আমি ৯৬ ব্যাচ, সিভিল , খান জাহান আলী হলের বাসিন্দা। পাস করে বের হয়েছি ২০০২ সালে। পাস করার পর প্রায় আঠারো বছর পার হয়েছে।
কুয়েটের এই জন্মদিনে মনে হচ্ছে কিছু স্মৃতিচারন যদি করতে পারতাম। তবে স্মৃতি খুজতে গিয়ে হতাশ হলাম, তেমন কিছু মনে করতে পারছি না।
যা মনে আছে সংক্ষিপ্ত আকারে লিখলাম। স্মৃতি থেকে লেখা। তখন আমি সাধারন ছাত্র ছিলাম।
কুয়েটের আন্দোলন যখন শুরু হয় তখন আমরা ৯৬ ব্যাচ চতুর্থ বর্ষে ছাত্র, ২০০২ সাল। সরকারের উচ্চমহল থেকে ঘোষনা করা হলো, কয়েকটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে।
প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা তেমন ভাবে বলা হলো না।
পত্রপত্রিকায় আলোচনা হতে থাকলো, কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো করা হবে।
একটা মহল জোর দিয়ে বলার চেষ্টা করলো যে, যে বিআইটি গুলো আছে, এগুলোর অবকাঠামো তত ভালো নয়, এগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয় না করা হোক।
নতুনভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করায় বুদ্ধিমানের কাজ।
সকল বিআইটির শিক্ষকসহ উচ্চমহলে এটা নিয়ে আলোচনা হতে থাকলো। সম্ভবত আমাদের বিআইটিতে ছাত্রদের সাথে জুনিয়র শিক্ষকদেরও আলোচনা হয়ে থাকতে পারে।
এটা আমাদের ধারনা হলো, যদি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বঃ আগে ঘোষিত হয়, বিআইটিগুলো বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে ঘোষিত না হয় তবে পরবর্তিতে এটা আর বিশ্ববিদ্যালয় হবে না।
এর মাঝে সম্ভবত চট্টগ্রাম বিআইটির ভার্সিটির দাবিতে মিছিলের খবর পাওয়া গেল।
পড়ুনঃ BIT Chitagong যেভাবে CUET হলো
তখনকার বিআইটি গুলোর গুনগত মানে প্রথম ছিলো খুলনা বিআইটি।
গুনগত মান বিবেচনায় যদি একটা বিআইটি ভার্সিটি হয় তবে সেটা আমাদের খুলনা বিআইটির হওয়া উচিত।
অন্যান্য বিআইটিরা আন্দোলন করবে, এখবর আসতে লাগলো। কিভাবে তা হলে হলে প্রচার হয়ে গেল।
প্রথমদিন সম্ভবত অতি উৎসাহী কয়েকজন জড়ো হলো রশিদ হলের সামনে তারপর প্রশাসনিক ভবন ঘুরে মিছিল শেষ হলো। সিন্ধান্ত হলো, কাল বড় আন্দোলন হবে।
রাতে হলে হলে মিটিং হলো, প্লাকার্ড, ফেন্টুন তৈরি করলো জুনিয়ররা। সকাল ১০ টার পরে রশিদ হলের সামনে ছাত্র পরিপূর্ন।
সকল হলের সবাই এসেছে। সম্ভবত মিছিল নিয়ে প্রশাসনিক ভবনে যাওয়া হলো।
ছাত্রতে ভর্তি। প্রশাসনিক ভবনে, সিভিল ভবন, মেকা ভবন, বিজ্ঞান ভবন সবখানে লোকে লোকারন্য।
প্রশাসনিক ভবনে ভিসি স্যার সহ সিনিয়র স্যারেরা মিটিং এ বসেছেন। স্যারেরা আমাদের কথা শুনলেন ।
ইতোমধ্য মিডিয়ার লোকজন আসলো, চার বিআইটির আন্দোলনের খবর সকল মিডিয়ায় কয়েকদিন ধরে প্রচার হতে লাগলো।
সম্ভবত খুলনার রাজনৈতিক নেতাদের ও স্বারকলিপি দেওয়া হয়েছিল। মিছিল মিটিং কয়েকদিন ধরে চললো। ভিসি স্যারের উপরও সম্ভবত আন্দোলন বন্ধ করার চাপ ছিল।
স্যারেরা তো একদিন খুব রাগও করলো, বললো, তোমরা ভার্সিটি ভার্সিটি কেনো করছো? পৃথিবী ব্যাপি সবখানেই তো ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, এটাতেই আমরা সারা পৃথিবীতে পরিচিত।
আন্দোলন বন্ধ করো, লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করো।আমাদের মন তো মানে না। আমরা বুয়েটের মতো ভার্সিটি হতে চায়।
খান জাহান হলের ৯৮ ব্যাচ, সিভিলের জিয়া আন্দোলনের সময় গাছে পোস্টার লাগাতে গিয়ে বিদু্্যস্পস্ট হয়ে মারাত্বক আহত হয়। সাথে সাথে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
হলে ওর মারা যাওয়ার গুজব ছড়ায়। সারা বিআইটিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। জিয়া প্রায় একমাস হাসপাতালে থেকে সুস্থ হয়।
ইতোমধ্য ফুলবাড়ীগেটে রাস্তা অবরোধ, শিববাড়ী মোড়ে মানব বন্ধন, হাফুলবাড়ীগেটে রাস্তা অবরোধ, শিববাড়ী মোড়ে মানব বন্ধন, হাদিস পার্ক শহীদ মিনার চত্বরে অনশন, প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন, সিটি মেয়র, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, খুলনা-৩ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপকে স্মারকলিপি প্রদান। এ কাজগুলো করা হলো।
এর মধ্যে একদিন সরকার চারটি বিআইটিকে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে ঘোষনা করে। কুয়েট, চুয়েট, রুয়েট এবং গুয়েট।
কিন্তু গুয়েট নামের প্রতিবাদে ওরা আন্দোলন শুরু করলে নাম পরিবর্তন করে ডুয়েট রাখা হয়। সেদিন সারা বিআইটি আনন্দে মুখরিত হয়েছিল আবার মিছিল বেরিয়েছিল। আমরা আনন্দে সবাই সবাইকে জড়িয়ে ধরে কেদেছিলাম।
আমাদের পর ৯৭ শেষ ব্যাচ যাদের সার্টিফিকেটে বিআইটি, খুলনা লেখা আছে। আজ সেই কুয়েটের জন্মদিন।
শুধু বলি, কুয়েটিয়ান হিসাবে বা খুলনা বিআইটির ছাত্র হিসাবে আমি গর্বিত, গর্বিত এবং গর্বিত।
সুকান্ত, ৯৬ ব্যাচ, সিভিল
৩০৪, খান জাহান আলী হল।
আরো পড়ুনঃ Birth of RUET: the inside story
ফিরে দেখা ডুয়েট আন্দোলন ও আজকের ডুয়েট ভাবনাঃ প্রজন্মের নতুন অধ্যায়