এখন এই বছরের অন্যতম সেরা উল্কা বর্ষণ জেমিনিডস বা মিথুন উল্কাবর্ষণ দেখা যাচ্ছে! আমরা অনেকেই উৎসুক হয়ে বসে আছি । ১২০ টি উল্কা প্রতি ঘণ্টায় দেখতে পাওয়া সম্ভব বিধায় সংখ্যা বিবেচনায় সবার চোখেই পড়ার কথা ! তবে শুধু আকাশে তাকালেই হবে না । তাকাতে হবে নির্দিষ্ট দিকে আর নির্দিষ্ট তারাদের নিকটে । আমাদের আলোচিত উল্কাপাত হবে মিথুন নক্ষত্রমণ্ডলের (constellation gemini) সবচেয়ে উজ্জ্বলতম দুই নক্ষত্র সোমতারা(pollux) ও বিষ্ণুতারা(castor) দের নিকটে। এই তারাদের নামকরন গ্রীক পুরানের(greek mythology) বিখ্যাত যমজ দানব ভাতৃদ্বয়ের(twin brothers) নামানুসারে করা হয়েছে।মিথুন নক্ষত্রমণ্ডলে দুইটি তারার পাশাপাশি অবস্থান ও আপাত উজ্জ্বলতার জন্য এদেরকে যুগল তারা(couple stars) ভাবা হত।কিন্তু বাস্তবে এরা একে অন্যের থেকে বেশ দূরে অবস্থিত।দুইটি নক্ষত্রের মধ্যে উজ্জ্বল পোলোক্স আমাদের পৃথিবী থেকে ৩৫ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত একটি কমলা বা লাল দানব নক্ষত্র(orange/red giant star)।এটি সূর্যের প্রায় দ্বিগুণ।ক্যাস্টর পৃথিবী থেকে ৫১ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত,যা সূর্যের চাইতে ২.৭ গুন বড় এবং প্রধান ধারার একটি নীল তারকা(blue main sequence star)। সম্প্রতি পোলোক্সকে কেন্দ্র করে একটি বিশাল নক্ষত্রের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।পৃথিবীর কক্ষপথীয় অবস্থানের জন্য বছরের খুব কম সময়ই এদের দেখাতে পাওয়া যায়। আর জেমিনিডস দেখতে হলে এই দুই তারাকে খুজে পাওয়াই মুখ্য কাজ !

সোমতারা ও বিষ্ণুতারাকে খুজে পাওয়া খুব কঠিন না ! তবে যারা আগে কখনো তারা খুজে দেখেন নি তারা নিম্নোক্ত ব্যাখ্যা দেখে খুজে পাবেন । তবে একটু ধৈর্যশীল হয়ে লেখাগুলোর সাথে নক্ষত্রের অবস্থান বা প্যাটার্ন মিলিয়ে নিবেন । সারারাতই দেখা গেলেও আমরা বাংলাদেশ সময় রাত ৯/ভারতীয় সময় রাত ৮.৩০ টার আলোকে নক্ষত্রের অবস্থান উল্লেখ করছি । পূর্ব-দক্ষিণ আকাশে চোখ রাখুন ,আপনি দেখতে পাবেন তিনটা তারা একই সরলরেখায় আছে।এটা হলো ওরিয়ন বেল্ট বা কালপুরুষের কোমর বা বেষ্টনী।তিন তারার আপনার সাপেক্ষে উপর বা দুরের তারার নাম হলো Alnitak(ঊষা),মাঝের তারার নাম Alnilam(অনিরুদ্ধ) এবং নিচেরটার নাম Mintaka(চিত্রলেখা)।এবার ওই তিন তারা থেকে হাতের বামদিকে সোজা তাকান,আপনি দেখতে পাবেন হালকা লাল রং এর উজ্জ্বল একটি তারা।ওইটা হলো কালপুরুষের বাম কাঁধ।ওই তারার নাম Betelgeuse(আর্দ্রা)। এই তারাটিকে ভালভাবে মনে রাখুন । এর রং দেখেই অন্য গুলির থেকে সহজেই আলাদা করতে পারবেন ।

এই তারা থেকে কিছুটা পূর্ব-উত্তরে আরেকটি উজ্জ্বল তারা দেখতে পাবেন । এই তারকাটি হল গামা জেমিওনোরাম বা আলহেনা(Alhena) ! আরবি الهنعة অর্থ হল উটের কাধ ! Gamma Geminorum হল মিথুন বা জেমিনি মণ্ডলের তৃতীয় উজ্জ্বলতম তারা ! আবার এই তারকা থেকে আরও কিছুটা উত্তর-পূর্বে দুইটি উজ্জ্বল তারা দেখতে পাবেন । এই জোড়া তারাই হল আমাদের কাঙ্ক্ষিত সোমতারা ও বিষ্ণুতারা ! আপনি এই দুই তারকাদ্বয়ের আশেপাশে জেমিনিডস উল্কাবর্ষণ দেখতে পেলেও উৎস হল ক্যাস্টর বা বিষ্ণুতারার নিকটে ! সোমতারা বিষ্ণুতারার চাইতে উজ্জ্বল এবং এটি নিজ মণ্ডলেরও উজ্জ্বলতম । আর বিষ্ণুতারা হল মিথুনরাশি মণ্ডলের দ্বিতীয় উজ্জ্বলতম ।

এইসময়ে আপনি পূর্ব দিকে দিগন্তের কাছাকাছি রাতের আকাশের উজ্জ্বল আরেক নক্ষত্র প্রভাসকে দেখতে পাবেন । প্রভাস(Procyon)
হল শুনীমণ্ডল(Canis minor) এর উজ্জ্বলতম তারা ! আর ওরিয়ন বেল্ট থেকে দক্ষিন-পূর্বে আকাশে, রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র মৃগবাধ মণ্ডলের(Canis major) এর তারা লুব্ধক(Sirius) কে দেখতে পাবেন । আর্দ্রাকে তো আগেই চিনলাম । এখন এই উজ্জ্বল তারকা তিনটিকে মিলিয়ে একটি ত্রিভুজ কল্পনা করতে পারবেন । এই ত্রিভুজকে শীতকালীন ত্রিভুজ বলা হয় !
সোমতারা ও বিষ্ণুতারাকে তো খুজে পেলেন ! এখন এই মহাজাগতিক ঘটনা উপভোগ করুন । রাত ২ টার দিকে সোমতারা ও বিষ্ণুতারাকে মাথার উপরে দেখতে পাবেন । যেহেতু উচু গাছপালাদের জন্য এবং খোলা উন্মুক্ত বিশাল মাঠে যাওয়া আমাদের সবার পক্ষে সম্ভব না ! তাই মাঝরাতেই জেমিনিডস ভাল ভাবে দেখতে পাবেন ! মাঝরাতে ১২ টার দিকে ওরিয়ন বেল্টকে আঠার উপর দেখতে পাবেন । এর উত্তরে আর্দ্রা , আর আর্দ্রা থেকে উত্তরপূর্বে সহজেই সোমতারা ও বিষ্ণুতারাকে দেখতে পাবেন ! আর যেহেতু আজ এই মহাজাগতিক ঘটনা দেখতে চলেছেন , তাই চোখের শক্তিও কিছুটা জমিয়ে রাখুন (!)
তারা খসা দেখার ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা আগে ফোন, ল্যাপটপ বা টিভির স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা বরত রাখুন । এতে আপনার দৃষ্টিক্ষমতা কিছুক্ষনের জন্য পরিস্কার হবে । আর আপনি তারা খসা দেখার জন্য যেখানে অবস্থান করবেন সম্ভব হলে তার আশেপাশের সমস্ত কৃত্রিম আলোর উৎস বন্ধ করুন । আর চাঁদ মামা পৌনে চারটার আগে মুখ দেখাবে না বিধায় সাথে চাঁদের আলোও উল্কাবর্ষণ দেখতে বাধা সৃষ্টি করবে না ! আর যেহেতু শীতকাল বাহিরে বা ছাদে অবস্থান করলে অবশ্যই শীতের পোশাক গায়ে দিয়ে তারা খসা দেখবেন ! সবার জন্য শুভকামনা ! তারা খুজে পেতে কোন সমস্যা হলে আমরা তো আছিই :)… আর অবশ্যই, তারা খসা বা উল্কা দেখতে পেলে আমাদের জানাতে ভুলবেন না !
c. জ্যোতির্বিদ্যা ও সৃষ্টিতত্ব
(পেজের লেখা বা সেবা যদি ভালো লাগে অথবা কোনভাবে আপ্নারা উপকৃত হন, তাহলে ৫* রিভিউ দিয়ে মতামত জানান। এটা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। পেজের লেখাগুলো সবার আগে পেতে ফলোয়িং অপশনে গিয়ে সী ফার্স্ট সেট করুন। নিয়মিত লাইক না দিলে লেখা আ[পনার সামনে যাবেনা। কমেন্ট এ লেখা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান। গুরত্বপূর্ণ লেখাগুলো শেয়ার করে নিজের টাইমলাইনে রাখুন) Write Review here – https://www.facebook.com/pg/EngineersDiary16/reviews/?ref=page_internal join our Community group https://www.facebook.com/groups/CEESBD/ Science Study- https://www.facebook.com/groups/ScienceStudy.EngineersDiary/ Join for admission Query https://www.facebook.com/groups/EMV17/ visit our website- https://engineersdiarybd.blogspot.com/ )