পড়াশোনার ব্যপারে ছাত্রছাত্রীদের attitude কেমন হওয়া উচিৎ? না বুঝে উত্তর করা, শিক্ষকতা জীবনে এত বেশী দেখেছি যে এটাকে আমাদের ট্র্যাডিশন বলে মনে হয়। শিক্ষাঙ্গনগুলোর বাইরেও এই না বুঝে কথা বলবার ছড়াছড়ি। বিষয়টি অনেকটা মজ্জাগত হয়ে গেছে বলে মনে হয়। না বুঝে উত্তর করে কেউ লজ্জা পাচ্ছে এমনটা এখানে কখনো দেখি নি।
যেসব দেশে পড়াশোনা প্রকৃত অর্থেই কিছুটা হয়, সেখানকার ছাত্রছাত্রীরা কেমন? আমি ১৯৯৮ সালে গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট হিসেবে আমেরিকার SIUC-তে কিছু সময় ছিলাম। ক্লাসে নানা দেশের ছেলেমেয়ে। আমেরিকান ছিল বেশ কিছু। এদের ভেতর একজন আফ্রিকান আমেরিকান, মাইকেল নামে ডাকতাম। ছাত্র হিসেবে বেশ ভালো। মাইকেল এবং আমি একই ডর্মে থাকতাম।
ক্লাসের সব ছাত্রেরই পড়াশোনার বাইরে নানান শখ ছিল। আমি ছিলাম ব্যতিক্রম। ফিজিক্স ছাড়া আর কোন কিছুতে মন ছিল না। একধরনের অস্বাভাবিক জীবন কাটাতাম। এর অবশ্য একটা সুফল ছিল। SIUC-তে থাকাকালীন কোন টেস্টে দ্বিতীয় হইনি। এর ফলে গ্রুপ স্টাডিতে এক ধরনের দাপট আমার ছিল। Solid State Physics-এ কোর্স টিচার প্রচুর homework দিতেন। আমারা ছাত্ররা কখনো দলবেঁধে, কখনো একা সেসব সমাধানের চেষ্টা করতাম।
একরাতে একটি homework নিয়ে মাইকেল আমার ঘরে হাজির। প্রবলেমটা করা ছিল এবং তখন আমার ঘুমের সময়। মাইকেলকে বললাম, আমার খাতাটি নিয়ে যেতে এবং সেটা দেখে homework করে ফেলতে।
বুঝিনি কী ভীষণ অপরাধ করে ফেলেছি। আমার কথা শুনে মাইকেল রেগে আগুন। বলে, আমি সমস্যাটা বুঝতে এসেছিলাম, তোমার খাতা থেকে সমাধান টুকে নিতে আসিনি।
খুব লজ্জা পেলাম। সাধ্যমত তাকে সমস্যার সমাধানটি বোঝাতে চেষ্টা করলাম। একসময় মনে হল মাইকেল খুশী। আমিও অপরাধবোধ থেকে কিছুটা মুক্তি পেলাম। পরদিন ক্লাসে গিয়ে দেখি মাইকেল homework submit করেনি।
জিজ্ঞেস করলাম, কেন? মাইকেলের উত্তর, আমি শেষ পর্যন্ত সমাধানটি তোমার কাছ থেকে বুঝেছি, কিন্তু পরে মনে হল এটা আরও সময় পেলেও নিজের চেষ্টাতে পারতাম না, তাই submit করিনি। আমি হা করে তাকিয়ে থাকলাম। কী আত্মসম্মান! কী সততা!
আমরা যদি কিছুটা হলেও এমন হতে পারতাম!