পৃথিবীর একমাত্র সুইসাইড বন অওকিগোহারা – যেটি জাপানের ফুজি পর্বতমালার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত।
৩৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত এই বন পর্যটক ও জীবন নিয়ে হতাশাগ্রস্থ মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। দিনে এবং রাতে এই বনের চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত – দিনে এই বন যতটা আকর্ষণীয় ঠিক একইভাবে রাতে ততটা ভয়ানক।
এই বনকে আত্মহত্যার স্বর্গপুরী বলে আখ্যা দেওয়া হয়। ১৯৭০ সাল থেকে প্রতি বছর একবার করে ওই বন থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। 1970 সাল থেকে 2014 সালের রেকর্ড অনুযায়ী প্রতিবছর গড়ে 105 জন ব্যক্তি এই বনে আত্মহত্যা করে।
এই বনে বন্যপ্রাণীদের বসবাস নেই বললেই চলে এবং আছে কিছু অদ্ভুত পাথর এবং বিস্তৃত জঙ্গল, যার কারণে বনটি খুবই নির্জন। বনে প্রবেশ করলেই সামনে পড়ে কিছু হৃদয়বিদারক সাইনবোর্ড এবং আত্মহত্যা নিদর্শন।
এই বনের পথ পাথুরে ও দুর্গম হওয়ায় হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। তাই পর্যটকরা যখনই বনে প্রবেশ করেন তখনই একসাথে দলবেঁধে প্রবেশ করেন। ১৯৯৫ সালে এক পর্যটক সাহস করে দল ছাড়া কোন চিহ্ন না রেখে বনে প্রবেশ করে, দুর্ভাগ্যবশত সে আর ফিরে আসেনি।
তাই বনে প্রবেশ দ্বারে জাপানি ভাষায় লেখা আছে “সাহায্য নিন – কিন্তু জীবন নিজের জীবন শেষ করবেন না”। অধিকাংশই যাদের মৃতদেহ পাওয়া গেছে এই বনে, বাস্তব জীবনে তারা নিজের জীবনের উপর বিরক্ত ছিল।
এই বন নিয়ে অনেক লেখকই উপন্যাস লিখেছিলেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুইজন লেখকের লেখা দুটি বই (১) দি কমপ্লিট সুইসাইড ম্যানুয়াল (২) কুরোয় কায়জু।
*দি কমপ্লিট সুইসাইড ম্যানুয়াল: ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত এই বইয়ে লেখক আত্মহত্যার জন্য সঠিক স্থান হিসেবে এই বনকেই উল্লেখ করেছিলেন।
বইটি প্রকাশিত হওয়ার বছর থেকে এই বনে আত্মহত্যার হার অনেক বেড়ে যায়। এবং অনেক মৃতদেহের পাশে লেখক এর লেখা কমপ্লিট সুইসাইড ম্যানুয়াল বইটি পাওয়া যায়।
*কুরোয় কায়জু: কুরোয় কাইজু উপন্যাসটি 1960 সালে প্রকাশিত হয়। রোমান্টিক এই উপন্যাসটি পাঠকরা ব্যাপকভাবে গ্রহণ করে।
বইটির শেষভাগে দেখা যায় দুই প্রেমিক-প্রেমিকা এই বনে আত্মহত্যা করে যার ফলে পাঠক পাঠিকারা অতি আগ্রহী হয়ে এই বনে আত্মহত্যা করতে ছুটে আসত। পরবর্তীতে জাপানে বইটিকে নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়।
স্থানীয়রা এই বনকে ভূতের রাজ্য বলে আখ্যা দেয়। কথিত আছে 2003 সালের দিকে জাপানি এক লোক এই বনের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করতো। ওই ব্যক্তিকে কারণ জিজ্ঞেস করা হলে সে বলত তার ঘরে ভালো লাগেনা এই বনে কেউ যেন তাকে ডাকছে।
দুদিন পরে দুপুরে ওই ব্যক্তির লাশ বনে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় লাশের সাথে একটি চিঠিতে লেখা ছিল
“মরীচিকা থেকেই স্পষ্ট পথে যাত্রা”
লেখকঃ Tanjimul Islam Tareq
Comilla Polytechnic Institute
Join Our Science Club