ইতিহাসে ইসলামিক হাসপাতালঃ

এই হাসপাতালে সব নারী পুরুষের চিকিৎসা হবে, তারা এখানে ততদিন থাকবে যতদিন না তারা পুরাপুরি সুস্থ হয়ে না উঠে। এই হাসপাতালে কাছের আর দুরের, সকল নাগরিক আর প্রবাসি, গরীব আর ধনীদের চিকিৎসা হবে।

এখানে শারীরিক আর মানসিক সকল রোগীর চিকিৎসা হবে। এখানে চিকিৎসা দেয়া হবে শিক্ষিত আর অশিক্ষিত সবাইকে । এখানে চিকিৎসার জন্য কারো কাছ থেকে টাকা নেয়া হবে না এবং টাকার বিনিময়ে চিকিৎসা দেয়া হবে না। সকল রোগীর চিকিৎসা বিনা শর্তে হাসপাতাল বহন করবে।

.এই পুরা চিকিৎসা সেবা মহানুভব আল্লাহর নামে উৎসর্গ করা হবে।’ ১

কি ভাবছেন? এটা বিংশ একবিংশ শতাব্দীর কোন চ্যারিটি হাসপাতালের গল্প? না……… এটা ১২৮৫ সালের কায়রোর সুলতান আল নাসির এর ওয়াকফ কালাউন হাসপাতালের । এই হাসপাতাল ১৯শ শতাব্দি অবদি এভাবে চালু ছিল।

মানব সভ্যতায় ইসলামিক সভ্যতার অন্যতম অবদান হচ্ছে হাসপাতাল। এই সব সময়ে বিশ্বের আর কোথাও এমন বড় হাসপাতালের ব্যবস্থা ছিলো না। এই সব হাসপাতাল ছিল সেক্যুলার ইন নেচার। যেখানে সকল ধর্মের, বর্ণের, সিভিলিয়ান থেকে শুরু করে সেনা, উজির নাজিরদের চিকিৎসা দেয়া হতো, তাও বিনা মুল্যে। ইসলামে এসব হাসপাতালকে ‘বিমারিস্তান’ ডাকা হতো। এগুলো ক্লিনিক নয়, বা চিকিৎসার জন্য কারো চেম্বার নয়, বরং বিশাল হাসপাতাল, কোন কোন হাসপাতাল আধুনিক ওনেক হাসপাতালের চাইতেও অনেক বিশাল ছিল।

সবচেয়ে প্রথম ডকুমেন্টেড বিমারিস্তান বা ইসলামিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার রেকর্ড পাওয়া যায় ৯ম শতাব্দীতে বাঘদাদে, খলিফা হারুন আল-রাশিদের সময়ে। এর প্রায় ১০০ বছর পর বাঘদাদে আরও ৫ টি বিমারিস্তান প্রতিষ্ঠার রেকর্ড আছে। রেকর্ডে এও আছে যে খলিফার উজির কারাগারে বন্দিদের জন্যও চিকিৎসার আদেশ দিয়েছিল, আর সেই সাথে ভ্রাম্যমান ডিসপেনসারি আর ডাক্তার গ্রামে গ্রামে যেয়ে মানুষের চিকিৎসা দেয়ার আদেশ। ধরে নেয়া যায় যে সেইসব আদেশ যথাযথ ভাবেই পালন করা হয়েছিল।

৯৮২ সালে সুলতান আবুদ আল-দাওলার নির্দেশে বাগদাদে যেই হাসপাতাল নির্মাণ করা হয় তাতে ছিল ২৫ জন ডাক্তার, সেই সাথে অকুলিস্ট, সার্জন, বোনসেটারস। এই হাসপাতাল প্রাসাদের চাইতেও বড় ছিল বলে একজন ট্র্যাভেলার লিপিবদ্ধ করে গেছে।

কায়রো, দামাস্কাস, বাঘদাদ ছাড়াও পুরা ইসলামিক শাসনামলে সবখানেই বিমারিস্তান বা হাসপাতাল গড়ে তুলেছিল তখনকার শাসকেরা। প্রায় সব হাসপাতাল ওয়াকফ সম্পত্তি ছিল। সুলতান, বাদশাহ, ধনী ব্যক্তিরা এসব সম্পত্তি ওয়াকফ হিসাবে দান করে দিতেন। এসব ওয়াকফ সম্পত্তির মাঝে থাকত দোকান, সরাইখানা, নানা ধরনের মিল যার আয় দিয়ে আবার হাসপাতালগুলো চলত। এমন কি গরীব রোগী চিকিৎসা শেষে ফেরত যাওয়ার সুম্যে তাদেরকেও টাকা দেয়া হতো এখান থেকে। স্টেট বাজেটেও হাসপাতালের জন্য বাজেট ধার্য করা হতো, যাতে সকলে এখানে বিনা খরচে চিকিৎসা পেতে পারে।

এসব কোন কোন হাসপাতালে চিকিৎসা শাস্ত্রের উপর শিক্ষা আর ক্লিনিক্যাল ট্রেইনিং দেয়া হতো, যেমন বাঘদাদের ‘আদুদি হাসপাতাল’। এসব অনেক হাসপাতালে রোগ অনুযায়ী রোগীদের আলাদা আলাদা অয়ার্ডে পৃথক ভাবে রেখে চিকিৎসা দেয়া হতো।

ছবিটি কালাউন কমপ্লেক্সের যার ভিতরে ছিল হাসপাতাল আর মাদ্রাসা। হাস্পাতাল্টি ১৯২০ সাল পর্যন্ত অটোমান খেলাফতের আমল পর্যন্ত চালু ছিল। এই হাসপাতাল থেকে অসুস্থ আর গরীবদের জন্য সেবার অনেক ব্যবস্থা ছিল যেমন চিকিৎসা, ওষুধ, থাকার জায়গা, অন্ন বস্ত্র ইত্যাদি। এই হাসপাতালেই ওষুধ বানানো হতো আর এখানে হতো মেডিক্যাল রিসার্চ।

লেখকঃ সোহেল খান

সোর্স ঃ

– ১ মাদ্রাসা ওয়া কুব্বাত ওয়া বিমারিস্তান আল-সুলতান কালাউন
– ২ ইউএস ন্যাশনাল লাইব্রেরী অফ মেডিসিন
https://en.wikipedia.org/wiki/Qalawun_complex

 

Join our Science Club