আগামী ৫ই অক্টোবর বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা। হাতে খুব একটা সময় নেই। পরীক্ষার জন্য শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি এবং পরীক্ষার হলে যা যা করণীয় সে ব্যাপারগুলি উঠে এসেছে বুয়েটের ‘১৮ ব্যাচের প্রথমস্থান অধিকারী “মো. মেহরাব হক” এর লেখায়।
____________________________________

“বলাই বাহুল্য, ভর্তি পরীক্ষার আর ১ মাসও বাকি নেই, অবশ্য এতে তাড়াহুড়োর কোন কারণ নেই, কারণ বুয়েট অ্যাডমিশন টেস্টের অন্যতম প্রধান অবজেক্টিভ হল সময় খুব কম আছে জেনেও মাথা ঠান্ডা রেখে নিজের সর্বোচ্চ পটেনশিয়ালে পারফর্ম করা। সো আমি এখানে এক্সামের আগের লাস্ট মোমেন্টের কয়েকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং সেইসাথে পরীক্ষার হলে করণীয় বিষয়াদি তুলে ধরব। জানোই তো, এখন সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল নতুন করে কিছু করা বা জানার থেকে তোমার বর্তমান অবস্থাকে স্বকীয়ভাবে টিকিয়ে রাখা, অর্থাৎ এখন স্ট্র্যাটেজি হবে ডিফেন্সিভ, নট অ্যাগ্রেসিভ।

পরীক্ষাপূর্ব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ঃ এক্ষেত্রে আমি পুরো আলোচনাকে প্রায়োরিটি অনুসারে ৩ টি মেজোর সেকশনে ভাগ করব, ১)ফিজিকাল ২)মেন্টাল এবং ৩)পড়াশোনা বা স্টাডি।
১) ফিজিকাল প্রিপারেশনঃ এ ব্যাপারটা প্রথমে তুলে ধরলাম কারণ বলা বাহুল্য এসময় এটা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ, ইনফ্যাক্ট পড়াশোনার থেকেও, যারা অ্যাডমিশন টেস্টের ব্যাপারে একটু বেশিই প্যাশনেট ছিলা তারা অনেকেই নিজের হেলথের ব্যাপারটা একেবারেই গুরুত্বের সাথে নাওনি, কিন্তু এ ব্যাপারে তোমাদের হয়ত নতুনকরে ভাবতে হবে। নিচের পয়েন্টগুলো সিরিয়াসলি মেইনটেইন করবাঃ
->দৈনিক ৮ ঘণ্টা বা তার বেশি ঘুমানো।
-> রেগুলার ইন্টারভালে পানি পান করা।
->স্ট্রেসফুল কাজ কম করা।
->অন্তত একবার ফুল বডি ডিটক্স করা, যাতে ফুল্লি অ্যাক্টিভ থাকতে পারো।

২)মেন্টাল প্রিপারেশনঃ অ্যাডমিশন টেস্ট একটা স্পেশাল এক্সাম এটা ঠিক, কিন্তু It’s just an exam. পরীক্ষাটা অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু এটাকে মনের ভেতরে খুব বড় করে চিন্তাভাবনা করলে পরীক্ষার সময় অ্যাড্রেনালিন ক্ষরণ শুরু হয়ে যেতে পারে, আর বাস্তবতা হল এটা জাস্ট একটা পরীক্ষাই, এখানে তোমাকে তো আর বাঘের সাথে লড়াই করতে হচ্ছেনা ! মেন্টালিটি কুল কর, পরীক্ষার প্রশ্ন কঠিন করলে সবার জন্যই কঠিন আর সহজ করলেও তা সবার জন্যই, তোমার কাজ নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে আসা। অনেকেই হয়ত খেয়াল করবে, বাসায় রিলাক্সের সাথে তুমি যখন কোন প্রবলেম সল্ভ কর, সেটা অনেকটা সল্ভেবল মনে হয়, আর যখনি মনে চাপ নিয়ে কর, পারা জিনিসও অনেকসময় ট্রাবলসাম মনে হয়, এজন্য মনকে বোঝাও, এটা জাস্ট একটা পরীক্ষা, অগ্নিপরীক্ষা না।

৩)স্টাডিঃ পারতপক্ষে নতুন করে কিছু না বোঝাই ভালো, কারণ তুমি সিনসিয়ার হলে নলেজ অ্যাকুয়ার হয়ে যাওয়ার কথা। এখন এ ব্যাপারে তোমার মূল কাজ হবে ২ টা। যা যা জানো সেগুলোতেই শান দেওয়া এবং প্রবলেম ৩ মিনিট ও ২-৩ ইঞ্চি জায়গার মধ্যে সল্ভ করার ট্রাই করা। বাসায় ডেমো এক্সাম দাও, বারবার, তাহলে এক্সামহলের চাপও বেশ অনেকটাই কাটিয়ে উঠবে, মানে পরীক্ষার হলে অনেকটাই ফিল ফ্রি অবস্থা হবে। কনফিডেন্স গ্রো করার জন্য প্রশ্নব্যাংক থেকে আগের বছরের কোশ্চেনগুলো সলভ করতে পারো, যেমন ৩০ মিনিট কাউন্টডাউন টাইমার সেট করে প্রবলেম সল্ভ করতে পারো, ১০ টা বা তার বেশি প্রবলেম সল্ভ করতে পারলে কনফিডেন্স প্রচুর বেড়ে যাবে। Positivity is the key thing here.

এবার পরীক্ষার হলে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় তুলে ধরতে চাইঃ
১)It’s just an exam and you are inside just an exam hall, not in any lion’s cage. মাথা ঠান্ডা রাখো।
২)পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে পারতপক্ষে কারো সাথে কথাবার্তা না বলাই ভালো, এসময় সবথেকে বেস্ট হবে যদি তুমি ফর্মুলা, রিএকশন এগুলো মনে করতে থাকো অথবা আগের বছরের প্রশ্নগুলোর ব্যাপারে চিন্তা করতে থাকো।
৩)পরীক্ষা শুরু হওয়ার সাথে সাথে পুরো প্রশ্নের সবগুলো প্রবলেম দেখতে যাবানা। যেকোন বিষয় সিলেক্ট করে তার শুরু থেকে স্ক্যান করতে থাকো, যদি তোমার মনে হয় ২-আড়াই মিনিটের মধ্যে সল্ভ করতে পারবা, তাহলে সেটা সল্ভ কর।
৪)বুয়েট অ্যাডমিশন টেস্ট কিন্তু খুবই টেকনিকাল। কী কী রাশিমালা দেওয়া আছে সেগুলো আলাদাভাবে কোশ্চেনে না তুললেও হবে, তুমি সরাসরি ফর্মুলাতে মান বসিয়ে ক্যালকুলেশন করতে পারো। ম্যাট্রিক্সের হিসাবগুলো (যেমন ইনভার্স ম্যাট্রিক্স/গুণ) ক্যালকুলেটরে করে সরাসরি লিখে পাশে Using Calculator সাইডনোট দিতে পারো, অর্থাৎ, ফোকাস অন দা কোর থিংস।
৫)এভাবে ২-আড়াই মিনিটের মধ্যে যেগুলো সল্ভ করতে পারবা সেগুলো সল্ভ করে ফেলো।
৬)এবার একবার কাউন্ট করতে পারো যে তুমি কয়টা শেষ করলা, এরপর শুরু থেকে বাকি কোশ্চেনগুলোর যেগুলো সল্ভ করতে পারবা বলে মনে কর (যতক্ষণই লাগুক) সেগুলো সল্ভ করতে থাকো।
৭) শেষে যেগুলো পারবানা বলে মনে হচ্ছে সেগুলোর যতটুকু পারো ততটুকুই কর, সঠিক পথে আগালে পুরোটা সল্ভ করতে না পারলেও পার্শিয়াল মার্কিং পেতে পারো।
৮)পরীক্ষার সময় রোবটিক মোডে থাকবা, কোন ছেলে বা মেয়ে যতই ডাকুক বা খোঁচা দিক, একেবারেই (একেবারেই) ইগ্নোর করবা, যেন তুমি কিছুই শোননি, কারণ বুয়েট অ্যাডমিশন টেস্টে সাইলেন্ট এক্সপেল হয়। তুমি হয়ত জানলাইনা কখন তোমাকে এক্সপেল করে দেওয়া হয়েছে, হয়ত রেজাল্টের পরেও জানবানা, নিঃসন্দেহে এতো রিগ্রেটফুল অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে চাওনা, এক্ষেত্রে আমার একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চাই, পরীক্ষার মাঝখানে আমার একটা কলম মেঝেতে পড়ে গিয়েছিল, সামনেরজনের কাছে চলে গিয়েছিলো সেটা, তো আমি সেটা নেওয়ার জন্য উদ্যত হতেই দেখি স্যার এদিকে তাকিয়ে আছেন, তখন আমি ভাবলাম কলমটা নিতে গেলে স্যার ভুল ভাবতে পারেন, তো আমি সেটা না তুলেই আরেকটা কলম বের করে লেখা কন্টিনিউ করলাম, পরীক্ষার পরে কলমটা তুলেছিলাম।

তোমাদের সবার জন্য শুভকামনা রইল, হয়ত তোমার সাথেই বুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা হবে !”

– মো. মেহরাব হক

©বুয়েটিয়ানস ডায়েরি