পুরকৌশল (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং) পৃথিবীর প্রাচীনতম এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকৌশল শাখা, যা মূলত স্থাপনা ডিজাইন, নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের সাথে সম্পর্কিত। প্রায় ৪০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে প্রাচীন মিশরে এ প্রকৌশলবিদ্যার চর্চা শুরু হয় বলে ধারণা করা হয়।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ব্যাপ্তি এত বিশাল যে, এটি “মাদার অফ ইঞ্জিনিয়ারিং” এবং বাংলায় “পুরকৌশল” নামে পরিচিত, যা প্রকৌশলবিদ্যার অন্যতম শাখা হিসেবে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। এটি সারা পৃথিবীজুড়ে প্রকৌশলবিদ্যায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় থাকে এবং বিশেষভাবে সেইসব মানুষের জন্য যারা দেশ গড়ার স্বপ্নে বিভোর।
Civil Engineer-রাই মূলত একটি দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করে।
পুরকৌশলের চাহিদা প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান এবং ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে, কারণ এই শাখার কাজের ক্ষেত্র অত্যন্ত বিস্তৃত। রাস্তাঘাট, ব্রিজ, এয়ারপোর্ট, স্টেডিয়াম, এমনকি আধুনিক যুগের মেগাস্ট্রাকচারগুলোও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের মেধা এবং শ্রমের ফলস্বরূপ তৈরি হয়।
বাংলাদেশের একজন প্রথম সারির Civil Engineer শ্রদ্ধেয় ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। বাংলাদেশকে সর্বপ্রথম Computer and Technology এর সাথে পরিচিত করানো অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব তিনিই ।
পরবর্তী সময়ে পদ্মা সেতু নির্মান প্রকল্পের Technical Adviser হিসেবে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। প্রতিষ্ঠিত অনেক সিনিয়র কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার এবং শিক্ষাবিদ তার কাছেই একসময় শিক্ষানবিশ ছিলেন।
ড. এফ. আর. খান, যাকে “Einstein of Structural Engineering” বলা হয়, তার অবদানও অসামান্য। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু স্থাপনা, Sears Tower (বর্তমানে Willis Tower) এর ডিজাইন করেছিলেন, যা ১৯৭৩ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চতম স্থাপনা ছিল। তার এই অবদান সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ইতিহাসে এক স্মরণীয় অধ্যায় হয়ে থাকবে।
➡️এখন আশা যাক সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কী সেই প্রসঙ্গে,
Civil Engineering কে সহজভাবে বুঝাতে চাইলে বিভিন্ন স্থাপত্য নির্মাণকৌশল, বিভিন্ন স্থাপনা ডিজাইন বা নকশাকরণ, যেমনঃ বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ব্রিজ, বাঁধ, পরিখা, স্তম্ভ, ফ্লাইওভার, এয়ারপোর্ট, উঁচু টাওয়ার,সুয়ারেজ লাইনসহ সব ধরনের স্থাপনা, স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণ, বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান রক্ষণাবেক্ষণ এবং এ প্রাকৃতিক উপাদান নিয়ে গবেষণা, পরিবেশবিষয়ক গবেষণা, মাটির গুণাগুণ বিষয়ক গবেষণা, নগর পরিকল্পনা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি বিষয়ক সকল ধরনের গবেষণা, নদীশাসন ও নিয়ন্ত্রণ, সেচ ব্যবস্থাপনা, ভূমিকম্পের কারণ ও প্রতিরোধ, বর্জ্য নিষ্কাশন ও রিসাইক্লিং সিস্টেম ইত্যাদি বহুবিধ বিষয় আলোচনা করা হয়ে থাকে।
➡️ Civil Engineering কেন পড়বো? এবং Graduation পরবর্তী ক্ষেত্র গুলো কি কি?
পুরকৌশল বা Civil Engineering, প্রাচীন সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত সবসময়ই একটি জনপ্রিয় ও চাহিদাসম্পন্ন ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তবে, সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়টি পড়ানো হয় না, যার ফলে Civil Engineering এর Graduate Student সংখ্যা তুলনামূলকভাবে CSE বা EEE এর তুলনায় কম।
চাকরির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতাও সাধারণত কম থাকে, বিশেষত CSE বা EEE এর থেকে। বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রেক্ষাপটে Civil Engineering এর চাহিদা সবসময়ই সর্বোচ্চ, কারণ এ ধরনের দেশে পুনঃনির্মাণ ও অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণে Civil Engineers গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
বাংলাদেশে সরকারি চাকরির দিক থেকে Civil Engineering এ সবচেয়ে বেশি সুযোগ রয়েছে, বিশেষত বিসিএস ও অন্যান্য সরকারি নন-ক্যাডার পদে, যেখানে অন্য কোন Engineering Major এর তুলনায় Civil Engineers এর সংখ্যা অনেক বেশি।
যে কোন বিষয় নির্বাচন করার সময় তার কর্মক্ষেত্রগুলো মূল্যায়ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং সেই কারণে আজ আমরা Civil Engineering এর চাকরির সুযোগ নিয়ে আলোচনা করবো।
➡️সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান :
সরকারি চাকরি ক্ষেত্রে সিভিলের ধারের কাছেও নেই অন্যান্য Engineering Major। সিভিল এর বিভিন্ন চাকরির ক্ষেত্র গুলো হলো –
=> সড়ক ও জনপদ বিভাগ
=> গণপূর্ত বিভাগ
=> জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর
=> শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর
=> দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ও বিভিন্ন multinational NGO
=> পরিবেশ অধিদপ্তর
=> LGED – Local Government Engineering Department.
=> বাংলাদেশ রেলওয়ে
=> মৎস্য অধিদপ্তর
=> BWDB- Bangladesh Water Development Board
=> WASA -Water Supply and Sewerage Authority
=> BRTA- Bangladesh Road Transport Authority
=> BPDB-Bangladesh Power Development Board
=> PGCB- Power Grid Company of Bangladesh Limited
=> GTCL- Gas Transmission Company Limited
=> RAJUK- Rajdhani Unnayan Kartripakkha
=> RDA-Rural Development Academy
=> City Corporation
=> সকল পৌরসভা
=> BIWTA-Bangladesh Inland Water Transport Authority
=> REB-Bangladesh Rural Electrification Board
=> EGCB-Electricity Generation Company of Bangladesh
=> DPDC-Dhaka Power Distribution Company Ltd.
=> DESCO-Dhaka Electric Supply Company Limited
=> আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ – Bangladesh Bank (BB), অন্যান্য ব্যাংক সমূহ
=> বিভিন্ন বন্দর
=> Real estate company
=> নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ
=> সরকারি যেকোন প্রতিষ্ঠানে Atleast একজন Civil Engineer নিয়োগ দেয়া হয়।
👉Civil Engineering এ কী কী পড়ানো হয়?
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিভিন্ন শাখা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স হিসেবে Civil Engineering পড়ানো হয়। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর কিছু শাখাগুলো হলো –
1. Structural Engineering (স্থাপনার গঠন, ও এর শক্তিমত্তা এবং স্থায়িত্ব নিয়ে গবেষণা করে)
2. Transportation Engineering (যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন, পরিকল্পনা, ডিজাইন ও ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজ করে।)
3. Geotechnical Engineering (ভূমি বা মাটির গুনাগুণ নিয়ে গবেষণা করে)
4. Environmental Engineering (পরিবেশ সংরক্ষণ এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিয়ে কাজ করে।)
5.Water Resources Engineering (পানি সংরক্ষণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে।)
6. Urban Engineering (শহরের পরিকল্পনা ও ডিজাইন, যেখানে বসবাসকারীরা সুবিধা পাবে এবং পরিবেশে ক্ষতি হবে না।)
7. Architectural Engineering (স্থাপনার ডিজাইন এবং এস্থেটিকস নিয়ে কাজ করে)
আলোচনা সংক্ষিপ্ত করার সুবিধার্থে এখানে KUET Civil এর Course Curriculum এর link দিয়ে দেয়া হলো।
Syllabus:
https://www.kuet.ac.bd/dept/ce/academic/ugcurriculum
➡️কিভাবে বুঝবো সিভিল পড়তে ভাল লাগবে?
যদি বলবিদ্যা, ডিজাইন সম্পর্কিত কাজ, মাঠে কাজ করা বা প্রকৌশলী হিসেবে প্র্যাকটিক্যাল কাজের প্রতি আগ্রহ থাকে, তাহলে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পছন্দের তালিকায় রাখতে পারো।
অনেকেই বলে, “ভাইয়া, আমি ম্যাথে ভালো, অমুক সাবজেক্ট নিলাম কেমন হবে?” বা “ভাইয়া, ফিজিক্স ভালো লাগছে, এই সাবজেক্টে যাবো।” কিন্তু আসলে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে গেলে বায়োলজি বাদে অন্য সব বিষয়েই ভালো দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। তাছাড়া, প্রথম বর্ষ অধিকাংশ পড়াশোনাই ইন্টারমিডিয়েটের পড়ার সাথে মিলে যায়।
🏗️কেন KUET Civil one of the Best and Royal Department ?
➡️About Faculties:
বাংলাদেশে এমন খুব কম Engineering Department ই আছে যেখানে ১৫+ জন প্রফেসর রয়েছেন। অন্যদিকে KUET Civil Engineering Department এ ১৮ জন প্রফেসর, ২০ জন PhD Holder সহ ৪৫ জন Highly Qualified শিক্ষক রয়েছেন যারা খুবই দক্ষ এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল।
➡️নিজস্ব ডিপার্টমেন্টাল বিল্ডিং
কুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং Building ক্যাম্পাস এর সবচেয়ে বড় একক Departmental Building। এর ভিতরের Decorations-ও চমৎকার। কুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ক্লাসরুম (৩য় ও ৪র্থ বর্ষের স্টুডেন্টদের জন্য), সম্বলিত ৩ তলাবিশিষ্ট ডিপার্টমেন্টাল বিল্ডিং এবং একটি ৫ তলাবিশিষ্ট এক্সটেনশন বিল্ডিং।
➡️অত্যাধুনিক ল্যাব ফ্যাসিলিটিস :
কুয়েট সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের রয়েছে নিজস্ব অত্যধুনিক ল্যাব যেগুলার একটি তালিকা দেওয়া হল-
=> জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব
=> এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব
=> ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাবরেটরি
=> কম্পিউটার, কম্পুটেশন এ্যান্ড মডেলিং ল্যাব
=> কংক্রিট ল্যাব
=> সার্ভে ল্যাব
=> ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব
=> রিসার্চ ল্যাব (Newly added)
এছাড়াও রয়েছে একটি রেন্টাল লাইব্রেরি এবং রিসার্চ পারপোজের জন্য রয়েছে SCIPC ও CRTS এর মত প্ল্যাটফর্ম। কুয়েট সিভিলের শিক্ষার্থীদের জন্য আরো একটি ফিচার হল সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যাসোসিয়েশন (CESA) , এটি একটি নন পলিটিকিয়াল এবং নন প্রফিট অর্গানাইজেশন যেটা ডিপাটেন্ট অফ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং দ্বারা পরিচালিত।
➡️Alumni of KUET Civil :
ভার্সিটি বা সাবজেক্ট নির্বাচন করার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে দিকটি খেয়াল রাখা উচিত, তা হলো ঐ সাবজেক্ট বা ভার্সিটির এ্যালামনাই নেটওয়ার্ক কতটা শক্তিশালী। KUET Civil এর এ্যালামনাই নেটওয়ার্ক অত্যন্ত শক্তিশালী। কুয়েট সিভিল থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে দেশের রাজউক, ওয়াসা, পাউবো সহ নানা সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরে কর্মরত আছেন অসংখ্য এ্যালামনাই। এছাড়াও বিদেশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কোম্পানিতেও তারা কর্মরত রয়েছেন। তাছাড়া, বিভাগের সিনিয়র ভাইয়েরাও খুবই Helpful.
Alumni list of KUET Civil : https://portal.kuet.ac.bd/kuetaa/DraftAlumniDetails?id=CE
➡️Academic Facilities, Extra Curricular, Cultural Programs :
ভার্সিটিতে ৪ টা বছর কাটানোর জন্য পড়াশুনার পাশাপাশি রিফ্রেশমেন্টও দরকার। ভার্সিটি হিসেবে ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সাংস্কৃতিক দিক থেকে অন্যদের থেকে একটু এগিয়ে কুয়েট, এখানে Program চলতেই থাকবে, কিন্তু এছাড়াও সিভিল ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকেও আয়োজন করা হয় বিভিন্ন প্রোগ্রামের, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-
=> ICCESD ( যেখানে দেশে-বিদেশের অনেক Civil Engineer,Professor-রা Attend করেন )
=> ফ্রেশার্সদের জন্য আয়োজিত ডিপার্টমেন্টাল ক্যাম্পফায়ার
=> Civil Convivial ( Competition )
=> National Events (for example- Reinforce 1.0)
=> মোস্ট সিনিয়র ব্যাচ কর্তৃক আয়োজিত COW FEAST
=> ডিপার্টমেন্টাল স্ট্রিট পেইন্টিং যেটা এ্যাডমিশন পিরিয়ডে করা হয়
=> স্পোর্টস ফ্রিকদের জন্য সিভিল প্রিমিয়ার লীগ
=> ডিপার্টমেন্টাল ট্যুর (সুন্দরবন Normally)
=> যারা পড়াশুনার পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলার কাজ করতে ইচ্ছুক তাদের জন্যেও ট্রাস চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশন, সিভিল এল্যায়েন্সে লিখালিখির মত ইভেন্টের আয়োজন করা হয়।
শেষে বলতে চাই, KUET Civil একেবারে পুরো প্যাকেজ। যারা সিভিলের প্রতি প্যাশনেট এবং কুয়েটের সিভিল choose করতে চাও তারা হতাশ হবে না এটুকু নিশ্চিত। ‘KUET is a Land of Living and KUET Civil is a brand’ তাই যারা KUET Civil কে বেছে নিবে তাদের জানাই স্বাগতম। সিভিল সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য যেকোনো প্রশ্ন করতে পারেন।
Rewritten by,
Md Mehedi Hasan
Department of Civil Engineering, KUET
Batch 2k23
Written by
Nymum Rafe
Department of Civil Engineering, KUET
Batch 2k22
References :
1. https://en.m.wikipedia.org/wiki/Civil_engineering
2. https://www.kuet.ac.bd/dept/ce
3. https://en.m.wikipedia.org/wiki/Jamilur_Reza_Choudhury
4. https://en.m.wikipedia.org/wiki/Fazlur_Rahman_Khan
5. http://www.iccesd.com/