এইবার আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বা এডিবির ঋণে ১ হাজার ১১৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরী করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় পিপিই, ভেন্টিলেটর, মাস্ক, গগলসসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনার মহাপ্রজেক্ট হাতে নিয়েছে।

তারা এইবার ৫০০ টাকার গগলস ৫০০০ টাকায় আর
২ হাজার টাকার পিপিই ৪৭০০ টাকায় কেনার প্রজেক্ট নিয়েছেন।

একেকটি ৫০০০ টাকা মূল্য ধরে সেফটি গগলসের জন্য মোট খরচ ধরা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। একেকটি ৪৭০০ টাকা মূল্য ধরে পিপিইর জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৫০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।

৩০০ থেকে ৫০০ টাকার একেকটি বুট সু কেনা হচ্ছে ১৫০০ টাকায় এবং এই খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

এছাড়া ৫ টা সফটওয়্যারের জন্য বরাদ্দ ৫৫ কোটি টাকা, অডিও-ভিডিও ফিল্মের জন্য ১১ কোটি টাকা, সেমিনার কনফারেন্সের জন্য ৪৫ কোটি টাকা, ইনোভেশনে ৩৬ কোটি টাকা জী ৩৬ কোটি টাকা, ৪ টা ওয়েবসাইট উন্নয়নে (বানানোয় না) ১০ কোটি টাকা, সম্মানী ব্যক্তিরা যারা এই প্রকল্পে কাজ করবেন তাদের সম্মানী বাবদ ৩৩৫ কোটি টাকা।

স্বাস্থ্য খাতের আসল জিনিসে মামুলি টাকা কিন্তু কর্মকর্তাদের সম্মানী বাবদ ৩৩৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এরা এইসব চুরি চামারীর জন্য যে বিভিন্ন সভা করবেন, আলোচনা করবেন তার জন্য ইনভেলাপ মানি বাবদ ৩৩৫ কোটি টাকা।

পৃথিবীর সবচেয়ে দামী ৫ টি সফটওয়ার
১. Cry Engine – $12,00,000 – ১০ কোটি টাকা
২. Unreal Engine – $7,50,000 – ৬.৫ কোটি টাকা
৩. New World System Public Administration – 5,00,000$ -৪ কোটি ২০ লক্ষ টাকা
8. Renderware SDK – $240,000 – ২ কোটি টাকা
৫. Source Engine – $200,000 – ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা

এই পাঁচটি সফটওয়ারের মোট দাম আসে – প্রায় ২৪.৫ কোটি থেকে ২৫ কোটি টাকা।

আর আমাদের দেশের সাস্থ্য অধিদপ্তর ৫ টি সফটওয়্যার কিনছেন ৫৫ কোটি টাকা দিয়ে!

এইটা শিওর উনারা এলিয়েনদের কাছ থেকে কিনছেন। পৃথিবীতে তো আর এত দামী সফটওয়্যার নেই।

একটা ওয়েবসাইট বানাতে প্লাটফর্ম, হোস্ট, ডিজাইন, ডেভলাপমেন্ট, ব্রান্ডিং, অয়েব এপস মিলিয়ে দুনিয়ার সবচেয়ে দামী রিসোর্স এবং ওয়েব এপ ব্যাবহার করলেও একেকটি সাইটে ১ লাখ ডলারের বেশি খরচ করার উপায় নাই। কোনভাবেই নেই! রকেট সাইন্স তো আর হচ্ছে না!

২ লাখ ডলার হিসেব করলেও তো, চারটা ওয়েবসাইটে ৮ লাখ ডলার। বাংলাদেশী টাকায় ৬.৫ কোটি টাকার মতন।

এখানে ৪ টি ওয়েবসাইট বানাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খরচ হয়েছে ১০ কোটি টাকা!

৩০ টা অডিও-ভিডিও ক্লিপ বানাতে ১১ কোটি টাকার বাজেট!

আয়নাবাজি মুভি বানাতে খরচ হয়েছিল ১.৫ কোটি টাকা। একটা রিসোর্স থেকে পাওয়া, অনন্ত জলিলের নতুন মুভি “দিন-The Day” যেইটা ইরানের সাথে যৌথ প্রডাকশনে বানানো, মরক্কোতে শুটিং করা, সেটার আনুমানিক বাজেট ১০ কোটি টাকার চেয়ে কিছু বেশি।

ইনোভেশনে খরচ ৩৬ কোটি! এইটা একটা মজার জিনিস। ইনোভেশন করতে প্রয়োজন রিসার্চ। আমি আসলেই জানি না সাস্থ্য অধিদপ্তর ঠিক কি রিসার্চে ৩৬ কোটি টাকা খরচ করেছে। কেউ যদি জানেন জানাবেন।

এই যে এতগুলো বাজেট এবং প্রস্তাবনা- এই কাজগুলো কারা করেছেন?

এগুলো করেছেন সাড়ে চার লাখ আবেদনকারী থেকে বাছাই হওয়া দেশের সেরা মেধাবী আমলা তথা বিসিএস ক্যাডাররা।

এই যে অর্থের নানাবিধ ব্যবহার, অনর্থের দারুণ সমাহার – এগুলো করতে হলেও আপনাকে বিসিএস ক্যাডার হতে হবে।

এজন্য অবশ্যই আপনার বিসিএস এর ফর্ম তোলা উচিৎ।

এরকম অপ্রয়োজনীয় অর্থ খরচের ব্যাখ্যা যদি মন্ত্রণালয় না দেয়, এর প্রতিবাদে কোনো বিসিএস ক্যাডার যদি পদত্যাগ না করে- তাহলে আমি সমগ্র বিসিএস ক্যাডারদেরকেই চোরের দল হিসেবে সাব্যস্ত করবো!

লেখা: কামরুল হাসান মামুন ও জাদীদ আহমেদ এর সংকলন

ছবিতে:

ডা: ইকবাল কবির। লাইন ডিরেক্টর, প্ল্যানিং, মনিটরিং এবং রিসার্চ পরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

মন্ত্রণালয় এর ৩০ টি অডিও, ভিডিও তৈরিতে খরচ দেখান ১১ কোটি ৫০ লক্ষ এবং চারটি ওয়েবসাইট তৈরিতে খরচ দেখান ১০ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা।