আমাদের মেনে নেয়ার ক্ষমতাঃ

বাংলাদেশে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী যাদের বয়স ২০ বছরের ওপরে, তাদের ৮০% লোকের সত্যিকারের জন্মদিন আর সার্টিফিকেটের জন্মদিন আলাদা।
আমার কাছে সঠিক পরিসংখ্যান নেই। কারো কাছে পরিসংখ্যান থাকলে জানাবেন।

ভুল জন্মদিনে সমস্যা কি?
বিদেশিরা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাস করে কি ভাই তোমাদের দেশে এমন শিডিউল করে জানুয়ারির ১ তারিখে সবাই জন্ম নেয় কিভাবে? হাসপাতাল গুলো সামলায় কি করে? জানুয়ারির ১ তারিখ কি কোন পবিত্র দিন?

আমি সমস্যাটা দেখি অন্য জায়গায়। দেশে বিদেশে আমাদের মাসে কয়েকবার বিভিন্ন জায়গায় জন্মদিন লিখতে হয়, তার মানে ততবার একটা করে মিথ্যা কথা লিখতে হয়।

শাস্ত্রে আছে মিথ্যা বলা মহাপাপ। বছরে কয়েকশত বার মিথ্যা কথা বলে/লিখে যাচ্ছি। এর জন্য আমি দায়ী নই, কিন্তু জেনেশুনে তো মিথ্যা লিখছি, এর জন্য আমার বা কাঁধের ফেরেশতা কি পাপের খাতায় ট্যালি করবেন না?

এই কাজটির জন্য মুল দায়ী হচ্ছেন আপনার প্রথম জন্মদাতা পিতা এবং আপনার দ্বিতীয় জন্মদাতা শিক্ষক। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এস এস সি পরীক্ষার আগে বোর্ডে ফরম ফিল আপ করার সময় ওনারা এই মিথ্যা কথাখানা নিজ হাতে সৃষ্টি করে দেন।

আপনার পিতা এবং শিক্ষক দুজনেই আপনার ভাল চান। আপনি যাতে ১ টা বছর বেশি সরকারি চাকুরী করতে পারেন – কেবল মাত্র এই সদিচ্ছায় এই পাপ কাজটি করেন।

১৬ কোটি জনসংখ্যার ২০ বছরের বেশি শিক্ষিত জনসংখ্যা যদি ৫ কোটি হয়, তাহলে বছরে গড়ে একজন ৫০ বার জন্মদিন মিথ্যা লিখে তাহলে সারা বাংলাদেশে বছরে ২৫০ কোটি মিথ্যা ব্যয় হচ্ছে কেবলমাত্র ছোট একটা সুবিধা পাবার আশায়।

বিনা পাপে কি এই সদিচ্ছাটুকু পূরণ করা যেত না? সরকারি চাকুরীজীবীর বয়স ১ বছর বাড়ানোর আবেদন করলেই তো হতো। কতগুলো মিথ্যা থেকে বাঁচা যেত।

এই অপ্রয়োজনিয় মিথ্যাগুলো যারা লিখেন, যারা দেখেন সবাই মেনে নিয়েছি।

(২)
চাকুরীর জন্য সবাই সিভি লিখেন। প্রথমেই একটা অবজেক্টিভ লিখেন। ডাহা একটা মিথ্যা কথা সুন্দর করে লিখেন। সেই মিথ্যাখানা কপি হয়ে ঘুরতে থাকে।
ইন্টার্ভিউ বোর্ডে যারা থাকেন, ওনারা দেখেন কে কত সুন্দর ভাবে মিথ্যা কথা বলেছে। মিথ্যা মেনে নেবার ক্ষমতা দেখেন।

(৩)
ছোটবেলায় কেউ যদি জিজ্ঞাস করতো – বড় হলে কি হতে চাও। কমন উত্তর ছিল ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার। যে উত্তর দিলে সাময়িক ভাবে প্রশ্নকর্তাকে খুশি করানো যায় – সেই উত্তর দেয়ার জন্য অনায়াসে মিথ্যা বলে এসেছি।

অনেক সময় গবেষণার কাজে সার্ভে করতে হয়। মানুষ ভুল তথ্য দিয়ে কি যে মজা পায়। একটা বাসা খুঁজে পাচ্ছেন না, কাউকে জিজ্ঞাস করলেন। সে জানেনা এই কথাখানা স্বীকার করবে না। কি সুন্দর ভাবে একটা ভুল তথ্য দিয়ে একটা উপকার করে ফেলেছেন এমন একটা ভাব নিয়ে থাকেন।

এসব মিথ্যায় কি পাপ হয়? শাস্ত্র কি বলে?

আর কি কি মিথ্যা কথা বলি আমরা?
কোনগুলো মেনে নিয়েছেন?

লেখকঃ আসির আহমেদ

শিক্ষক, কিউশু বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান