মহামারী কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে অচল গোটা পৃথিবীর অর্থব্যবস্হা। দীর্ঘদিন ধরে লকডাউনের কবলে পৃথিবীর অর্ধেকও বেশি মানুষ। বাদ যায়নি প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ। দীর্ঘদিনের সরকারি সাধারণ ছুটির কারণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে অর্থনীতির প্রতিটি খাতে।

ফলে, বাংলাদেশের ৫০ তম বাজেটটি হতে যাচ্ছে সরকারের জন্য একটি চ্যালেন্জিং বাজেট। বাজেট নিয়ে কি ভাবছেন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সচেতন তারুণ প্রজন্ম? তাদের ভাবনায় ফুটে উঠেছে –

(১) এবারের বাজেট চ্যালেন্জিং হবে সরকারের জন্য।

নিঃসন্দেহে এবারের বাজেট বাংলাদেশ তথা পৃথিবীর যেকোনো দেশের সরকারের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ। স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের দৈন্যদশা এবার ব্যাপকভাবে ফুটে উঠেছে। এই খাতগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে সমন্বিত বাজেট প্রনয়ন করতে হবে।

করোনাকালে অর্থনীতির যে সংকোচন তৈরি হয়েছে তা ভারসাম্য পূর্ণ অবস্থায় নিতে সরকারকে স্বল্প কিংবা মধ্য মেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। এক্ষেত্রে দ্বিবার্ষিক বা তৃবার্ষিক প্রণিধান যোগ্য।

এবার আয় হ্রাস পাওয়ায় সঞ্চয় কমে যাবে ব্যপক হারে। ফলে সঞ্চয় থেকে আসা বিনিয়োগ হ্রাস পাবে। এই ক্ষতি থেকে উত্তরণে আয় বাড়াতে সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতি জোর দিতে হবে।

ব্যক্তি পর্যায়ে আয় কমে যাওয়া এবং ভোগ ব্যয় হ্রাস পাওয়ায় এবার রাজস্ব আদায় কম হবে। বিচ্যুতি কমিয়ে আনতে সরকারকে দৃঢ় হস্তে কর ফাঁকি দেওয়া ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানগুলোকে করের আওতায় আনতে হবে।

করোনার ফলে খাদ্য সংকটের বিষয়টি বারবার উঠে আসছে। কৃষি খাতে উৎপাদন বাড়াতে গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই। সরকারের আর্থিক প্রনোদনা সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষকসহ সকল পর্যায়ে কৃষি সংশ্লিষ্ট মানুষদের কাছে পৌঁছাতে হবে।

সর্বোপরি, সকল ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং যথাযথ সমন্বয় এর কোনো বিকল্প নেই।”

আমিনুল ইসলাম মহিম।
মাস্টার্স শেষ পর্ব, অর্থনীতি বিভাগ।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

(২) বাস্তব ও জনকল্যাণমুখী বাজেট চাইঃ-

“নতুন অর্থবছরের বাজেট খুব শিগগিরই ঘোষণা করা হবে। এবারের বাজেটটি একেবারে গতানুগতিক ধারার বাজেট থেকে ভিন্ন ধারার বাজেট হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। ।
সোমবার (৪ মে) অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আগামী ১১ জনু জাতীয় সংসদে আসন্ন ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী।

আসন্ন বাজেটের সাম্ভব্য আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা।

নতুন এই বাজেটে তিনটি বিষয় সামনে নিয়ে আসতে হবে এবং গুরুত্ব দিতে হবে। প্রথমত, করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে, এটাকে মোকাবেলা করার জন্য প্ল্যান থাকতে হবে। বিশ্বমন্দার প্রভাব নিয়ে ভাবতে হবে।

আর তৃতীয়টি হচ্ছে, দরিদ্র মানুষের আর্থিক অবস্থাটা মাথায় রাখতে হবে। যেহেতু সমতাভিত্তিক উন্নয়ন হয়নি, কাজেই প্রান্তিক ও দরিদ্র মানুষকে বাজেটে গুরুত্ব দিতে হবে।

একটি জরিপে দেখলাম, দেশের প্রায় ছয় কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। এই তিনটি খাতে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সমতাভিত্তিক উন্নয়ন খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।

এখন সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দিতে হবে স্বাস্থ্য খাতে। পরিবহন খাতে যেমন জরুরিভাবে গুরুত্ব দিতে হবে, স্বাস্থ্য খাতে কিন্তু বরাদ্দটা বেশি করা দরকার। সাধারণ কিছু চিকিৎসাসহ অন্যান্য রোগের জন্য স্বাস্থ্যব্যবস্থাটা সর্বজনীন করতে হবে। অন্য সব খাতের তুলনায় এই খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। তা না হলে আমরা ভালো করতে পারব না। এই খাতকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। কারিগরি ও ব্যাবহারিক শিক্ষায় প্রাধান্য দিতে হবে।

বাইরে আমাদের জনশক্তি পাঠাতে হলে কারিগরি ও ব্যাবহারিক শিক্ষার বিকল্প নেই। দেশে ও বাইরে কর্মসংস্থানের জন্য বাজেটে শিক্ষার নানা দিক নিয়ে ভাবতে হবে। আর সার্বিকভাবে কর্মসংস্থান তৈরিতে জোর দিতে হবে।

কারণ আমাদের শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। ছোট ও মাঝারি শিল্পকে উৎসাহিত করতে হবে। যুবকদের জন্য অর্থায়ন করতে হবে। তাদের কাজে লাগাতে হবে।

বাইরের দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলকভাবে এগিয়ে যেতে হলে এই খাতগুলোতে বরাদ্দ দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

সামাজিক সুরক্ষার জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে। অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক, দিনমজুর—এদের কোনো সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সোশ্যাল প্রটেকশন নেই। এটা চালু করতে সময় লাগবে। পৃথিবীর নানা দেশে এসব আছে।

এখানেও ধীরে ধীরে সোশ্যাল সিকিউরিটি এবং ইনস্যুরেন্স চালু করা যায় কি না তা নিয়ে ভাবতে হবে।

কৃষি খাত নিয়ে ভাবতে হবে গুরুত্বসহকারে। শস্য, মৎস্য ইত্যাদি খাতে জোর দিতে হবে। ভর্তুকি দিতে হবে। কৃষি আমাদের সবচেয়ে বেশি খাদ্য নিরাপত্তা দেয়। জিডিপির উন্নয়নে হয়তো এর ভূমিকা কম। আরেকটি হচ্ছে, কৃষির উৎপাদনের সঙ্গে এর বাজারজাত করার প্রতি জোর দিতে হবে। এই খাত খুব সমস্যায় থাকে।

কৃষকরা খাদ্য উৎপাদন করে কিন্তু বাজারজাত করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে। বাজারজাত সমস্যার কারণে দালালরা এসে কম দামে পণ্য নিয়ে যায়। ফলে কৃষকরা ন্যায্য দাম পায় না।

বর্তমান পরিস্হিতি বিবেচনায় রেখে বাস্তব ও জনকল্যাণমুখী বাজেট প্রকাশ আজ দেশের জনগনের দাবি।”

দিলরুবা জাহান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ,৩য় বর্ষ।

(৩) করোনা পরিস্থিতিতে প্রণয়ন করতে হবে যুগোপযোগী বাজেট।

“করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে হুমকির মুখে পড়েছে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা। এই সংকটকালীন সময়ের মধ্যেই ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য নতুন বাজেট প্রণয়ন করা হবে। অন্য সময়ের তুলনায় এবারের বাজেট ভিন্নধর্মী ও চ্যালেঞ্জিং হবে বলে আমি মনে করি। করোনার প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত স্বাস্থ্য খাত, শিক্ষা খাত, অর্থনীতি, কৃষি খাতগুলো বেশি প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি। পাশাপাশি বেকার তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি এবং উদ্যোক্তাদের জন্যও পর্যাপ্ত বরাদ্ধ আসন্ন বাজেটে রাখা প্রয়োজন বলে মনে করি।

করোনার পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত খাত এবং ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় দক্ষ জনবল প্রস্তুতের জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা উচিৎ বলে মনে করি। সর্বোপরি, এবারের বাজেট মুজিবশতবর্ষে এক নতুন মাইলফলক হবে বলে আমি আশা করি।”

আব্দুল কবীর ফারহান, বাংলাদেশ অ্যান্ড লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ বিভাগের ৩ য় বর্ষের শিক্ষার্থী।

NSTU

(৪) আয়-ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য রেখে প্রণয়ন করতে হবে আগামীর বাজেট

“বিশ্বের প্রতিটি দেশেই সেই দেশের সম্ভাব্য আয় ব্যয়ের হিসাব থাকে। বাজেট হচ্ছে কোন দেশের উক্ত আয় ব্যয়ের হিসাব। সরকারকে দেশ চালানোর সাথে সাথে সরকারের হয়ে যারা কাজ করে তাদের বেতন।দিতে হয়। এছাড়াও নাগরিক পরিকল্পনার জন্য সরকারকে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হয়। যার ফলে অর্থ ব্যায় হয়। একটি অর্থবছরে কোথায় কত ব্যায় হবে সেই পরিকল্পনার নামই বাজেট।

একটা রাষ্ট্র আয়ের আগে ব্যায়ের হিসাব করে। আয় ব্যয়ের হিসাবের ওপর ভিত্তি করে দুই ধরনের বাজেট হয়। অসম এবং সুষম বাজেট। পরিকল্পনাবিদ দের মতে বাংলাদেশের মতন দেখে অসম বাজেট থাকা উচিত।

এতে অর্থনীতিতে উদ্দীপনা বাড়ে। আয় এবং ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য আসে।

সময়ের প্রেক্ষাপটে বাজেট একটি অর্থবছরকে ঘিরে আবর্তিত হলেও বাজেট অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎকে একসঙ্গে ধারণ করে অতীতের মূল্যায়ন, বর্তমানের অবস্থান এবং ভবিষ্যতের ভাবনাকে তুলে ধরে

প্রাক-বাজেট আলোচনা শুধু বাজেট মৌসুমে সীমাবদ্ধ না রেখে সারা বছরে তা পরিব্যাপ্ত হওয়া উচিত। অর্থবছরের প্রতিটি দিনই গুরুত্বপূর্ণ। বাজেটে এ জনমত প্রতিফলিত হওয়ার কথা। সেই জনমত বাজেট পেশের প্রাক্কালে না শুনে সময়মতো তথ্যযুক্তি সহকারে সংগৃহীত, পর্যালোচিত হওয়া উচিত। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামত বা জনমত সৃষ্টি করে বাজেটের বিধি-বিধান, প্রবিধান, ভর্তুকি, কর, ভ্যাট ও শুল্ক ব্যবস্থাপনায় সংস্কার আনা উচিত।”

Hashibur Rahman Rocky
Dept: Fabric Engineering
Campus : Shahid Abdur Rab Serniabat Textile Engineering college , l।

(৫)আমার ভাবনায় এবারের বাজেট ২০২০-২০২১

“ইতিমধ্যেই আমরা জানি আগামী ১১ জুন ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট পেশ করা হবে। এই বাজেট শুধুমাত্র শিক্ষার্থী হিসেবে নয় একজন নাগরিক হিসেবে আশা করি এটি দেশের অর্থনীতিকে সবল রাখতে এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।

আমরা বর্তমানে এমন একটি পরিস্থিতিতে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যা কেবল আমরাই নই পুরো বিশ্বের সকল দেশেই কমবেশি একই পরিস্থিতির সম্মুখীন। যদি আমরা বৈশ্বিক মন্দার কথা বিবেচনা করি ( যেহেতু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ইতিমধ্যেই একটি মহামন্দার আভাস দিয়েছে) ।

তাহলে আমাদের অবশ্যই ধরে নিতে হবে বাংলাদেশের যেসকল নাগরিক দেশের বাইরে বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন তাদের অধিকাংশই চাকুরীচ্যুত হয়ে দেশে ফিরে আসবেন। এমতাবস্থায় আমাদের দেশের কর্মসংস্হানের সুযোগ বাড়াতে হবে।

ক্ষুদ্র বা মাঝারি বিশেষ করে নতুন উদ্যোক্তা যারা আছেন তাদের আর্থিক ক্ষতি দিক বিবেচনা করতে হবে এবং বিভিন্ন পলিসির আওতায় তাদের নতুন করে ঋণের ব্যবস্হা করতে হবে এবং পাশাপাশি ভিন্ন ভিন্ন প্রজেক্ট এ বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্হান বাড়াতে হবে।

স্বাস্থ্যখাতে নজর বাড়াতে হবে সরকারকে। করোনা পরিস্থিতিতে নাজুক অবস্থা দেখা যাচ্ছে স্বাস্থ্যখাতে। কিন্তু জিডিপি অনুপাতে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে কম। সেজন্য বাড়াতে হবে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ।

শিক্ষাখাতেও বরাদ্দ বাড়াতে হবে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্হা জন্ম দিচ্ছে প্রতিবছর লাখো উচ্চ শিক্ষিত গ্রাজুয়েট। কিন্তু চাকরির সুযোগ তৈরি করতে পারছে না।

কাজেই শিক্ষা ব্যবস্হাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিতে হবে এ বাজেট থেকেই।

সরকারি খাতে দুর্নীতি ঠেকাতে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করতে হবে। এজন্য স্বজনপ্রীতি কঠোর ভাবে প্রতিহত করতে হবে। সরকারি আয়- ব্যয় হিসাব যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।

সামরিকখাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের সামরিক শক্তি বিগত ১২ বছরে অনেক উন্নতি করলেও
এখানো বিশ্বের তুলনায় পিছিয়ে আছি আমরা। সামরিক শক্তিধর হতে পারলেই প্রতিবেশী দেশগুলোর অগ্নিচক্ষু রোধ করতে পারবো আমরা। সেজন্য এ বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি রইল।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। গবেষণায় ব্যবহৃত উপাদানগুলো যেন বাংলাদেশই উৎপন্ন করা যায় যে ব্যবস্হা করতে হবে।

এছাড়াও আমরা জানি, আমাদের ব্যাংকগুলো বর্তমানে তারল্য সংকটে আছে। তাই তারল্য সংকট বিবেচনা সংকট বিবেচনায় রেখে এবং মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রেখেই আমাদের নীতিনির্ধারকেরা নতুন অর্থ যোগানের পরিকল্পনা করবেন। ”

মোঃ ফাহাদ হোসেন হৃদয়
অর্থনীতি বিভাগের ১ ম বর্ষ।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

(৬) বাস্তবধর্মী বাজেট চাই

“বিশ্বে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও বিস্তৃতির বাংলাদেশ সহ সবদেশেই অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট ও চাহিদা বদলেছে। সরকার স্থবির অর্থনীতি সচলের জন্য প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। যদিও ব্যাংক বন্ধ থাকার কারনে খাতভিত্তিক এ প্যাকেজ বিতরণ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

এরমধ্যে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবের সময়ও ঘনিয়ে এসেছে। আশা করি, বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হবে স্বাস্থ্য-খাতকে।কখনোই বাজেটে ৬ শতাংশের বেশি এ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয় নি, যা জিডিপির হিসাবে ১ শতাংশেরও কম। আগামি বাজেটে তা বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করতে হবে যা পরবর্তীতে ক্রমান্বয়ে বাড়বে।

এরপর গুরুত্বের দাবি রাখে সামাজিক নিরাপত্তা খাত। গত এক দশকে ১০ শতাংশের বেশি বরাদ্দ পেয়ে এসেছে, যা প্রশংশীয়। এ বাজেটেও তা ধরে রাখতে হবে। কৃষি খাতে সাম্প্রতিক বাজেট গুলোতে(২০১২-১৩ থেকে ২০১৮-১৯) ভাল বরাদ্দ রাখলেও তা শতকরা হিসাবে কমে এসেছে(১১.৩ থেকে ৫.৭ শতাংশে নেমে এসেছে)।

করোনাকালে তা ১০-১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। শিক্ষা ও গবেষণা খাতে দীর্ঘদিন জিডিপির ২ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছিল, বাস্তবিক বিবেচনায় তা দ্বিগুন করার দাবি আরো জোরদার করা হল।”

শাহ রিজুয়ান ফাহিম।
অর্থনীতি বিভাগের ২ য় বর্ষ।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

(৭) আমার ভাবনায় করোনাকালীন বাজেট

“করোনা মহামারির এসময় বাজেট হতে সময় উপযোগি ও কার্যকর। অর্থনীতি একটি দেশের চালিকাশক্তি। প্রতিবারের মতো এবারের বাজেটটি একই ধারার আশা করা যায় না। কারন করোনা মহামারি আমাদের অর্থনীতিতে ধস নামিয়ে দিয়েছে। পরিবর্তন আসতে হবে কয়েকটি ক্ষেত্রে।

করোনা আমাদের দেশের স্বাস্থ খাতের বেহাল দশাল দশাকে প্রতিয়মান করেছে। এখাতে প্রতিবারের মতো বাজেট ৫-৬ শতাংশ রাখলে চলবে না। করোনা সাহিত্য দেখিয়েছে একজন ভালো ডাক্তার ও গবেষনা কতটুকু দরকার।তাই এই খাতে উল্লেখযোগ্য হারে বাজেটের পরিমান বাড়ানো দরকার বলে মনে করি। এছাড়াও তরুনদের কর্মসংস্থান,উদ্যেগক্তাদের এগিয়ে নেয়ার জন্য বাজেটের পরিমান বাড়াতে হবে। কেননা এক্ষেত্রে বাজেট পরিমান নেই বললে চলে।

কৃষি ব্যবস্থায় বাজেটের পরিমান বাড়ানো হলেও পরিমান দিন দিন কমে যাচ্ছে। এই দিকে বাজেট প্রায় ১৫-১৬ শতাংশ করতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জন্য বড় ও ক্ষুদ্র ব্যাবসায়িদের জন্য বাজেট রাখা চাই।

শিক্ষা খাতে এবার বাজেট বাড়াতে হবেই,কেননা এখাতে বাজেটের পরিমান কম থাকে। তবে এবারের হিসাবটা ভিন্ন।জিডিপির প্রায় ৪ শতাংশ করলে ভালে হয়।।এবার দুর্যেোগ প্রতিরক্ষার জন্য ১ লক্ষ কোটি টাকা দেওয়া হলে ও,এর বেশির ভাগ ছিলে ঋণ।তাই এই খাতে বাজেটের পরিমান রাখতে হবে গতবারগুলোর তুলনায় বেশি যাতে যেকোনো সময় দুর্যোগ হলে আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে কম হয়।”

মোঃ ইসমাইল হোসেন।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

(৮) চ্যালেন্জিং বাজেট প্রণয়নে করণীয়ঃ

“করোনাভাইরাসের আক্রমণ, এর মরণ থাবা কবে শেষ হবে, এখন পর্যন্ত আমরা জানি না। হয়ত শিগগির ভ্যাকসিন আবিষ্কার হবে। হবার পরও এ ধরনের করোনাভাইরাস আবার ফিরে আসবে। এবং তার জন্য মানব জাতিকে এখন থেকেই চিন্তা, চেতনা ও ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে।

এই করোনাভাইরাস মোকাবেলায় পৃথিবীর শীর্ষ অর্থনীতি যেমন হিমশিম খাচ্ছে, তেমনি আমরা, আমাদের মত উন্নয়নশীল অর্থনীতি ভেঙে পড়ছে। তবে, আমাদের এখানে এমন কিছু দেখলাম যা ‘স্বাস্থ্য’ সুরক্ষার দৃষ্টিতে বা ‘অর্থনীতি’র দৃষ্টিতে কোনোভাবে যৌক্তিক মনে হয় না।

‘লক ডাউন’ করলাম। তবে, সে ভাবে নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিলাম না। ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের চিন্তা না করে খুলে দিলাম পোশাক খাত। যার অবস্থান করোনাভাইরাস আক্রান্ত রেড জোনে। অথচ আমাদের জিডিপিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের অবদান দ্বিগুণেরও বেশি। এবং খাতের সাথে জড়িত শ্রমিকের সংখ্যাও বেশি।

যাই হোক, সামনে এগোতে হবে। পরাভব মানলে তো চলবে না। মানুষের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। এই নয়া করোনা-অর্থনীতির আলোকে প্রণীত হতে হবে জাতীয় বাজেট। অনুমান করতে হবে –

(১) করোনার ভাইরাসে দেশের ও বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির যে বিপর্যস্ত অবস্থা তা থেকে উত্তরণ ঘটতে আগামি ৩ থেকে ৫ বছর লেগে যাবে। তারপরও হয়ত অর্থনীতি আগের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে না। স্থিত হবে এক নয়া ভারসাম্যে।

(২) ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটকে সে প্রেক্ষিতে সার্বিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক পুনর্গঠন ও টেকসই বিনির্মাণের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে ধরতে হবে।

(৩) এ বছর স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বাড়ছে। আগামী অর্থবছর এবং সামনের বছরগুলোতে তা অব্যাহত থাকবে। লক্ষণীয় ২০০১-০২ অর্থবছর থেকে জিডিপির প্রায় ১ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ হয়ে আসলেও গত ৫/৬ বছর এ খাতের বাজেট বরাদ্দ কমেছে।

মোট কথা, আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর সময় এটা। একই সাথে শিক্ষা ব্যবস্থাকে।

অন্যান্য কিছু বিষয়ে আমাদের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে খেয়াল দিতে হবে, হতে হবে যত্নশীল ও নির্মোহ :

(ক) আমাদের চাষযোগ্য কৃষির জমি কমছে। এই কমার হার দশমিক ১ শতাংশ থেকে বেড়ে দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। খাদ্য-নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে চাষযোগ্য কৃষির জমি রক্ষা জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার সামিল। সাথে সাথে কৃষি জমির উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। বেশ কয়েক বছর আগে গঠিত ‘কৃষি গবেষণা ফান্ড’-কে অধিকতর কার্যকর করে তুলতে হবে।

(খ) বিজ্ঞান নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে রাজস্ব বাজেটের আওতায় ‘শিক্ষা গবেষণা তহবিল’ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল । বেশ কয়েক বছর আগে। উদ্দেশ্য ছিল – ভৌত বিজ্ঞান ও মেডিকেল সায়েন্সের উপর আমাদের দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপযুক্ত গবেষক গড়ে তোলা। করোনাভাইরাস আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে গেলো এটা কতটা জরুরি ছিল। তখন পারা যায়নি। তবে, আবারও এটা গঠনে নব-উদ্যোমে এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।

(গ) ডেটার বা উপাত্তের যথার্থতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে। ১৯৭১-৭২ থেকে এ পর্যন্ত জিডিপির ডেটাই বিবিএসের কাছে নেই। অথচ বর্তমানে প্রায় সব দেশেই জিডিপির ত্রৈমাসিক প্রাক্কলন করা হয়।

আমাদের প্রতি বছরের শ্রমিকের ডেটা নেই। এই অবস্থার পরিবর্তন আবশ্যক। তাত্ত্বিক অর্থনীতিতে একটা কথা আছে- জনগণকে বেশিদিন ধোকা দেওয়া যায় না।

(ঘ) এক সময় অর্থ বিভাগ থেকে দেশের সকল ভিক্ষুক, সকল প্রতিবন্ধি ও সামাজিক সুরক্ষা-বেষ্টনির সুবিধভোগীদের তালিকা প্রণয়নের এবং এই তালিকাকে জাতীয় পরিচয়পত্রের সংযুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এই তালিকাগুলো হয়ে থাকলে হয়ে থাকলে এই করোনাকালে তাদের কাছে যে কোনো সাহায্য পৌঁছানো অনেক সহজতর হত। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে এই তালিকাগুলো প্রণয়ন সহজতর হবে।

বর্তমানে থানা জরিপ পাঁচ বছর অন্তর হচ্ছে। দেশের শ্রম জরিপ প্রতি মাসে, খানা জরিপ প্রতি বছরে করা সম্ভব। যথাযথ নীতি প্রণয়ন ও সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারে তা আশু প্রয়োজন। রাজস্ব বাজেটের কর্মসূচির আওতায় তা বাস্তবায়ন হতে পারে।

(ঙ) বাজেট বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ যত শক্তিশালী করা যাবে, ততই সম্পদের কার্যকরী ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে। পাবলিক মানি ও বাজেট ম্যানেজমেন্ট এক্টে যে ত্রৈমাসিক বাজেট বাস্তবায়ন প্রতিবেদন সংসদে উপস্থাপনের কথা বলা হয়েছে, সেই কার্যক্রমকে আরও জোরালো ও অর্থবহ করা আবশ্যক।

(চ) সরকার ও ব্যক্তি খাত- উভয়কে দায়বদ্ধ হতে হবে। লক ডাউন করা হলো। তবে, সেভাবে নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হলো না। ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের চিন্তা না করে খুলে দেওয়া হলো পোশাক খাত। যার অবস্থান করোনা আক্রান্ত রেড জোনে। অথচ বাংলাদেশের জিডিপিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের অবদান দ্বিগুণেরও বেশি। এবং খাতের সাথে জড়িত শ্রমিকের সংখ্যাও বেশি।

ইতোমধ্যে খোলা পোশাক শিল্পের মধ্যে তারাই উৎরে যাবেন, যারা তাদের শ্রমিকদের পরিবারের অংশ হিসেবে গণ্য করবেন। শ্রমিকদের জন্যে উপযুক্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। মুনাফার অংশীদার করবে শ্রমিকদের।

একদিকে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, এরই মাঝে আমরা একে একে বিভিন্ন খাত খুলে দিচ্ছি। হয়ত শিগগির ভ্যাকসিন আবিষ্কার হবে। হবার পরও করোনা ভাইরাসের অভিঘাত থেকে যাবে। হয়ত করোনাভাইরাস আবার ফিরে আসবে! অথবা এ ধরনের অন্য কোনও ভাইরাস।

যাই হোক সামনে এগোতে হবে। পরাভব মানলে ত চলবে না। মৃত্যু, ভয় আর শারীরিক ও মানসিক অবরোধ থেকে জেগে উঠতে হবে যৌথ প্রয়াসে। পারষ্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে, ভাগ-বিয়োগের মাধ্যমে সৃষ্টি করতে হবে যোগ-গুণের অর্থনীতি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন।

মানুষকে জয়ী হতে হবে। জয়ী হতেই হবে এই দেশের মানুষকে। আর এ জন্য প্রয়োজন সাহসী, আগ্রাসী ও মানবিক বাজেট। গতানুগতিক বাজেট নয়।”

Mehraz

Dept. of Civil Engineering

World University Of Bangladesh

 

সম্পাদনা: ফাহাদ হোসেন হৃদয়

নোবিপ্রবি

আপনার মতামত জানান আমাদের গ্রুপে