডিং পেইজের এবি টেস্টিং করতে হবে। কনভার্সন কোড কাজ করতেসে কিনা এইগুলা নিয়ে ডেভেলপারদের পিছনে দৌড়াইতে হবে। ওর্স্ট কেইস সীনারিওতে আপনারে নিজেরেই গুগল ট্যাগ ম্যানেজার ইউজ করে সব ট্যাগ হ্যান্ডেল করতে হবে!
মানে, মার্কেটিং এর মায়েরে বাপ!
বিষয়টা জটিল। এইজন্যেই সার্চ এঞ্জিন মার্কেটিয়ারদের ডিমান্ড এত হাই। বড় কোম্পানি এবং এজেন্সিগুলাতে একেক রন সার্চ এঞ্জিন মার্কেটিয়ার এমননিকি মাল্টি মিলিওন ডলারের বাজেট নিয়ে কাজ করে। তাদের ক্ষুদ্রক্ষুদ্রে ডিসিশান, কীওয়ার্ড চুজিং, রাইট কপির উপরে ডিপেন্ড করে ডেইলি হাজার হাজার ডলারের খরচ।
একটা কীওয়ার্ডের একটা লেটার এইদিক ঐদিক করে যেমন হাজার ডলার বাঁচানো যায়, তেমনি হাজার ডলার ডাউন দ্য ড্রেইনও হয়। এই ধরণের মার্কেটিয়াররা রেলেন্টলেসলি কাজ করে, ঈগল চোখে ক্যাম্পেইন মনিটর করে আর প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ইন্ডাস্ট্রি ট্রেন্ড শিখতে থাকে যেন কম্পিটিটারের চাইতে পিছায়ে যেতে না হয়।
যদি কারো সার্চ এঞ্জিন মার্কেটিং নিয়ে ইন্টারেস্ট থাকে তাইলে আমি বলবো এখন থেকেই বেসিক শেখা শুরু করতে। স্টার্টার হিসেবে গুগলের দুইটা কোর্স করা যেতে পারেঃ
১। গুগল সার্চ এন্ড ডিসপ্লে অ্যাড সার্টিফিকেশান
২। গুগল এনালাইক্টিক্স
এর সাথে অপশনাল হিসেবে গুগল ট্যাগ ম্যানেজার আর অ্যাপ মার্কেটিং কোর্স দুইটাও করা যেতে পারে। এইগুলা কমপ্লিটলি ফ্রী।
কপিরাইটিং এর জন্যে বইয়ের অভাব নাই। কিন্তু আমি সাজেস্ট করবো ডিজিটাল অ্যাডের উপরে কিছু বই পড়তে। কপিরাইটার’স হ্যান্ডবুক একটা জোস রিসোর্স। এছাড়াও অনলাইনে অনেক কপিরাইটিং এর উপরে কোর্স আছে।
আর ল্যান্ডং পেইজ ডেভেলপ করার জন্যে আগে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট স্কিল লাগলেও এখন সফটোয়্যার ইউজ করেই করা যায়। বিভিন্ন ল্যান্ডিং পেইজ বিল্ডিং এর উপরে ব্লগ পড়ে আইডিয়া নেয়া যায়। দেন অন্যান্য রিসোর্স তো আছেই।
সার্চ এঞ্জিন মার্কেটিং একইসাথে যেমন এক্সাইটিং তেমনি কঠিন পরিশ্রমের। এইটা একদিনে মাস্টার করা সম্ভব না। দিনের পর দিন লেগে থেকে, ভুল করে, ভুল থেকে শিক্ষানিয়ে, নতুন আইডিয়া টেস্ট করে করে শিখতে হয়।
কিন্তু একবার আয়ত্বে এসে গেলে অন্যান্য জিনিস আর ভাল্লাগবে না। সারাদিন খালি সার্চ এড কনসোলে পড়ে থাকতে মন চাইবে!
হ্যাপি লার্নিং!
Writter: Rakib Hussain
Digital Marketing Strategist at Halifax Partnership
Former Assistant Manager, Strategy at SimplyCast
Former Junior Marketing Specialist at SimplyCast
Former Graduate Research Assistant at MSVU Department of Communication Studies
Former International Student Liaison at MSVU International Education Centre
Former Senior Co-ordinator, Business Development at CIMA
Former Business Development Executive at CIMA Bangladesh
Studies Chartered Marketer at Canadian Marketing Association
Studied at Bangladesh University of Professionals(BUP)
Studied Master of Arts (Communications) at Mount Saint Vincent University