আমার যদি ক্ষমতা থাকতো, তাহলে আমাদের দেশের ভিসিদের সাথে পৃথিবীর বড়ো বড়ো ইউনিভার্সিটির ভিসিদের মিটিং করতে বসাতাম। এই মিটিং পাবলিকলি প্রচার করা হতো।

দুনিয়ার বাঘা বাঘা ভিসিরা আমাদের ভিসিদেরকে প্রশ্ন করতো। তারা জানতে চাইতো, কেন আমাদের ইউনিভার্সিটির মান দুর্বল। কেন সেখানে বিশ্বমানের শিক্ষা নেই। কেন বিশ্বমানের গবেষণা নেই। —এমনসব প্রশ্নবাণে দেশের ভিসিদের মুখ লাল হয়ে যেতো। লজ্জায় তারা আমতা-আমতা করতো। সেই মুখ শিক্ষার্থীরা দেখতে পেতো!

আমাদের দেশের ভিসিরা শিক্ষা-গবেষণা নিয়ে প্রতি বছর কয়টা বই প্রকাশ করে? দেশের ভালো দৈনিকে কয়টা প্রবন্ধ লিখে? —সারা বছরে পঞ্চাশ-একশোটা হবে? অথচ, রাজনৈতিক তৈলমর্দনযুক্ত প্রবন্ধ লিখবে। রাজনৈতিক প্রশংসাসূচক বই লিখবে। সেসব অখাদ‍্য কুখাদ‍্যে ভরা বই কেউ কেনে না। কেউ পড়ে না।

সরকার ইচ্ছে করে, জেনেশুনে, ঠান্ডা মাথায় কতোগুলো অনুগত লোককে ভিসি বানায়। তাদের সিভি পড়তেই আমার লজ্জা হয়। আফসোস হয়। দুনিয়ার সেরা সেরা ইউনিভার্সিটি থেকে, বাঘা বাঘা সুপারভাইজরদের অধীন জ্ঞান-গবেষণার কোন অভিজ্ঞতা তাদের নেই। তাদের কোন ভালো পাবলিকেশন থাকে না। তাহলে এই শিক্ষকরা কি করে অভিভাবকের ভূমিকা রাখবে? কি করে তাদের অভিভাবকত্বের অধীন দুনিয়া নাড়া দেয়া তারুণ‍্য তৈরি হবে?

বুড়ো হলেই কি জ্ঞান বাড়ে? আমি দেখেছি, অনেকের সিভিতে লেখা থাকে “তিনি থাইল‍্যান্ড, ভারত, আমেরিকা, ইংল‍্যাণ্ড ভ্রমণ করেছেন”। বিষয়টা এমনভাবে লেখা থাকে যেনো এটা তার প্রফেশনাল জীবনে অনেক বড়ো ভূমিকা রাখছে। বিদেশে গিয়ে যদি ভালো কোন কনফারেন্সে, মিটিং-এ লেকচার দিতেন, ডেলিগেইট হয়ে গিয়ে যদি ভূমিকা রাখতেন—তাহলে একটা কথা ছিলো।

তাদের অনেকেই বুঝতে পারেন না, বাংলাদেশের তরুণরা এখন অনেক স্মার্ট। তাদের এইসব সিভি পড়ে তরুণরা হাসে আর আফসোস করে!

সেসব ভিসিরা দিনভর রাজনৈতিক নেতাদের সাথে যোগাযোগ করতে করতে, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। শিক্ষার মান কি করে বাড়াতে হয়—সেটা ভুলে যান। গবেষণার মান কি করে বাড়াতে হয়—সেটা ভুলে যান। কি করে রাষ্ট্র থেকে অধিক ফান্ড নিতে হয়, কি করে দিন দিন অধিকতর যোগ‍্য শিক্ষক নিয়োগ দিতে হয়—সেগুলো ভুলে যান।

কি করে বিশ্বের সেরা সেরা বিশ্ববিদ‍্যালয়ের ভিসিদের সাথে, শিক্ষাবিদদের সাথে যোগাযোগ করে নতুন নতুন বিষয় শেখা যায়, প্রয়োগ করা যায়—সেগুলো ভুলে যান। দেশের শিক্ষা নিয়ে কি করে নতুন নতুন আধুনিক প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারকে চাপ প্রয়োগ করা যায়, সেটা ভুলে যান।

এমন একটা ভয়ংকর আত্মঘাতী ব‍্যবস্থাপনায় স্বাধীন দেশের বিশ্ববিদ‍্যালয়গুলো চলছে। এমন ব‍্যবস্থাপনায় কি কোনদিন একটা সমাজে যোগ‍্যতার লড়াই, প্রতিযোগিতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা পাবে? আত্মমর্যাদাশীল, দায়িত্ববোধ ও সৎ জনশক্তি গড়ে উঠবে? সহস্র সহস্র তরুণ দেশ থেকে বিদেশে গিয়ে আর ফিরবে? আবিষ্কার-উদ্ভাবনে পৃথিবীতে লিডিং দেশ হওয়া কি কোনদিন সম্ভব হবে? —এই সত‍্যগুলো বুঝেও আমরা, না বুঝার ভান ধরে নির্বিকার বসে থাকি!

এভাবে কতোদিন নির্বিকার হয়ে থাকবো আমরা? কতোদিন?
……………………
@Rauful Alam