ধরুন ৯ সপ্তাহর জন্য সুইজারল্যান্ডের জেনেভা তে CERN আপনাকে বিমান ভাড়া দিয়ে থাকা খাওয়া সহ নিয়ে গেলো। কেনো নিবে? কারন তো নিশ্চয়ই আছে।
CERN এর কথা শুনেছেন তো নিশ্চয়ই? ওইযে যেখানে পৃথিবির সবচেয়ে জটিলতম ইন্সট্রুমেন্ট দিয়ে পার্টিকেল ফিজিক্স এর গবেষনা চলে- LHC এর রুপকার, Higgs boson এর আবিস্কার যেখানে হল। পৃথিবির ব্রাইটেস্ট মাইন্ডগুলা যেখানে জোড়ো হয়েছে – যেখানে করিডর ধরে হাটলে ক্ষন পর পর সামনে নোবেল লরিয়েট ফিজিসিস্ট আর Fields মেডেলিস্ট ম্যাথমেটিশিয়ানদের দেখা মিলবে। এক কথায় ইউরোপের জন্য CERN এর স্ট্যাটাস ঠিক তেমনি, আমেরিকার জন্য নাসা যেমনি যদিও তাদের গবেষনার বিষয়বস্তর ধরন আলাদা।
এখন আসি কেন CERN আপনাকে নেবে?
CERN open lab summer student program আছে। প্রতি বছর ৯ সপ্তাহের জন্য জুলাই- অগাস্ট পর্যন্ত এই প্রোগ্রামটা হয়।
আচ্ছা, খুব বেশী এলিয়েন টাইপের ট্যালেন্ট হতে হবে আবেদনের জন্য? উহু, prodigy হবার দরকার নাই। নরমাল ভালো স্টুডেন্ট ও কিছু স্কিল থাকলেই এপ্লাই করতে পারবেন। এটা পৃথিবির সব দেশের জন্য উন্মুক্ত। আপনি যদি ব্যাচেলর ৪র্থ বর্ষ বা মাস্টার্স এ অধ্যয়নরত ফিজিক্স, কম্পিউটার সায়েন্স, ম্যাথমেটিক্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং এর স্টুডেন্ট হন তবেই আপনি এপ্লিকেশন করতে পারবেন। সরি, পিএইচডিতে অধ্যয়নরতদের এই প্রোগ্রাম এ সুযোগ নেই
এই নয় সপ্তাহের প্রোগ্রামে CERN এ বিভিন্ন টেকনিক্যাল টপিকের উপর ক্লাস ও ট্রেনিং করানো হয় যেমন Artificial intelligence, machine learning, cloud computing, cyber security, coding optimization, system hardware and architecture, particle physics এর ড্যাটা প্রসেসিং, particle physics এর বেসিকস ইত্যাদি এগুলা। সাথে তো CERN এর জায়ান্ট সব particle accelerator যেমন LHC, ATLAS, Linac এগুলা দেখার সুযোগ আছেই। আর সেখানে গেলে ওয়ার্ল্ডের বিভিন্ন দেশের ভার্রসিটির প্রফেসর যারা, CERN এ কাজ করতে আসে, মুখোমুখি সাক্ষাত এ যে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবেন সেইটা পরে পিএইচডির জন্য প্রফেসরদের মেইল করার সময় ও ইউটিলাইজ করতে পারবেন।
ব্যাচেলর ফাইনাল ইয়ার বা মাস্টার্স এ অধ্যয়নরত ফিজিক্স, কম্পিউটার সায়েন্স, ম্যাথমেটিক্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং এর স্টুডেন্টরা চোখ বুঝে এপ্লাই করে ফেলুন। বাকিরা পরিচিতদের জানাতে পারেন।
————————————————-
এপ্লিকেশন করাটাও খুব সহজ!
কি কি লাগবে? ভাবছেন অনেক কাগজ পত্র? উহু, তাও না।
১. আপনার সিভি। সিভিতে আপনার দক্ষতা যে ফিল্ডে যেমন coding , AI, database, ergodic theory, modulii space, conformal field theory ইত্যাদি সেগুলা ক্লিয়ারলি উল্লেখ করবেন।
২. শুধু ব্যাচেলর বা মাস্টার্স এর কারেন্ট Transcript লাগবে। no SSC/HSC
৩. Motivation letter যেখানে আপনি নিজেকে তুলে ধরবেন কেন CERN এ এই প্রোগ্রামে অংশ নিতে চান, নিজের মোটিভেশন, প্যাশন স্পেসিফিক উদাহরন দিয়ে পেশ করবেন। জেনেরিক কোন বাক্য দেবেন না যেমন আমি খুব ভালো কোডিং পারি। বরং উদাহরন দিয়ে বলবেন কি কি পারেন বা কি এপ বানাইছেন।
৪. আপনার ভার্সিটির ২ জন শিক্ষক এর কাছ থেকে রেফারেন্স লেটার।
ব্যাস এটুকুই! সব অনলাইনে আপলোড করতে হবে। কোন পেপার ওয়ার্ক্ এর ঝামেলা নাই
—————————————
গুরুত্বপুর্ন তারিখ জেনে রাখুন:
—————————————-
অনলাইনে আবেদনের শেষ সময়: ৩১ জানুয়ারি ২০১৯
রেজাল্ট: এপ্রিল ২০১৯ এর মাঝামাঝি
Openlab program: জুন- অগাস্ট ২০১৯ (৯ সপ্তাহর জন্য)
এসব তথ্য না জানার জন্য আমাদের দেশ থেকে আন্ডারগ্রাডরা এপ্লাই খুব কম করে। তারা জানবেই বা কোত্থেকে, তাদের জানানোর লোক যারা তারাই যদি বিভিন্ন রঙ এর দল নিয়ে ব্যস্ত থাকেন (বুঝে নেন)। ইন্ডিয়া থেকেই আন্ডারগ্রাডরা বেশি যাচ্ছে, আর তারা সত্যি ওয়ার্ল্ডের সব খানে জায়গা করে নিয়েছে। আমাদের দেশ থেকেও আন্ডারগ্রাডদের CERN এ যাওয়াটা অভ্যেস এ পরিনত হোক। এত কথা বললাম, আমি এপ্লাই কেন করিনা ভাবতেছেন? ভাগ্য খারাপ, এই প্রোগ্রাম ২০১৯ এ যখন হবে, আমি তখন পিএইচডির স্টূডেন্ট হয়ে যাবো। এই প্রোগ্রাম শুধুই ব্যাচেলর ফাইনাল ইয়ার ও মাস্টার্স এ অধ্যয়নরতদের জন্য। আমাদের দেশে যত মেধাবি আছে, আমি চাই তারাও যাক, এপ্লাই করুক। বের হয়ে আসুক আমাদের ভবিষ্যত Planck, Abel, Turing, Tesla রা।
DSE অনেক বড় প্লাটফর্ম। আশা করি নিজে এপ্লাই করবেন কিংবা পরিচিতদের জানাবেন। All the best.