.
আমার গল্প দিয়ে শুরু করা যাক।রসায়ন
বিজ্ঞান পড়ার আশায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে
লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিসয় বন্টনের
দিন মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহন
করেছিলাম।খুব ইচ্ছে ছিল রসায়ন অধ্যয়ন শেষ
করে তাড়াতাড়ি চাকরি পেয়ে সংসারের
হাল ধরবো।কিন্তু বিধিবাম!আমার আগেরজন
গিয়ে রসায়ন পছন্দের মাধ্যমে আসন সংখ্যা
পূর্ণ করে ফেলায় কপাল পুড়ল।অন্যদের মতই
পছন্দের বিষয় না পেয়ে ভর্তি হলাম
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে।রাজ্যের হতাশা
আর না পাওয়ার বেদনা নিয়ে
বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন শুরু হল।
.
যতই দিন পার হচ্ছিলো ততই চাকরির দুনিয়া
ছোট হতে লাগলো(আমাদের দৃষ্টিতে)।তবে
একটা সুবিধা ছিলো টিউশনির ক্ষেত্রে।
কারণ অভিভাবকদের প্রথম পছন্দ ছিলো
পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রী।(যা শুধু
বর্তমান নয়,ভবিষ্যৎ এও থাকবে বলে মনে হয়)।
এই সুবিধার কারণে ভবিষ্যৎ পেশা কোন
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে চিন্তা করতে
পারতাম না।অনেক বড় ভাই,শিক্ষকদের কাছ
থেকেও চাকরির ক্ষেত্রে আশানুরুপ কোন
উত্তর পেতাম না।হতাশা বাড়তে থাকে।
.
1962 সালর মিউন নিউট্রিনো নামে একটা
কণা আবিষ্কারের পর “New York Times” এর
শিরোনাম ছিলো,”Physicists Discover a New
Kind of Nothing.” আমার অবস্থাও ছিলো
অনেকটা এরকম।ঢাল তলোয়ার বিহীন
নিধিরাম সর্দার।কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।যার
কারণে আল্লাহর অশেষ রহমতে তিন মাসের
মধ্যে (মাস্টার্স শেষ করার) “বাংলাদেশ
পরমানু শক্তি কমিশন” এর মত প্রতিষ্ঠানে
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে যোগ দিতে
পেরেছিলাম।এম.এস পরীক্ষার পর চাকরি
খুঁজতে গিয়ে যেসব অভিজ্ঞতা হয়েছে তা
আজ জানাতে চাই।আমার এ কথাগুলো তাদের
জন্যই যারা চাকরির ক্ষেত্র চিন্তা করে
হতাশ এবং আগামিবার অন্য বিষয় পাওয়ার
জন্য অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিবে।
.
আমাদের দেশের নাগরিকদের জন্য সবচেয়ে
মর্যাদাপূর্ণ চাকরি হচ্ছে BCS ক্যাডার।যার
জন্য সব বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা আবেদন
করতে পারে।পদার্থবিদ্যার ছাত্রছাত্রীরা
এই দিকেতো যেতে পারেই অন্যদিকে
তাদের জন্য রয়েছে আরো কিছু সুযোগ।আমি
এই লেখায় শুধু পদার্থবিদ্যা সম্পর্কিত
চাকরির ক্ষেত্র উল্লেখ করতে চাই।
.
প্রথমতঃ চাকরি পাওয়ার জন্য আমাদের
দরকার প্রথম শ্রেণির ফলাফল।এস,এ,সি,,
,এইচ,এস,সি,,সম্মান,,স্নাতোকোত্তর যাদের
চারটিই প্রথম শ্রেণির তাদের জন্য
নির্ভরযোগ্য দুটি ক্ষেত্র হচ্ছে,,
.
১. বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন(BAEC)-
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
.
২. বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ
কর্তৃপক্ষ(BAERA)-বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা
.
উপরোক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে “বৈজ্ঞানিক
কর্মকর্তা(পদার্থ বিজ্ঞান) পদে প্রায়
প্রতিবছর নিয়োগ হয়।
.
দ্বিতীয়তঃ যাদের তিনটি প্রথম শ্রেণির
রেজাল্ট তারা নিন্মোক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোত
ে আবেদন করতে পারে;
.
১. বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা
পরিষদ(BCSIR)-বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা
২. মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন সংস্থা
(SPARSO)-বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা
৩. বাংলাদেশ পাট গবেষনা ইন্সটিউট(BJRI)-
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা
৪. বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষনা ইন্সটিউট
(BINA)-বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা
৫. বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল
কর্তৃপক্ষ(CAAB)-এরোড্রাম অফিসার
৬. বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন
কর্তৃপক্ষ(DIWTA)-সহকারী কার্টোগ্রাফার
.
এছাড়া নিন্মোক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতেও
গুরুত্বপূর্ণ পদে পদার্থ বিজ্ঞানের
ছাত্রছাত্রীদের চাহিদা আছে।প্রতিষ্ঠানগ
ুলো হলঃ
.
১. বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (BMD)
২. বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (BPDB)
৩. বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (BCC)
৪. বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এন্ড
এক্সপ্লোরেশন কোঃ লিঃ (BAPEX)
৫. ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ (DESA)
৬. বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরী কমিশন
(BERC)
৭. বাংলাদেশ তৈল,গ্যাস ও খনিজ
কর্পোরেশন (PETROBANGLA)
৮. বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড এন্ড টেস্টিং
ইন্সটিউট (BSTI)
৯. ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরন কোঃ লিঃ (DESCO)
.
তৃতীয়তঃ যারা শিক্ষকতাকে মহান পেশা
মনে করে তাদের জন্য রয়েছর 82 টি
বিশ্ববিদ্যালয় (বেসরকারি-56 টি,সরকারি-26
টি),3150 টি কলেজ (বেসরকারি-2892
টি,সরকারি-251 টি),18500 টি উচ্চ বিদ্যালয়
(বেসরকারি-18183 টি,সরকারি-317 টি) এবং
2728 টি কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
(বেসরকারি-2548 টি,সরকারি-180 টি)।[তথ্য
আগে কালেক্ট করা।কিছুটা হেরফের হতে
পারে]
এসব প্রতিষ্ঠানে পদার্থবিদদের জন্য রয়েছে
বিশাল সুযোগ ও সম্ভাবনা।পদার্থবিজ্ঞান ই
যাদের ধ্যান-জ্ঞান,পদার্থবিজ্ঞানই যাদের
ভালবাসা তারা সহজেই এসব ক্ষেত্রে
নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নিতে
পারবে।
.
চতুর্থতঃ উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানসমূহ ব্যতীত
আরো প্রায় 330 টিরও বেশি সরকারি
প্রতিষ্ঠান রয়েছে।এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে
নিশ্চয় কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে
পদার্থবিদ দরকার।
.
পঞ্চমত,সমাজ বিজ্ঞান,ব্যবসা ও কলা
অনুষদের ছাত্রছাত্রীদের মত বিভিন্ন
ব্যাংকেও আমরা চাকরি করতে পারি বরং
গনিতে তুলনামূলক ভাল হওয়ার কারনে
আমাদের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে
.
ষষ্ঠতঃ দেশের বাইরের কথা চিন্তা করলেও
পদার্থবিজ্ঞান অনেক এগিয়ে।বহির্বিশ্বে
পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীদের রয়েছে
ব্যাপক চাহিদা।উন্নতবিশ্বে গবেষনা,বৃত্তি,চ
াকরির জন্য একটু চেষ্টা করলেই রয়েছে সফল
হওয়ার হাতছানি।
.
তাই আমার বিশ্বাস পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ
থেকে পাশ করে চাকরি নিয়ে চিন্তার কিছুই
নেই বরং পদার্থবিদ্যা বিষয়ক চাকরির
ক্ষেত্র অনেক বিস্তৃত বলে অন্যান্যদের
তুলনায় বিষয়টি অনেক এগিয়ে।এ বিভাগের
ছাত্রছাত্রীদের হতাশ না হয়ে পূর্ণ উদ্যমে
ভাল করে পড়াশুনার মাধ্যমে ভাল রেজাল্ট
করাটাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।মনে রাখতে
হবে সাবজেক্ট যেটাই হোকনা কেন ভাল
ফলাফলের বিকল্প নেই।ভাল পড়াশুনা,ভাল
রেজাল্ট ও ভাল প্রত্যাশা সব মিলিয়ে এ
বিভাগের একজন ছাত্র হয়ে উঠতে পারে
বিশ্বমানের।বিশ্বমানের প্রতিযোগিতায়
টিকে থাকতে ও নিজের জীবনে
পদার্থবিজ্ঞানের নতুন নতুন চিন্তার সাথে
হতে আসুন আমরা এই বিজ্ঞানের প্রতি আরও
মনোযোগী হই।