বাংলাদেশের যেসকল বিশ্ববিদ‍‍্যালয়ে প্রকৌশল পড়ানো হয়, কোথাও প্রকৌশলবিদ‍্যার চর্চা নেই। শুধু আছে এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা। এখানে ক্লাসরুমে কেউই শিখতে আসেনা।

সবাই আসে লেকচার তুলতে, নয়তো এটেডেন্ডেন্স দিয়ে ঘুমাতে। লেকচার তুলে সেগুলোর সাথে বইয়ের কথা মিলিয়ে এবং বিগত বছরের প্রশ্নে আসা কমন গুলো নিয়ে তৈরি হয় নোট(চোথা)। সেগুলো মুখস্থ করেই পরিক্ষায় হয় পাশ।

এখানে প্রকৌশলবিদ‍্যার চর্চা নেই। শুধু মুখস্থবিদ‍্যার চর্চা। যদি প্রকৌশলবিদ্যা শিখতে চান তবে শিখতে হবে আপনার নিজ দায়িত্বে বই ঘেটে কিংবা অনলাইনে পড়াশোনা করে।

আমি যখন পঁঞ্চম সেমিস্টারে Machine Design কোর্স করি তখন শুরুতে অনেক এক্সাইটেড ছিলাম কারণ মেশিন ডিজাইন নিয়ে সেই দ্বীতিয় সেমিস্টার থেকে আগ্রহ। কিন্তু কি শিখলাম জানেন?

খাতায় সূত্র বসিয়ে কয়টা অংক করা শিখেছি। প্রতিটি থিয়রি কিংবা সেশনাল কোর্সের একই হাল। আপনি অনেক কিছু পড়বেন, অনেক প্রতিপাদন, অনেক সূত্র শিখবেন অনেক অংক করবেন কিন্তু যেটা পড়তে এসেছিলেন সেটা আর পড়া হবেনা। ওটা আপনার নিজেকেই শিখতে হবে।

বিভিন্ন সময় নিউজ পোর্টালে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অর্জন দেখেন না? বিশ্বাস করেন পুরোটা তারা নিজ আগ্রহে, নিজ পরিশ্রমে করে। বিশ্ববিদ‍‍্যালয় সাহায‍্য করলেও সেটা সচারচর খুবই বিরল কিংবা খুবই সামান‍্য।

সেটাকেও খুব বেশি উৎসাহ দেওয়া হয় না। কারণ খুব কম শিক্ষার্থীই এত বিদঘুটে ধারার পড়াশোনা ঠিক রেখে তার সাথে সাথে নিজে নিজে প্রকৌশলবিদ‍্যা চর্চা করতে পারে।

এজন‍্যই অধিকাংশ শিক্ষার্থী হতাশ হয়ে পড়ে। হাল ছেড়ে দেয়। এভাবে সেই সিজিপিএ কমতে থাকে। সবযায়গায় তারা অপমানিত, লজ্জিত হয়। Inferiority Complex এ ভোগে।

কেউ কেউ এসব থেকে পালাতে অন্ধকার পথে পা বাড়ায়। খুব কম সংখ‍্যার শিক্ষার্থী নিজে কিছু করার চেষ্টা করে।

কিন্তু এগুলো বলার সাহস কেউ করে না। সবাই সোশাল মিডিয়াতে, সমাজে, পরিবারে নিজের প্রকৌশলী ভাবটা ঠিক বজায় রাখে। এজন‍্যই হয়তো এলন মাস্কের সাইবার ট্রাকের ডিজাইন নিয়ে মজা করে। আমাদের দৌড় ঐ পর্যন্তই।

এজন‍্যই দেশে এতগুলো বিশ্ববিদ‍‍্যালয়ে প্রক‍ৌশল পড়ানো হলেও ভালো প্রকৌশলী হাতে গোনা কয়জনই হতে পারে। তারা খুব বড় হয়। বাকিরা হারিয়ে যায় গতানুগতিক ধারায়। সরকারি চাকরি, বিসিএস ইত‍্যাদির পেছনে ছোটে। প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্নটাও কারও মনে থাকেনা আর।

তাই বলছি, যদি সত‍্যিই আপনার সন্তান কে প্রকৌশলী বানাতে চান বাংলাদেশে প্রকৌশল পড়াবেন না। জীবনটা তেজপাতা হয়ে যাবে। একটু টাকা পয়সা খরচ না হয় করলেন। বিশ্বাস করেন দেশে পড়ানোর থেকে বেশি কাজে দিবে।

ধন‍্যবাদ।

Khalid Pranto
ME
RUET