বিসিএসে আবেদন করার সময় ক্যাডার চয়েসে অনেক সমস্যা হয়। প্রার্থীরা বুঝেন না কোন ক্যাডার প্রথমে দিবেন। কেনই বা সেটা প্রথমে দিবেন। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে মোট ২৬টি ক্যাডার আছে। কে কোন ক্যাডারে যেতে চান, তার উপর ভিত্তি করে আবেদনের সময়ই প্রত্যেক প্রার্থীকে ক্যাডার চয়েস(Cadre Choice) দিতে হয়। ক্যাডার চয়েস মোতাবেক ভাইভা বোর্ডে প্রশ্ন করেন পরীক্ষকরা।

ধরুন, আপনি প্রথম চয়েস দিলেন- পররাষ্ট্র ক্যাডার। তাহলে ভাইভা বোর্ডে আপনাকে পররাষ্ট্র বা কূটনৈতিক বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে। তাই যেই ক্যাডারে আপনি যেতে ইচ্ছুক এবং যেই ক্যাডার সম্পর্কিত আপনার পড়াশুনা আছে, সেই ক্যাডারকে চয়েস লিস্টে প্রথমে দেয়া শ্রেয়।

ফরেন দিলে ১ম এ রেখে এরপরের সিরিয়ালগুলো এভাবে দিবেন, না দিলেও এভাবেই শুরু করবেন
★এডমিন
★পুলিশ
★কাস্টমস
★ট্যাক্স
★অডিট
★আনসার
★তথ্য(সবগুলো)
★বাণিজ্য
★খাদ্য
★রেলওয়ে
★সমবায়
★ডাক
★পরিবার পরিকল্পনা
★টেকনিক্যাল + শিক্ষা

অনেকেই বিশেষ করে যারা প্রথমবার বিসিএস দিবেন, তারা বিসিএসের ক্যাডারগুলোর কাজের ধরণ ,চাকরিতে সুযোগ সুবিধা ,চাকরির অসুবিধা গুলো জানেন না।

প্রথমেই ২৬টি বিসিএস ক্যাডারের নাম জানা যাক।

১. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন) সাধারণ ক্যাডার
২. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কৃষি) কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
৩. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (আনসার) সাধারণ ক্যাডার
৪. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (নিরীক্ষা ও হিসাব) সাধারণ ক্যাডার
৫. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (সমবায়) সাধারণ ক্যাডার
৬. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (শুল্ক ও আবগারি) সাধারণ ক্যাডার
৭. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বাণিজ্য) সাধারণ এবং কারিগরি/
৮. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পরিবার পরিকল্পনা) সাধারণ ক্যাডার
৯. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (মৎস্য) কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
১০. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (খাদ্য) সাধারণ এবং কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
১১. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পররাষ্ট্র) সাধারণ ক্যাডার
১২. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বন) কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
১৩. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (সাধারণ শিক্ষা) কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
১৪. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (স্বাস্থ্য) কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
১৫. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (তথ্য) সাধারণ এবং কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
১৬. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পশু সম্পদ) সাধারণ এবং কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
১৭. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পুলিশ) সাধারণ ক্যাডার
১৮. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ডাক) সাধারণ ক্যাডার
১৯. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল) কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
২০. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (গণপূর্ত) কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
২১. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (রেলওয়ে প্রকৌশল) কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
২২. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (রেলওয়ে পরিবহন ও বাণিজ্যিক) সাধারণ এবং কারিগরি/পেশাগতক্যাডার
২৩. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (সড়ক ও জনপথ) কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
২৪. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পরিসংখ্যান) কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
২৫. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কর) সাধারণ ক্যাডার
২৬. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কারিগরি শিক্ষা) কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার

বিসিএস পররাষ্ট্র

এই বিসিএস ক্যাডার বাংলাদেশের সবচেয়ে আকাঙ্খিত ক্যাডার পদ। শতকরা ৯০ ভাগ প্রার্থীরা পছন্দক্রমে পররাষ্ট্র ক্যাডারকে প্রথমে রাখেন।
আপনি কি একই সাথে চাকরি, বিদেশ ভ্রমণ করতে চান? মানুষের খুবই সহজাতপ্রবৃত্তি হলো নতুন জায়গা দেখা, ঘুরা। নতুন মানুষের সাথে কথা বলা। পররাষ্ট্র ক্যাডারে এসবকিছুই সম্ভব।

বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের সুযোগ–সুবিধাঃ
দূতাবাসে পদায়ন হলে দেশের নিয়মিত বেতনের সাথে অতিরিক্ত ১২০০ ডলার পাবেন। সাথে মাসিক ৩০০ ডলার বিনোদন ভাতা, বার্ষিক ২০ হাজার ডলার বাসা ভাড়া ভাতা দেয়া হবে। এছাড়া দুই সন্তানের পড়াশুনার সম্পূর্ণ খরচ এবং পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসাভাতার মোট ৯০ ভাগ সরকার বহন করবে।
বিদেশে থাকাবস্থায় ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি কিনতে পারবেন। যদিও সেই গাড়ি দেশে নিয়ে আসতে চাইলে ট্যাক্স দিতে হবে।

দেশে বিদেশে সরকারি খরচে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। থাকা, খাওয়া সব সরকার বহন করবে।
বিদেশে যেকোন অনুষ্ঠানে আপনি এবং আপনার পরিবারের সবাই কুটনীতিক মর্যাদা পাবেন।
বিদেশে প্রভাবশালীদের সাথে একই স্ট্যান্ডার্ডে রাজকীয় ভাবে চলাফেরা করবেন।
এই বিসিএস ক্যাডারে লোক কম হওয়ায় নিশ্চিতভাবে রাষ্ট্রদূত পর্যন্ত প্রমোশন পাবেন।
সর্বোপরি এই ক্যাডারে থাকবে না কোন রাজনৈতিক চাপ। নিশ্চিন্তে নিজের কাজ করে যেতে পারবেন।

বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের অসুবিধাঃ
চাকরির একেবারে প্রথমদিকে সহকারী সচিব হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগদান করবেন। তখন সকল কাজই প্রশিক্ষণমূলক। টাইপিং থেকে শুরু করে সকল প্রকার দাপ্তরিক কাজ করতে হবে। কাজের প্রতি অনীহা চলে আসতে পারে।

প্রথমদিকে কোন গাড়ি পাবেন না। গণমাইক্রোবাসে করে অফিস যাতায়াত করতে হবে।
৬ বছরে ২ টি দেশে পোস্টিং হবে। তারপরের ৩ বছর ঢাকায় পোস্টিং থাকবে। ফলে এক জায়গায় বেশিদিন থাকতে পারবেন না।

সবশেষে পররাষ্ট্র ক্যাডারে বলতে গেলে তেমন কোন অসুবিধাই নেই। দেশ-বিদেশে রাজকীয় স্টাইলে চলাফেরা করতে, নিজের দেশকে পুরো বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে চাইলে এই ক্যাডার আপনার জন্য।

বিসিএস পুলিশ

মৌলিকা চাহিদার পরে আমাদের সবচেয়ে বেশি দরকার হয় “নিরাপত্তা”। জনগনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ কাজ করে। একেবারে মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে উপর মহল পর্যন্ত পুলিশের বিস্তৃতি। এত বিস্তৃত কর্মপরিধি অন্য কোন বিসিএস ক্যাডারে নেই।

বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের সুযোগ সুবিধাঃ
পুলিশ ক্যাডারে আপনার পরিবারের বা আত্মীয়স্বজনকে যতটা সাহায্য করতে পারবেন, অন্য কোন বিসিএস ক্যাডারে থেকে সেটা পারবেন না। যত ধরনের সমস্যাই হোক না কেন, একজন পুলিশ ক্যাডার হিসেবে সব জায়গায় আলাদা সম্মান পাওয়া যায়।

রাজশাহীর সারদা একাডেমীতে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একটি মাস্টার্স অব পুলিশ সায়েন্স ও কমপ্লিট হয়ে যাবে।

চাকরির শুরু থেকেই বডিগার্ড, ভাতা, বাংলো, গাড়ি সকল সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে।
বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিতে দেশ বিদেশে সরকারি খরচে যেতে পারবেন। এছাড়া ও জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করতে পারবেন। প্রতি মিশনে ২০ থেকে ৪০ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন।

সাধারণ পুলিশি কাজ ভালো না লাগলে স্পেশাল ফোর্স, এসএসএফ, গোয়েন্দা, র‍্যাব সহ অন্যান্য ফোর্স গুলোতে কাজ করতে পারবেন।

সামাজিক অনুষ্ঠানে মর্যাদা, সম্মান, খ্যাতি অন্যদের তুলনায় বেশি পাবেন।
দেশের পরিকল্পনা গুলো মাঠে থেকে বাস্তবায়ন করার সুযোগ পাবেন।

বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের অসুবিধাঃ

চাকরির কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নাই। দিনে রাতে ২৪ ঘন্টাই ডিউটি। বড় কোন ছুটি নেই। রাত ২ টায় কল আসলেও বিছানা ছেড়ে যেতে হবে।

পুলিশ ক্যাডারের বর্তমান ইমেজ একটু খারাপ। সাধারণ লোকের চোখে পুলিশ মানেই ঘুষখোর। যদিও এটা ঠিক নয়।

চাকরিতে অবৈধ পথে যাবার সম্ভাবনা অনেক। তবে নিজে সৎ থাকলে অনেকটাই এড়ানো যাবে।
রাজনৈতিক প্রেশার খুব বেশি। যাদের পলিটিক্স ভালো লাগে না, তারা পুলিশ ক্যাডারে জুতসই করে উঠতে পারবেন না।

বিসিএস এডমিন বা বিসিএস প্রশাসন

সরকারের সকল প্রশাসনিক কাজ, প্রতিবেদন, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, সকল ক্যাডারদের সমন্বয় সাধন করে থাকেন প্রশাসন বা এডমিন বিসিএস ক্যাডাররা। পূর্বে পুলিশের উপর এডমিন ক্যাডারদের কিছু কর্তৃত্ব ছিল। এডমিনরা উপজেলা পর্যায়ে, জেলা পর্যায়ে ম্যাজিট্রেসি করতে পারতেন। কিন্তু বর্তমানে বিচার ব্যবস্থা সুপ্রিম কোর্টের আওতাধীনে থাকায় এডমিনদের জৌলস কমে গেছে। তাই এডমিন ক্যাডার ৩য় স্থানে চলে এসেছে।

বিসিএস এডমিন বা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সুযোগ সুবিধাঃ
এডমিন ক্যাডার থেকে শতকরা ৮০ ভাগ সচিবালয়ে নিয়োগ হয়। তাই আপনি এডমিন ক্যাডার হলে সচিবালয়ে পদোন্নতি পাবেন। এমনকি কম বয়সে চাকরিতে জয়েন করলে ক্যাবিনেট সচিব পর্যন্ত হতে পারবেন, যার মর্যাদা সংসদ সদস্য থেকেও বেশি।

বিভিন্ন অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয়ে কাজ করতে পারবেন।
বিদেশ ভ্রমণ, বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনে কাজ করতে পারবেন। বিদেশে উচ্চশিক্ষা, ট্রেনিং সরকারি খরচে করতে পারবেন।
গাড়ি, বাংলো সুবিধা পাবেন এবং স্থানীয় পর্যায়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে পারবেন।

বিসিএস এডমিন ক্যাডারের অসুবিধাঃ

রাজনৈতিক চাপ বেশি। কর্মক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ একটু কম। এই ক্যাডারেও দুর্নীতির বেশ অভিযোগ আছে। তবে নিজে সৎ থাকলে কাজ করতে পারবেন।

অন্যান্য ক্যাডার থেকে অনেকেই সচিবালয়ে আসার জন্য এডমিন ক্যাডারে চলে আসেন। সেজন্যে পদোন্নতি অনেকটা ধীরগতির।
কাজে বৈচিত্র্যতা বেশি এবং ট্রান্সফার হবে ঘন ঘন। তাই নতুন পরিবেশে যাদের মানাতে কষ্ট হয়, তাদের একটু সমস্যা হবে।

বিসিএস শুল্ক ও আবগারি/ বিসিএস কাস্টমস

কাস্টমস ক্যাডার অনেকেই ১ম চয়েসে রাখেন। এই বিভাগে উটকো কোন ঝামেলা নেই। নিরিবিলি পরিবেশে কাজ করা যায়। চাকরির শুরুতে আপনাকে সহকারী কমিশনার (কাস্টমস) পদে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে যোগদান করতে হবে।

বিসিএস কাস্টমস ক্যাডারের সু্যোগ সুবিধাঃ

চাকরির শুরুতেই গাড়ি পাওয়া যাবে যাতায়াতের জন্য।
নিরিবিলি পরিবেশে অফিস থাকবে। কম সময়ের মধ্যেই দেশের শিল্পপতিদের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠবে। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যাবার সুযোগ পাবেন। ধনী ব্যবসায়ীদের সাথে উঠাবসা লেগে থাকবে।
এই বিসিএস ক্যাডারে বৈধভাবে প্রচুর আয় করা সম্ভব। চোরাচালান ধরতে পারলে সরকার ত্থেকে মূল্যভেদে ১০-৪০% পর্যন্ত পুরস্কার পাবেন।
সাধারণ চাকরি ভালো না লাগলে শুল্ক গোয়েন্দা হিসেবে ও কাজ করতে পারবেন।

বিসিএস কাস্টমস ক্যাডারের অসুবিধাঃ
কাস্টমস ক্যাডার দুর্নীতির জন্য বেশ সমালোচিত। দুর্নীতি করার অনেক সুযোগ আছে কর্মক্ষেত্রে। তবে সদিচ্ছা থাকলে কোন প্রকার দুর্নীতি ছাড়াই বৈধভাবে চাকরি করতে পারবেন। চোরাচালান ধরতে পারলে অতিরিক্ত অনেক টাকা সরকারের পক্ষ থেকে পুরস্কার হিসেবে পাবেন।
পদোন্নতি অতিরিক্ত কমিশনার পর্যন্ত ভালো। তবে অনেকেই চাকরির এক পর্যায়ে প্রশাসন ক্যাডারে চলে যায় সচিবালয়ে চাকরির জন্য। এবং রাজস্ব বোর্ডের প্রধান ও আসেন প্রশাসন ক্যাডার থেকে।

বিসিএস কর

আয়কর বিভাগের ক্যাডাররা অর্থমন্ত্রণালয়ের অধীন এনবিআর (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) এর একটি শাখায় কাজ করেন। সরকারের প্রত্যক্ষ সকল প্রকারের কর এই বিভাগে নেয়া হয়। এই ক্যাডারে ক্ষমতা তেমন খাটাতে পারবেন না। পদোন্নতি পেয়ে উপরে উঠে গেলে ক্ষমতা দেখানো ও খাটানোর যথেষ্ঠ সুযোগ পাবেন। এই ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদ – সদস্য, বাংলাদেশ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।

বিসিএস কর ক্যাডারের সুযোগ সুবিধাঃ

কর ফাঁকি ধরতে পারলে মোটা অংকের গ্রান্ট বা রিওয়ার্ড পাওয়া যায় সরকারের পক্ষ থেকে।
পদোন্নতি প্রথমদিকে বেশ ভালোই। তবে চাকরির মাঝপথে পদোন্নতি কিছুটা স্থবির হয়ে পড়ে। কারণ প্রশাসন ক্যাডার থেকে অনেকেই এই বিভাগের উর্ধ্বস্থানীয় পদে আসতে চান।

কাজের চাপ সারা বছর খুব একটা নেই বললেই চলে, কিছু নির্দিষ্ট সময় ছাড়া।
দেরীতে চাকরিতে যোগদান হলে এই ক্যাডারে আসা লাভজনক।

বিসিএস কর বিভাগের অসুবিধাঃ
চাকরির শুরুতে সুবিধা মোটামোটি থাকলেও কাস্টমস ক্যাডার থেকে অনেক কম।
ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলের সময় কাজের প্রেশার অনেক বেশি থাকে। এই সময় রাত ১০-১২টা পর্যন্তকাজ করা লাগতে পারে।
রাজস্ব বোর্ডের প্রধান কিন্তু আসেন প্রশাসন ক্যাডার থেকে। তাই রাজস্ব বোর্ডের প্রধান হতে পারবেন না।

বিসিএস নিরীক্ষা ও হিসাব বা বিসিএস অডিট

সরকারের যত আয় ও ব্যয় হয়, তার হিসাব ও নিরীক্ষা করেন অডিট ক্যাডাররা। এই বিসিএস ক্যাডার অনেক সম্মানজনক। সবাই অডিট ক্যাডারদের সমীহ করে চলেন।
কারণ জানতে ইচ্ছা হয়?

তবে শুনুন।
সরকারের প্রতিটি বিভাগেই খরচ ও আয়ের হিসেবে কিছু ভুল থাকেই। আর এই ভুল ধরেন অডিট ক্যাডাররা। তাই অন্য সব বিসিএস ক্যাডাররা অডিট ক্যাডারদের কিছু হলেও ভয় পান। সরকারের প্রতিটি বিভাগের কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেন অডিট ক্যাডাররা।

বিসিএস অডিট ক্যাডারের সুযোগ সুবিধাঃ
সরকারের প্রতিটি বিভাগেই অডিট বিভাগ থাকে। তাই কাজে ভিন্নতা পাবেন।
বিদেশে ভ্রমণের সুযোগ পাবেন। আপনার পকেট থেকে একটা টাকা ও ব্যয় করতে হবে না। ট্রেনিং করতে পারবেন ফ্রিতে।

সম্মান পাবেন প্রশাসন, পুলিশ ক্যাডারদের মতো।
সর্বোপরি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন ও বৈধ উপায়ে টাকা ও উপার্জন করতে পারবেন।
অবসরে যাওয়ার পরে ও বিভিন্ন কোম্পানি থেকে অডিট করার অফার পাবেন।

বিসিএস অডিট ক্যাডারের অসুবিধাঃ
দুর্নীতির অভিযোগ আছে এই ক্যাডারে। দুর্নীতির বেশ কিছু অফার আসবে আপনার কাছে। একটা পেপারে সাইন করলেই হয়ত ৫০ লাখ টাকা পেয়ে যেতে পারেন। তবে সদিচ্ছা আর সততা থাকলে কোন দুর্নীতি আপনাকে ছুতে পারবেনা।

বিসিএস খাদ্য

খাদ্য ছাড়া কেউ বাঁচতে পারব না। এই খাদ্যের উৎপাদন, বিপণন, বিতরণ নিশ্চিত করেন খাদ্য বিভাগের ক্যাডাররা। চাকরির শুরুতে সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে মন্ত্রণালয়ে যোগদান করবেন। তারপরে আপনাকে খাদ্য অধিদপ্তরে পদায়ন করা হবে। সেখান থেকে জেলা পর্যায়ে কাজ করার সুযোগ পাবেন।
বিসিএস খাদ্য বিভাগের সুযোগ সুবিধাঃ

চাকরিতে কোন ঝামেলা নেই। কাজের প্রেশার নেই। বেশ সহজভাবেই কাজ করতে পারবেন।
মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সাথে কাজ পারবেন। তাদের সুবিধা অসুবিধা দেখতে পারবেন।
কৃষক প্রেমীরা এই ক্যাডারে আসতে পারেন। দেশের মূলধারার কৃষিকাজের স্বচ্ছতা আপনার উপর নির্ভর করবে।

বিসিএস খাদ্য বিভাগের অসুবিধাঃ
চাকরির শুরুতে গাড়ি পাবেন না।
ক্ষমতা দেখানোর তেমন সুযোগ নেই।
অতিরিক্ত আয়, যেমনঃ সরকার কর্তৃক অর্থ পুরস্কার পাবার তেমন কোন সুযোগ নেই।

বিসিএস বাণিজ্য

দেশের আমদানি ও রপ্তানির সাম্যাবস্থা বাণিজ্য ক্যাডাররা দেখে থাকেন। ক্যারিয়ারের শুরুতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহকারী বাণিজ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে যোগদান করতে হয়। তারপরে মন্ত্রণালয়ে অথবা বিভাগীয় শহরে পোস্টিং হয়।

বাণিজ্য বিসিএস ক্যাডারের সুযোগ সুবিধাঃ
যাতায়াতের জন্য গাড়ি পাওয়া যায়।
চাকরিতে কাজের চাপ নেই। তাই ছুটি পাওয়া যায় প্রচুর।
পদোন্নতি ভালো এবং দ্রুত হয়।

বিদেশে ভ্রমণের সুযোগ আছে। বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে কাজ করার সুযোগ থাকে।
বাণিজ্য বিসিএস ক্যাডারের অসুবিধাঃ
চাকরিতে তুলনামূলক সম্মান কম।
অদূর ভবিষ্যতে বাণিজ্য ক্যাডার প্রশাসন ক্যাডারের সাথে একীভূত হবার সুযোগ আছে।

বিসিএস আনসার

এই ক্যাডারে চাকরি করতে হলে আপনাকে নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম পড়তে হবে পুলিশের মতো। চাকরির শুরুতে আনসার ও ভিডিপি অধিদপ্তরের অধীনে সহকারী জেলা এডজুটেন্ট হিসেবে পদায়ন হয়। আনসার ক্যাডাররা পুলিশের মতো আইন প্রয়োগ করতে পারেন না। তারা কেবল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়ক হিসেবে কাজ করেন।

আনসার বিসিএস ক্যাডারের সুযোগ সুবিধাঃ
চাকরির শুরুতেই গাড়ি, বাড়ি, বডিগার্ড পাওয়া যায়। পুলিশ ক্যাডারে যত সুবিধা পাওয়া যায় এই ক্যাডারে ও সেগুলো পাওয়া যায়।
পদোন্নতি বেশ ভালো।
বিদেশে মিশনে কাজ করার সুযোগ পাবেন।

আনসার বিসিএস ক্যাডারের অসুবিধাঃ
মহাপরিচালক হলেও কাজ করতে হয় প্রতিরক্ষা বিভাগের অধীনে। তাই অনেকেই এই ক্যাডারে আসতে চান না।
পুলিশের মতো ক্ষমতা দেখানোর সুযোগ নেই।

বিসিএস তথ্য

প্রচারেই প্রসার বলে একটা কথা আছে। তথ্য ক্যাডাররা সরকারি কাজের তথ্য-উপাত্ত সাংবাদিকদের কাছে পৌছে দেন। চাকরির শুরুতেই সহকারি পরিচালক বা সমমানের পদে যোগদান করতে হয়। এই ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদ- প্রধান তথ্য অফিসার।

তথ্য বিসিএস ক্যাডারের সুযোগ সুবিধাঃ
মিডিয়ার সাথে খুব সহজেই সখ্যতা গড়ে উঠে। নিজের পরিচিতি খুব সহজেই বিস্তার করার সুযোগ পাবেন।
চাকরিতে কাজের প্রেশার নেই। রাজনৈতিক চাপ নেই।
চাকরিতে ভালো না লাগলে পুল সিস্টেমের মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডারে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারবেন।

বিসিএস তথ্য ক্যাডারের অসুবিধাঃ
প্রশাসনিক সম্মান ও ক্ষমতা অনেক কম।
কাজের পরিধি কম।
কাজ একই ধরনের হওয়ায় কর্মক্ষেত্রে একঘেমেয়িতা চলে আসতে পারে।

বিসিএস ডাক

ডাক বিভাগের সকল কাজ এই ক্যাডাররা করে থাকেন। ডাক বিভাগে যোগদান করবেন সহকারী পোস্টমাস্টার জেনারেল হিসেবে। সর্বোচ্চ পদ- মহাপরিচালক। সরকারি চিঠিপত্র আদান-প্রদান, মানি অর্ডার, ব্যক্তিগত চিঠি, ডাক বিভাগের সঞ্চয়ী হিসাব সহ অন্যান্য দাপ্তরিক কাজগুলোর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করবেন।

বিসিএস ডাক বিভাগের সুযোগ সুবিধাঃ
কাজের প্রেশার নেই। ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ডিউটি।
পর্যাপ্ত ছুটি পাওয়া যায়।

২০ বছর চাকরি করার পর প্রশাসন ক্যাডারে চলে যাবার সুযোগ আছে।
বিসিএস ডাক ক্যাডারের অসুবিধাঃ
পদোন্নতি অনেক ধীর।
ক্ষমতা, সম্মান নেই বললেই চলে।

বিসিএস সমবায়

সমবায় বিসিএস ক্যাডার বিভিন্ন সমবায় সমিতির লাইসেন্স প্রদান, বার্ষিক অডিট, সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে থাকে। সহকারী নিবন্ধক হিসেবে চাকরির শুরুতে যোগদান করতে হয়। জেলা বা বিভাগীয় পর্যায়ে পোস্টিং হয়। সমবায় ক্যাডাররা বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয় সাধন করতে ভূমিকা রাখেন।

বিসিএস সমবায় ক্যাডারের সুযোগ সুবিধাঃ

কাজের প্রেশার নেই।
রাজনৈতিক চাপ নেই।

চাকরির শেষদিকে প্রশাসন ক্যাডারে উপসচিব হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

বিসিএস সমবায় ক্যাডারের অসুবিধাঃ
গাড়ি, বাড়ি সুবিধা নেই।
প্রভাব প্রতিপত্তি একেবারেই নেই।

বিসিএস রেলওয়ে পরিবহণ ও বাণিজ্যিক

রেলওয়ে পরিবহণ, উন্নয়ন, রেলওয়ের প্রশাসনিক দায়িত্ব এই ক্যাডাররা পালন করে থাকেন। চাকরির শুরুতে সহকারী ট্রাফিক সুপারিন্টেন্ডেন্ট হিসেবে যোগদান করতে হবে। এই ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদ- মহাপরিচালক।

বিসিএস রেলওয়ে পরিবহণ ও বাণিজ্যিক ক্যাডারের সুযোগ সুবিধাঃ

কাজের প্রেশার কম।
প্রয়োজনীয় ছুটি পাওয়া যায়।
১৮/২০ বছর পরে চাইলে প্রশাসন ক্যাডারে চলে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারবেন।

বিসিএস রেলওয়ে পরিবহণ ও বাণিজ্যিক ক্যাডারের অসুবিধাঃ
পদোন্নতি বেশ ধীরগতির। মহাপরিচালক পদে যাবার সম্ভাবনা খুব কম। কারিগরি ক্যাডার থেকে মহাপরিচালক পদে নিয়োগ হয়।

ক্ষমতা, সম্মানের দিক দিয়ে এই ক্যাডার অনেক পিছিয়ে। তাই প্রায় সবাই এই ক্যাডারকে পছন্দে নিচের দিকে রাখেন।

বিসিএস পরিবার পরিকল্পনা

পরিবার পরিকল্পনার জন্য সরকারি সব ধরনের প্রোগ্রাম এই বিভাগের ক্যাডাররা করে থাকেন। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর বা বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা পর্যায়ে পোস্টিং হয়। আপনি এক ক্যাডারে নিয়োগ পেলে, জনগনের সাথে মাঠ পর্যায়ে মিশে পরিবার পরিকল্পনার কাজগুলো করতে হবে।

বিসিএস পরিবার পরিকল্পনার ক্যাডারের সুযোগ সুবিধাঃ

কাজের প্রেশার তেমন একটা নেই।
প্রকল্প নিজেই বাস্তবায়ন করার সুযোগ পাবেন।
চাকরি ভালো না লাগলে পরবর্তীতে প্রশাসন ক্যাডারে চলে যাবার সুযোগ পাবেন।

পরিবার পরিকল্পনা বিসিএস ক্যাডারের অসুবিধাঃ

উপজেলা পর্যায়ে বা জেলা পর্যায়ে যেখানেই পোস্টিং হোক না কেন, প্রশাসন ক্যাডারের অধীনে কাজ করতে হয়। অথবা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কিংবা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার অধীনে কাজ করতে হয়।

অনেক সময় নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জুনিয়র প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পেলে তার অধীনে কাজ করতে হয়।
এইসব কারণে অনেকেই এই ক্যাডারকে পছন্দক্রমে নিচের দিকে রাখেন।

এই ক্যাডারগুলোই চয়েস লিস্টে রাখেন ক্যাডার প্রার্থীরা। তবে প্রতিটি প্রার্থীর ইচ্ছা ভিন্ন থাকে। নিজ প্যাশনের উপর নির্ভর করে

তালিকার পদক্রম ভিন্ন হয়। সবাই পররাষ্ট্র ক্যাডার ১ম চয়েসে দিলে যে আপনাকেও সেটা প্রথমে দিতে হবে এমন কোন কথা নেই। যে ক্যাডারে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন, সে বিবেচনায় সেই ক্যাডারকে পছন্দতালিকায় উপরে দিবেন।

বাকি বিসিএস ক্যাডারগুলো হলো কারিগরি বা পেশাগত ক্যাডার। কারিগরি ক্যাডারে সবার যাওয়ার সুযোগ নেই। প্রকৌশলী ক্যাডারে যেতে হলে আপনাকে প্রকৌশলী বা ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে।

নন ক্যাডার চয়েজ (সকল বিষয়)

৯ম গ্রেড

১।আইন ও বিচার বিভাগ -সাব রেজিস্ট্রার (সামাজিক অবস্হা বিবেচনায় লোভনীয় পদ)

২।বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন -উপজেলা নির্বাচন অফিসার(পুরো উপজেলার নির্বাচন, ভোটার আইডি, জাতীয় নির্বাচনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত)
৩।মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ (ব্যানবেইস) সহকারী পরিচালক (সুবিধাজনক পদায়ন)
৪।প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় -সহকারী পরিচালক সুবিধাজনক পদায়ন)
৫।সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়-সমাজসেবা অফিসার(সরাসরি দুস্হ,প্রতিবন্ধী, সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ,কাজের চাপ বেশী, অন্যান্য সুবিধা আছে)
৬।মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়
সহকারী পরিচালক
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা
প্রোগ্রাম অফিসার
হোস্টেল সুপারিন্টেন্ডেন্ট (শুধু এই পদে মহিলা প্রার্থী থেকে বিবেচনা করা হবে)

বিঃদ্রঃ যারা পদসংখ্যা বেশীকে প্রাধান্য দিতে চান এবং উপজেলায় কাজ করতে আগ্রহী, বেশী পদ হলে সুযোগ বেশী হবে মনে করেন তারা এভাবে সাজাতে পারেনঃ

সাব রেজিস্ট্রার, সমাজসেবা অফিসার, নির্বাচন অফিসার, সহকারী পরিচালক (ব্যানবেইস),সহকারী পরিচালক (প্রাথমিক) ,সহকারী পরিচালক (মহিলা)মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, প্রোগ্রাম অফিসার, হোস্টেল সুপারিন্টেন্ডেন্ট(মহিলাদের জন্য) এভাবে সাজাবেন।

১০ম গ্রেড

১।প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় -উপসহকারী পরিচালক
২।প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় – সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার
৩।অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ,আয়কর অনুবিভাগ(জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) কর পরিদর্শক
৪।অর্থ মন্ত্রণালয় (কন্ট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল) -এস এ এস শিক্ষানবীশ

১১-১২ তম

সহকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।