আমরা অন্তত বাংলাদেশ এ শরীরের রোগ কে-ই সব মনে করে থাকি! অসুস্থতা বলতে আমরা শুধু শরীর এর সব সমস্যাকেই বুঝে থাকি! আর স্বাস্থ্য বলতে শারিরীক স্বাস্থ্য কেই বুঝিয়ে থাকি।
কিন্তু এর বাইরেও যে মানুষের অসুস্থতা থাকে।
মানুষের শরীর কে পরিচালিত করে মূলত মানুষের ব্রেইন।
আর এই ব্রেইন যখন অসুস্থ হয় তখন সেটাকে বলি আমরা মানসিক সমস্যা।
আমাদের দেশে মানসিক সমস্যা বলতে শুধু পাগলদের ই বুঝে থাকে মানুষ।
কিন্তু অসুখ কিন্তু বিভিন্ন রকম হয়। মানসিক অসুস্থতা থাকা মানে এই না যে মানুষটি পাগল।
মানুষকে পরিচালিত করে যে, মানুষের মাথা (ব্রেইন)আর সেই মাথার জন্য কিন্তু আমরা তেমন সচেতন নই।
তো আজ আমরা সেরকম ই একটি রোগ সম্পর্কে জানবো! যা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ন আমাদের সামাজিক দিক বিবেচনায় ।
প্রথমেই বলি যে , এই যে বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিজওর্ডার এটি এমন একটি রোগ যার কোনো ফিজিকাল ট্রিটমেন্ট আবিষ্কার হয় নি এখনো!
কারণ এটি এমন একটি জটিল অবস্থা যেখানে অনেক সমস্যা একসাথে দেখা দেয়!
আর একটি গবেষনায় দেখা গেছে আমেরিকায় এই রোগে আক্রান্ত রোগীর ৭০% + এর মধ্যে আত্ত্বহত্ত্যার প্রবনতা রয়েছে।
তবে এই রোগের লক্ষন গুলো
(ডক্টর এর পরামর্শ ব্যাতিত কোনো সিধান্তে উপনিত হওয়া যাবে না)
তবে জানতে তো ক্ষতি নেই!
১. খুব বেশি আবেগ প্রবনতা : অল্পতেই অনেক বেশি কষ্ট অনুভব করা, অল্পতেই খুশি হয়ে যাওয়া এই রোগের প্রধান লক্ষ্মণ এর একটি! আবেগ এর নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা তাদের নেই বললেই চলে।
২. মুড সুইং : এই রোগের আরেকটি বড় লক্ষ্মণ হল এই মুড সুইং, এই যে অল্পতেই খুশি হওয়া বা খুব কষ্ট পাওয়ার সাথে সাথে এদের মুড খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়। একটু সামান্য কিছুতেই মুড পরিবর্তন ঘটে! এই খুব ভালো মুড এই খুব খারাপ ।
৩. নিজের ক্ষতি করা : অল্প কিছু হলেই হাত কাটা, হাত পোড়ানো, কিংবা ঘুমের ঔষধ খাওয়া এই রোগের অন্যতম লক্ষ্মণ। আত্ম হত্যা প্রবনাতা খুব বেশি এই রোগে। ভাঙাচোরা করার অভ্যাস ও থাকতে পারে।
অনেক ক্ষেত্রে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার মত ঘটনাও ঘটাতে পারে সামান্য কারণে!
৪. অবিশ্বাস : কাউকেই সহজে বিশ্বাস করতে না পারা আরো একটি কারণ। অল্পতেই মানুষ কে সন্দেহ হয় রোগীদের। সে নিজের যত কাছের মানুষ ই হোক না কেন সন্দেহ প্রবনতা দেখা যায়। এই অবিশ্বাস আসে ইন সিকিউরিটি থেকে। তারা নিজে অনেক ইনসিকিউরড ফিল হয়।
৫. রেগে গেলে নিজের উপর কোন কন্ট্রোল না থাকা :
সামান্য কারণে রেগে যাবে, আর রেগে গেলে নিজের উপর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না ব্যক্তির । কি করবে নিজেও জানবে না। তবে এই রাগ খুব বেশি স্থায়ী হয় না।
কিছুক্ষণ পরেই নিজের ভুল বুঝতে পারবে, নিজের কাছেই খারাপ লাগবে। কিন্তু তার রাগের কারণে করা কাজ এর ফল ভোগ করতেই হবে!
৬. একা একা কথা বলা: একা একা মানে এমন না যেন মনে মনে কথা বলা, এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি শব্দ করে করে একা একা কথা বলে, হাটতে, হাটতে বা তার আশেপাশে কেউ না থাকলে।
৭. নিজের বিষয়ে অস্পষ্ট ধারণা : অল্পতেই নিজেকে নিজের কাছে খুব ভালো মানুষ মনে হয় আবার অল্পতেই নিজেকে খুব খারাপ মানুষ মনে হয়ে হীনমন্যতায় ভোগা। সামান্য ব্যাপারে নিজেকে ঘৃণা করতে শুরু করা।
৮.সম্পর্ক স্থায়ী না হওয়া : এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির কোনো সম্পর্ক ই দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না, সেটা বন্ধুত্ত্বের হোক বা অন্য কিছু, অল্পদিনেই নষ্ট হয় সম্পর্ক।
তবে কাউকে যদি ভালোবাসে একবার তার ভালো খারাপ দিক তার একটুও চোখে পারবে না। সে তার যত ক্ষতিই করুক তার জন্য যে কোনো কিছু করতে প্রস্তুত। তাদের প্রেম খুব বেশি গভীর হয়৷ অন্ধভাবে বিশ্বাস করতে শুরু করতে শুরু করে। তার ফলে সহজেই বিশ্বাস ঘাতকতার স্বীকার হয়।
৯. একাকিত্ত্বের ভয় পাওয়া: একা থাকাতে ভয় পাওয়া বলতে এমন না যে ভূতে ভয় পাওয়া। একা একা থাকতে কষ্ট হয়৷ সব সময় একটা একা একা অনুভূতি লাগে। হাজার মানুষের মাঝে বসেও নিজেকে ব্লাক হোলের মত মনে হয়।
১০. তরল্যতার অভাব : সহজে কোনো জিনিস মেনে নিতে না পারা বা সহ্য করতে না পারা৷ তাদের কাছে কোনো জিনিস হয় ঠিক নয়তো ভুল৷ এর মাঝে তারা কিছু কল্পনাও করতে পারে না। নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে তাদের ভিষণ রকম কষ্ট হয়৷ কোনো পরিবেশ মন মত না হলে সেখানে টিকে থাকা তাদের কাছে দুঃস্বপ্ন এর মত।
১১. সহজে মিশতে না পারা : সহজে মিশতে পারে না মানুষের সাথে৷ এটাও বড় লক্ষ্যণ।
১২. সিদ্ধান্ত গ্রহণ এ সমস্যা : এর আরো বড় লক্ষ্মণ হল হুটহাট না ভেবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ তার জন্য নিত্যদিনের ব্যাপার ।
কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে ভাবার অভ্যাস তাদের কখনো নেই। আর হ্যা এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তি কাউকে ভয় পায় না। নিজের বাবা মার প্রতি যে ভয় বা সংকোচ বোধ থাকা তা তাদের প্রায় থাকে না বল্লেই চলে।
এবার এই রোগ হবার কারণ!
এই রোগ ২ টি বিশেষ কারণে!
১. জেনিটিক্যাল কারণ : নিজের বাবা, মা কিংবা নিজের ব্লাডে রিলেশন আছে এমন মানুষের এই রোগ থাকলে এই রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে৷
২. খারাপ ছোট বেলা : এই রোগের এটি সবচেয়ে বড় কারণ। ছোট বেলায় যদি বাবা মায়ের মধ্যে অনেক বেশি ঝগড়া হওয়া, পারিবারিক অশান্তি বা হোম ভায়োলেন্স হওয়া৷
ছোট বেলা থেকে এমন পরিবেশ থাকলে এই রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভবনা থাকে খুব বেশি পরিমাণে৷
আর এই লক্ষ্যণ গুলো প্রকাশ পায় টিন এজ এ এসে।
এই রোগ থেকে মুক্তির উপায় কি!
কথা টা শুনতে খারাপ লাগলেও এর থেকে একেবারে মুক্তির উপায় নেই। তবে আপনি একে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন!
তবে এর আগে কিছু বিষয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে!
১. এই পৃথিবী খুব কঠিন ছিল, আছে, থাকবে, তা সে আমরা যত মানবতার বানী শুনাই না কেন। আর কেউ আপনাকে কোথাও স্বাগতম জানাতে বসে থাকবে না। যদি না আপনার দ্বারা নিজের কোনো স্বার্থ পূর্ণ হয়!
২. পৃথিবীতে আপনার সবচেয়ে আপনজন কাছের মানুষ আপনি নিজেই । সবাই নিজের স্বার্থ দেখবে দিন শেষে তা সে আপনি তার যত কাছের মানুষ ই হোন না কেন! আপনি যদি নিজে নিজেকে সাহায্য না করেন তবে হাজার ডক্টর এসেও কাজ হবে না।
এই দুটি পয়েন্ট সব জায়গায় সত্ত্য তবে ( মা-বাবা) ব্যতীত। বাবা মা সন্তানের জন্য সৃষ্টিকর্তার উপহার স্বরূপ।
এবার আসা যাক কি কি করতে হবে এরকম অবস্থা নিয়ন্ত্রণে!
১. নিয়মিত খাওয়া দাওয়া করতে হবে:এ সময় প্রধান সমস্যা হয়ে দাড়ায় যে রোগী ডিপ্রেশন এ থাকে তাই খেতে চায় না বা পারে না। কিন্তু বিষয় এমন যে খায় না বলেই তার ডিপ্রেশন থেকে বের হতে পারে না।
একা একা না খেয়ে পরিবার এএ সাথে কিংবা বাসায় না থাকলে বন্ধুদের সাথে খেতে যাবেন।
যা কিছু হয়ে যাক না কেন খাবার সবার আগে।
২. প্রোডাক্টিভ কাজ করুন : এখান থেকে বের হবার জন্য সবচেয়ে দরকারি একটা বিষয় হল নিজেকে ব্যস্ত রাখা।
যে কাজ করতে ভালো লাগে সে কাজ করা। যেমন : লেখালিখি, কবিতা আবৃতি, বই পড়া, গেইমিং, প্রোগ্রামিং, ডিজাইনিং বা ক্রাফটিং।
৩. সম্পর্কের মূল্য বোঝা : কোন সম্পর্কের মূল্য কেমন সেটা বুঝতে হবে, সে ক্ষেত্রে যত প্রিয় বন্ধু কিংবা প্রেমিকা হোক না কেন সবার আগে আপনি নিজে তার পর নিজের পরিবার তারপর পুরো পৃথিবী।
৪. কিছু বিষয় থেকে দূরে থাকুন: ব্লেড, ঘুমের ঔষধ, পয়জন এসব নিজের কাছে রাখবেন না। প্রেসক্রাইব করা ঔষধ থাকবে ডক্টর দেখালে তার মধ্যে অন্যতম ঘুমের ঔষধ। এই ঔষধ নিজের কাছে রাখবেন না।
৫. মানুষের গুরুত্ব বোঝা : যার যত টুকু গুরুত্ব তত টুকু গুরুত্ব দেয়া। সবার আগে বাবা মা তারপর পরিবার তার পর সারা দুনিয়া। যিনি আপনাকে ১০ মাস নিজের মধ্যে ধারণ করলেন তার গুরুত্ব সবার আগে বাকি দুনিয়া পরে আসুক। যিনি নিজের রক্তকে পানি করে আপনার মুখে খাবার তুলে দেন তার চেয়ে কেউ গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না আপনার কাছে সেটা বুঝুন। প্রয়োজন এর অতিরিক্ত মূল্য দিলেই মানুষ আপনাকে মূল্যহীন মনে করবে।
৬. অযথা তর্কে না জড়ানো : প্রয়োজন ছাড়া তর্কে জড়ানো মানুষের অভ্যাস। যার সাথে তর্কে জড়িয়ে লাভ নেই সেখানে তর্কে জড়িয়ে নিজের মুডের ১২ টা বাজানোর কোনো দরকার নেই। আর হ্যাঁ তর্কে জেতা টা বুদ্ধিমান এর কাজ না।
৭. নিজেকে সময় দেয় : একা একা থাকা যদিও খুব বাজে এরকম মানুষের জন্য তবুও নিজের জন্য দিনে ৩০ মিনিট হলেও রাখা। এসময় অন্য কারো কথা না ভেবে নিজেকে প্রকৃতির একজন হিসাবে ভাবা যেমন বাতাস, আলো, মাটি, পানি এরকম ভাবে৷
আর তখন আপনার কাছে কোনো ডিভাইস থাকবে না যেমন ফোন, কম্পিউটার এসব।
৮. ডিপ্রেশন এ পড়ে গেলে গান শোনা থেকে একেবারে বিরত থাকা। গান খুব ই বাজে প্রভাব ফেলে আপনি ডিপ্রেশনে থাকলে।
৯. জটিল সম্পর্ক থেকে দূরে থাকা : মানে আপনি একজন কে পছন্দ করেন সে আবার যদি অন্য কাউকে পছন্দ করে। তার কাছ থেকে ১০০ হাত দূরে থাকা। তাকে ডিরেক্ট ব্লক, ফোন থেকে না আপনার জীবন থেকে।
১০. নিজের ব্যাপারে জাজমেন্টাল না হওয়া : নিজেকে খারাপ লাগা ভালো লাগা সেটা সম্পর্কে ভাবা কমিয়ে দিন।
১১. রেগে গেলে কখনো আর্গুমেন্ট এ না জড়ানো : রেগে গেলে সেখান থেকে চুপ চাপ কেটে পড়ুন, চুপচাপ অন্য জায়গায় বসে থাকুন৷ রাগ কমলে আলোচনা করুন।
১২. নিজের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এ নিজে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে নিজের মা- বাবার সিদ্ধান্ত কে গুরুত্ব দিন। একটা কথা কি আপনার কাছে খারাপ লাগলেও আপনার জন্য আপনার বাবা মা এর চেয়ে কেউ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না৷ বিশেষ করে “মা” যত অশিক্ষিত হন না কেন মা যা বলবে তাই আপনার জন্য সব চেয়ে ভালো।
১৩. নিজের ডেইলি রুটিন ঠিক রাখা : ডক্টর এর কাছে গেলে তিনি ঔষধ দেবেন সেসব সেবন করলেন আর কোনো নিয়ম মানলে হবে না, নিয়মিত সব কিছু করতে হবে। নিয়ম করে খাওয়া আর ঘুম খুব দরকার ।
যা কিছু হয়ে যাক নিজের রুটিন ঠিক রাখুন। আর ডক্টর এর দেয়া ঘুমের ঔষধ এর অভ্যাস করে ফেলবেন না ধীরে ধীরে কমিয়ে দিন।
১৪. রাত জাগা কমান আর সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করে তার উপসনা করুন। সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস যদিও আপনার নিজের ব্যাপার তবুও একজন বুদ্ধিমান নাস্তিক এর চেয়ে একজন বোকা ধর্ম ভীরু লোকের মনে বেশি শান্তি থাকে এটা মনে রাখবেন (এটা আমি আমার পরিচিত মানুষের কাছে জেনেছি, তাদের নিজের মুখে)
যাদের খুব একা একা লাগে তাদের জন্য
আজ তুমি তোমার সাথে আছো!
এটাই তো যথেষ্ট! জীবনে অল্প হলেও তো আনন্দের মুহূর্ত আছে! বাকি সব না হয় বাদ দিয়েই দাও!
জীবন কখনো নীম পাতার মত তেতো,
বা কখনো রসোগোল্লার মত মিষ্টি।
শুধু এই সময় টাকে সামলে নাও, একটু কষ্ট করে এগিয়ে যাও।
এটাই যথেষ্ট!
যদি কিছুই ভালো না লাগে,
খুব একা একা লাগে, তবে কারো সাথে কথা বলো।
যদি কেউ না থাকে , তবে নিজের ডায়েরী তে লেখ আর ছিড়ে ফেলে দাও!
অথবা ব্লগ লেখো, যেকোনো জায়গায় পোস্ট করো,
নিজের নাম বলো না, শুধু নিজের মনের কথা গুলো বলো! That matter the most.
যদি একবার মন থেকে বের হয়ে যায় না?
তবে তোমার যত দুঃখ যত কষ্ট যত যন্ত্রণা রয়েছে সব অর্ধেক হয়ে যাবে! আর কি চাই বলো।
তবে সব সময় মনে রাখবে, জীবনের একটি অর্থ আছে, তবে সেটা মোটেই ব্যর্থতা নয়।
©AbhiIDT