বাবরি মসজিদের পরিবর্তে ভারতের অযোধ্যায় নতুন একটি মসজিদ নির্মাণ হচ্ছে। ইতোমধ্যে মসজিদ নির্মাণের প্রথম আর্কিটেকচারাল পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়েছে।

শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড দ্বারা গঠিত ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশন (আইআইসিএফ) মসজিদ চত্ত্বরের নকশা প্রকাশ করে।

নকশায় দেখা যায়, মসজিদে বিশালাকার গম্বুজ থাকলেও, মূলত সেটি আধুনিক স্থাপত্যেরই নিদর্শন। থাকছে পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও।

আগামী বছরের শুরুর দিকে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হতে পারে। এজন্য ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস ২৬ জানুয়ারিকে ভাবা হচ্ছে।

সেখানে একটি হাসপাতালও থাকবে। দ্বিতীয় ধাপে হাসপাতাল নির্মাণের ব্যবস্থা করা হবে।

মসজিদ নির্মাণের দায়িত্বে থাকা ইন্দো ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশন (আইসিএফ) জানিয়েছে, মসজিদের নাম এখনও ঠিক করা হয়নি। তবে এটি কোনও সম্রাট বা রাজার নামে নামকরণ করা হবে না।

অযোধ্যার নির্মাণাধীন রামমন্দির থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে ধন্নিপুর গ্রামে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এই মসজিদের জন্য ৫ একর জমি দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ সরকার।

সেখানে তৈরি নতুন মসজিদের সঙ্গে যে পুরনো বাবরি মসজিদের নকশার মিল থাকবে না, তা আগেই জানিয়েছেন জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার স্থাপত্য বিদ্যা বিভাগের ডিন এস এম আখতার। মসজিদের নকশা তৈরির মূল দায়িত্ব বর্তেছে যাঁর উপরে।

কিন্তু ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশনের (আইআইসিএফ) এ দিনের ঘোষণার পরে নকশা ছাপিয়ে ইন্টারনেট-দুনিয়ায় লোকের মুখে-মুখে ফিরেছে মসজিদ চত্বরে বিভিন্ন প্রস্তাবিত মানবিক উদ্যোগ। নজর কেড়েছে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের দিন নির্বাচনও।

বিশেষত্ব:

  • পাঁচ একরে মসজিদ। সঙ্গে ৩০০ শয্যার সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। পরিকল্পনা রয়েছে কমিউনিটি কিচেন, গ্রন্থাগার নির্মাণেরও।
  • হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা। কর্মী জোগাতে কাছেই নার্সিং এবং প্যারামেডিক কলেজ।
  • কমিউনিটি কিচেন থেকে দিনে দু’বার খাবার আশপাশের এলাকার দরিদ্রদের জন্য।
  • বাবরি মসজিদের তুলনায় নতুন মসজিদ আয়তনে বড়। কিন্তু নকশায় পুরনোর সঙ্গে মিল একেবারেই নেই।

আইআইসিএফের সম্পাদক আতহার হুসেনের কথায়, ‘‘অযোধ্যায় মসজিদের শিলান্যাসের জন্য ২০২১ সালের ২৬ জানুয়ারিকে দিন হিসেবে বেছেছে অছি পরিষদ।  কারণ, প্রায় সাত দশক আগে এই দিনেই কার্যকর হয়েছিল দেশের সংবিধান। যা বহুত্ববাদে বিশ্বাসী। ওই আদর্শই প্রকল্পিত মসজিদের মূল ভিত্তি।’’

আখতার জানিয়েছেন, “গোলাকৃতির এই মসজিদে এক সঙ্গে নমাজ পড়তে পারবেন ২,০০০ জন। কিন্তু শুধু প্রার্থনাস্থল হিসেবে এই চত্বরকে আটকে না-রেখে সেখানে তৈরি হবে ৩০০ শয্যার সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। এছাড়া পুরো মসজিদটি সৌরশক্তিচালিত হবে। মসজিদের ভিতরের তাপমাত্রা বাড়ানো-কমানোর ব্যবস্থা থাকবে।’’

সেখানে বিনামূল্যে চিকিৎসার বন্দোবস্ত যেমন থাকবে, তেমনই আশপাশ থেকে আসা দরিদ্রদের প্রতি দিন বিনামূল্যে দু’বার ‘ভাল’ খাবার জোগাবে কমিউনিটি কিচেন। থাকবে গ্রন্থাগার। হয়তো অভাবী পড়ুয়াদের জন্য পাঠশালাও থাকবে । আগে শোনা গিয়েছিল জাদুঘর তৈরির পরিকল্পনাও।

আখতারের কথায়, ‘‘আড়ে-বহরে এই মসজিদ বাবরি মসজিদের তুলনায় বড় হবে। কিন্তু নকশায় মিল থাকবে না। চত্বরের একেবারে মাঝখানে থাকবে হাসপাতাল।’’ ইসলাম ধর্মের সেবার আদর্শের সঙ্গে যার মিল রয়েছে বলে তাঁর দাবি।

অযোধ্যায় বিতর্কিত জমি নিয়ে আইনি টানাপড়েনের সময়ে অনেকে বলেছিলেন, মন্দির-মসজিদ তৈরির বদলে বরং সেখানে তৈরি হোক ভাল হাসপাতাল কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে অবশ্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে সেখানে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছে রামমন্দিরেরই।

বহুদিন ধরে উত্তর প্রদেশে বাবরি মসজিদ ও রাম মন্দির নিয়ে বিরোধ চলছিল। সেই বিরোধ নিয়ে গত বছর সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়। তাতে বাবরি মসজিদের স্থানে মন্দির নির্মাণের রায় দেওয়া হয়।

আর মসজিদ নির্মাণের জন্য ভারত সরকারকে আলাদা জমি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। সে নির্দেশনা অনুযায়ী ধন্নিপুর গ্রামে পাঁচ একর জমিতে মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে।