সিএ বা চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি সম্পূর্নই একটি প্রফেশনাল কোর্স। পড়াশোনার পাশাপাশি প্রয়োগিক অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি বা সিএ ডিগ্রি খুবই অন্যতম মাধ্যম।

তাছাড়া সিএ ডিগ্রি, হিসাববিদ্যায় আন্তর্জাতিক মানের পেশাগত ডিগ্রি গুলোর মধ্যেও অন্যতম। বাংলাদেশে হিসাবরক্ষণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পেশাগত এই ডিগ্রি দিয়ে থাকে – দ্যা ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) ।

পেশা হিসেবে সিএ:

বাংলাদেশে প্রচলিত কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ অনুযায়ী শুধুমাত্র আইসিএবির কোয়ালিফাইড সদস্যগণ কোম্পানির নিরীক্ষা কাজ সম্পন্ন করতে পারে। তাছাড়া সিএ সম্পন্ন করে যেকোন প্রতিষ্ঠানের হিসাব বিভাগ, নিরীক্ষা বিভাগ, ট্যাক্স, আর্থিক প্রশাসন, আর্থিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সর্বোচ্চ পদে কাজ করার সুবর্ণ সুযোগ নিমেষেই পাওয়া যায়।

চাকুরি করতে না চাইলে নিজেই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান খুলে পরামর্শ সেবা দিতে পারে স্বাধীন ভাবে। অন্যদিকে, বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে ১২,০০০ চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেট এর চাহিদা থাকলেও বর্তমানে বাংলাদেশে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেট আছে মাত্র ১,৯০০ জনের মতো।

এই থেকেই বুঝা যায়, পেশা হিসেবে বাংলাদেশে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি বা সিএ এর ভবিষ্যত সম্ভাবনা।

আইসিএবি এর এর সদস্য যেভাবে হওয়া যায়:

• Determination
• ৩ বছরের আর্টিকেলশীপ শেষ করা
• Advance Level পাস করা

চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেট হওয়ার জন্য প্রথমে যা করতে হবে:

সিএ পড়তে চাইলে প্রথমে যুক্ত হতে হবে আইসিএবি এর নিবন্ধিত কোনো প্রতিষ্ঠানের (ফার্ম) সঙ্গে। এই ফার্মগুলোর কাজ হলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক হিসাব যাচাই করা। হাতে-কলমে নিরীক্ষা কাজের সুযোগ এই ফার্মগুলো দিয়ে থাকে।

পরবর্তী সময়ে ফার্ম থেকে আইসিএবিতে শিক্ষার্থী হিসেবে নিবন্ধন করানো হয়। দেশে প্রায় ২০০টি সিএ ফার্ম রয়েছে। তার মধ্যে নিচে কয়েকটি renowned ফার্ম এর নাম দেয়া হলো:

রহমান রহমান হক (Independent Member of KPMG International)

একনাবিন্ (Independent Member of Baker Tilly International)
Hoda Vasi Chowdhury & Co ( (former Independent member and affiliated firm of Deloitte Touch Tohmatsu)

নুরুল ফারুক হাসান এন্ড কোং (Independent Member of Deloitte Touche Tohmatsu Limited)

এ. কাশেম এন্ড কোং ( Independent Member of EY Global Limited)

বিঃ দ্রঃ উল্লেখিত সিএ ফার্ম গুলো শুধুমাত্র উদাহরণ সরূপ দেয়া হলো। কোন কিছুর উপর ভিত্তি করে ranking করা হয়নি।

সিএ ফার্ম গুলো থেকে কি কোন আর্থিক সুবিধা পাওয়া যায়?

আইসিএবির নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি ফার্মই আর্টিকেলড্ স্টূডেন্টদের Monthly Allowance এবং Conveyance Allowance দিয়ে থাকে। আইসিএবির নিয়ম অনুযায়ী Monthly Allowance নিম্নরূপ:

প্রথম বছর………………………. ৪,০০০ টাকা ।
দ্বিতীয় বছর………………………. ৪,৫০০ টাকা ।
তৃতীয় বছর ……………………… ৫,০০০ টাকা ।

কি হতাশ হয়ে গেলেন? :
( এটা আইসিএবি এর নির্ধারিত সর্বনিম্ন Monthly Allowance পলিসি। আপনার সিজিপিএ অনুযায়ী Incremental Monthly Allowance পাবেন। সাধারণত সিজিপিএ এবং ফার্মের পলিসি এর উপর ভিত্তি করে Allowance ৬,৫০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

তাছাড়া প্রতিটি লেভেল পাস করার পরও ফার্ম তার পলিসি অনুযায়ী Monthly Allowance বাড়িয়ে থাকে। অন্যদিকে, ফার্ম থেকে ক্লায়েন্ট অফিসের দূরত্ব ও ফার্মের পলিসি অনুযায়ী সিএ ফার্ম গুলো Conveyance Allowance দিয়ে থাকে।

পরীক্ষা কখন দিতে পারবেন?

আইসিএবি বছরে দুই সেশনে পরীক্ষা নিয়ে থাকে। মে-জুন সেশন এবং নভেম্বর-ডিসেম্বর সেশন। রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার পর, কোচিং ক্লাস পেলেই আইসিএবি এর পরবর্তী পরীক্ষাতে বসতে পারবেন।

উদাহরণ স্বরূপ, ধরুন আপনি আইসিএবির রেজিস্ট্রশন পেলেন ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের ২০ তারিখ, সে ক্ষেত্রে আপনি ২০২০ সালের মে-জুন সেশন এর পরীক্ষায় বসতে পারবেন না। কারণ, মে-জুন সেশনে পরীক্ষায় বসার জন্য কোচিং ক্লাসেenroll করতে হয় মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে আর নভেম্বর-ডিসেম্বর সেশনে পরীক্ষায় বসার জন্য কোচিং ক্লাসে enroll করতে হয় সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে।

কোচিং ক্লাস কি বাধ্যতামূলক:

প্রতি লেভেল এর জন্য একবার কোচিং ক্লাস করা বাধ্যতামূলক। ধরুন, আপনি প্রথম বারের মতো প্রফেশনাল লেভেলে এর ৭ টি পেপার (কোর্স) পরীক্ষা দিতে চাচ্ছেন, সেক্ষেত্রে আপনাকে ৭ টি পেপারের জন্যই আইসিএবি তে কোচিং ক্লাস করতে হবে, পরীক্ষাতে বসার পূর্বে।

৭ টি পেপারের মধ্যে আপনি ৪ টি পেপার প্রথম বারে পাস করে ফেললেন। দ্বিতীয় বার আপনি বাকি ৩ টি পেপার পরীক্ষা দিতে চাচ্ছেন, সে ক্ষেত্রে আপনাকে ৩ টি পেপার এর জন্য পুণরায় কোচিং ক্লাস করার বাধ্যবাধকতা নেই, কিন্তু আপনি চাইলে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে পুণরায় কোচিং ক্লাস করতে পারেন।

অর্থাৎ, প্রতি লেভেলে প্রথমবার পরীক্ষা দেয়ার জন্য কোচিং ক্লাস করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও, পরবর্তীতে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য কোচিং ক্লাস করার কোন বাধ্যবাধকতা নেই।

সিএ এর লেভেল কয়টি এবং কি কি পেপার (কোর্স )পড়তে হয়?

সিএ তে তিনটি লেভেল:
১। সার্টিফিকেট লেভেল
২। প্রফেশনাল লেভেল
৩। এডভান্স লেভেল

সার্টিফিকেট লেভেলে ৭ টি পেপার (কোর্স) পড়তে হয়। সার্টিফিকেট লেভেল এর পেপার সমূহ:

১। Assurance
২। Accounting
৩। Business & Finance (BF)
৪। Management Information (MI)
৫। Business Law (BL)
৬। Principles of Taxation
৭। Information Technology (IT)

প্রফেশনাল লেভেলও ৭ টি পেপার (কোর্স) পড়তে হয়। প্রফেশনাল লেভেল এর ৭ টি পেপার সমূহ:

১। Audit & Assurance
২। Financial Accounting & Reporting (FAR)
৩। Business Strategy (BS)
৪। Financial Management (FM)
৫। Tax Planning & Compliance
৬। Corporate Law & Practice
৭। IT Governance

অ্যাডভান্স লেভেলে ৩ টি পেপার (কোর্স) পড়তে হয়। অ্যাডভান্স লেভেল এর পেপার সমূহ:

১।Corporate Reporting
২।Strategic Business Management (SBM)
৩।Case Study

সিএ পরীক্ষা দিতে কত টাকা লাগে?

রেজিস্ট্রেশন বাবদ খরচ সমূহ:
প্রথমে আপনাকে রেজিস্ট্রেশন ফি দিতে হবে। বর্তমানে ICAB নির্ধারিত রেজিস্ট্রেশন ফি ৩০,০০০ টাকা।

রেজিস্ট্রেশন ফি ৩০,০০০ টাকার মধ্যে নিম্ন লিখিত খরচ গুলো অন্তর্ভূক্ত:
১। Coaching Fee for certificate level…………………………………………………১৩,৫০০ টাকা
২। Study Materials for certificate level……………৪,৬০০ টাকা
৩। Students Association Fee………………………….৫০০ টাকা
৪। Registration Fee & Administrative Cost……..৮,৯00 টাকা
৫. Library Card…………………………………………..২,৫০০ টাকা
Total…………………………………………..….৩০,০০০ টাকা

সার্টিফিকেট লেভেল এর খরচ সমূহ

রেজিস্ট্রেশন ফি দেওয়ার পর, আপনাকে পরীক্ষার পূর্বে পরীক্ষার ফি জমা দিতে হবে। সার্টিফিকেট লেভেলে প্রতি কোর্স পরীক্ষার ফি – ১, ৫০০ টাকা (যে সব কোর্সের ১০০ নাম্বারের পরীক্ষা হয়), ১,২০০ টাকা (যে সব কোর্সের ৫০ নাম্বারের পরীক্ষা হয়) । তাহলে সা্টিফিকেট লেভেলে মোট পরীক্ষার ফি:

(১,৫০০ × ৫) – (Except Business Law and IT)..৭,৫০০ টাকা
(১০০০ ×২) – (For Business Law and I..……… ২,৪০০ টাকা
মোট………………………………………………৯,৯০০ টাকা

যেহেতু, রেজিস্ট্রেশন ফি এর সাথে সার্টফিকেট লেভেল এর কোচিং ফি অন্তর্ভূক্ত তাই সার্টিফিকেট লেভেল এ আর কোচিংফি দিতে হবে না।***

সার্টিফিকেট লেভেল পর্যন্ত মোট খরচ = (৩০,০০০ + ৯,৯০০) = ৩৯,৯০০ টাকা।
প্রফেশনাল লেভেল এর খরচ সমূহ:

কোচিং ফি…………………………..…………….১৫, ০০০ টাকা
পরীক্ষা ফি (৩,৩০০×৭)…………………………… ২৩,১০০ টাকা
মোট………………………………………………..৩৮,১০০ টাকা
অ্যাডভান্স লেভেল এর খরচ সমূহ:
কোচিং ফি…………………………………………৪৩,০০০ টাকা
পরীক্ষা ফি (৫,৫০০×২)……………………………১১,০০০ টাকা
কেইস স্টাডি……………………………………….১২,০০০ টাকা
মোট…………………………………………….৬৬,০০০ টাকা

রেজিস্ট্রেশন ফি সহ তিনটি লেভেলে মোট খরচ হবে (৩০,০০০+ ৯,৯০০+ ৩৮,১০০+ ৬৬,০০০) = ১,৪৪,০০০ টাকা।

আইসিএবি থেকে কি কোন বৃত্তির ব্যবস্থা আছে?
প্রতি বছর আইসিএবি সিএ শিক্ষার্থীদের পূর্বের একাডেমিক রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে সীমিত সংখ্যক বৃত্তি দিয়ে থাকে।

পরীক্ষার পূর্বে কি ফার্ম থেকে কোন ছুটি পাওয়া যায়?

আইসিএবি এর নিয়ম অনুযায়ী আর্টিকেলড্ স্টূডেন্ট পরীক্ষার পূর্বে ফার্ম থেকে পড়াশোনার জন্য ছুটি পেয়ে থাকে। আইসিএবি এর নিয়ম অনুযায়ী একজন আর্টিকেলড্ স্টূডেন্ট প্রতি বছরে ৬০ দিন করে ৩ বছরে ১৮০ দিন (Study Leave) ছুটি পেয়ে থাকে।

আাইসিএবি এর সদস্যদের কি অন্যান্য দেশের অ্যাকাউন্টেন্সি বডির সদস্য হওয়ার সুযোগ রয়েছে?

হ্যা। আইসিএবি এর সদস্যরা নির্দিষ্ট শর্ত পূরণের মাধ্যমে নিমোক্ত অ্যকাউন্টেন্সি বডির সদস্য পদ লাভ করতে পারে:

• The Institute of Chartered Accountants in England and Wales (ICAEW)
• The Institute of Certified Public Accountants in Ireland (CPA)
• Certified Practicing Accountant Australia (CPA Australia)

তাছাড়া, আইসিএবি এর সদস্যরা Chartered Accountants Worldwide (CAW) এর সাথে Connected এবং logo ব্যবহার করতে পারবেন।

ধন্যবাদ

©মুন্সি শরিয়তুল্লাহ জুয়েল