আসলে কি আমরা বিশ্ববিদ্যালয় মানে বুঝি? আমাদের নীতিনির্ধারকরা কি বুঝে? অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক গোস্বা করে ক্যামব্রিজে চলে যায়। সেটাই হলো কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার মূল কারণ। অর্থাৎ প্রাথমিকভাবে শিক্ষকদের মানই নির্ধারণ করবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার মত কতজন যোগ্য শিক্ষক বাংলাদশে আছে? এই সংখ্যক শিক্ষক দিয়ে কয়টা মান সম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় তৈরী সম্ভব? আমার ধারণা বড় জোর ১০ থেকে ১৫ টি। এর বেশি একটিও না। আর আমরা কি করেছি? এই দুটি নিয়ে প্রায় ৫০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আর আছে প্রায় ১০০ টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যতগুলো কলেজে অনার্স মাস্টার্স পড়ানো হয় সেগুলোও কিন্তু একেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ই। I mean বলদামিরতো একটা সীমা থাকা উচিত। আমাদের বলদামির সীমাতো সোলার সিস্টেম পার হয় গোটা বিশ্বকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। অনেকগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ ওই কলেজগুলোতে কারা মাস্টার্স পড়াচ্ছে? মাস্টার্স পাশরা মাস্টার্স পড়াচ্ছে। মানে এইটা কি?

গ্রামে গঞ্জে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কারণে ঐসব এলাকার সরকারি দলের নেতানেত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর খবরদারি করে। একদিন দেখা যাবে স্কুলে কলেজের মত বিশ্ববিদ্যালয়েও ম্যানেজমেন্ট কমিটি হবে যার সদস্য হবে এলাকার চেয়ারম্যান মেম্বার আর দলের সভাপতি। যেগুলো কলেজ হওয়ার যোগ্য না তাদের বিশ্ববিদ্যালয় বলে বিশ্ববিদ্যালয় নামের কনসেপ্টকেই বলৎকার করা হচ্ছে। যেগুলো আছে সেগুলোতেই প্রয়োজনীয় বরাদ্দের ২০ ভাগের এক ভাগ দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু বানানো হচ্ছে তাই শিক্ষকতো নিয়োগ দিতেই হবে। ফলে যোগ্যদের না পেয়ে অযোগ্যদেরই শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তাদের কথাবার্তা আচরণ কোন কিছুই শিক্ষক সুলভ নয়। সেই আচরণ দেখে সমাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সম্মন্ধে একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরী হচ্ছে। সেই নেতিবাচক ধারণাকে ব্যবহার করে সরকার আর আমলারা মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রায়ই গালমন্দ করছে। বেশি বরাদ্দ চাইলেই বলে আপনারা গবেষণা করেন না আপনাদের বেশি বরাদ্দ দিয়ে কি লাভ? এইরকম এক বিষাক্ত চক্রের মধ্যে আমরা আবদ্ধ হয়ে পড়েছি।

কামরুল হাসান মামুন
অধ্যাপক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়