শব্দ তিনটি বহুল ব্যবহৃত, তাই এর অর্থ এবং সঠিক ব্যবহার জানা প্রয়োজন।

ইদানীং বেশ কিছু পোস্ট দেখা যাচ্ছে, কোয়ারেনটিন সময় সাথে বউ থাকলে ভালো সময় কাটতো 🙄

এরকম চিন্তাভাবনা দেখেই মূলত এই বিশ্লেষণের চেষ্টা।

প্রথমত জানতে হবে কোয়ারেনটিন কী এবং আপনি আসলেই কোয়ারেনটিন এ আছেন কিনা!

কোয়ারেনটিন শব্দটি এসেছে ইতালীয় শব্দ থেকে। যার অর্থ ৪০।

১৪০০ সালের দিকে ইউরোপে ব্ল্যাক ডেথ মহামারী রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এথেকে বাঁচতে ইতালির বন্দরে নতুন কোনো জাহাজ আসলে, তাকে ৪০ দিন সাগরে রেখে তারপর বন্দরে নেয়ার নিয়ম করা হয়। ৪০ এর ইতালিয় শব্দ কোয়ারানতা। এবং এভাবে রাখাকে বলা হতো কোয়ারান-তিনো। সেখান থেকে কোয়ারেন্টিন এর উৎপত্তি।

পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় রোগ ছড়ানো ঠেকাতে এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয় এবং এটি কোয়ারেন্টিন হিসেবেই পরিচিত।

সেরকমভাবে করোনা ভাইরাসের বর্তমান ভার্সন কোভিড- ১৯ ঠেকাতেও কোয়ারেন্টিন ব্যবহৃত হচ্ছে।

কাদের কোয়ারেন্টিন করা হয়?
কোয়ারেন্টিন শুধু তাদেরই করা হয়, যাদের মধ্যে করোনা ভাইরাস থাকার সম্ভাবনা আছে। যেমন চীন বা ইতালি ফেরত প্রবাসীদেরকে কোয়ারেন্টিন করতে বলা হয়।

করোনা ভাইরাসের সুপ্ত অবস্থাকাল ১৪ দিন হওয়ায় এক্ষেত্রে কোয়ারেন্টিন এর ব্যাপ্তি ১৪ দিন। এর মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ না পেলে তাকে স্বাভাবিক জীবনে নেয়া হয়।

আর, আইসোলেশন হচ্ছে, কারো মধ্যে যখন জীবাণুর উপস্থিতি ধরা পড়বে বা ধরা না পড়লেও তার মধ্যে উপসর্গ থাকবে তখন তাকে আলাদা করে যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে তাকে বলা হয় আইসোলেশন। এবং এটা হাসপাতালে করা হয়।

সংক্ষেপে বলতে গেলে বলা যায়, আইসোলেশন হচ্ছে অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য আর কোয়ারেন্টিন হচ্ছে সুস্থ বা আপাত সুস্থ ব্যক্তিদের জন্য।

আপনি যদি কোয়ারেন্টিন এ থাকেন, তখন আপনার সাথে বাকি দুনিয়ার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে। আপনার বাসায় একটি রুমের মধ্যে আপনি থাকবেন এবং সেখানে অন্য কেউ যেতে পারবে না। আপনার ব্যবহৃত সকল জিনিসপত্র আলাদা হবে এবং সেগুলো অন্য কেউ ধরতে পারবেনা।

কোয়ারেন্টিন আবার বিভিন্ন ধরনের হয়। যেমন যাদের মধ্যে করোনা থাকার সম্ভাবনা নেই, তাদেরকে সেল্ফ কোয়ারেন্টিন করতে বলা হয়। আবার কিছু ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিত কোয়ারেন্টিন করা হয়।

যেমন, চীন থেকে ফেরতদের আশকোনার হজ ক্যাম্পে রাখা হয়েছিল। যদিও এটা ছিল গণ কোয়ারেন্টিন এবং বাস্তবিক ক্ষেত্রে এটা আরো বিপদজনক। কারণ এতে একজন থেকে ওখানে থাকা অন্য সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
যেমনটা বলা যায়, জাপান উপকূলে আটকে পড়া ডায়মন্ড প্রিন্সেস নামে একটি প্রমোদ জাহাজের কথা। জাহাজটিতে সবাই শুরুতে আক্রান্ত না হলেও সবাইকে একসাথে বা গণ কোয়ারেন্টিনে রাখার কারণে পরে সবার মধ্যেই ভাইরাসটির উপস্থিতি ধরা পড়ে।

বিভিন্ন দেশে আবার কোয়ারেনটিন বিভিন্ন রকম। চীনে উহান প্রদেশে সবার বাসা থেকে বের হওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। আমেরিকা তাদের সামরিক ঘাটিতে কোয়ারেন্টিন করছে এবং কানাডা তাদের মূল ভূখণ্ড থেকে ২০০০ কিলোমিটার দূরে ক্রিসমাস আইল্যান্ডে রাখছে ঝুঁকিতে রাখা মানুষদের।

স্বাভাবিকভাবে এটা বলতে পারি, আমরা যারা বাসায় আছি, আমরা মূলত কোয়ারেন্টিন এ নেই। তাহলে আমরা কিসের মধ্যে আছি?

সে প্রশ্নের আগে জেনে নিন, লকডাউন সম্পর্কে।
লকডাউন হলো এমন একটি ব্যাপার, যেখানে কোনো একটি শহর বা অঞ্চলের জনপদ পুরোপুরিভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়, কিছু ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কয়েকটি দোকান বা প্রয়োজনীয় অফিস খোলা রাখা হয়। যেমন – ডিসপেনসারি বা মুদি দোকান।
যেমনটা মাদাপুর এর শিবচরে প্রথম করা হয়েছে।
এব্যাপারটা অনেকটা কার্ফিউর মতো।

বাংলাদেশে সারাদেশে এখনো লকডাউন ঘোষণা করা হয়নি, যদিও সবার আচরণে লক ডাউনই মনে হচ্ছে 🤔

তিনটা শব্দ বিশ্লেষণ করে এটা বোঝা যাচ্ছে, আমরা যারা বাসায় আছি, তারা এর কোনোটিতেই পড়ি না। তাহলে আমরা কিসে আছি?

আমরা মূলত আছি ছুটিতে 😀

আমাদের সবাইকে ছুটি দিয়ে বাসায় পাঠানো হয়েছে এবং বলা হয়েছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে।

এখন জানার ইচ্ছে হতে পারে, সামাজিক দূরত্ব ব্যাপারটা কেমন।

সামাজিক দূরত্ব হলো, প্রতিটি মানুষ নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থান করবে। যেমন করোনার ক্ষেত্রে যেটা প্রথমে বলা হয়েছিল ৩ ফুট। কিন্তু পরে তিন মিটার করা হয়েছে।

এই দুরত্ব বজায় রাখাটা সবার জন্য প্রযোজ্য, কারণ আমরা জানিনা কার মধ্যে করোনা আছে, বা নেই।
এছাড়া বলা হয়েছে, একাধিক মানুষের থেকে দূরে থাকতে, কোনো ধরনের জমায়েত না করতে।

কারণ, করোনা ছড়ানোর একমাত্র মাধ্যম মানুষ!

এই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্যই সামরিক এবং বেসামরিক বাহিনী বর্তমানে মাঠে রয়েছে, যদিও তাদের আচরণ অনেকটা লকডাউনের মতোই!

সামাজিক দূরত্বের ক্ষেত্রে জাপানের উদাহরণ দেয়া যায়। তারা সাক্ষাতে হাত না মিলিয়ে মাথা ঝোঁকায়, এবং সবসময় পাশের মানুষের থেকে দূরত্ব বজায় রাখে। ফলে তাদের মধ্যে এখনো করোনা ছড়াতে পারেনি।

ইউরোপের অনেক দেশেও এখনো লকডাউন না করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অফিস চালানো হচ্ছে। সুডেনেও মানুষ রাস্তায় বেরুচ্ছে, অফিস করছে, যদিও একসাথে দুই এর অধিক মানুষ চলা নিষিদ্ধ!

তো পরিশেষে আমরা এটা বুঝতে পারলাম, যারা কোয়ারেন্টিন এ বউ চাচ্ছিলো, তারা দু ধরনের ভুল করছে।

১. কোয়ারেন্টিন এ বউ কেন, কাউকেই পাশে রাখা যাবেনা।

২. যদি কেউ সাথে থাকে, সেটা কোয়ারেন্টিন হবেনা, হবে ভাইরাস ছড়ানোর মাধ্যম। এবং বউ জামাই দুজনেই মরবেন!

সবচেয়ে বড় কথা, আপনি আসলে কোয়ারেন্টিন এ নেই। আপনি হয়তো লক ডাউনে আছেন, অথবা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ছুটিতে আছেন। সেক্ষেত্রে বউ রাখাই যায় 😉