সরকারি বিজ্ঞান কলেজ।যাত্রাটা শুরু হল নিজের পছন্দেই।ব্যাচ এ প্রাইভেট সব বাঘা বাঘা বিসিএস টিচার। বেশ ভালই যাচ্ছিল দিন। পড়াশুনো আর সাথে পানি নামক বেসরকারি হোস্টেলের ডাইল।
সরকারি হল পাওয়ার আগে ঢাকায় প্রথম প্রথম বেহাল দশা। নিজের শরীর সাথে লেখাপড়ারও।তবুও ঢাকায় তো লক্ষ্য নিয়ে এসেছি। পথ যতই দুর্গম হোক পাড়ি যে দিতেই হবে। বহু ঝামেলা শেষে সরকারি হোস্টেলে সিট।
লেখাপড়া টা এবার শুরু হবে বেলা শুনছ?
এখন আর কেউ আটকাতে পারবেনা।”
বেলা বোস তখন ছিল না। তাকে ছাড়াই দিব্যি ৩টা ৪ টা জাগা যায় এই রঙিন ঢাকার মায়াজালে। হল লাইফের মজা সাথে লেখাপড়ার দিকটাও সমান তালে বেশ ভালই যাচ্ছিল।

হঠাত নেমে এল সন্ধ্যা :
ব্যাচের ৫৮ জনের সাথে তালমিলিয়ে চলাটা ছিল কষ্টকর।
তবুও চলছিলাম বেশ ভালই।
হঠাত একটা অপারেশন হল!৭ দিন রেস্ট।
আবার ৭ দিন পর আরেকটা হল দেড় মাস রেস্ট।
ব্যাস দুই মমাসেই লাইফ থেকে ছন্দপতন! ঢাকার সবাই অনেক এগিয়ে গেছে আমি তখন এক মূর্খ, পেছনেরও অনেকটা ভুলে খেয়েছি স্যালাইন আর ওষুধপাতির সাথে।

এইবার ভাই পর্বঃ
যখন ব্যাচে ছন্দপতন হল একটা মাস মাথার উপর দিয়ে পড়ালেখাগুলো যেতে আরম্ভ করল আর আমি কাকতাড়ুয়া হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।এক দেড় মাস পড় বুঝলাম আমি আসলে কিছুই শিখতে পারতেছিনা।

ভাই ধরলাম, সিরিয়ালটা ছিল অনেক লম্বা!তারাও হেল্পফুল ছিল আমি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অনেক দূর এগিয়ে এলাম।

যাই হোক আবার রোগে ধরল
((রেস্ট -পিছিয়ে পড়া-আবার নতুন ভাই))
লাইফটা এই চক্রে আটকে গেল।
থেকে থাকলাম না।হলের সবচেয়ে রোগা ব্যক্তির খেতাব জয় করে তখন আমি অনেকটা হেরে গেছি।
পড়ালেখা থেকে অনেকটা অনেকটা পিছিয়ে গেলাম যা ভাবছেন আরও অনেক বেশীই।
ব্যাস কলেজ প্রাইভেট সব অফ।নিজের মত চলা শুরু। বার্ষিকে পাশ!আলহামদুলিল্লাহ শিরোনামে ফেজবুক স্টাটাস।বেশ ভালই গাড়ির গতি।

পরবর্তী স্টেশনঃ
Status:
“প্রিটেস্ট পরীক্ষা দিতে পারি নাই ১০৪ ডিগ্রী জ্বরে।
জ্বরের কারন:
Blood Infection
Urine Infection
টাইফয়েড
crp ৫ গুন বেড়েছিল
আর জানিনা
ট্রিটমেন্ট শেষে আবার সুস্থ..
আজ পবিত্র বুধবার আবার ১০৪ জ্বর।চোখেমুখে দেখিতাছি সরিষার ফুল!”

এরপর শনিবার আবার জ্বর শুরু।
১০৪-১০৫ জ্বর চলল অনেক দিন। ল্যাবএইডে রেগুলার চেকাপ ১ মাস প্রতিদিন বিকালে আর দিন শেষে মুড়ির মত এক গাদা এন্টিবায়োটিক
টেস্ট পরীক্ষা দেই ১০৫ জ্বর নিয়ে।
রেজাল্ট হয়েছিল ২০ তম ১২০০+ ছাত্র ছিল।
আহ কী জীবন! টেস্ট পরীক্ষার পরে ভর্তি হলাম পিজি হাসপাতালে। ২০-২২ দিন সেখানেই ভর্তি! হাতে পায়ে ক্যানোলা ভরা।সকাল বিকাল রাত্রির ইঞ্জেকশনের অত্যাচারে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার স্বপ্ন লাফ দিয়ে পিজির জানালা দিয়ে পালায়। কয়েকবার অজ্ঞান হয়েছিলাম মনে আছে।

থার্টি ফার্স্ট নাইট আর পিজি হাসপাতালঃ

জীবন কী তা বুঝতে আপনাকে হাসপাতালে আসতে হবে।নতুন বছরের শুরু হবে ১২ টা ১ বাজে।
তখন বাইরে আতশবাজি ফাটছিল, শাহবাগের প্রতিটা ছাদে।আর গতকালকে কথা বলা পাশের বেডের চাচা চোখের সামনে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন ঠিক সেই সময়।আতশবাজি আর তার জীবন যেন পাল্লা দিয়ে শেষ হচ্ছিল। ২০ মিনিটে চাচা মারা গেলেন। আরেক চাচাও মারা গেছে শুনলাম গতকাল তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হইছিল।বাবার বন্ধু পিজি হাসপাতালের পরিচালক, তার পরামর্শ নিয়েই আমার চিকিৎসা চলছে।সকালে বিকেলে সারাক্ষণ ডাক্তার থাকেন আর আমি শুধু তাদের বলি “আমি HSC দিতে পারব স্যার?”

হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি এলাম।সকলের নিষেধ অমান্য করেই একজামের জন্য মনস্থির করলাম।
ফিরে গেলাম প্রানের হোস্টেলে।৭ দিনের মাথায় আমার ট্রন্স ফুলে গেল আর অনেকটা পেকে গেল।বাসায় না জানিয়ে ডাক্তার দেখাইলাম।আবার শুরু হল ইঞ্জেকশন পর্ব। ২০-২৫ মিনিট লাগত একটা ইঞ্জেকশন পুশ করতে।
যাই হোক সুস্থ হলাম। একজাম দিলাম।
ফিজিক্স একজাম খারাপ হইল।
ইঞ্জিনিয়ারিং এর স্বপ্ন বাদ দিয়া গুণীজন দের কথায় মেডিকেল কোচিং এ ভর্তি হইলাম।শুরু হইল হেলাছেলা।

রেজাল্ট হাতে এল সবাই বেজার! জিপিএ ৪.৭৫ ..এইটা একটা রেজাল্ট? যাই হোক রেজাল্ট পাইয়া আমারে তুনাধুনা কইরা দিল সবাই।কি আর করার।

যেই ফিজিক্স খারাপ হইছে ভাইবা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়লাম সেইটায় প্লাস আর ম্যাথে ৯৯…

বায়োলজিতে A- বুঝলাম এই মেডিকেল আমার যায়গা না।বায়োলজি আমার সাব্জেক্ট না।
ভাই রাখলাম, বই কিনলাম।আবার টুকটাক শুরু হইল ম্যাথ করা।এই ফাকে আবার অসুস্থ হলাম টানা ক্রায়োথেরাপি দিলাম সুস্থ হলাম।
নিজের লাইফ; হাল তো ছাড়া যায় না।যাই হোক সবখানে একজাম শেষ হইল।ঢাকার বাইরে কোথায় দিলাম না।৪ টায় দিলাম।
ঢাবিতে, জগন্নাথে আর জাককানইবিতে একটু খানি যায়গা হলো।
আর একজাম দিলাম Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman Science & Technology University, Gopalganj
রেজাল্ট হল 79th।
আইনেও চান্স হল।
ব্যাস
এখন রোগা ছেলেটা BSMRSTU এ EEE এর ছাত্র আর আলহামদুলিল্লাহ এখনও নিরোগ।

Nowshid Alam Sayem
Government Science College
BSMRSTU, EEE(2017-2018)

এই লেখাটা বন্ধুদের সাথে শেয়ার করো