মা ছিলেন নার্স। আর বাপ ছিলেন ফার্মল্যাণ্ডের মালিক। ছোট একটা জেনারেল স্টোরও ছিলো তাদের। কালো শ্রমজীবী মানুষদের সাথে কটন ফার্মেই জিমি কার্টারের বেড়ে ওঠা। ঋণ জনিত সমস্যায় কিছুদিন তাদের সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত গৃহেও দিনযাপন করতে হয়।

জিমি কার্টার হলেন আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট যার জন্ম হয় হাসপাতালে। মেধা আর মানবতার অভূতপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে জিমি কার্টারের জীবনে।

ইউএস ন্যাভির লেফটেনেন্ট হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে হন স্টেট সিনেটর, গভর্ণর এবং আমেরিকার ৩৯ তম প্রেসিডেন্ট।

বিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষিত জিমি কার্টার সাবমেরিনে নিউক্লিয়ার প্রকোশলী হিসাবেও কাজ করেন। আমেরিকার সিভিল রাইট ম্যুভমেন্টে নেতৃত্ব দেন । বই লিখেছেন প্রায় ত্রিশটি।

১৯৮১ সালে পুরো বিশ্বে আলোচিত সুদীর্ঘ ৪৪৪ দিন আটকে থাকা ইরান হোস্টেজ সমস্যার সফল সমাধান করে বিশ্বে নন্দিত হন।

পৃথিবীতে মাত্র হাতে গোনা যে কয়জন মানুষ ফিলিস্তিনে ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার জিমি কার্টার তাদের অন্যতম। আন্তর্জাতিক বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিরলস ভূমিকা রাখার জন্য ২০০২ সালে নোবেল শান্তি পুরষ্কার লাভ করেন।

৯৬ বছর বয়ষ্ক জিমি কার্টার যেন অনুপ্রেরণার এক পাওয়ার হাউজ। ২০১৫ সালে ব্রেণ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। স্ট্রোক হয় দুবার। নানা রকমের শারীরিক অসুস্থতার মাঝে একবার পড়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। রবিবারে ১৪ টি সেলাই শরীরে নিয়ে সোমবারেই আবার শ্রমজীবী মানুষের সাথে কাজে নেমে পড়েন অদম্য জিমি কার্টার। তাদের শুধু দিক নির্দেশনা দেননা। আক্ষরিক অর্থেই হাতুড়ি বাটালি নিয়ে কাঠের কাজ করেন। গৃহহীন মানুষদের ঘর তৈরিতে স্বেচ্ছা শ্রম দেন একজন প্রেসিডেন্ট।

হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েই কাজে নেমে পড়লে ডাক্তাররা পরামর্শ দেন- কিছুদিন পরে করলে হয়না। এই সময় জিমি কার্টার এতো সুন্দর কিছু কথা বলেন- যা অন্ততঃ একবার হলেও সবার পড়া দরকার।

কোনো কিছুই পরে করতে নেই। যে কোনো কাজ পরে করলেই ভারি হয়। চোখের পলকেই সকাল সন্ধা হয়ে যায়। সোমবার শুক্রবার হয়ে যায়। মাস ঘুরে বছর হয়। বয়স দেখতে না দেখতেই বিশ, ত্রিশ, চল্লিশ, সত্তর, আশি হয়ে যায়। ২০২১ সালের চার মাস চলে গেছে- চোখের পলকেই। তাই, সময় ফুরোবার আগেই সাধনা করে যেতে হয়।

পরে হবে মনে করলে কফি ঠান্ডা হয়ে যায়, প্রাইরোটি বদলে যায়, স্বাস্থ্য দূর্বল হয়ে যায়, দিন রাত হয়ে যায় এবং একসময় জীবনটাই শেষ হয়ে যায়। আর নিঃশ্বাস যখন শেষ হয়ে যাবে, তখন চাইলেও আর সাধনা করা যাবেনা। জীবন শুকনো কাঠের লগ না। জীবন হলো এক পূর্ণ সাধনা।

৯৬ বছর বয়ষ্ক অদম্য জিমি কার্টার
শিশু , কিশোর, যুবক , বুড়ো সব বয়সের মানুষের জন্য এক অনুপ্রেরণার আধার।

আপনার দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

লেখকঃ আরিফ মাহমুদ