বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে প্রোগ্রামিং নিয়ে কোন জ্ঞান ছিল না আমার। অনেক ইচ্ছে ছিল দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ভর্তি হওয়ার কিন্তু অন্য বিষয়ে চান্স পেলেও প্রকৌশল বিষয়ে সুযোগ পাই শুধু পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
কম্পিউটার নিয়ে অনেক আগ্রহ ছিল তাই কম্পিউটার প্রকৌশল (সিএসই) বিষয়ে ভর্তি হই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলাম আমি। নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় অনেকের কাছে অনেক বিরূপ মন্তব্য শুনতে হয়েছে।
ভর্তির পর ডিপার্টমেন্টের বড় ভাইদের কাছে, কিছু শিক্ষকের কাছে প্রথম প্রোগ্রামিং কন্টেস্ট সম্পর্কে শুনি এবং আগ্রহ হয়। তখন থেকে প্রোগ্রামিং এর হাতেখড়ি।
বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রোগ্রামিং প্র্যাকটিস করতাম, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কন্টেস্ট করতে যেতাম। কখনো তেমন ভাল র্যাঙ্কিং করতে না পারায় প্রায়ই এই কথা শুনতে হতো যে, “কিছুই তো করতে পারিস না, শুধু শুধু প্রতিবার কেন যাস!!! ”
কিন্তু আমি বলবো ওই অভিজ্ঞতা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন।
কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং করতেই হবে এইটা বাধ্যতামূলক না। তবে প্রোগ্রামিং এর ভালো জ্ঞান বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশের একাডেমিক পড়াশুনার স্ট্রাকচার অনুযায়ী, শুধুমাত্র একাডেমিক পড়াশুনা করে ভালো প্রোগ্রামিং জ্ঞান সম্ভব না।
তাই প্রোগ্রামিং কন্টেস্ট করলে এই ক্ষেত্রে অনেক ভাল সুবিধা পাওয়া যায়। তবে কেও যদি কন্টেস্ট না করেও এই দক্ষতা আনতে পারে তাহলে তার কন্টেস্টের দরকার নেই। প্রোগ্রামিং এর এই স্কিল সবচেয়ে বেশি উপকার করেছে আমাকে।
ফাইনাল পরীক্ষার মাঝে জীবনে প্রথম চাকুরীর পরীক্ষা দেই Samsung Research, Bangladesh এবং পরীক্ষা শেষ করেই যোগদান করি প্রথম চাকুরিতে।
৪ বছর স্যামসাং এ চাকুরী করার পরে যোগদান করি আমার দ্বিতীয় কর্মক্ষেত্র আমাজনে গত ১৬ তারিখে। ২০২১ এর মাঝের দিক থেকে বিদেশের কোম্পানিতে চাকরীর জন্য প্রস্তুতি নেয়া শুরু করি।
প্রথম দিকে টেক জায়ান্ট কোম্পানিতে এপ্লাই করার সাহস পেতাম না। কিন্তু হঠাৎ দেখি লিঙ্কডইনের মাধ্যমে Bytedance (Tiktok), Qualcomm এর মতো বড় কোম্পানির রিক্রুটার আমার সাথে যোগাযোগ করেছে!!
পরবর্তীতে Shopee, Agoda থেকেও যোগাযোগ করেছে। তখন মনে হলো যে আমারও হয়তো এসব বড় কোম্পানিতে চাকরি করার যোগ্যতা আছে!!
কিন্তু রেফারেন্স ব্যাতিত এসব বড় কোম্পানিতে ইন্টার্ভিউয়ের ডাক পাওয়া অনেক কঠিন, খুব কম পাওয়া যায়। Samsung এ জয়েন করার আগে বাংলাদেশের একটা লোকাল কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দেয়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য খুব পরিচিত(!!!) একজনের রেফারেন্স চেয়েছিলাম।
সে তো রেফার করেছিলোই না, উল্টো আমার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। সেই কষ্টে জীবনে আর কখনো কারো রেফারেন্স চাওয়ার সাহস হয় নি। কোন রেফারেন্স ছাড়াই বেশ কয়েকটা জায়গায় এপ্লাই করে ফেললাম।
আমাজনের ইন্টারভিউ কল যখন পেলাম তখন আমার অফিসের কাজের অনেক চাপ চলতেছিল। এর মাঝেই ইন্টারভিউ প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। সারাদিন অফিস শেষ করে রাতে আবার নিজের পড়াশুনা নিয়ে বসেছি।
সকালে অফিস শুরু করার আগেও কিছু সময় পড়াশুনার চেষ্টা করেছি। সব মিলিয়ে ভালই কঠিন একটা সময় গেছে। অফিসের পাশাপাশি ইন্টারভিউ প্রস্তুতি আসলে অনেক কঠিন কাজ।
আল্লাহ্র রহমতে শেষ পর্যন্ত সব রাউন্ড সফলতার সাথে শেষ করে ডিসেম্বর মাসে বহু কাঙ্ক্ষিত ফাইনাল অফার লেটার পেলাম।
মন্তব্যঃ জীবনে ভালো কিছু করতে চাইলে কষ্ট করতে হবে। প্রতিটা মানুষের সামনে অসংখ্য বিকল্প পথ আসবে চলার পথে।
এর মধ্যে নিজের পছন্দ এবং স্বপ্ন অনুযায়ী একটা পথ ঠিক করে সেই পথে এগুতে হবে। তবে সবসময় সামনে কিছু বিকল্প পথ রাখা উচিত। সবাইকে আমাজন, গুগল, ফেসবুক, মাইক্রোসফটে চাকরি করতে হবে এমন না।
অথবা সবাইকে বিসিএস ক্যাডার ও হতে হবে না। আবার সবার পক্ষে টপার হওয়াও সম্ভব না। প্রত্যেকের নিজস্ব চিন্তা-চেতনা, স্বপ্ন আছে।
সফলতা হলো সেই টার্গেটে পৌছাতে পারা। সবার সফলতা এক মানদণ্ডে বিবেচনা করা উচিত না।
Writter: S M Abu Raihan
Software Development Engineer at Amazon.com
Former Senior Software Engineer at Samsung R&D Institute Bangladesh Ltd.
Studied Computer Science & Engineering (CSE) at Pabna University of Science & Technology, Pabna, Bangladesh.
Studied at Bogra Cantonment Public School & College, Bogra