‌শুরুটা হয় ক্লাস 3 তে। ক্লাস 3 তে যখন আমি তখন প্রথম একটি সংগঠন কর্তৃক আয়োজিত ‘মেধা বৃত্তি’ পরীক্ষায় আমি ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাই। এর পরের বছর থেকে বিভিন্ন সংগঠনের মেধা বৃত্তি পরীক্ষার যেটাতেই অংশ নিই সেটাতেই বৃত্তি পেতে থাকি। এরপরে প্রাথমিক বৃত্তিতে উপজেলায় ১৩ম পজিশনে ট্যালেন্টপুলে, ৮ম শ্রেণিতে উপজেলায় ১ম স্থান নিয়ে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাবার পর ভালো ছাত্রের ট্যাগ পরে যায়। সবার আকাঙ্খাও বাড়তে থাকে আমার প্রতি। হাই স্কুলে থাকাকালীন সময়ে ক্লাস 6থেকে টেন পর্যন্ত স্কুলে ১রোল নিয়ে ২০১৪সালে SSC তে তথাকথিত গোল্ডেন জিপিএ-৫ নিয়ে ভর্তি হই Notre Dame College, Mymensingh এ। ছোট বেলা থেকেই কেন যেন ইন্জিনিয়ার হবার স্বপ্ন দেখতাম আর সেই স্বপ্ন নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের যাত্রাটাও শুরু হয়েছিল ভালো ভাবেই। যাত্রা পথে হঠাৎ সঙ্গি হয় “স্মার্টফোন”। ধীরে ধীরে বইয়ের সময়ের সাথে ভাগ
‌বসায় স্মার্টফোন। দেখতে দেখতে কিভাবে যেন ২টা বছর কেটে যায়। শেষ সময়ে এসে কেমন যেন হিসাব মিলে না আমার।বই ধরলেই মনে হয় কিছুই পড়া নেই আমার। খুড়িয়ে খুড়িয়ে কোনভাবে টেস্ট পরীক্ষা দিলাম এবং উত্তীর্ণ হলাম। এতো দিনে মনের পরীক্ষা ভীতিটা পর্বত আকার নিয়েছে। ভয়, হতাশা জেকে বসে আমার উপর। কলেজে এর মধ্যে এডমিট এসে গেছে। এডমিড তুললাম, বিদায়ের অনুষ্ঠানেও গেলাম। টিচারদের দোয়াও নিয়ে আসলাম, কিন্তু কেউ বুঝতেও পারে নাই আমার উপর দিয়ে কি যাচ্ছে। সবাই যখন রুদ্ধদ্বার পড়াশুনা করছে তখন আমি হতাশায় হাবুডুবু খাচ্ছি। হাবুডুবু এমন মাত্রায় খাচ্ছি যে, আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম HSC পরীক্ষাটা দেব না। নেট ঘেটে দেখলাম যে ইন্জিনিয়ারিং ভার্সিটি গুলোতে SSC অার HSC এর মাঝে এক বছর গ্যাপ থাকলেও ভর্তি পরীক্ষায় বসা যায়। (তখন জানতাম না যে ইম্প্রুভ পরীক্ষা দিলে যে passing year ও চেন্জ হয়)। যেহেতু SSC অার HSC র মাঝে ১বছর গ্যাপ থাকলেও BUET, KUET, RUET, CUET এ ভর্তি পরীক্ষা দেয়া যায় তাই চূরান্ত ভাবে সিদ্ধান্ত দিলাম যে ২০১৬ তে HSC দেব না। সবার অাগে অামার অবস্থাটা অামার বড় অাপুকে জানাই। সবচেয়ে অাশ্চর্যের বিষয় অামার সিদ্ধান্তে আমার পরিবার অন্যদের মতো অামাকে কোন রকম জোড়জবরদস্তি করলো না, বরং সাপোর্ট দিলো আমায় মানসিক ভাবে। এদিক থেকে অামি সবচেয়ে ভাগ্যবান ছিলাম। 
যেহেতু অামি পরীক্ষা দিচ্ছি না, এ অবস্থাতে যদি বাড়ি ফিরে যাই তাহলে পরিচিতরা ১০০% অাবোল তাবোল বলবে, অার অামি মানসিক ভাবে দুর্বল হবো। তাই ঠিক করলাম বাড়িতেই যাবো না।
HSC পরীক্ষার ২দিন অাগে অামি চলে গেলাম শেরপুরে অাপুর বাসায়। সেখানে গিয়ে জুনিয়রদের সাথে ব্যাচে পড়া শুরু করলাম। শুরু মানে অাদা জল খেয়ে শুরু করলাম। এর মাঝে এলাকাতে তিলকে তাল বানানো শুরু হয়ে গেছে। ওই দিকে মোটেও কান দিচ্ছিলাম না অামি। অামি শুধু পরিবারের সাপোর্ট নিয়ে স্বপ্ন দেখে যাচ্ছি আর চেষ্টা করে যাচ্ছি। দেখতে দেখতে ২০১৭ এর পরীক্ষা চলে এলো। পুরাতন সিলেবাসে পরীক্ষায় বসলাম একা একা। হলে চারিদিকে আমার শুধু জুনিয়র রা। আল্লাহর রহমতে ভালোভাবে পরীক্ষা শেষ করে ঢাকাতে কোচিং শুরু করলাম।
‌ ঢাকায় আসার পর সৃষ্টিকর্তা অাসল খেলা শুরু করলো। ঢাকায় আসার ২০দিনের মাথায় ‘টাইফয়েড’ এ আক্রান্ত হলাম। বিছানায় পড়ে রইলাম প্রায় একমাসের মতো। এবার আমার আত্মবিশ্বাসে আবার ঘুনে ধরতে শুরু করলো। যাই হোক সুস্থ হয়ে আবার চলে আসলাম ঢাকা। কোচিংএ এসে দেখি সিলেবাস প্রায় শেষ। তারপরও স্রষ্টার নাম নিয়ে আবার শুরু করতে লাগলাম পড়া। বুঝতে পারছিলাম পিছিয়ে পরছি। তারপরো হার মানছিলাম না অামি। খুড়িয়ে খুড়িয়েই আগাচ্ছি।এর মাঝেই রেজাল্ট দেয়ার সময় হয়ে গেল। রেজাল্ট নিয়ে ভয় ছিলো না আমার। মনে সাহস ছিলো বুয়েটে পরীক্ষা দেয়ার জন্য যত মার্কস চাওয়া হবে তা ইনশা আল্লাহ উঠবেই। 
কিন্তু না, তা হলো না। অাল্লাহ যে আরেকটা খেলা রেখেছেন সামনে কল্পনাও করি নাই। রেজাল্টে science এর সাবজেক্ট গুলোতে গড়ে ৯০+ থাকলেও ইংরেজি ২য় পাইসি ৫৯। ইংরেজিতে টোটাল জিপিএ A-. চোখে অন্ধাকার দেখা শুরু করলাম। কেননা ইন্জিনিয়ারিংএ পরীক্ষা দিতে পারবো না। সব উলট পালট হলো নতুন করে।তবে আমি অাত্মবিশ্বাসি ছিলাম যতই খারাপ হোক ইরেজিতে A- পাওয়ার মতো পরীক্ষা দেই নাই। পুন:নিরীক্ষণের জন্য অাবেদন করলাম। এর মাঝে ভর্তি পরীক্ষাও এগিয়ে আসছে। যেহেতু একটা রিস্ক নিয়েই ফেলেছি ১বছর আগে তাই নতুন করে রিস্ক নিতে চাইলাম না। উদ্ভাসে ইন্জিনিয়ারিং ক্লাস শেষে চুপিচুপি ভার্সিটি কোচিং ক্লাস করি। শুরু হলো আরো বিদঘুটে অবস্থা। ক্যালকুলেটর ছাড়া হিসাব করতে পারি না। মনের ভেতর একগাদা ডিপ্রেশন থাকলেও দমিয়ে যাচ্ছিলাম না। নিজেই নিজেকে মটিভেট করতাম। নিজেই নিজেকে সাহস দিতাম যে, না,,, আমি পারবোই। আল্লাহ অবশ্যই ভালো কিছু রেখেছেন। কেননা কোরআনে আছে “নিশ্চয়ই কষ্টের পর সস্তি আছে, নিশ্চয়ই কষ্টের পর সস্তি আছে”। কোরআনের এই একটা আয়াত যে আমায় কতো মটিভেট করে তা আমি নিজেও জানি না। 
আল্লাহর অশেষ রহমতে পুন:নিরীক্ষণে আমার রেজাল্ট চেন্জ হলো। কিন্তু ততদিনে প্রিপারেশন ডাল খিচুরি। আবার ইন্জিনিয়ারিং প্রশ্ন ব্যাংক ঘাটা শুরু করি। দেখতে দেখতে ঢাবির পরীক্ষা আসলো, তারপরের দিনই বুয়েটে পরীক্ষা। ঢাবিতে সিরিয়াল যা আসলো তা বলার মতো না, আর বুয়েট তো বুয়েটই । একটা করে পরীক্ষা আসে, দেই, চলে আসি, পরের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হই। এখনো দমে যাই নাই আমি। মনে প্রাণে আল্লাহর উপর বিশ্বাস, তিনি নিরাশ করবেন না। চুয়েটে সিরিয়াল আসলো ২০০০+ আর কুয়েটে সিরিয়াল নাই। বাকি রইলো RUET. হাতে প্রায় ২০ দিনের মতো। লাস্ট ভরসা রেখে RUET ·র প্রশ্নের ধরন অনুযায়ী শুরু করলাম অাবার পড়া। না, এবার অাল্লাহ অার নিরাস করেন নাই। চান্স হয়ে গেল।
অবশেষে পরিবারের সাপোর্ট, সৃষ্টিকর্তার রহমত অার নিজ অাত্মবিশ্বাস নিয়ে হাটা শুরু করেছি সপ্ন পূরণের পথে।
Sohel Shahriar, dpt. of chemical and food process engineering, RUET’17 ➽ [তোমার সফলতার বাস্তব গল্পের সন্ধানে আমরা। বিভিন্ন ভার্সিটিতে চান্স পাওয়া শিক্ষার্থীরা তাদের সফলতার গল্পটি জানাতে পারো আমাদের।আগামী বছরের ভর্তি পরীক্ষার্থীদের জন্য যা অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। তোমার লাইফের এমন গল্পটি বাংলায় টাইপ করে ছবিসহ পেইজের ইমেইল / মেসেজ বাটনে ক্লিক করে সেন্ড করো।] এই লেখাটা বন্ধুদের সাথে শেয়ার করো