(১ম পর্বঃপরীক্ষা-পূর্ব প্রস্তুতি)

পরীক্ষা ব্যাপারটা এখনকার সময়ের স্টুডেন্টদের জন্য নিত্য দিনের খাওয়া পড়ার মতই নিয়মিত একটা ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।কয়েক ক্লাস পরপর বোর্ড পরিক্ষা তো আছেই,সাথে সাথে স্কুল কলেজ থেকে প্রতি বছরই কিছু না কিছু নতুন নামের এবং নতুন ঢংএর পরীক্ষা আমদানির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।তো এত শত পরীক্ষার অভ্যুদয় ঘটলেও স্টুডেন্ট দের কাছে পরিক্ষা মহাশয়ের প্রতি শ্রদ্ধা(!) ও ভয় ভীতি কিন্তু প্রায় আগের মতই থেকে গেছে। তাই পরিক্ষার্থীদের সঠিক প্রস্তুতি এবং পরীক্ষার বিভিন্ন সময়ে নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণের কমন কিছু টেকনিক নিয়ে আজকে একটু কথা-বার্তা বলব।
প্রথাগত ‘পরীক্ষা’ বলতে আমি ব্যক্তিগতভাবে পরীক্ষার আগের প্রস্তুতিমূলক সময়,পরীক্ষা চলাকালীন সময়,এবং পরীক্ষা-পরবর্তী সময়কে বুঝি।তাই আমি এই তিন সময়ের করণীয় বিষয়গুলি নিয়ে পৃথক পৃথক ভাবে আলোচনা করেছি।আজ ১ম পর্বে থাকছে পরিক্ষার পূর্ব প্রস্তুতি বিষয়ক আলোচনা। আশা করি সাজেশন গুলো তোমাদের কাজে আসবে। চল তাহলে শুরু করি। Ready 1,2,3,go……
♪♪পরীক্ষার আগে কি করব :
(১)তোমার সব ক্লাস নোট এবং ইম্পর্টেন্ট শীট, যেগুলো কি-না তোমার পরীক্ষার আগে অন্তত একবার হলেও দেখে যেতেই হবে সেগুলো ফাইলে/কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় গুছানো আছে কি-না এ ব্যাপারে অনেক আগে থেকেই নিশ্চিত থাকা জরুরি। নাহলে, প্রয়োজনের সময় প্রয়োজনীয় জিনিশটা না পাওয়ার যন্ত্রণা কেমন তা আলাদা করে নিশ্চয়ই বলার দরকার নেই,আর এটাতো পরীক্ষার আগের দিনের ব্যাপার।সামান্য অস্থিরতাও এসময় তোমার মনটাকে বিষিয়ে তুলতে যথেষ্ট,তাই এদিকটায় খুব সতর্ক থাকতে হবে কিন্তু।
(২)অনেকেই বলে,পরীক্ষার আগের দিন বেশি পড়াশোনা করা উচিৎ না।কথাটা খারাপ না তবে এর সঠিক অর্থ না বুঝলে ঝামেলা আছে। বেশি পড়া বলতে এমন পড়ার কথা বলা হয়েছে যাতে রাতের ঘুম পর্যন্ত না হারাম হয়ে যায়।কিন্তু তাই বলে পরীক্ষার আগের দিন তো একেবারে রিল্যাক্স মুডে থাকা যাবে না,তাই না?কারণ না পড়ে পরীক্ষার দিতে যাওয়ার চিন্তা করলে নিজের উপর চাপ কমে না, বরং বাড়ে ।তাই,নিজেকে চাপমুক্ত রেখে পরিক্ষার হলে যাওয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় হচ্ছে পর্যাপ্ত পড়াশোনা করে যাওয়া।এজন্য অল্প অল্প করে হলেও সম্পূর্ণ সিলেবাস এর টপিকগুলি রিভাইস করে যাওয়া উচিৎ। রিভিশনের সময় নিচের কিছু টেকনিক অনুসরণ করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে :

  1. ♦ যে বিষয়ের পরীক্ষা, সে বিষয়ের অধ্যায় গুলোকে সুবিধামত সাজিয়ে একটা রুটিন তৈরি কর;বড় অধ্যায় হলে একাধিক ভাগে বিভক্ত করে নেওয়া যেতে পারে।
  2. ♦ এবার, তুমি পরীক্ষার আগে কয় ঘন্টা সময় পাচ্ছ এবং এর মধ্যে কয় ঘন্টা পড়ার জন্য ব্যয় করতে পারবে(প্রয়োজনীয় বিরতি সহ) তা ঠিক করে নাও। এখন তোমার চাহিদা অনুযায়ী বড়/গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় গুলোর পেছনে কিছুটা বেশি সময় এবং ছোটো/সহজ অধ্যায়গুলোর জন্য তুলনামূলক কম সময় রুটিনে বরাদ্দ করে ফেল।কিন্তু সবসময় খেয়াল রাখবে- যাতে তোমার বানানো রুটিন বাস্তবিক পক্ষে তোমার পড়ার সময়ের সামর্থ্য অনুযায়ীই হয়।এভাবে রুটিন তৈরি করে পড়লে দেখবে নিজের ভেতর পড়া শেষ করার একটা তাড়না তৈরি হবে এবং সাথে সাথে পুরো সিলেবাসটা শেষ করেই তুমি পরীক্ষার হলে যেতে পারবে।আর “আমি পুরো সিলেবাসটা রিভাইস করে এসেছি”-এই চিন্তাটা তোমার ব্রেইনকে পরিক্ষার সময় যে কী পরিমান মেন্টাল সাপোর্ট এবং কনফিডেন্স দেবে তা এখানে লিখে বোঝানো সম্ভব না। 
  3. ♦ রিভিশনের সময় অবশ্যই খাতা আর কলম হাতের পাশে রাখা দরকার।কারণ হয়ত তুমি একটা জটিল সূত্র মুখস্থ করতে চাচ্ছ বা একটা কোটেশন মনে রাখতে চাচ্ছ কিংবা ধরো গদ্য-পদ্যের উৎস,লেখক ইত্যাদি তথ্য মাথায় ভালভাবে ঢোকাতে চাচ্ছ তখন সবথেকে ভাল উপায় হচ্ছে সেগুলো অন্তত একবার হলেও খাতায় লিখে ফেলা।এর ফলে একই জিনিশ বারবার পড়ে তোমাকে সময় নষ্ট করতে হবে না,পাশাপাশি তোমার ব্রেইনে জিনিশগুলো খুব ভালভাবে স্থান করে নেবে। 🙂
  4. ♦ পরিক্ষার আগে রিভিশনের সময় কোনোভাবেই সম্পূর্ণ নতুন বা অপরিচিত কোনো টপিক দেখা উচিৎ নয়।কারণ এগুলো ব্রেইনের উপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করে।আগের অনুশীলনকৃত পড়া গুলোই ভালমত,এমনকি সময় থাকলে কয়েকবার- দেখে যেতে পারো।
  5. ♦ ‘বেসিক’ নিয়ে কখনোই নিজের সাথে ধোঁকাবাজি করা যাবে না,তুমি পরিক্ষার জন্য চাইলে ইচ্ছানুযায়ী অনেক প্রশ্নই অনুশীলন করতে পারো,আবার প্রয়োজনবোধে অনেক প্রশ্নই এড়িয়ে যেতে পারো,কিন্তু বেসিক রিলেটেড টপিকগুলি তোমাকে রিভাইস করে যেতেই হবে।অনেক সম্ভাবনাময় পরিক্ষার্থী ই এই একটা জায়গায় মারাত্মক ভুলটি করে ফেলে–তারা পরিক্ষার আগে গাইড/প্রশ্নব্যাংক/স্যারের সাজেশন থেকে প্রচুর প্রশ্ন দেখে যাওয়ার চেষ্টা করে,কিন্তু সময়ের অভাবে বেসিক টপিকগুলোতেই ঠিকমত হাত দিতে পারেনা।ফলে, তাদের পরিক্ষায় যদি এসব ‘সাজেশনভিত্তিক’ প্রশ্ন থেকে কমন না পড়ে তখন তাদের সব পরিশ্রম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় এবং তখন স্বাভাবিকভাবেই তারা পরীক্ষায় আশানুরূপ ফলাফল পায় না।অথচ তারা কিন্তু যথেষ্ট পড়াশোনা করেছে ! সুতরাং বুঝতেই পারছ,শুধু রোবটের মত পড়ে গেলেই হবে না, “কি পড়ব আর কি বাদ দেব”- এ ব্যাপারেও তোমাকে যথেষ্ট স্মার্টলি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মনে রেখো,সাজেশন বা প্রশ্নব্যাংক তোমার সাথে প্রতারণা করতে পারে কিন্তু তোমার বেসিক কখনোই প্রতারণা করবে না।তাই, সবথেকে ভালো হয় যদি সবার আগে সিলেবাসের চ্যাপ্টার গুলোর বেসিক টপিক/সংশ্লিষ্ট সূত্রাবলি এবং এ সংক্রান্ত সাধারণ সমস্যাগুলো সবার আগে রিভাইস করে ফেল,পরে সময় থাকলে অতিরিক্ত প্রশ্ন অনুশীলনে যাও।
(৩) প্রতিটা পরীক্ষার আগে প্রশ্নের মানবন্টন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখা জরুরী এবং অবশ্যই সেই অনুযায়ী টাইম টেবিল তৈরি করে নিতে হবে পরিক্ষার আগেই।পরিক্ষার হলের জন্য এসব কাজ মোটেও জমা রাখা যাবেনা।বাংলা বা ইংরেজি ২য় পত্রের মত যেসব বিষয়ের পরিক্ষাগুলো রচণামূলক(Written based),সেসব পরিক্ষার আগে প্রতিটা রিটেন আইটেম লেখার জন্য কতটা টাইম নেবে এটার পরিকল্পনা বাসায় বসেই ঠিক করে নেওয়া উচিৎ।এবং পরীক্ষার সময় খাতা পাওয়ার পর পরই তোমার পরিকল্পিত টাইম টেবিলটি খাতার পেছনের পৃষ্ঠায় লিখে ফেলতে পারো(রাফ হিসেবে)যা পরিক্ষা চলাকালীন সময়ে তোমাকে সাহায্য করবে।এতে পরিক্ষার সবগুলো আইটেম সময়মত লিখে শেষ করতে কোনোরকম ভোগান্তি পোহাতে হবে না।  
(৪) পর্যাপ্ত ঘুম পরিক্ষায় ভাল পার্ফর্মেন্সের অন্যতম পুর্বশর্ত–এটা সাইকোলজিকালি প্রমাণিত।পরিক্ষার হলে তোমার স্মৃতিশক্তি এবং বুদ্ধিবৃত্তির সক্রিয়তা অনেকাংশে নির্ভর করে রাতে পর্যাপ্ত এবং নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের উপর। তাই পরিক্ষার আগের দিনের জন্য যে রুটিন তৈরি করেছো সেখানে ঘুমের জন্য ন্যূনতম ৬ ঘন্টা ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে।
(৫) যেসব মানুষের কথাবার্তা ,চালচলন তোমার মনে অস্থিরতা বা বিরক্তি বয়ে আনে তাদের কাছ থেকে পরিক্ষার আগের সময়টুকুতে যথাসম্ভব দুরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করা উচিৎ।বিশেষ করে যদি পরীক্ষাটি হয় লজিক নির্ভর কোনো বিষয়ের,তাহলে এক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্ক থাকা প্রয়োজন। যারা অনর্গল যুক্তিহীন এবং অন্ধ বিশ্বাস সম্পর্কিত কথা বলতে অভ্যস্ত তাদের সংস্পর্শ তোমার মনসংযোগে চরম ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।তাই অন্যসময় স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখলেও পরীক্ষার আগে এদের সাহচর্য কৌশলে এড়িয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।🙂
(৬) সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় তা হল- “Think positive, Be positive,Do positive.”পরীক্ষার আগে কোনো ভাবেই কোনো নেগেটিভ চিন্তা মাথায় আনা যাবে না।তোমার মোটিভেশন স্কেল একটা থার্মোমিটার এর মত।যত নেগেটিভ চিন্তা করবে তোমার মোটিভেশন লেভেল ততোই নামতে থাকবে।আর তখন স্বাভাবিক ভাবেই আর পড়াশোনায় মন সায় দেবে না,দুনিয়ার যত অপ্রয়োজনীয় চিন্তা-ভাবনা মাথায় ঘুরপাক খাবে।তাই পরিক্ষার আগে রিভিশনের সময় ক্ষণিকের জন্যও কোনো হতাশাব্যঞ্জক চিন্তাকে মস্তিষ্কে স্থান দেওয়া যাবে না,যেভাবেই হোক কোনো পসিটিভ চিন্তা দিয়ে একে প্রশমিত করে ফেলতেই হবে। “কালকের পরিক্ষায় A + না পেলে কি যে হবে!! “-এই চিন্তা না করে বরং এভাবে চিন্তা করো- “কালকের পরিক্ষায় A + পেলে কি ভালটাই না হবে!” 😃
(৭) পরীক্ষা শুরুর আগে সমস্ত অলসতা ঝেড়ে ফেলে মস্তিষ্ককে সক্রিয় করে তোলা জরুরি।এজন্য পরীক্ষা শুরুর অন্তত কয়েকঘন্টা আগে প্রয়োজনীয় ঘুম বা বিশ্রাম সেড়ে নিতে হবে।চা/কফি/দুধ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে পরিক্ষা হলে যাওয়ার আগে এক কাপ খাওয়া যেতে পারে,এতে শরীর ও মন চনমনে থাকবে।আর অবশ্যই প্রয়োজনীয় জিনিশ পত্র গুছিয়ে বেশ কিছুটা সময় হাতে রেখেই পরিক্ষা কেন্দ্রে পৌছাতে হবে।এসব পারিপার্শিক বিষয়গুলোতে সামান্যতম অসাবধানতা কিন্তু তোমার সব প্রস্তুতি কে নস্যাৎ করে দিতে পারে। সুতরাং, সাবধান ! 😑
(৮)আরেকটি বিষয় যা অধিকাংশ স্টুডেন্টের ক্ষেত্রেই দেখা যায় তা হল-পরিক্ষার হলে ঢোকার আগে বা পরে বন্ধু বান্ধবের সাথে প্রস্তুতি আর প্রশ্ন নিয়ে আলাপ করা। কে কতটুকু পড়েছে না পড়েছে,পরিক্ষায় কী আসবে না আসবে-এসব নিয়ে আলোচনা করে ক্ষতি ছাড়া লাভ কিছুই হয়না।এসব অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা পরিক্ষার ঠিক আগে তোমার মনে হতাশা আর ভয় বাড়িয়ে দিতে পারে।বিশ্বাস কর আর নাই কর অনেক ধূর্ত প্রকৃতির স্টুডেন্ট আছে যারা তোমাকে পরিক্ষার আগে ডিমোটিভেট করার জন্য নিজে থেকেই এসব আলাপ করতে আসবে।তোমার উচিৎ হবে এদেরকে কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া।
ঠিক আছে,অনেক তো প্রস্তুতি নেওয়া হল, চল এবার পরীক্ষার হলে ঢুকে পরা যাক 🙂
(বাকি অংশ ২য় পর্বে )
Writter: রাফি উর রশিদ
(পেজের লেখা বা সেবা যদি ভালো লাগে অথবা কোনভাবে আপ্নারা উপকৃত হন, তাহলে ৫* রিভিউ দিয়ে মতামত জানান। এটা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। পেজের লেখাগুলো সবার আগে পেতে ফলোয়িং অপশনে গিয়ে সী ফার্স্ট সেট করুন। নিয়মিত লাইক না দিলে লেখা আ[পনার সামনে যাবেনা। কমেন্ট এ লেখা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান। গুরত্বপূর্ণ লেখাগুলো শেয়ার করে নিজের টাইমলাইনে রাখুন) Write Review here – https://www.facebook.com/pg/EngineersDiary16/reviews/?ref=page_internal join our Community group https://www.facebook.com/groups/CEESBD/ Science Study- https://www.facebook.com/groups/ScienceStudy.EngineersDiary/ Join for admission Query https://www.facebook.com/groups/EMV17/ visit our website- https://engineersdiarybd.blogspot.com/ )