কিছুদিন আগে বিসিআইসিতে একটা সার্কুলার প্রকাশিত হয়েছে। অনেকে ইতোমধ্যে আবেদন ও করে ফেলেছেন। অনেকে আবার দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন কোন পদে আবেদন করবেন সেটা ভেবে। আমি বিসিআইসিতে ২০২২ সালের অক্টোবরে জয়েন করি সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা পদে। পোস্টিং চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজারে। প্রায় ২ বছর এখানে কাজ করার অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু পরামর্শমূলক কথা বলবো যা আপনাদের আবেদনের ক্ষেত্রে এবং কোন পদে আবেদন করবেন তা নির্বাচন করতে সহায়ক হবে।
মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে বিসিআইসি সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। বিসিআইসি বা বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত শিল্প মন্ত্রনালয়ের অধীন একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। মোট ৮৮টি কারখানা নিয়ে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান কারখানার সংখ্যা ১৩টি। যার মধ্যে চলমান আছে ৮টির মত।
নিয়োগের ধরণঃ
বিসিআইসিতে নিয়োগগুলো সাধারনত চার জায়গায় হয়ঃ
১। প্রধান কার্যালয়ে (মতিঝিল, ঢাকা) এবং শাখা অফিসে (আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম)।
২। কারখানাসমূহে (সার, সিমেন্ট, কাগজ, স্যানিটারিওয়্যার, ইনসুলেটর, গ্লাসশীট কারখানা)
৩। বাফার গুদামে (সারের গুদামসমূহ)
৪। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিআইসিআই, নরসিংদী)
কোথায় নিয়োগ হবে সেটা সাধারণত সার্কুলারে উল্লেখ থাকে। নিয়োগ পরীক্ষা সব ক্ষেত্রে প্রায় একি রকম তবে পোস্টিং অনুযায়ী কাজের ভিন্নতা আছে। যেহেতু এবারের সার্কুলার কারখানাসমূহের জন্য ( কিছু পোস্টিং অন্য জায়গাতেও হবে) তাই এই আলোচনায় কারখানায় কাজের সুবিধা অসুবিধা উল্লেখ করবো।
সুবিধাসমূহঃ
১। বিসিআইসির চাকুরির প্রধান আকর্ষণ এর প্রমোশন সুবিধা। প্রতি ৫ বছর পর পর অটো প্রমোশন হয়। প্রমোশনের জন্য লিংক লবিং ধরা লাগেনা। ব্যাচ এবং মেরিটের ভিত্তিতে প্রমোশন হয় এখানে।
২। চমৎকার হাউজিং ফেসিলিটি বিসিআইসিতে চাকুরীর অন্যতম আকর্ষণ। স্কুল, কলেজ, খেলার মাঠ, ক্লাব, মেডিক্যালের সুবিধাসহ প্রায় প্রতিটি কারখানার একটি করে বড় আকারের সাজানো গোছানো হাউজিং আছে। প্রায় প্রতিটি কারখানা কোন না কোন নদীর কাছাকাছি হওয়ায় প্রকৃতির মাঝে থাকার সুযোগ রয়েছে। যারা নিরিবিলি নিরাপদ আবাসন পছন্দ করেন তাদের জন্য আদর্শ কর্মক্ষেত্র হতে পারে এটা।
৩। সার্বক্ষণিক পানি, বিদ্যুৎ, এবং গ্যাসের সুবিধা।
৪। বেতনের বাইরে এফসি ( ফুড এন্ড কনভেন্স এলাউন্স) বাবদ কারখানাভেদে প্রতি মাসে তিন থেকে ছয় হাজার টাকা পাওয়া যায়।
৫। কিছু কিছু কারখানায় বিশেষ করে নতুন বা চলমান কারখানায় প্রফিট শেয়ার এবং কেপিয়াই বোনাস পাওয়া যায়।
৬। পোশাক ভাতাসহ কিছু আনুষঙ্গিক সুবিধা পাওয়া যায়।
৭। এছাড়া সরকারি অন্যান্য সুযোগ সুবিধাসমূহ পাওয়া যায়।
অসুবিধাসমূহঃ
বিসিআইসিতে অসুবিধার সংখ্যা অনেক। বেশিরভাগ মানুষ চাকুরির পর থেকেই বেটার অপশানের চেষ্টায় থাকেন। কিছু প্রধান সমস্যা উল্লেখ করলাম।
১। সব সরকারি অফিস শুক্র শনি বন্ধ থাকে। কিন্তু কারখানাসমূহে শুধু শুক্রবার বন্ধ পাওয়া যায়। তবে বৃহস্পতিবার হাফ বেলা অফিস। তবে প্রধান কার্যালয় এবং শাখা অফিস এর ব্যতিক্রম।
২। অফিস টাইম সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। মাঝে ১ ঘন্টা লাঞ্চ ব্রেক।
৩। এখানে সাধারণত দুই ধরনের পদ। সাধারণ এবং টেকনিক্যাল। সাধারণ সাইডে আছে এডমিন, কমার্সিয়াল, এবং একাউন্টস। বাকিরা টেকিনিক্যাল সাইড। টেকনিক্যালদের বেশিরভাগই পালায় (সিফটিং ডিউটি) অফিস করা লাগে। দুইদিন সকালে ( সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা), দুইদিন বিকালে (দুপুর ২টা থেকে রাত ১০টা) এবং দুইদিন রাতে ( রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা) ডিউটি করার পর দুইদিন ছুটি পাওয়া যায়। যাদের ঘুমের সমস্যা আছে তারা টেকনিক্যালে আবেদনের ক্ষেত্রে বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন।
৪। কারখানা চালু থাকলে অফিস টাইমে অনেক কড়াকড়ি থাকে, বন্ধ কারখানায় কিছুটা রিলাক্স পাওয়া যায়।
৫। টেকনিক্যাল পোস্টগুলোর নিরাপত্তাজনিত সমস্যা আছে কিন্ত তেমন কোন ঝুঁকি ভাতা পাওয়া যায়না।
৬। কাজের পরিবেশ নিম্নমানের। কারখানায় শ্রমিক, ওয়ার্কার, অপারেটর এবং টেকনিশিয়ানদের দাপট বেশি যা সুষ্ঠু কর্ম পরিবেশ প্রাপ্তিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
নিয়োগ পরীক্ষাঃ
বিসিআইসির নিয়োগ সাধারণত ফেয়ার হয়। জেনেরাল সাইডের (কমার্সিয়াল, এডমিন এবং একাউন্টস) পরীক্ষা নেয় আইবিএ বা এফবিএস। পরীক্ষা দুই ধাপে হয়ঃ
১। ৭০ নম্বরের এমসিকিও
২। ৩০ নম্বরের ভাইভা
এমসিকিওতে প্রশ্ন আসে বাংলা, জিকে, ইংলিশ, ম্যাথ এবং কম্পিউটার থেকে। একাউন্টসের পোস্টের ক্ষেত্রে হিসাব বিজ্ঞান থেকে প্রশ্ন আসবে।
টেকিনিক্যালের ক্ষেত্রে পরীক্ষা নেয় সাধারণত বুয়েট বা আইবিএ। এক্ষেত্রে পরীক্ষার ধরণ
১। এমসিকিও প্লাস রিটেন মোট ১০০ নাম্বার যেখানে ৪০ টা এমসিকিও এবং ৬০ নাম্বা্রের সাব্জেক্টিভ রিটেন থাকে।
২। ভাইভা ২০-৩০ নাম্বার।
উপরোক্ত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় পাওয়া। কারখানাভেদে সুযোগ সুবিধা পরিবর্তিত হতে পারে।
Mahbub H. Sobuj
Assistant Commercial Officer at CUFL
Under BCIC