আজ ছোট-ভাইবোনদের উদ্দেশ্যে দু-কলম লিখবো। 

বিষয়ঃ এস.এস.সির পর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে হলে…… প্রথমেই সুবিধা দিয়ে শুরু করিঃ
 ১. এস.এস.সির পর সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক কলেজ থেকে চার-বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স সম্পূর্ণ করে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এখন যেহেতু লেখাপড়া, চাকুরী আর বেতন নির্ভর হয়ে গেছে তাই এবার বেতনের কথা বলি। সরকারী বেতন স্কেল সর্বসাকুল্যে ১৬,৫৪০ টাকা। তবে বেসরকারি সেক্টরে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেতন বেশী। যেমনঃ আমি ডিপিডিসির একটা সার্কুলারে দেখেছিলাম বেতন ৪৫,০০০+ প্রায়। 
২. মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এই লাইনে লেখাপড়া করা ভালো, অনেকটা সহজেই চাকুরী পাওয়া যায়। যেখানে অনার্স শেষ করে অনেকেই বেকার বসে আছে। 
৩. একটু কষ্ট করে ভালো রেজাল্ট করতে পারলে বৃত্তি পাওয়া যাবে নিশ্চিত। আমি নিজেই সব মিলিয়ে ২৮-২৯ হাজারের মতো পেয়েছি। 
৪. যেহেতু সেসনজট মুক্ত তাই ভালো ভাবে কোর্স সম্পূর্ণ করতে পারলে চাকুরী করে নিজ খরচে পরবর্তীতে লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়া যাবে। যদিও একটু কষ্ট, তারপরও জীবন মানেই তো সংগ্রাম। পাশাপাশি তাড়াতাড়ি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ তো থাকছেই। 
৫. অনেকেই মনে করে এটা ইন্টার পাশের সমমান। কিন্তু না এটা ভুল ধারণা। নিচের ছবিটা দেখলে বুঝতে পারবে। Education Structure Of Bangladesh (Diploma Engr Level). তারপরও যাদের মন খারাপ হবে তারা Bsc Engineering শেষ করে মন খারাপ কমাতে পারবে। পাশাপাশি চাকুরী করেও জবাব দিতে পারো। সুবিধার সবশেষে আর যদি কোন সুবিধা থেকে থাকে তাহলে প্রাইভেট পলিটেকনিক কলেজ গুলো থেকে জেনে নিতে পারো, আমি সিওর ওরা তোমাকে ডেসটিনি কায়দায় বুঝিয়ে দিবে।
 এবার অসুবিধা গুলো বলিঃ 
১. অসুবিধা বলতে প্রথমেই বলবো, এখানে লেখাপড়া করে পাস করাটা অনেক কঠিন। এতটাই যে আমি নিজেও একসময় কান্না-কাটি করেছি। এখানে ভালো রেজাল্ট নয়, বরং বেশিরভাগ সব পাশ করার জন্য লেখাপড়া করে। চার বছরে (আট সেমিস্টার)-এ প্রায় ৭০-৮০ টা বিষয়ে আলাদা আলাদা পাশ করতে হয়। আমার মনে আছে, এপ্লাইড মেকানিক্স সাবজেক্টে বুয়েটের বিভিন্ন সালের কিছু অংক ছিল, যা করতে হয়েছে। এরপর ইলেকট্রিক্যালের ছাত্র হয়েও কম্পিউটার প্রোগ্রাম ইন সি’র সাথে পাঁচটা ম্যাথমেটিক্স তো ছিলই। বই গুলো দেখতে ছোট হলেও কঠিন তবে ছয় মাসের এক সেমিস্টারের জন্য ঠিক আছে। আমি প্রথম যে দিন ক্লাস করি ঐ দিন আমার বিভাগে ৪৯ জনের মধ্যে ৪৬ জন কে ক্লাসে উপস্থিত পেয়েছিলাম। চার বছর পর সব বিষয়ে ভালোভাবে পাশ করে বের হয়েছিলাম মাত্র ২১ জন। বাকি গুলো পেন্ডিং ছিল। কারও কারও আবার ১৫-১৬ টা বিষয়েও রেফার্ড ছিল। এরা কিন্তু তৎকালীন সময়ের সবাই চান্স প্রাপ্ত মোটামুটি মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী। যাদের সবার জিপিএ ছিল (4.50-5.00) এর মধ্যে। সুতরাং এই লাইনে বিজ্ঞান এবং কারিগরী বিভাগ ব্যতীত অন্য কোন বিভাগ থেকে পড়তে না আসাই ভালো। 
২. প্রাইভেট কলেজ গুলোতে নিয়মিত আর সরকারি কলেজ গুলোতে অনিয়মিত, এরকম ক্লাস হয়। তারপর আবার তিন ঘন্টার প্রাকটিক্যাল ক্লাসে ফাঁকি। সাথে পণ্ডিত পোলাপাইনের ক্লাস সাসপেন্ড নামক অজুহাত তো আছেই। (স্যার, ছাত্র-ছাত্রী সবার জন্য প্রযোজ্য)। আর ক্লাসে কোর্স শেষ না হওয়ায় পরীক্ষার আগে চোখে সবাই সরিষার ফুল দেখে, এটাই স্বাভাবিক। তবে পরীক্ষার আগের রাতে বই শেষ করে চিঠি লিখে হলে ঢোকার অহরহ রেকর্ড আছে। 
৩. এখানে পড়তে এলে বেশির ভাগ সবাই পাতি নেতা হয়ে যায় সাথে ফাঁকিবাজ রাজনীতিবিদও। ওদের মারামারি আর প্রভাব বিস্তারের জন্য বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের হল গুলো বন্ধ। কিন্তু এদের কোন খাওয়া নেই। আমাদের সময়ে বামপন্থি সংগঠনের যে সভাপতি ছিল ও বিগত ছয় বছরেও কোর্স শেষ করতে পারেনি। এটা বিশাল এক অর্জন। সুতরাং বেশিরভাগ ভালো ছাত্র-ছাত্রী নষ্ট হয়ে যাওয়ার চরম সম্ভাবনা রয়েছে। আর কিছু ছাত্র-ছাত্রী সরকারি পলিটেকনিকে চান্স পেয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাব নিতে শুরু করে, এটাও একটা সমস্যা। 
৪. “কোন কালে কো হয়নি গো জয়ী পুরুষের তরবারি, প্রেরণা দিয়েছে সাহস দিয়েছে বিজয় লক্ষীণি নারী” এই লাইনটি আমার না নজরুলের। তবে আমি এতটুকু বলতে পারি এখানে তোমার প্রেরণা দেওয়ার মতো কেউ নাই। কারণ, মেয়েদের সংখ্যা একদম-ই কম। আর যা দুই-একজন আছে, তাদের পেছনে হিয়া লম্বা লাইন। আমি নিশ্চিত তুমি এখানে ধান্ধা করতে গেলেই নিজেকে বঙ্গোপসাগরের ঐ পাড়ে দেবদাস হিসাবে খুঁজে পাবে। সুতরাং সাবধান! আর জানো তো মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং এ গুলোতে অধ্যয়নরতদের রস-কস একটু কম থাকে। পাশাপাশি দেখতেও তেমন একটা সুন্দর হয়না! 
৫. পড়া শেষ করে চাকুরী করতে পারলে বাবা-মা, গার্ল ফ্রেন্ড সদ্য ইঞ্জিনিয়ার কে বিশাল কিছু মনে করে কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে হ-য-ব-র-ল। খুব একটা মূল্য নেই। সবশেষে, কয়েক বছর আগে আমি নিজে একটা সরকারি প্রতিষ্ঠানের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের ছাত্র ছিলাম।

সেখান থেকে ভালোভাবে লেখাপড়া শেষ করে এলেও আমি আমার কোন ভাই-বোন কে এখানে পড়তে উৎসাহ দিব না। অন্তত আমার মত ছাত্র-ছাত্রীদের এখানে পড়া উচিত না। আমি আমার বাবা-মায়ের দিকে তাকিয়েই ভালোভাবে কোর্স শেষ করেছি মাত্র। আমার ছোট বেলার কোন বন্ধু-বান্ধব এখানে পড়েনি, শুধু আমি। ওরা বেশিরভাগই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উচু বারান্দায় পৌঁছে গেছে। যেখানে, পুরো বন্ধু মহলটা আমার হাতছাড়া হয়ে গেল।

Writer: Golam Azom Rumy Junior Engineer Navana Group