দেখেন ভাই একটু ভালো মত বুঝানোর জন্য বিস্তারিত বলি।
বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষের সি এস ই সম্পর্কে নূন্যতম ধারনাই নাই। তারা কমিডিয়ান বলতে যেমন দিলদার আর টেলিসামাদ এর বাইরে কিছু জানে না এই ফিল্ডের ক্ষেতরেও তাই, বিশেষত অভিভাবক সমাজ মনে করে সি এস ই পড়ুয়া মানে মোবাইল-কম্পিউটারের মেকানিক, টাইপ-রাইটার কিংবা ওয়েবসাইট বানায় , আবার বাসে লিফ্লেট অ্যাড দেখে মাত্র ৫০০০ টাকায় সেই ওয়েবসাইট বানিয়ে দিচ্ছে কেউ কেউ ।
অভিভাবকদের কথা নাহয় বাদই দেন আমার এক ডাক্তারি পড়ুয়া বন্ধুই মনে করত এরা মার্কেটের সিসি টিভি অপারেটরের কাজ করবে কয়দিন পর। এখন বলেন এরা আপনাকে কি সাজেশন দেবে? প্রকৃতপক্ষে এই ফিল্ড অনেক বিরাট। পিসি – মোবাইল অ্যাপ , ওয়েব থেকে শুরু করে নেটওয়ার্কিং , ব্যাংকিং, প্রসেসর, সিনেমায়গ্রাফির কাজ প্রায় সব ক্ষেত্রে চাহিদা আছে।
২০২০ সাল নাগাদ ৭০ লক্ষ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার লাগবে যার ৪০% এরও যোগান নাই। শুধু বাংলাদেশেই ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০ বিলিয়ন এর মার্কেট হবে সে চেষ্টা চলছে বেশ জোরের সাথে। আর এখন যে হারে সব মেশিনে টাচ স্ক্রীন কন্ট্রোলের জনপ্রিয়তা বাড়ছে সাথে বাড়ছে সফটওয়্যার এর ব্যাবহার।এরপরও যারা বলে এদের টাকা-ভাত- চাকরী নাই তারা যে কোন লেভেলের মূর্খ আল্লাহই জানেন। এইবার আপনার প্রশ্নে আসি, ইঞ্জিনিয়ার মানেই হচ্ছে নানা রকম জীবনমুখী সমস্যার সমাধান করা- সেটা যে ফিল্ডেরই হোক না কেন।
আপনার ক্লাইন্ট যেটা যেভাবে চাইবে যেকোনভাবে করে দেয়া। আপনি যদি ভাবেন ইয়া মোটা হাজার খানেক বই পরে ইঞ্জিনিয়ার হবেন তাহলে আদৌ আপনি এই পেশার জন্য রেডি কিনা এখনই ভেবে দেখুন আবার।বাস্তব জীবণের সমস্যা আর বইয়ের অনুশীলনীর সমস্যার মধ্যে আছে বিস্তর তফাৎ। ইঞ্জিনিয়ার হতে হলে হাতে কলমে কাজ করতে হবে, সমস্যায় পড়বেন সমাধান করবেন এইভাবেই আপনার অভিজ্ঞতা বাড়বে সাথে বেতনও।
তবে এই ফিল্ডটা অন্য সবগুলো থেকে একটু আলাদা এই জন্য যে , এখানে আপনাকে সবসময় কাজ করতে হয় একটা নির্বোধ যন্ত্র কম্পিউটার নিয়ে। তাই একজন মানুষকে কোন কিছু বোঝানোর থেকে কম্পিউটারকে বোঝানো ঢের কঠিন যে মাধ্যমকে প্রোগ্রামিং বলা হয়। যেটা এক দুইদিনে সম্ভব না, এর জন্য অনেক সময় , শ্রম , মেধা আর শেষ অবধি লেগে থাকার তীব্র ইচ্ছার প্রয়োজন আর তার শুরুটা হয় খুব ছোট ছোট বেসিক সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে। পরে ধীরে ধীরে বড় সমস্যার গুলিকে ওই ছোট বেসিক সমস্যার রুপান্তর করার মাধ্যমে সম্পুর্ন সমাধান করতে পারাই মুল কাজ, যা বেশ ধৈর্যের ব্যাপার।
তাছাড়া সব সমস্যার যেকোন এক ভাবেই সমাধান করতে পারলেই হবে না , প্রতিটি কাজে ভ্যারিয়েশন চাই। দেখা যাবে আপনি করেছেন একভাবে ক্লায়েন্ট চাইবে-” অমক লেখাটা উড়ে আসুক”, “এই কালারটা লাল না নীল চাই”,”এটা আরও ফাস্ট কিছু করেন”, “অমক অংশটা এই ডিজাইন হলে ভালো লাগে” ইত্যাদি। যেটা আপনি করতে না পারলে ক্লায়েন্ট ভেগে যাবে। আর কোন অফিস তো আপনাকে শুধু বসিয়ে রেখে বেতন দিবে না। সাথে নিজের জ্ঞান দিনের সাথে আপডেট করতে হবে , এই ফিল্ডে শেখার কোন শেষ নাই।
খুশির কথা হচ্ছে এখানে আপনি কি কোথায় পড়লেন , কতদুর পড়লেন , কি সিজিপিএ কিছুই আসে যায় না, চাইলে অন্য যেকোন বিষয়ে লেখাপড়া করা কেউও এইখানে আসতে পারে। কি পারেন , কতটা আপডেট ভ্যারিয়েশন এই সব। যার অন্যতম প্রমাণ, অ্যাপেলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস, আর অভ্র কীবোর্ডের ডেভেলপার ডাঃ মেহদি। চাকরি ইন্টারভিউ তে প্রায়ই কম্পিউটার আর প্রোগ্রামিং সমস্যা ধরায় দিয়ে সমাধান করতে দিবে। এমনকি গুগল , ফেসবুক, মাইক্রোসফটও এইভাবেই হায়ার করে।
সর্বোপরি মাথার মধ্যে কিছু থাকা লাগবে কিভাবে উইজারের কমান্ড কম্পিউটারের মত যন্ত্র দিয়ে করাবেন, ঠিক কি কি করাবেন, আর জন্য কিভাবে কোডিং করাবেন , অ্যালগরিদম কেমন হবে এইটাই আসলে কম্পিউটার ইঞ্জিয়ারিং। এটা একেবারেই আমজনতার জন্য নয়। অন্যদিকে কম্পিউটার নিয়ে ব্যাচেলর করে এখন বাচ্চাদের স্কুলে A,B,C,D পড়ায় কিংবা সত্যি সত্যি ফটোকপির দোকান খুলে বসেছে এমন লোকের শতকরা অনুপাত বেশ কম হলেও একেবারে কিন্তু শূন্য নয়। বাকিটা আপনার ইচ্ছা।
আশিক ইমরান
American International University-Bangladesh (AIUB)