Topic: Retraction & Citation
Retraction কী?
বেশি সাইটেশন মানেই কি বেশি ভালো পেপার?
অনেক বেশি সাইটেশন কিন্তু বাতিল হয়েছে এমন কিছু পেপারের উদাহরণ
বেশি ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টরওয়ালা জার্নালের বেশি সাইটেশন পাওয়া পেপার মানেই কি সেটা অন্ধভাবে বিশ্বাস করতে হবে?
গড়ে কতগুলো আর্টিকেল সাইটেশন পায়নি
সাইটেশন না হলেই বা কম হলেই কি বাজে পেপার?
সাইটেশন তাহলে কেন তবুও বেশি হতে দেখা যায়?
শতকরা কতগুলো আর্টিকেল বাতিল হয়েছে ও বছরে গড়ে কতগুলো?
বাতিল হওয়া আর্টিকেল কেন তবুও সাইটেট হয়?
সাইটেশন সংখ্যা গবেষক, গবেষণাপত্র ও জার্নালের মান নির্ধারণে কতটা মানসম্মত পদ্ধতি?
১। Retraction কী?
গবেষণা জগতে Retraction (রিট্র্যাকশন) হলো কোনো জার্নালে প্রকাশিত কোনো অলরেডি পিয়ার-রিভিউড পেপার জার্নালে প্রকাশ করা থেকে বিরত রাখা বা বাতিল করে দেওয়া, তা সাইটেড হোক বা না হোক।
এই বাতিল করে দেওয়ার কাজটা জার্নালের editorial board করে থাকে, আর জার্নালের সমস্যাটা সাধারণত জার্নালের editorial board ধরে থাকে। তবে এছাড়াও লেখক নিজেই বা তার প্রতিষ্ঠানও ভুলটি নজরে এনে জার্নালের editorial board-কে জানালে তখনও জার্নালটি রিট্র্যাকটেড হতে পারে।
সাইটেশন নিয়ে জানতে এই হাইপার লিংক করা লিংকগুলোতে যেতে পারেন।
[1], [2]
যা-হোক, রিট্র্যাকটেড হয়েছে এমন আর্টিকেলকে তার শিরোনামের ওপরেই/শুরুর দিকেই “RETRACTED”/This article has been retracted” বা এই টাইপ লেখা দিয়ে চিহ্নিত করা থাকে। যেমন এই লিংক [3]।
আর কারেকশন করা হলে সেই কারেকশনের সোর্সও দেওয়া থাকে/”Correcttion”/”A correction has been published”
এই টাইপ লেখা শিরোনামের শুরুর দিকেই থাকে।[4]
২। বেশি সাইটেশন মানেই কি বেশি ভালো পেপার?
প্রায় ক্ষেত্রে কথাটা সত্য কিন্তু সবকিছু হিসাব করলে বিষয়টা তা না। অনেক ঝামেলা আছে ভেতরে যা সাইটেশন সংখ্যা দিয়ে পেপার যাচাই করাটাকে চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করতে সক্ষম।
অনেক বেশি সাইটেশন পাওয়া লেখাও বাতিল হয়ে যেতে পারে বা আপনি যেটা অনেক বেশি সাইটেশন দেখে অনেক ভালো পেপার ভাবছেন সেটা নাও হতে পারে বা বাতিলের খাতায় যে নাম লিখিয়েছে সেটা হয়তো আপনার নজরেই পড়েনি।
আর সাইটেশন বেশি হলেই যে খুব বেশি ভালো পেপার তা কিন্তু এখানে এসে বেশ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়।
যেমন:
নিম্নে শীর্ষ ১০টি বেশি সাইটেশন পাওয়া পেপার যা পরে বাতিল হয়েছিল ও কিছু পেপার পরে কারেকশন করা হয়েছিল সেগুলো তুলে ধরা হলো–
1. Primary Prevention of Cardiovascular Disease with a Mediterranean Diet. N ENGL J MED; APR 2013.[3]
এটার প্রকাশনার তারিখ ২০১৩, বাতিল হওয়ার তারিখ ২০১৮।
মোট সাইটেশন সংখ্যা ২৭৩৫, OMG!
এর মাঝে বাতিল হওয়ার আগের সাইটেশন সংখ্যা ১৯১৯টি, বাতিল হওয়ার পরের সাইটেশন সংখ্যা ৮১৬টি। মানে এখনও সাইটেট হয়ে যাচ্ছে। কেন হচ্ছে তা পরের আলোচনায় আসবে।
Scopus মতে এটি কিন্তু অন্যতম টপ পিয়ার-রিভিউড জার্নাল New England Journal of Medicine-এ প্রকাশিত হয়েছিল ও পিয়ার-রিভিউড ছিল। [5]
আর সাইটেশন সংখ্যা কিন্তু যথেষ্ট পরিমাণে বেশি ছিল।
এই জার্নালের Impact Factor: 91.245 (Rank No. 2)
Ranking: 2/793 (general medicine field-এ) [6]
(Scopus: এলসেভিয়ার (Elsevier) সংস্থা দ্বারা পরিচালিত যা সাধারণত জার্নালসমূহের ইন্ডেক্সিং বা পরিসংখ্যান করে ডাটাবেইজ মেইনটেন করে থাকে।)
2. Ileal-lymphoid-nodular hyperplasia, non-specific colitis, and pervasive developmental disorder in children. LANCET; FEB 28 1998.[7]
জার্নালের ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর: 79.32 (2020)[8]
Ranking: 1/793 (general medicine field-এ) [6]
এটি ল্যানসেটে ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত হয়েছিল, আর
বাতিল হয়ে যায় ২০১০ সালে।
মোট সাইটেশন সংখ্যা–১৫০৯
বাতিল হওয়ার আগে সাইটেশন সংখ্যা–৬৪২
বাতিল হওয়ার পরে সাইটেশন সংখ্যা–৮৬৭
3. Visfatin: A protein secreted by visceral fat that mimics the effects of insulin. SCIENCE; JAN 2005.[9]
জার্নালের নাম–SCIENCE
জার্নালের ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর: 42.73 (2021)[10]
Ranking: 2/110 (Multidisciplinary field-এ)
প্রকাশনার তারিখ–2005
বাতিলের তারিখ–2007
মোট সাইটেশন সংখ্যা–১৪২৪
বাতিল হওয়ার আগে সাইটেশন সংখ্যা–২৩২
বাতিল হওয়ার পরে সাইটেশন সংখ্যা–১১৯২
(মূল জার্নালের লিংক হাইপার লিংক করা আছে। গিয়ে দেখেন Retracted লেখা আছে।)
4. An enhanced transient expression system in plants based on suppression of gene silencing by the p19 protein of tomato bushy stunt virus. PLANT J; MAR 2003.[11]
জার্নালের নাম–The Plant Journal
জার্নালের ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর: 6.417[12]
প্রকাশনার তারিখ–2003
বাতিলের তারিখ–2015
মোট সাইটেশন সংখ্যা–1271
বাতিল হওয়ার আগে সাইটেশন সংখ্যা–896
বাতিল হওয়ার পরে সাইটেশন সংখ্যা–375
5. Lysyl oxidase is essential for hypoxia-induced metastasis. NATURE; APR 2006.[13]
জার্নালের Impact Factor: 49.96 (2020)
Ranking: 1/110 (Multidiscipline field) [14]
প্রকাশনার তারিখ–2006
বাতিলের তারিখ–2020
মোট সাইটেশন সংখ্যা–1058
বাতিল হওয়ার আগে সাইটেশন সংখ্যা–977
বাতিল হওয়ার পরে সাইটেশন সংখ্যা–81
6. TREEFINDER: a powerful graphical analysis environment for molecular phylogenetics. BMC EVOL BIOL; JUN 2004.[15]
জার্নালের Impact Factor: 8.775 (2020)[16]
প্রকাশনার তারিখ–2004
বাতিলের তারিখ–2015
মোট সাইটেশন সংখ্যা–994
বাতিল হওয়ার আগে সাইটেশন সংখ্যা–836
বাতিল হওয়ার পরে সাইটেশন সংখ্যা–158
7. Cardiac stem cells in patients with ischaemic cardiomyopathy (SCIPIO): initial results of a randomised phase 1 trial. LANCET, NOV 2011. [17]
জার্নালের Impact Factor: 79.32 (2020)
প্রকাশনার তারিখ–2011
বাতিলের তারিখ–2019
মোট সাইটেশন সংখ্যা–988
বাতিল হওয়ার আগে সাইটেশন সংখ্যা–917
বাতিল হওয়ার পরে সাইটেশন সংখ্যা–71
8. Purification and ex vivo expansion of postnatal human marrow mesodermal progenitor cells. BLOOD; NOV 2001.[18]
জার্নালের Impact Factor: 22.113 (2020) [19]
প্রকাশনার তারিখ–2001
বাতিলের তারিখ–2009
মোট সাইটেশন সংখ্যা–911
বাতিল হওয়ার আগে সাইটেশন সংখ্যা–596
বাতিল হওয়ার পরে সাইটেশন সংখ্যা–315
9. Viral pathogenicity determinants are suppressors of transgene silencing in Nicotiana benthamiana. EMBO J; NOV 1998.[20]
জার্নালের Impact Factor: 11.6 (2020) [21]
প্রকাশনার তারিখ–1998
বাতিলের তারিখ–2015
মোট সাইটেশন সংখ্যা–855
বাতিল হওয়ার আগে সাইটেশন সংখ্যা–788
বাতিল হওয়ার পরে সাইটেশন সংখ্যা–67
10. Selective killing of cancer cells by a small molecule targeting the stress response to ROS. NATURE: JUL 2011. [22], [24]
জার্নালের Impact Factor: 49.96 (2020) [23]
Ranking: 1/110 (Multidiscipline field)
প্রকাশনার তারিখ–2011
বাতিলের তারিখ–2018
মোট সাইটেশন সংখ্যা–789
বাতিল হওয়ার আগে সাইটেশন সংখ্যা–617
বাতিল হওয়ার পরে সাইটেশন সংখ্যা–172
সাইটেশন হয়েছে ও বাতিল গেছে কিংবা বাতিল করা পেপারের ডাটাবেইজ নিয়ে তো RetractionWatch নামে একটা সাইটই আছে,[25] যাতে ৩৩ হাজারের ওপর বাতিল করা পেপার নিয়ে ডাটাবেইজ তৈরি করা হয়েছে।[26]
৩।
এখানে আপনি অনেক পুরোনো রিসার্চপেপার পাবেন যা সাইটেট হয়েছিল কিন্তু বাতিল হয়ে গেছে পরে।[27]
মূলত জার্নালের এডিটররা যদি নিচের যে-কোনো একটির স্পষ্ট খোঁজ পাওয়ার প্রমাণ পায় তাহলে রিট্র্যাক্ট করে দেবে পেপারটা বা লেখক নিজেই বাতিল দাবি করে ফিরিয়ে নিতে পারে।
যেমন:
Unreliable research (fabricated or honest mistakes).
Plagiarism in research.
Previously published data.
Unethical research.
যতই দিন যাচ্ছে ততই বার্ষিক রিট্র্যাকটেড পেপারের সংখ্যা বাড়ছে। যেখানে ২০০০ সালের আগে প্রতি বছর গড়ে ১০০টি পেপার রিট্র্যাক্টেড হতো, এখন তা ২০০০ সালের পর ২০১৪ সালের হিসাবে বছরে প্রায় ১,০০০-এর মতো। তবে মোট পেপারের সাপেক্ষে রিট্র্যাকশন বৃদ্ধির হার কমে যাচ্ছে।
সারাবিশ্বের প্রায় সব ফিল্ডের প্রায় গবেষণার সাথে তুলনা করলে প্রতি ১০ হাজার পেপারের মাঝে কেবল ৪টি পেপার গড়ে রিট্র্যাকটেড হচ্ছে।
তবে আলাদা আলাদাভাবে কিছু দেশে এর কমও আছে, আবার বেশিও আছে। যেমন ইরানে এই হার ৪ নয়, ১৪। ভারতের ৭.৫, চীনের
৫। [28]
রিট্র্যাকশনওয়াচের সাইটের পরিসংখ্যানে দেখা যায় রিট্র্যাক্ট খাওয়া গবেষকদের মাঝে টপ ৫০০ জনের মাঝে ২৪–২৫ জনের কমপক্ষে ৫টি পেপার আছে, আর রিট্র্যাক্ট খাওয়া টপ ১০০ জনের ১২–১৩ জনের কমপক্ষে ১৩টি করে বাতিল হওয়া পেপার আছে।
আর রিট্র্যাক্ট খাওয়া টপ ২০ জনের মাঝে ৭–৮ জনের ৩০টি করে কমপক্ষে রিট্র্যাকটেড পেপার আছে।
শীর্ষ ১০ জন রিট্র্যাকশন খাওয়া লেখকের নাম, দেশ ও সংখ্যা:
1.Yoshitaka Fujii, Japan
169টি
2.Joachim Boldt, Germany
96টি
3.Diederik Stapel, Netherlands
58টি
4.Chen-yuan Peter Chen, Taiwan
43টি
5.Yoshihiro Sato, Japan
43টি
6.Hua Zhong, China
41টি
7.Shigeaki Kato, Japan
39টি
8.James Hunton, United States
36টি
9.Hyung-in Moon, South Korea
35টি
10.
Jan Hendrik Schön, United States
32টি [28]
৪। বেশি ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টরওয়ালা জার্নালের বেশি সাইটেশন পাওয়া পেপার মানেই কি সেটা অন্ধভাবে বিশ্বাস করতে হবে?
না, তা ঠিক নয়। এখানে আপনি দেখতে পারবেন যে কত কত ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টরওয়ালা জার্নাল অথচ তাদের কত কত পিয়ার-রিভিউড পেপার বাতিল করতে হয়েছে পরে। [29]
মানে পিয়ার-রিভিউড হলেই বা অনেক বেশি সাইটেশন দেখেই কোনো পেপারকে শতভাগ বিশুদ্ধতার সার্টিফিকেট কনফার্মলি দেওয়া যাবে না। কারণ সেই পেপার পরে বাতিল হয়ে যেতেও পারে যদিও সেই হার খুব কম। তাই অন্ধ সেজে তর্ক করা যাবে না যে পিয়ার-রিভিউড, বেশি সাইটেশন পেয়েছে, হাই ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টরওয়ালা জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে মানেই ওই পেপারের কোনো ত্রুটি ভবিষ্যতে বের হবে না – এটা শতভাগ কনফার্মলি বলাটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে ও বিজ্ঞান নিয়ে আপনার অজ্ঞতাকেই বিপরীতজনের কাছেই প্রকাশ করবে।
কারণ আপনি হয়তো ভাবছেন এত এত সাইটেশন ও এত এত ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টরওয়ালা জার্নালের লেখা রিট্র্যাক্টেড হবে তা কোনোভাবেই স্বীকার করা উচিত নয়, যে-কোনোভাবেই হোক ত্যানা প্যাঁচিয়ে তর্কে জিততে হবে অথচ রিট্র্যাকশন হওয়াটা বিজ্ঞানেরই সৌন্দর্য। এটা বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অধিকতর নির্ভেজাল সত্যের দিকে ধাবিত হওয়ার পথে এগিয়ে যাওয়ারই চিহ্ন ও ধাপ।
তাই এটা মেনে নেওয়াটাই আপনার জন্য বুদ্ধিমানের কাজ। অবশ্য মেনে না নিলেও কিছু আসে যায় না, কারণ কারো মানা বা না মানা দিয়ে বিজ্ঞান চলে না।
তবে আপাতদৃষ্টে হাই ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টরের পেপার, বেশি সাইটেশন পাওয়া পেপার শতভাগ বিশুদ্ধ লেখার প্রামাণ্য দলিল না হলেও কোনো গবেষণা পেপারের মান নির্ণয়ে এই দুটি বিষয় মোটামুটি বেশ নির্ভরযোগ্য দলিল (সাধারণ ক্ষেত্রে)।
যেমন ভালো ছাত্রের কাছে সবাই ভালো রেজাল্টই আশা করে ও তাকেই নির্ভর করে, এর মানে এটা নয় যে সেই ভালো ছাত্র কখনো খারাপ রেজাল্ট করবে না।
ভালো জার্নালগুলোতে যে কম কম পিয়ার-রিভিউড পেপার বাতিল হয় সেটা নয় বরং বেশি বাতিল হয়।[28]
এখানে এরকম একটা লিস্ট পাবেন যেখানে দেখবেন যে টপ জার্নালগুলোই রিট্র্যাকশন খাওয়ার দিকে প্রথম সারিতে।[29]
মানে টপ জার্নালের পিয়ার-রিভিউড পেপার বাতিল হয়ে যাওয়াটা খুব স্বাভাবিক বিষয়। বাতিল হতেই পারে না এটা ভাবাটা অনুচিত।
Retraction করাটা বিজ্ঞান প্রক্রিয়ারই একটা অংশ। ভুল ধরা, সমস্যা ধরা ও তারপর বাতিল করে দেওয়া বা কারেকশন করা বিজ্ঞানের কোনো দুর্বলতা নয় বরং সৌন্দর্য। কিন্তু বাস্তবতাও জানা থাকা উচিত। বেশি সাইটেশন মানেই বেশি ভালো পেপার বা তা কখনো বাতিল হতে পারে না এমন চিন্তাধারা করা আপনার জ্ঞানস্বল্পতাকেই প্রকাশ করবে।
৫। সাইটেশন না হলেই বা কম হলেই কি বাজে পেপার?
মোট জার্নালের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। Scimago-তেই ২৫ হাজারটি জার্নালের SJR Ranking দেওয়া আছে। [30]
মোট জার্নালের সংখ্যার সঠিক হিসাব নেই৷ তবে তা ৩০ হাজার ছাড়াবে তা সহজেই অনুমেয়।[31] আরেক মতে তা প্রায় ২৮ হাজার।[32]
তাছাড়া প্রতিবছর ১.৪ থেকে ১.৮ মিলিয়ন আর্টিকেল পাবলিশড হয়, কয়টা কার নজরে পড়বে? নজরে পড়েনি বলেই বা সাইটেড নয় বলেই তা বাজে মানের পেপার নয়।[35]
এগুলোর কয়টা বলেন মানুষ সাইট করবে?
তাই অনেক অনেক পেপারই সাইটেশন পাবে না। তার মানে এটা নয় যে ওসব পেপারের মান কম।
তাছাড়া এমন একটা দাবি আছে যে অনেক অনেক ভালো পেপার আছে যা সাইটেশন করা তো দূরের কথা পড়েইনি কেউ বা নজরেই আসেনি তেমন। ২০০৭ এর এক স্টাডির মতে মোট প্রকাশিত পেপারের অর্ধেক কেবল তার প্রকাশক, referee, editor এই তিনজন কেবল পড়ে। তবে এই সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে।[32]
[In the 2007 study, the authors introduce their topic by noting that “as many as 50% of papers are never read by anyone other than their authors, referees and journal editors.”]
তবে বিতর্ক থাকলেও এই যে এত মিলিয়ন মিলিয়ন পিয়ার-রিভিউড পেপারের মাঝে কয়টা পেপার যে কয়জনের নজরে আসবে বা সাইটেড হবে তা সহজেই অনুমেয়।
তার মানে ওসব কি বাজে পেপার?
আর সকল জার্নাল তো চার্জ ফি নয়। ফলে যেগুলো ফ্রি নয় সেগুলোর তথ্য উন্মুক্ত নয় বলে সবার পক্ষে সেখান থেকে তথ্য জানা ও জেনে সেসব তথ্য তার কোনো পেপারে সাইট করা সম্ভব হয় না। ফলে সাইটেশন প্রক্রিয়া এখানেও মার খায়।
এছাড়া Open Access (OA) বা ফ্রি জার্নালের পেপারগুলো উন্মুক্ত বলে বেশি প্রচার হয় ও সাইট করতেও এরা অগ্রসারিতে থাকে। এগুলো দেখাও হয় বেশি বার। [33]
“Additional review of more than 2,000 papers published in Nature Communications between April 2010 and June 2013 found that OA articles had a median of 11 citations. This is compared to non-OA articles, which had a median of 7 citations.”[34]
ফলে সাবস্ক্রিপশন বা ফি-বেইজড জার্নালের পেপার ভালো হলেও সাইটেশন সংখ্যা কম থাকতে পারে। ফলে কারো পেপার কেউ ফ্রি/ওপেন অ্যাকসেস জার্নালে না থাকলে তা যতই ভালো পেপার হোক সাইটেশন কম হতেই পারে।
ইংরেজি ভাষায় উপলব্ধ এমন প্রায় ১২০ মিলিয়ন scholarly documents রয়েছে। এর মাঝে ২৪% ফ্রি জার্নাল যাতে যে-কেউ ঢুকতে পারে চার্জ ছাড়াই।[36] বাকিগুলোতে চার্জ লাগবে/সাবস্ক্রিপশন করতে হবে।
ভাবেন তাহলে কয়টা কয়জনের নজরে পড়বে আর সাইট করবে? আর এত এত জার্নাল যে চার্জযুক্ত তাতে কয়টাতে কে চার্জ দিয়ে পেপার পড়ার ঝক্কিঝামেলা নিতে চাইবে। আর না পড়লে সাইট করবে কীভাবে?
দেখা গেছে যে 1990–2015 সালের মাঝে প্রকাশিত Web of Science এর ডাটাবেইজে থাকা প্রায় ৩৯ মিলিয়ন পেপারের প্রায় ২১% কখনই সাইট করা হয়নি।
আর ২০০০ সালের পর প্রকাশিত পেপারের সাইটেশন না পাওয়ার সামগ্রিক গড় হার প্রায় ১০% বা তার কিছু কম (সেলফ সাইটেশন হিসেবে নিয়ে)।
সেলফ সাইটেশন হিসাব না করলে সেটার হার আরও বেশি (প্রায় ১৪%–১৫%। ইঞ্জিনিয়ার অ্যান্ড টেকনোলজি ফিল্ডের ক্ষেত্রে তা প্রায় ২৮%। বায়োলজি ফিল্ডে তা ৭%–৮% এর মতো। ম্যাথ ফিল্ডের ক্ষেত্রে তা ১৯% এর মতো।
তাছাড়া ১৯৮০ সালে প্রকাশিত পেপারের ২০% এখনো কোনো সাইটেশন পায়নি এমনও দেখা গেছে।[37]
৬। সাইটেশন তাহলে কেন তবুও বেশি হতে দেখা যায়?
সাইটেশন অনেক কারণেই বেশি হতে পারে। অলরেডি ওপরে কিছু কারণ ব্যাখ্যা করেছি। এছাড়াও আরও কিছু কারণ আছে।
কোনো পেপারের বেশি সাইটেশনের পেছনে পেপারের মান ভালো বা পজিটিভ হওয়ার পাশাপাশি অনেক নেগেটিভ দিকও থাকতে পারে।
যেমন–
১। গবেষণাটা ঠিকই আছে, বাতিল করার মতো কিছু নেই কিন্তু গবেষণাটা হয়তো সমৃদ্ধ নয় বা আরও সমৃদ্ধ করা যাবে।
যেমন আপনি ১০টি দেশের ১০ হাজার জনের ওপর করোনাভাইরাসের প্রভাব গবেষণা করে সেটা নিয়ে রিসার্চপেপার বের করলেন, এখন অন্য কেউ আপনার কাজটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে ১০০টি দেশের ১ কোটি মানুষের ওপর একই গবেষণা করল কিন্তু তা বড়ো পরিসরে।
আর সেক্ষেত্রে তারা আপনার আগের স্বল্প পরিসরের গবেষণাটা তাদের গবেষণাতে কাজে লাগাতে প্রয়োজন সাপেক্ষে সেটা বার বার সাইটে করতেই পারে।
মানে আপনার গবেষণাটার মান ভালো বলে সবাই সেটা দলিল হিসেবে সাইট করছে বা করবে এরকমটা সবসময় ঘটে না।
২। আপনার গবেষণাটাকে উন্নত করতে বা আপনার গবেষণাটার ফাঁক-ফোকর দেখিয়ে দিতেও অপরে তার গবেষণা পেপারে আপনার পেপারটা সাইট করতে পারে যে অমুক গবেষণায় এই ঘাটতি আছে, অমুক গবেষণায় এই জায়গায় অপূর্ণতা আছে এইসব আরও কত কী।
তাছাড়া আপনার পেপার বাতিল হয়ে গেলেও অপরে সাইটেশন করে আপনার সেই পেপারের মোট সাইটেশন বাড়িয়ে দিতে পারে। যেমন– অপর কেউ তার গবেষণায় দেখাতে পারে যে অমুক এটা নিয়ে অমুক গবেষণা করেছিল, যেটা বাতিল হয়ে গেছে, তার ওই তথ্যটা ওভাবে তুলে ধরাটা সঠিক ছিল না, সেই পরিপ্রেক্ষিতে অমুক তথ্যটা বাতিল; তাই আমার এই গবেষণাটা এভাবে এগুবে/আগের ধারণাটা বাদ দিয়ে নতুন করে গবেষণাটা এই রেজাল্টের দিকে এগিয়ে যাবে।
একারণেই বাতিল হওয়া পেপারের সাইটেশনও বাড়তে দেখা যায়। ওপরে আর্টিকেলের শুরুতেই এর প্রমাণ পাবেন যে বাতিল হওয়ার পরেও সাইটেশন কমেনি।
তারমানে, সাইটেশন কেবল যে পেপারের পজিটিভিটি দেখে বাড়ে তা নয়, নেগেটিভিটিকে তুলে ধরতে বা সমালোচনার জন্যেও বাড়তে পারে।
৩। এমনও হতে পারে যে আপনার পেপারটা যে রিট্র্যাক্টেড হয়েছে তা না খেয়াল করেই সাইট করেছে।
৪। তাছাড়া আপনি যদি নিজেরাই কয়েকজন গবেষক মিলে একতাবদ্ধ হয়ে নিজেরাই নিজেদের বা গ্রুপের অপরের পেপারগুলোকে সাইট করেন তাহলেও সাইটেশন সংখ্যা বাড়তে পারে।
এগুলোকে বলে সেলফ সাইটেশন ও সার্কুলার সাইটেশন।
৫। সেলফ সাইটেশন যদিও বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বা অবৈধ বিষয় নয় কিন্তু অনেক গবেষকই নিজের সাইটেশন সংখ্যা বাড়াতে নিজ খ্যাতি বাড়ানোর মানসিকতায় সেলফ সাইটেশন করে থাকেন কারণ সাইটেশন সংখ্যার ওপর অনেক কিছুর মান কম-বেশি হওয়া নির্ভর করে। যেমন h-index, impact factor, citescore-সহ আরও অনেক বিষয় আছে।
এর ফলে দেখা যেতে পারে অনেক সময় টাকা-পয়সার লেনদেনও ঘটতে পারে সাইটেশন সংখ্যা বাড়াতে।
যেমন আমরা ফেইসবুক পেইজের ফলোয়ার বাড়াতে বা বুস্ট করতে টাকা-পয়সা বিনিয়োগ করে থাকি তেমনটা এই ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে। মানে কারচুপি, বাণিজ্য, নেটওয়ার্ক তৈরি করে অসৎ উপায়ে সাইটেশন বাড়ানোর যথেষ্ট জায়গা আছে এখানে।
৬। সাইটেশন বেশি হলে কোনো জার্নালের ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর আগের চেয়ে বেশি হয়ে যায়। আর জার্নালের ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর বেশি হলে সেটাকে সাধারণত ওই ফিল্ডের ভালো জার্নাল হিসেবে ধরা হয়। এমন অনেক জার্নাল আছে যারা এই ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর বাড়ানোর জন্য সাইটেশন নিয়ে অসদুপায় অবলম্বন করে।
ফলে সেসকল জার্নালের পেপারেও আপনি বেশি বেশি সাইটেশন দেখতে পেতে পারেন।
৭।
তাছাড়া আপনি যদি ভালো কোনো পেপার তুলনামূলক কম বিখ্যাত জার্নালে প্রকাশ করেন তাহলেও কম সাইটেশন পেতে পারেন বা না পেতেও পারেন। কারণ অখ্যাত বা কম বিখ্যাত জার্নালের পেপার সাইট করতে সবাই চায় না।
একারণে দেখা যায় নামকরা জার্নালের মিডিয়াম মানের একটা গবেষণা ২০টি সাইটেশন পেলেও কম নামকরা আরেকটি জার্নালের একই টপিকের তুলনামূলক উন্নত গবেষণাপত্র ৫টি সাইটেশনও না পেতেও পারে। বা একই পেপার জার্নালভেদে একেক সংখ্যক সাইটেশন পেতে পারে। কারণ সবাই-ই চায় নামকরা জার্নালের পেপারকে সাইট করে রেফারেন্স লিস্টে ভালো জার্নালগুলো দেখাতে যাতে গবেষণার মান বৃদ্ধি হয়। কারণ রেফারেন্স হিসেবে কোন কোন জার্নালকে সাইট করেছেন সেটা আপনার গবেষণার মান যাচাইয়ে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
৮।
তাছাড়া একেক সাইন্স ফিল্ড বা টপিকভেদে সাইটেশন সংখ্যা বেশ কম-বেশি হতে পারে। তাই কোনো ফিল্ডে ১০টি সাইটেশনকে খুব কম ধরা হলেও আরেকটি ফিল্ডে সেইটা ক্যাটাগরি ১ মানের সাইটেশন সংখ্যা। তাই পদার্থবিদ্যা ফিল্ডের কোনো গবেষকের কোনো পেপারের সাইটেশন সংখ্যা দিয়ে সে গবেষককে জীববিদ্যা ফিল্ডের কোনো গবেষকের সাইটেশন সংখ্যার সাথে তুলনা করে কে বেশি প্রভাবশালী গবেষক সেইটা যাচাই করা যাবে না।
কারণ একেক ফিল্ডে বা একেক টপিকে একেক সংখ্যক গবেষক বা গবেষণাপত্র রয়েছে। কোনো ফিল্ডে হয়তো কম গবেষক বা গবেষণাপত্র ফলে ওই ফিল্ডে সাইটেশন করার লোকও কম।
ক্যান্সার টপিকে গবেষণা ফিল্ডের কোনো গবেষক নিশ্চয়ই ম্যাথ ফিল্ডের কোনো গবেষকের পেপার সাইট করবে না বা সাইটেশন করার প্রয়োজনও অনুভূত হবে না সাধারণত।
এখন ধরেন ম্যাথ ফিল্ডের গবেষক কম, তো তারাই তো একে অপরকে সাইট করবে। ফলে তাদের পেপারগুলোর সাইটেশন সংখ্যাও তুলনামূলক কম থাকবে।
কারণ সেই ফিল্ডে গবেষক কম, ফলে সাইটেশন করার মতো ক্ষেত্রও কম।
ফলে ম্যাথ ফিল্ডের ভালো একটি পেপারেরও কম সাইটেশন থাকতে পারে, আবার ক্যান্সার ফিল্ডের কোনো পেপার কোয়ালিটি কম থাকলেও বেশি গবেষকের কারণে বেশি সাইটেশন পেতে পারে।
বিষয়টা ফেইসবুকের পোস্টের রিচ পাওয়া বা না পাওয়ার মতো কিছুটা। সবসময় যে ভালো পোস্ট রিচ পাবে তা যেমন নয় বরং অনেক অখাদ্য, কুখাদ্য পোস্ট বা আইডি যেমন রিচ পেতে পারে তেমনই কিছুটা এই সাইটেশন সংখ্যার বিষয়টা কিছু দিক দিয়ে।
তাই কোনো রিসার্চপেপার বা কোনো গবেষক কেমন মাপের গবেষক, জার্নালটি কতটা ভালো সেটা নির্ণয়ে তার সাইটেশন সংখ্যা সবসময় প্রকৃত মান নির্ধারক নয়। যেমন আমার মতো অখ্যাত মানুষের পোস্ট ধরেন গড়ে ৫০টি রিয়্যাক্ট পেলেও অনেক জ্ঞানী মানুষের ভালো ভালো জ্ঞানগর্ভ পোস্ট ১০টা রিয়্যাক্ট না পেতেও পারে। তার মানে এটা নয় যে আমি বেশি জ্ঞানী।
গবেষক, জার্নাল, পেপারের মূল্যায়ন তাই শুধু সাইটেনশ নাম্বার দিয়ে করা উচিত না বা সাইটেশন সংখ্যার ওপর অন্ধ ভক্তি থাকা উচিত নয়।
তবে আবার এটাও ঠিক সাধারণ ক্ষেত্রে ও লেভেল মাঠ হলে সাইটেশন বেশি হলে তা আপনার পেপারের বেশি বেশি প্রভাব ও ভালো মানকেই নির্দেশ করে। সেক্ষেত্রে তখন সাইটেশন বেশি মানে আপনার গবেষণার বিষয়টার ওপর বেশি বেশি মানুষ নির্ভর করেছে, তা তাদের গবেষণায় ব্যবহার করেছে ও আপনি ভালো মানের ও প্রভাবশালী গবেষক–সাধারণ ক্ষেত্রে এসবই নির্দেশিত হয় সাইটেশন সংখ্যা বেশি হলে তা দিয়ে।
যেহেতু বুঝলাম সাইটেশন সংখ্যাই কারো বা কোনো জার্নাল বা পেপারের মান নির্ধারণে ১০০% বিশুদ্ধ পদ্ধতি না সেহেতু পরে আমরা আলোচনার ধারাক্রমে জানতে চেষ্টা করব কীভাবে ভালো পেপার বা ভালো গবেষককে যাচাই করা যায়।
এছাড়া ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর, h-index, i10 index ইত্যাদি টার্ম নিয়ে পরের পর্বে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।
– আকাশ হোসেন রায়হান