বর্তমান বিশ্বে ফলিত বিজ্ঞানের সবচেয়ে বিকাশমান বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হল ফলিত রসায়ন এবং রাসায়নিক প্রকৌশলবা Applied Chemistry & Chemical Engineering ।

প্রতি মুহূর্তেই এর সাথে যুক্ত হচ্ছে নতুন ক্ষেত্র,
উন্মোচিত হচ্ছে গবেষণার নতুন নতুন সুযোগ।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সত্য হল, আমাদের অনেকেরই কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং এর গবেষণার ক্ষেত্র আর পড়াশোনার বিষয়বস্তু
নিয়ে আছে অনেক ভ্রান্ত ধারণা। বেশিরভাগ মানুষেরই ধারণা, কেমিস্ট্রি আর কেমিক্যাল
ইঞ্জিনিয়ারিং প্রায় একই জিনিস। কিন্তু প্রকৃত অর্থে তা নয়।

প্রথমেই জানা উচিৎ কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং কি??

” A chemical engineer’s who talks engineering in the presence of chemists, chemistry in the presence of engineers and politics in the presence of both”..

অনেকেই কেমিস্ট এবং কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ারদের একই ভেবে থাকেন। আসলে তারা কিন্তু এক না। তাদের মাঝে পার্থক্য হল প্রায়োগিক ক্ষেত্রে দক্ষতা।

একজন কেমিস্ট মূলত কাজ করেন ল্যাবে, তার কাজ রসায়নের বিভিন্ন মৌল-যৌগের মাঝে পারস্পরিক সম্পর্ক, তাদের পারস্পরিক ক্রিয়াকৌশল নিয়ে।

অন্যদিকে একজন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের কাজ প্রধানত ইন্ডাস্ট্রিতে। কেমিস্ট তার ল্যাবে স্বল্প পরিসরে যে প্রক্রিয়াঘটান, সেটিকে একজন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার নিয়ন্ত্রিত ওশিল্পসম্মত উপায়ে ইন্ডাস্ট্রির প্লান্টে ঘটান।

কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং মূলত পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নশাস্ত্র আর লাইফ সাইন্স, অর্থাৎ জৈব রসায়ন, অণুপ্রাণবিজ্ঞান ও প্রাণরসায়নকে সাথে নিয়ে কীভাবে অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাজনকভাবে প্রয়োজনীয় সামগ্রী তৈরি করা যায়, তা নিয়ে কাজ করে।

শুধু এই নয়, তাকে আরও কাজ করতে হয় গণিত, অর্থনীতি, বস্তুবিদ্যা নিয়েও কাজ করতে হয়। শুধু ভুরি ভুরি বিক্রিয়া নয়, বরং চেনা জানার, চোখের সামনে থেকেও আড়ালে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিনিসকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়েই কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর গবেষণা! এই জন্য বলা হয়

“Chemical engineering is the branch of engineering where engineering is varsatile”

বাতাসের হাইড্রোজেন ও নাইট্রোজেনের বিক্রিয়ায় তৈরি হয় অ্যামোনিয়া, এটা আমরা সবাই জানি। এও জানি, এই অ্যামোনিয়া ব্যবহার করেই তৈরি হয় ইউরিয়া সার।

বাতাসের নাইট্রোজেন আর হাইড্রোজেনকে একসাথে করে অ্যামোনিয়া আর সেই অ্যামোনিয়া থেকে ইউরিয়া উৎপাদনের মূল এই প্রক্রিয়াটি উদ্ভাবন করেন একজন কেমিস্টই।

তিনি ক্ষুদ্র পরিসরে, ছোট স্কেলে হয়ত একটি টেস্ট টিউবে কয়েক মিলিলিটার ইউরিয়া তৈরি
করতে পারেন খুবই সাফল্যের সাথে।

কিন্তু তাকে যদি বলা হয় প্রতিদিন দশ লক্ষ টন ইউরিয়া সার তৈরি করতে? ব্যাপারটা তার জন্যে প্রায় অসম্ভবের কাছাকাছি। ল্যাবে বসে একাজ অসম্ভব! আর ঠিক এই জায়গাতেই কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের বাহাদুরি!

এবার আসি অন্য কোথায় ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড কে বাদ দিয়ে আপনি সকাল বেলা উঠে টুথপেস্ট থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত যত বাজারজাত খাবার, প্রসাধনী, ওষুধ ব্যবহার করছেন সব কেমিকৌশলীরাই বানাই…

এমনকি আপনের ঘরের রঙ গ্লাস সিরামিক, সিমেন্ট, রড, আপনার গাড়ির ফুয়েল, ব্যাটারি, ট্যায়ার সব। আপনার স্মার্ট ফোনের হাই মিলিএম্পিয়ারের Li Polymer ব্যাটারি টাও।

আপনি কি জানেন সারাবিশ্বের ওয়াসা যে এত হাজার হাজার মেট্রিকটন বিশুদ্ধ পানি দিচ্ছে সেই বিশুদ্ধ করার প্রদ্ধতি কারা তৈরি করছে?

এমনকি নিয়মিত বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা কারা দিচ্ছে?
কেমিকৌশলীরাই. ……..

কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিস্তৃতির ক্ষেত্রগুলো একটু দেখে নেই –

-♣ প্রোসেস কন্ট্রোল, ডিজাইন
অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট
♣ কেমিক্যাল রি-অ্যাক্টর
ইঞ্জিনিয়ারিং
♣ তড়িৎ রসায়ন
♣ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং
♣ পলিমার রসায়ন ও প্লাস্টিকস
♣ বায়োকেমিক্যাল
ইঞ্জিনিয়ারিং
♣ বায়োমেডিকেল
ইঞ্জিনিয়ারিং
♣ বায়োইনফরমেটিক্স
♣ সিরামিকস
♣ রাসায়নিক ক্ষেপণাস্ত্র
♣ নিউক্লিয়ার রি-প্রোসেসিং
♣ ন্যানো-টেকনোলজি
♣ পেট্রোলিয়াম মাইনিং
ইঞ্জিনিয়ারিং
♣ মিনারেল ইঞ্জিনিয়ারিং
♣ তেল অনুসন্ধান
♣ তেল শোধন
♣ ধাতুবিদ্যা
♣ ইউনিট অপারেশান
♣ ট্রান্সফরমেশান ও
ট্রান্সপোর্টেশান
♣ গ্যাস অ্যান্ড এয়ার হ্যান্ডলিং
♣ থার্মাল অ্যান্ড এনার্জি
ম্যানেজমেন্ট
♣ কম্পিউট্যাশনাল ফ্লুইড
ডাইনামিকস
♣ করোসান ইঞ্জিনিয়ারিং
♣ ইনভায়ারনমেন্টাল
ইঞ্জিনিয়ারিং
♣ প্রোজেক্ট ইঞ্জিনিয়ারিং
♣ খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান
♣ ফার্মাসিউটিক্যালস
♣ পেপার টেকনোলজি
♣ পানি প্রকৌশল
♣ সেফটি ইঞ্জিনিয়ারিং
♣ ফার্টিলাইজার

জব মার্কেট

একজন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার যে বিষয়গুলোর উপর পড়াশোনা করে আসে, এরপর আসলে তার চাকরির বাজারটাও তার পড়াশোনার বিস্তৃত বিষয়বস্তুর মতই বিশাল!

আর যতদিন এই পৃথিবীতে শিল্প কারখানা থাকবে ততদিন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের চাহিদা থাকবেই।

বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ, শিল্পক্ষেত্রে সে দিনদিন দ্রুত যতই অগ্রসর হচ্ছে। কাজেই এখানে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের চাহিদাও দ্রুত
বাড়ছে।

কিন্তু সে হিসেবে দেশে অত কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার কিন্তু আসছে না। এর কারণ হল, আমাদের দেশে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ার সুযোগ খুব কম বিশ্ববিদ্যালয়ই দেয়।

দেশের বাইরেও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের দারুণ চাহিদা।

AlChE এর এক জরিপ অনুযায়ী ২০১১
সালে যুক্তরাষ্ট্রে কেমিক্যালইঞ্জিনিয়ারিং এ একজন গ্রাজুয়েট এর বার্ষিক বেতন প্রায়
110000 ডলার!!!

যুক্তরাজ্যে টাকার অঙ্কটা গড়ে প্রায় 28000 পাউন্ডস, যা সর্বোচ্চ 70000 পাউন্ড পর্যন্ত হতে পারে! এজন্যেই বলা হয়ে থাকে,

“Chemical Engineering is one of the highest paid job at any level among the engineering jobs all over the world. They’ve got the third highest paid range of salary among all the
jobs!!”

বাংলাদেশে একজন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার যেসব জায়গায় কাজ করতে পারে, সেগুলো হল

–✅ সার কারখানা,
✅ পেপার মিল,
✅ সুগার মিল,
✅ গ্লাস ও সিরামিক শিল্প,
✅ পেইন্টস কারখানা,
✅ ঔষধ শিল্প,
✅ ফুড এন্ড বেভারেজ কোম্পানি,
✅ টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি,
✅ কসমেটিকস কোম্পানি,
✅ পেট্রোলিয়াম রিফাইনারি ইন্ডাস্ট্রি,
✅ পারমাণবিক প্ল্যান্ট,
✅ সিমেন্ট কারখানা,
✅ ট্যানারি কারখানা,
✅ বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ কেন্দ্র ইত্যাদি ইত্যাদি … …

আসলে সীমিত সম্পদ এবং সময়ের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন কিংবা সুদূরপ্রসারী উৎপাদন পরিকল্পনা করাটাই তো ইঞ্জিনিয়ারিং।

সোজা কথায় বলতে গেলে, যেকোনো ইঞ্জিনিয়ারের জন্যেই প্রধানতম কাজ হল অপটিমাইজেশন (Optimization)।

আর একজন কেমিক্যালইঞ্জিনিয়ারকে যেহেতু
শিল্পকারখানার উৎপাদন প্রক্রিয়াগুলোকে সরাসরি ডিজাইন বা তদারক করতে হয়, সেহেতু তাকে ইলেক্ট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল, মেটালার্জিক্যাল, প্রোগ্রামিং – মোটামুটি সবধরনের বিষয়ই ধারণা রাখতে হয়।

এমনকি অর্থনীতি,ব্যবস্থাপনা,সমাজবিজ্ঞান,
সাচিবিক বিদ্যাও জানতে হয় তাদের।

আর এজন্যেই তাদের চাহিদা জব মার্কেটে অনেক বেশী। খাবার চিপস থেকে শুরু করে কম্পিউটারের মাইক্রোচিপস তৈরির কারখানা – সব জায়গাতেই কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের পদচারণা।

বড় বড় মিল/ইন্ডাস্ট্রি এই কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের হাত ধরেই চলে।এদের হাতেই নিয়ন্ত্রিত হয় বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান।

দেশের অর্থনীতিকে প্রগতির পথে চালিত করবার এত বড় চ্যালেঞ্জ নিতে আপনি প্রস্তুত তো???

BSMRSTU: আমার এসিসিই

এবার আসি বশেমুরবিপ্রবি এসিসিই নিয়ে
যেখানে পাবেন ড.দেবব্রত পাল ও ড.নূর নবি স্যারের মত হাই গ্রাজুয়েটেড ফ্যাকাল্টি যাদের নামি দামি পাবলিকেশন্স এর কথা নাই বা বলি।

এছাড়া আছে ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জন টপার যারা পলিমার, ম্যাটেরিয়াল ও পেট্রোকেমিকেলস এর উপর এক্সপার্ট।

এখানে পাবেন দুইটা ল্যাব ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিস্ট্রি ল্যাব ও কেমিকৌশল ল্যাব।

Sohanur Rahman Sagor
ACCE, BSMRSTU