আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে কলেজ বললে কি খুব ভুল হবে? তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের শর্তাবলী কী হওয়া উচিত তা পড়–ন এবং জানুন। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সের কম্পিউটেশনাল এবং ডাটা সায়েন্স বিভাগে ভারতীয় নাগরিক, ভারতীয় অরিজিন কিন্তু বিদেশি নাগরিক যারা ব্যতিক্রমীভাবে অনুপ্রাণিত, স্বাধীনভাবে গবেষণার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত গবেষকের রেকর্ড আছে এবং শিক্ষকতার প্রতি কমিটমেন্ট আছে তাদের কাছ থেকে সারা বছরজুড়ে দরখাস্তের জন্য স্বাগতম জানাচ্ছি।

বিভাগ আশা করি প্রার্থী তার নিজ গবেষণা ক্ষেত্রের সেরা জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশের মাধ্যমে নিজের সুদৃঢ় এবং সম্মানজনক অবস্থান ইতোমধ্যেই তৈরি করেছে। সহকারী অধ্যাপক পদের জন্য প্রার্থীর অবশ্যই পিএইচডি ডিগ্রি থাকতে হবে এবং একই সঙ্গে ন্যূনতম ৩ বছরের পোস্ট-ডক্টরাল অভিজ্ঞতা থাকতে হবে (যা ব্যতিক্রমী প্রার্থীদের জন্য কিছুটা ছাড় দেওয়া যেতে পারে) এবং প্রার্থীর বয়স অবশ্যই ৩৫ এর নিচে হতে হবে। আর সিনিয়র পদে আবেদনকারীদের জন্য পিএইচডি ডিগ্রির পাশাপাশি প্রার্থীকে অবশ্যই তার নিজের গবেষণা ফিল্ডে নেতৃত্ব দানকারী হতে হবে এবং একই সঙ্গে পিএইচডি ডিগ্রি সুপারভিশনের আউটস্টান্ডিং রেকর্ড থাকতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলে শিক্ষক নিয়োগের সেটি একটি টিপিক্যাল বিজ্ঞাপন যারা সারা পৃথিবীর সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞানপনের সঙ্গে জাতীয়তা ও বয়স নির্ধারণ ব্যতীত প্রায় শতভাগ মিলে।

এবার আসুন বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক পদে শিক্ষক নিয়োগের টিপিক্যাল বিজ্ঞাপন কেমন। সহকারী অধ্যাপক পদের জন্য প্রার্থীর এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষার উভয়টিতে প্রথম বিভাগ/জিপিএ ৪ (স্কেল ৫)সহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনার্স (সম্মান) স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষার যেকোনো একটিতে ন্যূনতম প্রথম বিভাগ বা গ্রেড পয়েন্ট ৪ এর মধ্যে ন্যূনতম ৩.৫ পেতে হবে।

কোনো পরীক্ষায় সিজিপিএ ২.৫ এর কম বা তৃতীয় বিভাগ গ্রহণযোগ্য নয়। প্রভাষক হিসেবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কম পক্ষে ৩ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। প্রার্থীর পিএইচডি বা এমফিল ডিগ্রি থাকলে সেটা অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

স্বীকৃত (referred) জার্নালে ন্যূনতম ২টি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রকাশনা থাকতে হবে। ওপরের দুটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পার্থক্যগুলো খেয়াল করেন। আমাদের এখানে পিএইচডি অতিরিক্ত যোগ্যতা। পোস্ট-ডক অভিজ্ঞতার উল্লেখই নেই, কিন্তু শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে ছাড় নেই। জাতীয়তা অবশ্যই বাংলাদেশি হতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফলই না শুধু, স্কুল কলেজের ফলাফলও খুব গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ আছে।

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আর টপ স্কুল আর কলেজের নিয়োগের বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে কি কোনো পার্থক্য আছে? তারপরও বলবেন আমরা কেন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাঙ্কিংয়ে নেই? আরে বাবা থাকবো কেন? ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে দরখাস্ত সারা বছরজুড়ে উন্মুক্ত রাখে।

আমাদের এখানে নিয়োগকর্তারা সুযোগ খুঁজে কখন যোগ্য প্রার্থীরা দেশে নেই আর তখনই টুপ করে অচেনা অজানা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগের পাঁয়তারা করে। এর নাম বাংলাদেশ। দেশের স্বার্থের অনেক আগে নিজের বা দলের স্বার্থ বিবেচ্য। আমরা যদি IISc শিক্ষক নিয়োগের আগের বিজ্ঞপ্তি দেখি দেখবো তারা প্রতিনিয়ত যোগ্যতার বার ওপরে উঠিয়েছে।

আর আমরা যদি আমাদের শিক্ষক নিয়োগের আগের বিজ্ঞপ্তি দেখি দেখবো আমরা প্রতিনিয়ত যোগ্যতার বার নামিয়েছি। আমরা শিক্ষকতা পেশাটিকে চ্যালেঞ্জিং করিনি। ভারতের IISc সহকারী অধ্যাপক নিয়োগের যেই শর্ত দিয়েছে সেই শর্ত আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৯ শতাংশ শিক্ষকের নেই। ওকে সেটা ঠিক আছে। কিন্তু সেই জায়গায় পৌঁছানোর জন্য লক্ষ্য স্থির করে একটু একটু করে যোগ্যতার বার উঁচুতেতো তুলতে হবে। কিন্তু আমরাতো কেবল নামাই। নিচে নামতে নামতে আমরাতো তলানিতে এসে ঠেকেছি।

লেখক : শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়