নোবেল পুরষ্কার ২০১৬ এর পর থেকে রমজান মাস আসলেই ‘অটোফেজি'(Auto-self, phase-eat) শব্দটার আনাগোনা বেশ ভালোভাবেই লক্ষ্য করা যায়।

কেউ কেউ রোজা কে অটোফেজি বলে, কেউ উপবাস কে অটোফেজি ভাবে, কেউ ফাস্টিং কে অটোফেজি ভাবে, বিপ্লবীরা অনশনে সফল না হলে নিজেকে সান্তনা দেয় অটোফেজি হয়েছে বলে😆।

তো আসলে অটোফেজি কি?
Autophagy (not Autopsy) শব্দটি তুলে ধরেন বেলজিয়ান বায়োকেমিস্ট ‘ক্রিস্টিয়ান ডি ডুভে’। সালটা ছিল ১৯৬৩।

ওশিনরি ওসুমি

ওশিনরি ওসুমি

এরপর ২০১৬ সালে জাপানের ডাক্তার ‘ওশিনরি ওসুমি’ অটোফেজি নিয়ে গবেষণা করে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, অটোফেজি ব্যাপারটা বিজ্ঞানে নতুন। এখওন অনেক রহস্য উৎঘাটন হয় নি।

অটোফেজির বেসিক ধারনা টা এমন যে, খাবারের অনুপস্থিতিতে শরীর নিজেকেই খেতে শুরু করে।

এক্ষেত্রে শরীর তার ক্ষতিগ্রস্ত বা অপ্রয়োজনীয় কোষ এবং প্রটিন ধ্বংস করে ফেলে। এতে লাভের মধ্যে যা হয়, তা হলো নতুন ভাবে পরিপুষ্ট কোষ তৈরি হয়।

আরেকটা বিষয় মাথায় রাখা উচিত, অটোফেজি ব্লেডের মত, দুইদিকেই ধার। যেমনটা উপকার করতে পারে, ঠিক তেমন ক্ষতিও করতে পারে।

বোঝা গেল যে, শরীরকে অটোফেজিতে পৌছে দিতে হলে না খেয়ে থাকতে হবে। প্রশ্ন হলো কতক্ষন না খেয়ে থাকলে অটোফেজিতে উপকার পাবো? বিজ্ঞানীগন সঠিক টাইম খুঁজবার জন্য এখনও কাজ করছেন। তবে কিছু বিষয় জানা গেছে।

১/ ১২ ঘন্টা না খেয়ে থাকলে আপনি কিটোসিস নামক মেটাবলিক ধাপে প্রবেশ করবেন। এক্ষেত্রে আপনার শরীরের চর্বি ক্ষয় হতে থাকবে।

২/ ১৮ ঘন্টা না খাইলে, আরো বেশি চর্বি ক্ষয় হবে, রক্তে কিটোনের পরিমান বেড়ে যাবে।

৩/ একটানা ২৪ ঘন্টা না খেলে, পুরাতন কোষগুলা ভাঙ্গতে শুরু করবে, অপ্রয়োজনীয় প্রটিন ক্ষয় হতে শুরু করবে, নতুন কোষ তৈরি হতে থাকবে । অর্থ্যাৎ, এ পর্যায়েই অটোফেজি শুরু হল।

৪/ ৪৮ ঘন্টা যদি না খেয়ে থাকেন, আপনার গ্রোথ হরমোনের লেভেল পাঁচগুণ বৃদ্ধি পাবে। এতে আপনার শরীরের মাসল শক্ত হবে ।

৫/ ৫৪ ঘন্টা পর আপনার ইনসুলিন লেভেল একেবারে নেমে যাবে। এতে ডায়েবিটিস থেকে বাঁচতে পারবেন।

৬/ ৭২ ঘন্টা এভাবে না খেয়ে চললে, আপনার ভালো কিন্তু বৃদ্ধ কোষ গুলা ধ্বংশ হয়ে নতুন উৎপন্ন হবে।

এবার একটু রোজা নিয়ে বলা যাক, রোজা মুসলিমদের একটি শারিরীক ইবাদত। শুধুমাত্র স্রষ্ঠা আদেশ করেছেন, একারণেই মুসলিমরা ভোর থেকে সন্ধ্যা অব্দি পানাহার সহ আরোও কিছু কাজ থেকে বিরত থাকে।

রোজা থাকলে অটোফেজির সুবিধা পাওয়া যায়, তবে মুসলমানগন অটোফেজি করার জন্য রোজা রাখেন না। আরেকটা বিষয় হলো, অটোফেজিতে কিছু ক্ষতি থাকলেও রোজায় তা নেই।

বিজ্ঞান অটোফেজি নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করতে থাকুক, তারপর না হয় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে অটোফেজি করা যাবে। 😁

লেখকঃ তানভীর মাহতাব নাদিম

শিক্ষার্থী

ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ