আজ স্কুল কলেজ বন্ধের ৫০০তম দিন। অর্থাৎ গত ৫০০ দিন যাবৎ আমাদের ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে না। টানা ৫০০ দিন ধরে এরা ঘর বন্দি। ঢাকাসহ বড় বড় শহরের অনেক স্কুল কলেজে অনলাইনে ক্লাস কিছু হয়েছে।
তাছাড়া কিছু কোচিং সেন্টারও অনলাইনে খোলা রেখেছে। কিন্তু শিক্ষাতো শুধু ক্লাস আর কোচিং কিংবা পাঠ্যবই পাঠের বিষয় না। মানুষ সামাজিক জীব। মানুষের জ্ঞান বুদ্ধির উৎকর্ষের মাধ্যমে অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় অভূতপূর্ব সাফল্যের প্রধানতম কারণ হলো socialization! স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীরা পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি পারস্পরিক সম্পর্কের সামাজিকীকরণ শেখে, জীবন বাস্তবতার পাঠ গ্রহণ করে। একই সাথে দেহ মন সহযোগ স্বাস্থ্য ও সিভিক সেন্স বিষয়ও শেখে।
প্রশ্ন হলো এই ৫০০ দিন টানা বন্ধ রাখা কতটা যৌক্তিক ছিল? আমাদের দেশের চেয়ে করোনা পরিস্থিতি অনেক অনেক খারাপ যেই দেশগুলোতে ছিল তারাও টানা বন্ধ রাখেনি। এই ৫০০ দিনের মাঝে অনেকদিন এমন ছিল যখন করোনা পরিস্থিতি বেশ ভালো ছিল।
সেই সময়টা নির্ধিধায় স্কুল খোলা রাখা যেত। যেটা আমাকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয় সেটা হলো আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমি কখনো যথেষ্ট সচেষ্ট হতে দেখিনি। কিভাবে শিক্ষার্থীদের ক্ষতিকে minimize করা যায় সেই চিন্তারও যথেষ্ট ঘাটতি দেখেছি।
এই ৫০০ দিনের মধ্যে ৪০০ দিনই আমাদের মফস্বল অঞ্চলে করোনা পরিস্থিতি বেশ ভালো ছিল। সেখানে আবার অনলাইন ক্লাস প্রায় ছিল না বললেই চলে। সেখানে স্কুল খোলা রাখা যেত। শহরেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য প্রতিটি শিক্ষার্থীদের জন্য সপ্তাহে অন্তত যেন দুইদিন স্কুল খোলা রাখা যায় সেইটা ভাবা যেত।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বিভিন্ন স্তরের সাথে দেশের অন্তত চার কোটি মানুষ জড়িত। অনেক প্রাইভেট স্কুল ভাড়া বাসা নিয়ে চালাতো। সেই স্কুল নিয়ে কেউ কি ভেবেছে? সেই স্কুল কেমন আছে? কেমন আছে সেইসব স্কুলের শিক্ষক কর্মচারীরা। শুনেছি অনেক স্কুল দেউলিয়া হয়ে গেছে। কোন কোন স্কুল বিক্রি হয়ে গেছে। ফলে অনেক শিক্ষক নাকি চাকুরী হারিয়েছে। আমাদের সরকার কি তাদের কথা একবারও ভেবেছে? অনেক শিক্ষার্থী করোনা চলে গেলে দেখবে তাদের স্কুলটি আর নেই। দেখবে তাদের শিক্ষক আর নেই।
আমরা কি টানা এই ৫০০ দিন স্কুল বন্ধ রাখার ইমপ্যাক্ট বুঝতে পারছি? বোঝার চেষ্টা করছি?