ইউনিভার্সিটি থেকে অফার লেটার পাওয়ার প্রসেসটা অনেক কঠিন। কিন্তু আসল প্যাঁড়া শুরু হয় ভিসা এপ্লিকেশানের সময়ে। যদিও ভিসা এপ্লিকেশানের প্রসেস মোটামুটি স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড, বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এইটা একটা ভীতিকর কাজ হয়ে দাঁড়ায়, মেইনলি যখন ক্যান্ডিডেটরা তাদের ফাইন্যান্স রিলেটেড ডকুমেন্ট দেখাইতে যায়। এছাড়া ফর্ম ফিলআপের বিষয় তো আছেই। সব মিলায়ে অনেকেই বুঝে না কোথা থেকে কি শুরু করবে আর কি কি দিবে!

ফ্রাস্টেশান না? 😛 আমারও লাগসিলো। সব ডকুমেন্ট মিলায়ে বান্ডিলের উচ্চতা তিন ইঞ্চি ছিল যখন সাবমিট করি! কিন্তু পরে একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখলাম যে পুরা কাজটা যদি চেকলিস্ট বানায়া একটা একটা করে করতাম অনেক কম সময় লাগতো।
এই লিখাটা স্টাডি পারমিট এপ্লিকেশান কিভাবে করতে হয় সেইটার উপরে। ট্রাই করবো মোটামুটি পুরাটা কভার করার।

স্টাডি পারমিট এপ্লিকেশান কিভাবে করে?

– দুইটা পদ্ধতি আছে!

প্রথমটা অনলাইনে করতে হয়। আইআরসিসি ওয়েবসাইটে গিয়ে জিসি-কি একাউন্ট খুলতে হয় (ভয় পাবার কারণ নাই, এইটা সিমপ্লল একটা একাউন্ট)। সেইখানে প্রাথমিক সার্ভেতে কিছু কোয়েশ্চেন আনসার করলে একটা ডকুমেন্ট চেকলিস্ট দেয়। সেই ডকুমেন্টগুলা কমপ্লিট করে আপলোড করে অনলাইনে পেমেন্ট করে এপ্লিকেশান সাবমিট করতে হয়। পরে বায়োমেট্রিক লেটার আসলে ভিএফএসে গিয়ে বায়োমেট্রিক করানো লাগে।

দ্বিতীয় পদ্ধতিটা মোটামুটি সোজা আর মেজরিটি এইভাবেই করে। সব কাগজপত্র আর ফরম ফিলআপ করে প্রিন্ট করে ভিএফএস এ যেতে হয় (গুলশানে)। সেইখানে পেমেন্ট করে সব কাগজ জমা দিতে হয়, ওইদিনই বায়োমেট্রিক করে এপ্লিকেশান সাবমিট করতে হয়।

কানাডিয়ান স্টাডি পারমিট/ভিসা এপ্লিকেশানে কোন ইন্টারভিউ নাই। পুরাটা প্রসেস হতে ইউজুয়ালি ২-৪ মাস লাগে। কার কারো ৬-১০ মাসও লাগে। ডিপেন্ড করে আপনার কাগজপত্র ঠিক কতখানি কমপ্লেক্স!

মোটাদাগে স্টাডি ভিসা এপ্লিকেশানের স্টেপগুলা এইরকমঃ

অফার লেটার > ফরম ফিলআপ > সাপোর্টিং কাগজপত্র তৈরি > এপ্লিকেশান জমা দেয়া > বায়োমেট্রিক > মেডিকেল কল > মেডিকেল এক্সাম > পাসপোর্ট কল > পাসপোর্ট সাবমিশান > ভিসা!

কানাডার স্টাডি পারমিট এপ্লিকেশানে কি কি কাগজ লাগে?

– মেইন এপ্লিকেশানের জন্যে তেমন কাগজপত্র লাগে না। সাকুল্যে দুইটা ফরম। ফ্যাকড়াটা বান্ধে যখন ফাইন্যান্স দেখাতে হয়। আর যেহেতু বাংলাদেশ থেকে এপ্লিকেশান যায়, সাথে এডিশনাল অনেক কিছু দিতে হয়। সাধারনত একটা স্টাডি পারমিটের জন্যে এইগুলা লাগেঃ

ইউনিভার্সিটি/কলেজ অফার লেটার
নোটারাইজড পাসপোর্ট কপি (নিজের প্লাস ইমিডিয়েট ফ্যামিলি মেম্বারদের)
নোটারাইজড এনআইডি (নিজের প্লাস ফ্যামিলি মেম্বারদের)
নোটারাইজড বার্থ সার্টিফিকেট

ওরিজিনাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
নোটারাইজড একাডেমিক সার্টিফিকেট+ট্রান্সক্রিপ্টের কপি
ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ এক্সামের কপি (যদি থাকে)
ম্যারিজ সার্টিফিকেট (যদি বিয়াইত্তা হন)
এমপ্লয়মেন্ট সার্টিফিকেট (যদি থাকে)

স্টাডি প্ল্যান

Application for a Study Permit Made Outside of Canada [IMM 1294]। এই ফর্মটা সবার শেষে ফিলআপ করতে হয়।
Family Information Form [IMM 5707] এইটা আগেভাগে ফিলয়াপ করে ফেলা বেটার।
Document Checklist: Study Permit [IMM 5483] এইটা সবার উপরে রাখতে হয়।
আপফ্রন্ট মেডিক্যাল সার্টিফিকেট (বিস্তারিত বলতেসি)

এভিডেন্স অফ ফাইন্যানশিয়াল সলভেন্সি (এইটা বিকট প্যাড়া! আলাদা সেকশানে ডিটেইলসে বলতেসি)
ইনকাম সার্টিফিকেট (যদি থাকে)
ট্যাক্স আইডি নাম্বার
মোটামুটি এইগুলা হলেই হয়। এজ সেইড, সবচাইতে বেশি পেইন যায় ফাইন্যানশিয়াল সলভেন্সি দেখাইতে। প্রচুর কাগজপত্র লাগে। বাকিগুলা মোর অর লেস ইজি।

বাইয়া, ফাইন্যান্স কেমনে কি দেখাবো?

– এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে একটা বিষয় ক্লিয়ার করিঃ দেয়ার ইজ নো ফিক্স টেম্পলেট। একেকজনের ক্ষেত্রে ফাইন্যান্সিয়াল সলভেন্সি একেকভাবে দেখাইতে হয়, কারণ প্রতিটা কেইস আলাদা। যেহেতু ৯০%+ কেইসে বাপ-মা এবং ক্ষেত্র বিশেষে ভাই-বোন স্পন্সর করে, আমি সেই হিসেবেই গাইড দিচ্ছি।

স্পন্সর একের অধিক হতে পারে। বেস্ট হয় নিজে আর ইমিডিয়েট ফ্যামিলি মেম্বার কেউ স্পন্সর করলে। সেকেন্ডব্লাড রিলেটিভ(দাদা,;মামা, চাচা ইত্যাদি) না দেখানোই বেটার ধরি,এক্স এপ্লাই করতেসে স্টাডি পারমিটের জনে। তার নিজের ব্যাংকে কিছু জমানো টাকা আছে প্লাস বাবামা স্পন্সর করবে। ফাইন্যান্সিয়াল সলভেন্সি কাগজপত্রে সাধারণত এইগুলা লাগবেঃ

ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট আর সারটিফিকেটঃ যে যে স্পন্সর করবে, সবার। ব্যাংকে গেলে একটা ছোট ফী এর বিনিময়ে তারা ছয়-বার মাসের ব্যাঙ্ক একাউন্ট স্টেটমেন্ট প্লাস যেই পরিমাণ টাকা আছে সেইটা ডলারের ইকুয়িভালেন্ট করে সার্টিফিকেট দিয়ে দিবে। এইটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ লিকুইড এসেট হিসবে।

ইনকাম সার্টিফিকেটঃ নিজে বা বাবা-মা যদি এমপ্লয়েড হয় তাহলে সবার ইনকাম সার্টিফিকেট লাগে। এইটা কোম্পানির লেটারহেড প্যাডে নিতে হয়। সার্টিফিকেটে ডেজিগনেশান, এমপ্লয়মেন্ট হিস্টরি, ওয়ার্ক আওয়ার, ডিউরেশান আর অ্যাানুয়াল ইনকাম থাকতে হয়।

ট্যাক্স আইডি আর ট্যাক্স সার্টিফিকেটঃ কানাডিয়ান ইমিগ্রেশান অথরিটি এইক্ষেত্রে খুবই টনটনে। ইনকাম যে লিগাল আর ফান্ড যে লিগাল এই বিষয়ে তারা কড়াকড়ি আরোপ করেছে রিসেন্টলি। সুতরাং নিজের এবং বাবামায়ের ট্যাক্স সার্টিফিকেট রাখা নেসেসারি। লাস্ট দুই বছরের হইলেই হয়।

সঞ্চয়পত্র বা এফডিআরঃ এই দুই ধরণের এসেট ইউজুয়ালি লিকুইড মানি হিসেবে ধরা হয়। রিলেটেড সার্টিফিকেট আর অন্যান্য কাগজ কালার কপি করে নোটারি পাবলিক করাতে হয় ভ্যালিডিটির জন্যে।

ফিক্সড অ্যাসেটঃ জমিজমা, গাড়ি, বাড়ি ইত্যাদি সিরিয়াসলি কনসিডার করা হয়, যদিও প্রায়োরিটি থাকে লিকুইড অ্যাসেটের উপরে। জমিজমার, বাড়ির যত দলিল আছে সবকিছু কপি প্লাস সিএ ফার্ম থেকে ভ্যালুয়েশান করায়ে সেই কাগজের নোটারি করাতে হয়। ফিক্সড অ্যাসেট যত বেশি দেখানো যায় বেটার কারণ এইটা স্ট্রং কান্ট্রি টাই দেখায়। মানে ভিসা অফিসার দেখে যে দেশে আপনার প্রপার্টির কারণে আপনার স্টাডি কমপ্লিট করে ফেওরত যাবার চান্স বেশি (যদিও তারাও জানে যে বেশিরভাগই ফেরত যায় না!)।

তবে যদি জমিজমা না থাকে তাও চিন্তা নাই। থাকলে ভাল, না থাকলে ইটস ওকে!

স্পন্সর এভিডেভিটঃ এই ডকুমেন্টটার গুরুত্ব বলে বোঝানোর মত না। বলতে গেলে এইটা হচ্ছে আপনার ফাইন্সান্সিয়াল সলভেন্সির সামারি। ভিসা অফিসার আপনার এই ডকুমেন্ট দেখবে আর যত সাপোর্টিং কাগজপত্র দিবেন, সব এইটার এগেইন্সটে মিলায়ে দেখবে। সুতরাং, এই ডকুমেন্টটা যত ডিটেইলসে দেয়া যায় এবং যত ইজি করে দেখানো যায়, তত ভালো।

ফর এক্সাম্পল, আপনার বাবার ব্যাংকে ১০ লাখ আছে, আপনার মায়ের নামে সঞ্চয়পত্র আছে ২ লাখের, আর আপনাদের জমাজমি আছে ১০ লাখের। আপনার বাবার ইয়ারলি ইনকাম ৬ লাখ, বাড়িভাড়া থেকে আসে আর ৩ লাখ।

এভিডেভিটের একটা টেবিল হবে রানিং ইনকামের, একটা হবে লিকুইড এসেটের, আরেকটা হবে জমিজমার। প্রত্যেকটা টেবলে প্রত্যেকটা এন্ট্রির বিপরীতে আপনি যেই কাগজ দেখাচ্ছেন, সেইটার ডিটেইলস দিয়ে দিতে হবে যেন ভিসা অফিসার ইজিলি মিলায়ে দেখতে পারে। আপনার কাজ হচ্ছে তার লাইফ ইজি করে দেয়া। সবশেষে ফাইনাল টেবিলে দেখাতে হয় আপনার স্টাডির জন্যে সবমিলায়ে কত টাকা এভেইলেবল আছে এবং কানাডিয়ান ডলারের হিসেবে তার ভ্যালু কত।

এরপরে এই এভিডেভিট স্টাম্প পেপারে প্রিন্ট করা হয় আর প্রতিটা স্পন্সর এই পেপারে সাইন করে। ফাইনালি, একজন নোটারি পাবলিক সাইন করে সীল মেরে এভিডেভিট ফাইনাল করে ফেলে। ঢাকায় গুলিস্থানে, নীলক্ষেতে, গুলশানে এইরকম নোটারি পাবলিক এভেইলেবল। নামকরা কোন একটা নোটারি পাবলিকে গেলে তারাই হেল্প করবে এভিডেভিট তৈরি করতে।

কিন্তু, আমার মতে নিজে প্রিপেয়ার করে নিয়ে গেলে বেটার। কমেন্টে আমি আমার সাবমিট করা টেমপ্লেটের লিংক দিয়ে দিবো। কেউ চাইলে নিজের মত করে মডিফাই করে নিতে পারেন।

কয়েকটা ইম্পরট্যান্ট জিনিসঃ

* যেইসব ডকুমেন্ট ইংলিশে না, সেইগুলা ট্রান্সলেট করা মাস্ট। অফিশিয়াল ট্রান্সলেটর দিয়ে ট্রান্সলেট করে নোটারি করতে হয়। এরপরে ট্রান্সলেটেড কপি ওপরে দিয়ে নিচে অরিজিনাল কাগজের কপি ক্লিপ দিয়ে দিতে হয়।

* জমির দলিলের সাথে যত প্রমাণ দেয়া যায় বেটার। জমির পর্চা, প্রপার্টি ট্যাক্স এইগুলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

* বী অনেস্ট উইথ ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট। কিছু বাটপার পরামর্শ দিবে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দুইনাম্বারি করতে। আইডিয়া খারাপ না, কিন্তু ধরা খাইলে ৫ বছরের জন্যে ব্যানড। বলে ৫, আসলে লাইফটাইম! ব্যাংক স্টেটমেন্ট থরোলি চেক করা হয়। ধরেন, আপনার বাবার একাউন্টে আপনি ৫০ লাখ দেখাইলেন। এর মধ্যে রিসেন্টলি ৩০ লাখ টাকা ঢুকসে।

আপনি এই টাকার সোর্স দেখাইতে চাইবেন, ট্রাস্ট মী। এই টাকা যদি জমি বেচা হয়, জমি বেচার দলিল অ্যাড করে এভিডেভিটে ওই দলিলের নাম্বার দিয়ে দিবেন যেন ভিসা অফিসার মিলায়ে দেখতে পারে। লোন নিয়ে বা সুদের বিনিময়ে অনেক এজেন্সি ব্যাংক একাউন্টে টাকা দেখায়। যদি সাসপিশাস লাগে, ডাইরেক্ট এপ্লিকেশান রিজেক্টেড! হাজারে একজন দুইজন বেঁচে যায় বলে তার মানেই এইটা ভাল প্র্যাকটিস না।

পার্ট টাইম কাজ করে টিউশান ফী কভার করিবো ধরণের জিনিস এভিডেভিটে না লিখাই মঙ্গলজনক!

 ঠিক কত টাকা দেখাইতে হয়?

– এইটা ডিপেন্ড করে আপনার প্রগ্রাম কস্ট কত আর যেই সিটিতে যাচ্ছেন, সেই সিটিতে লিভিং এক্সপেন্স কেমন। ইউজুয়ালি ইমিগ্রেশান অথরিটি চায় এইটা দেখতে যে আপনি প্রথম বছরের লিভিং আর টিউশান কভার করতে পারেন কিনা।

আমার কেইস ধরেন। মাউন্টট সেইন্ট ভিনসেন্টে আমার দুই বছরের প্রোগ্রাম ফী ছিল ১৬ হাজার ডলার (ওয়ান অফ দ্য মোস্ট এফোর্ডেবল ইন কানাডা)। প্রথম বছর ফল, উইন্টার, আর সামারে লাগতো ১০ হাজার। হ্যালিফ্যাক্সে ২০১৭ সালে মান্থলি একজন স্টুডেন্ট অফিশিয়ালি ১০০০ ডলারে কাভার করতে পারতো যেহেতু ইন্স্যুরেন্স ভার্সিটি দেয় আর বাসপাসও।

সো, আমার প্রথম বছরের কস্ট দেখাতে হতো ১০ হাজার প্লাস ১২ হাজার কানাডিয়ান ডলার, প্লাস ২ হাজার এয়ারফেয়ার, টোটাল ২৪ হাজার কানাডিয়ান ডলারের মত। বাংলা টাকায় প্রায় ১৬ লাখের মত। সো, সেইফ সাইডে থাকতে হলে আমার দেখাতে হইয়েছে ২০-২২ লাখের মত। ফারদার সেইফ সাইডে থাকতে হলে দুই বছরের ফান্ডিং দেখানো ভাল। সেইক্ষেত্রে, আমার দেখাতে হতো ৪০ লাখের মত। যদিও এত না দেখালেও হয়। প্রথম বছর ইজ এনাফ।

আবার কেউ যদি ফান্ডিং পায়, সেইক্ষেত্রে আরো ইজি হয়ে যায়। আপনি টিউশান + লিভিং কস্ট ক্যালকুলেট করবেন এবং সেইটা থেকে ফান্ডিং এর এমাউন্ট মাইনাস করবেন। ধরেন টিউশান আর লিভিং কস্ট ১ বছরের ৩০ হাজার ডলার। আপনার ফান্ডিং ২০ হাজার ডলার। তাইলে আপনি সেইফ সাইডে থাকতে দেখাবেন ১০ হাজার ডলার বা প্রায় ৬-৭ লাখ টাকা।

ফুল ফান্ডিং এর ক্ষেত্রে টেকনিক্যালি দেশে সলভেন্সি না দেখাইলেও চলে। কিন্তু দেখানো বেটার। ইউ নেভার নো!

সেয়িং দ্যাট, যাদের ফাইন্যান্সিয়াল প্রব্লেম আছে, তারদের উচিত ফান্ডেড মাস্টার্সের জন্যে ট্রাই করা। এটলিস্ট এমন প্রোগ্রাম চুজ করা যার টিউশান ফী তুলনামূলকভাবে কম। মাউন্ট সেইন্ট ভিনসেন্ট, মেমোরিয়াল, ইউনিভার্সিটি ক্যালগারি ইত্যাদি ভার্সিটির গ্রাজুয়েট টিউশান অনেক কম। একটু রিসার্চ করলেই চলে।

স্টাডি প্ল্যান কি জিনিস?

– ভার্সিটি এপ্লিকেশানের সময় এসওপি লিখসিলেন না? স্টাডি প্ল্যান হচ্ছে সেইটার ছোট ভার্শন। আপনি এক পাতায় আপনার ঠিকুজি, কই যাচ্ছেন, কেন যাচ্ছেন পড়তে, পড়ে কি কি শিখে উল্টায়ে ফেলবেন, আপনার পাস্ট এডুকেশান/এমপ্লয়মেন্ট এবং ফিউচার গোলের সাথে যেই প্রগ্রামে যাচ্ছেন তার সম্পর্ক কি, এবং মোস্ট ইম্পরট্যান্টলি, আপনি এই এডুকেশান শেষ করে কি করবেন এইসব কিছু লিখতে হবে ভিসা অফিসার বরাবর! খুবই সিম্পল ভাষায় লিখতে হয়। ওয়ান পেইজ ম্যাক্স!

কাগজপত্র কিভাবে জমা দিবো?

– অনলাইনে করতে পারবে ভালো। সবার পক্ষে সম্ভব না অনলাইনে করার। তাছাড়া এখন যেহেতু কোভিড নরমাল হয়ে ভিএফএস খোলা আছে, সেহেতু ডিরেক্ট ওইখানে জমা দেয়া যায়। কাগজপত্রের ইউজুয়ালি সিরিয়াল নাই তেমন, কিন্তু সিরিয়ালি প্রথমে ফিলয়াপ করা ডকুমেন্ট চেকলিস্ট, প্রিন্ট করে সাইন করা মেইন এপ্লিকেশান ফর্ম [IMM 1294 & IMM 5707], স্টাডি প্ল্যান, পাসপোর্ট, এডুকেশান আর অন্যান্য পার্সোনাল কাগজ, ফাইনান্সিয়াল স্পন্সরশিপ এভিডেভিট, এবং সবশেষে ফাইন্যান্সিয়াল কাগজপত্র। ভিএফএস এ অনেকসময় গুছায়ে দেয় ওরা।

সব কাগজপত্র ফাইল করে ভিএফএস এ এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে যেতে হয়। সেইখানে কাগজপত্র নিয়ে ওরা ভিসা ফী টাকায় নেয়, নিয়ে রিসিট দেয়। ইউজুয়ালি সেইদিনেই বায়োমেট্রিক করা হয় ভিএফএসেই। হাতে সময় নিয়ে যাওয়া ভাল। ঘন্টা দুই-আড়াই লেগে যায়।

মেডিক্যালের কাহিনী কী?

– স্টাডি পারমিট সহ যেকোন ভিসা এপ্লিকেশানের জন্যে মেডিক্যাল এক্সাম ম্যান্ডাটরি। সাধারনতঃ ভিসার কাগজপত্র জমা দিলে ইমেইলে মেডিক্যাল কল লেটার আসে। সেই লেটার নিয়ে বাংলাদেশে এপ্রোভড কোন ক্লিনিকে গিয়ে মেডিক্যাল এক্সামের জন্যে এপয়েন্টমেন্ট নেয়া লাগে। চেকআপ করে ক্লিনিকই রিপোর্ট ইমিগ্রেশান পোর্টালে আপলোড করে দেয়।

কিন্তু আমি প্রেফার করি আপফ্রন্ট মেডিকাল করতে। আপফ্রন্ট মেডিক্যাল করতে হয় এপ্লিকেশান জমা দেয়ার আগে। জাস্ট ক্লিনিকে গিয়ে বললেই হয় আপফ্রন্টের জন্যে আসছেন। ওরা এক্সাম নিয়ে আপনাকে একটা রিসিট দিয়ে দিবে। এপ্লিকেশানের কাগজপত্রের সাথে সেই মেডিকেল রিসিট জমা দিয়ে দিবেন। এতে করে একটা বিশাল সময় বেঁচে যায়।

ভিসা কিভাবে আসে?

– আপনার কাগজপত্র সব ঠিক থাকলে আর ভিসা এপ্ভরুভড হলে আপনার ইমেইলে একটা মেইল আসবে পাসপোর্ট রিকোয়েস্ট লেটার সহ। ইউজুয়ালি পাসপোরট রিকোয়েস্ট পাওয়ার সাথে শপিং শুরু করে দেয়া বেটার! যাই হোক, এই লেটার আর আপনার পাসপোর্ট নিয়ে ভিএফএস এ যাবেন, তারা সিকিওরলি পাসপোর্ট নিয়ে সিঙ্গাপুরে পাঠায়ে দিবে।

সেইখানে আপনার পাসপোর্ট প্রসেস করা হবে ৭-১০ দিনে। এরপরে ফিরতি মেইলে ভিএফএস এ আপনার পাসপোর্ট ফেরত দিবে। আপনি গিয়ে পাসপোর্ট পাবেন, আর পাসপোর্টে লাগানো থাকবে আপনার সাধের ভিসা! 😛 পাকে একটা লেটারও থাকবে। রিমেম্বার, খালি পাসপোর্টে ভিসা থাকলেই কানাডায় ঢুকতে পারবেন না। আপনার লাগবে স্টাডি পারমিট সেইটা ইস্যু করে বর্ডার এজেন্সি, এয়ারপোর্টে!

তো মোটামুটি এই হল স্টাডি ভিসা এপ্লিকেশানের প্রসেস। আমি এখনও বলব যে এইটা দেখতে বিচ্ছিরি ধরণের কমপ্লিকেটেড প্রসেস লাগলেও চেকলিস্ট বানায়ে কাজ করলে নিজে নিজে করা ইজি। আপনা হাত জগন্নাথ! আপনার কাজ হচ্ছে অফিসারকে কনভিন্স করা যে আপনি জেনুইন স্টুডেন্ট, আপনার এনাফ ব্যাকআপ আছে স্টাডি কমপ্লিট করার, এবং আপনি স্টাডি শেষে দেশে ফেরত এসে জাতির ওপরে অশেষ মেহেরবানী করবেন। এইটুকুই লাগে ভিসা পাইতে!

কিন্তু এরপরেও যদি কনফিডেন্স না আসে (যেইটা স্বাভাবিক), আমি সাজেস্ট করি আইআরসিসি এপ্রুভড কনসালট্যান্টদের দিয়ে এপ্লিকেশান প্রসেস করানো। আমার পরিচিত কিছু রেজিস্টার্ড কনসালটান্ট আছেন কানাডায়, চাইলে রেফার করে দিতে পারবো।

আরো ইনফরমেশান চাইলে বা প্রশ্ন থাকলে প্লীজ কমেন্টে জানান। ট্রাই করবো উত্তর দেয়ার। এছাড়া https://www.canada.ca/ তে গিয়েও ইনফরমেশান পাবেন।
বেস্ট অফ লাক! 🤞

Rakib Hussain
Studied Master of Arts (Communications) at Mount Saint Vincent University