রি-ইউজেবল রকেট লঞ্চ সিস্টেম,
২০১৫ সালের আগ পর্যন্ত মহাকাশে প্রেরিত রকেটের বুস্টার গুলোকে মহাকশেই উন্মুক্ত করে দেওয়া হত। যেগুলো প্রচুর পরিমাণে মহাকাশ বর্জ্যের কারণ হয়ে দাড়ায়। অর্থাৎ ২০১৫ সালের আগ পর্যন্ত কোন রকেট মহাকাশের যাবার পর আর পৃথিবীতে ফেরত আসত না। যদিও নাসার স্পেস-শাটল প্রোগ্রামের কিছু রকেট পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারত। কিন্তু তাতে একটি রকেটকে পৃথিবীতে ফেরত আনতে যে পরিমাণ খরচ হত তাতে আরো কয়েকটি নতুন রকেট বানিয়ে অনায়াসে মহাকাশে প্রেরণ করা যেত। তাই নাসা তাদের স্পেস-শাটল প্রোগ্রাম থেকে রকেট ফিরিয়ে আনার চিন্তা বাদ দেয়।

২০১১ সালে ইলন মাস্ক ঘোষণা দেয় যে তার কম্পানি স্পেস-এক্স (Space-X) রি-উইজেবল রকেট লঞ্চিং সিস্টেম নিয়ে কাজ করছে। রি-ইউজেবল বলতে, একটি রকেটের বুস্টার গুলোকে একবার মহাকাশে প্রেরণ করার পর পৃথিবীতে ফিরিয়ে এনে আবার সেটাকে মহাকাশে রকেট বুস্টার হিসাবে প্রেরণ করা।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে স্পেস-এক্স তাদের নতুন ডিজাইনের রি-ইউজেবল ফ্যালকন-৯ রকেট সফল ভাবে উৎক্ষেপণ করে এবং ফ্যালকন-৯ এর ফার্স্ট স্টেইজ বুস্টার মেইন বুস্টার থেকে সেপারেট হয়ে উলম্ব ভাবে পৃথিবীতে ল্যান্ডিং করে অর্থাৎ পৃথিবীতে ফিরিয়ে নিয়ে আসে।

২০১৭ সালের মার্চে স্পেস-এক্স তাদের ফ্যালকন-৯ রকেটের আগের মিশনে সফলভাবে ল্যান্ড করা বুস্টারকে সফল ভাবে রি-ইউজ করে। তার তিন মাস পর জুনে স্পেস-এক্স তাদের দ্বিতীয়বারের মত রকেট বুস্টারের সফল রি-ইউজ করে। ফ্যালকন-৯ সিরিজের একটি রকেট প্রথমবার উৎক্ষেপনের পাঁচ মাসের মধ্যে তারা সেটিকে পরপর দুইবার রি-ইউজ অর্থাৎ পুনঃব্যবহার করে। তারা তৃতীয়বারের মত রকেটের সফলভাবে রি-ইউজ করে ২০১৭ সালের অক্টোবরে।

স্পে-এক্স ফ্যালকন-৯ এর ফার্স্ট স্টেইজ বুস্টারের ল্যান্ডিং এবং রি-ইউজ করতে সফল হলেও অরবিটাল স্পিডের কারণে সেকেন্ড স্টেইজ বুস্টারের ল্যান্ডিং এবং রি-ইউজ করতে পারেনি।

কিন্তু সু-সংবাদ হল স্পেস-এক্স ঘোষণা দেয় ২০২০ সালের মধ্যেই তারা নতুন ডিজাইনের রকেট স্টারশিপ লঞ্চ করবে যা পুরোপুরি রি-ইউজেবল অর্থাৎ ফার্স্ট এবং সেকেন্ড দুটো স্টেইজের বুস্টারকেই সফল ভাবে ল্যান্ডিং এবং রি-ইউজ করা যাবে। স্পেস-এক্স আগামী চন্দ্র এবং মঙ্গল মিশন গুলো এই স্টারশিপ রকেট দিয়েই হবে।

এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র স্পেস-এক্স ই রিউজেবল রকেট লঞ্চ সিস্টেম সফল ভাবে ব্যবহার করে। এর সাথে আরো তিনটা প্রতিষ্ঠান- অ্যামাজনের ব্লু-অরিজিন, ভার্জিন গ্যালাকটিক এবং ইন্ডিয়ার ইসরো রিউজেবল রকেট লঞ্চিং সিস্টেমের প্রটোটাইপ নিয়ে কাজ করছে।

তথ্যসূত্র: নিউইয়র্ক পোস্ট, স্পেসএক্স ডট কম, ফিজিক্স ডট অর্গ, উইকিপিডিয়া।

লেখকঃ মুহাম্মদ রবিউল হাসান
ইডি/বাংলায় বিজ্ঞানচর্চা/ মুহাম্মদ রবিউল হাসান