ঢাকা মেডিকেলে প্রতি বেলায় ডাক্তারদেরকে দেয়া খাবারে বিল করা হয়েছে প্রতি মিল ১৩,৩৩৩ টাকা।

আমার মনে হয় এটা নিয়ে পলিটিক্স করার কিছু নেই। গত ১০ বছর ধরে উন্নয়নের নামে এটাইতো আমরা দেখে আসছি। এ আর নতুন কী!

গত বছর চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫ টাকার এক জোড়া গ্লাভস এর দাম প্রস্তাব করা হয়েছে ৩৫,০০০ টাকা।

সবার মনে প্রশ্ন আসতে পারে যারা এই বিলগুলো প্রস্তুত করেন এরা কি আবুল? এরা কি হাবলু? এরা কি জানেনা এসব নিয়ে রিএকশান আসবে?

না, এরা বোকা নয়। এই বিলগুলো জেনেশুনেই করে।

আসুন আগে একটা ঘটনা শুনি।

এক ভিক্ষুক একবার এক বাবুকে বললো, বাবু ৫ টা টাকা ভিক্ষা দেন না। একটা সিংগারা খাবো।

বাবু ভিক্ষুককে ১০ টাকার একটা নোট দিলো।

ভিক্ষুক সাহস করে এবার বললো, বাবু আমার স্ত্রীও আমার মতো না খেয়ে আছে। ওর জন্যও ১০ টা টাকা দেন।

বাবু ভিক্ষুককে ২০ টাকা দিলো।

ভিক্ষুক যারপরনাই অবাক হলো। যা চাচ্ছে ডাবল দেয়া হচ্ছে।

তার লোভ বেড়ে গেলো। এবার বললো, বাবু বাসায় বাচ্চারা না খেয়ে আছে। ওদের জন্যও ২০ টা টাকা দেন।

বাবু এবার ৪০ টাকা বের করে দিলো।

ভিক্ষুকের লোভ আরো বেড়ে গেল। সে এবার বললো, বাবু দুপুরে ভাত খাওয়ার লাইগা ৫০ টা টাকা দেননা।

বাবু এবার ১০০ টাকা দিলো।

ভিক্ষুকের আশ্চর্য হওয়া থামছেইনা। এবার সে আরো ১০০ টাকা দাবী করলো।

বাবু, কষে ঠাস করে একটা চড় মারলো।

ভিক্ষুক খুব আনন্দিত হলো চড় খেয়ে। চড় মারার জন্য ধন্যবাদ দিলো।

বাবু ভিক্ষুককে চড় খেয়ে খুশি হবার কারণ জিজ্ঞেস করলো।

ভিক্ষুক বললো, আমি বুঝতে পেরেছি আপনার সামর্থ্য ১০০ টাকা পর্যন্তই। এ কথা না জানলে সারাদিন একধরণের অতৃপ্তিবোধ থাকতো। মনে হতো কেন ৫০০/১০০০ টাকা চাইলাম না। এখন কোন আফসোস নেই।

এই ধরনের ভুতুড়ে বিল যারা করে তারা জানে এই বিল একাউন্টস/অডিট পার হতে ঝামেলা আছে। নিউজ হয়ে গেলে একবার তখন ঝামেলা বাড়ে। অন্যসময় একাউন্টস কে ১০% আর অডিটকে ২০% দিয়ে খালাস পাওয়া যায়।

তারপরও তারা কেন করে এ ধরনের বিল?

তারা আসলে জনগণের টলারেন্স যাচাই করে।

যেমন সরকারি খরচের খোজ খবর যারা নেন তারা জানেন এখন যেই ধরণের উন্নয়ন বাংলাদেশে হচ্ছে সেখানে ৪০০% পর্যন্ত দুর্নীতি করলে সেটাতে কেউ মাথা ঘামাবে না। জনগণও পাত্তা দিবেনা।

সরকারি যেই বিল্ডিংটা ১২ কোটিতে করা হয় অনায়াসেই এই বিল্ডিংটা সর্বোচ্চ কোয়ালিটির সিমেন্ট, রড দিয়ে করলে ৩ কোটি দিয়ে করা যাবে।

তার মানে ৪ গুণ বিল ধরা হয়। এখানে কিন্তু জনগণ আপত্তি করেনা।

১ কোটি টাকার যে মেশিন কেনা হয় এগুলো বড়জোর ২৫ লাখ টাকা হবে।

এখানেও ৪ গুণ বিল করা হয়।

এবার করোনা ভাইরাসে পিসিআর মেশিনও ৪/৫ গুণ দামেই কেনা হইছে। ৪ গুণ দাম সরকারি সব কেনাকাটাতেই। ৪০০ টাকার এপ্রন ১৫০০ টাকা। ৬০০ টাকার প্রেসার মেশিন ২৫০০ টাকা এভাবে।

বাংলাদেশের সব সেক্টরেই ৪০০% দুর্নীতি হয়। এটা জনগণ মেনে নিয়েছে। ৪০০% দুর্নীতি হলে এটা নিয়ে কারো প্রশ্ন থাকেনা। কেউ অবাক হয়না।

ঐকিক নিয়মেই হিসেব মিলিয়ে ফেলতে পারবেন।

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর বাজেট ২০০৭ সালে ছিল ১০,০০০ কোটি। ৪ বছর পরে হয় ২০,০০০ কোটি। আরো ৫ বছর পরে হয় ২৮০০০ কোটি। এটার কাজ শেষ হতে হতে চূড়ান্ত বিল ৪০,০০০ কোটি ক্রস করবে।

আসলে খরচ কিন্তু ঐ ১০,০০০ কোটিই। বাকীটা দুর্নীতি।

এটা নিয়ে কিন্তু আমরা উচ্চবাচ্চ্য করবোনা। যদি চূড়ান্ত বিল ৪০,০০০ কোটির জায়গায় ১০ লাখ কোটি হতো তাইলে কিঞ্চিত হাকডাক করতাম আমরা।

মেট্রোরেলও সেইম কাহিনী। ৯৪,০০০ কোটি টাকার মেট্রোরেল মূলত ২৫,০০০ কোটিরই কাজ।

লুটপাটবাহিনী আসলে সন্দিহান আর কত বাড়ানো যাবে দুর্নীতি। জনগণের লিমিট দেখসে তারা।

ঢাকা মেডিকেলে প্রতি মীল এ ১৩,৩৩৩ টাকা বিল করায় জনগণ একটু নড়েচড়ে বসেছে।

তার ফলে কী হবে?

ফাইনাল বিল কিন্তু প্রতি মীল ৫০০+ টাকারই করা হবে। এইটা নিয়ে কেউ তখন নিউজ করবেনা আর।

ঐ ভদ্রলোক যেমন ১০০ টাকা চাওয়ার পরে ভিক্ষুককে চড় মেরে দিসে এবং ভিক্ষুকও বুঝে নিসে ভদ্রলোকের সামর্থ্য ১০০ টাকাই।

হে জনগণ, আপনারাও লুটপাটকারীদের জানাই দেন আপনারা আর কত গুণ বাড়াইতে পারবেন সহ্য ক্ষমতা।

এখন ৪০০% পর্যন্ত দুর্নীতি করলে সেটা নিউজ হয়না, আলোচিতও হয়না। আপনাদের এই লিমিটটা সর্বোচ্চ ৮০০% করেন। ৮০০% দুর্নীতিই আপনাদের সর্বোচ্চ টলারেন্স ক্ষমতা। এইটা জানায়া দেন।

তাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৪ ওয়েবসাইট বানাতে ৪ লাখ টাকা লাগলে ৪*৮= ৩২ লাখ টাকা বিল হতো।

৮০০% বিল হতো।

এবারের মতো ১০ কোটি হতোনা।

©Shamsul Arefin