বিস্তারিত সিভিল লিখিত প্রস্তুতি ও প্রশ্ন এনালাইসিস/ভাইভা/ISSB

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং থেকেও সুযোগ রয়েছে আর্মি তে যোগদান করার।
চলুন দেখে নেওয়া যাক, কীভাবে সেনাবাহিনীতে সরাসরি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগদান করা যায় –

এইচ.এস.সি শেষ এর পর যে কোর্সের মাধ্যমে আপনি অফিসার হিসেবে কমিশন পাবেন, সেটি হচ্ছে BMA LONG COURSE।

আর স্নাতকের পর যে কোর্সটি করতে হবে তা হল BMA SPECIAL/SHORT COURSE। ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করার পরে বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে থেকে BMA SHORT COURSE এ যোগদান করার সুযোগ থাকে।

নাম শুনেই ধারণা করা যায়, প্রথম কোর্সটি দীর্ঘমেয়াদী এবং দ্বিতীয় কোর্সটি স্বল্পমেয়াদী। আবেদনের ক্ষেত্রে কিছু (যেমনঃ বয়স, বৈবাহিক অবস্থা, শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রভৃতি) ভিন্নতা ছাড়া দুই কোর্সে নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় একই।

যেহেতু আমরা শুধু সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে কনসার্ন তাই শুধুমাত্র সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট থেকে কিভাবে প্রিপারেশন নিবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত বলছি।

সাধারনত বছরে দুইবার সার্কুলার হয়ে থাকে,আবেদনের পর বি.এম.এ কোর্সে সুযোগ পেতে বেশ কয়েকটি ধাপ পার হতে হবে। দেখুন ধাপগুলোর বিস্তারিত প্রস্তুতি কিভাবে নিবেন।

১/লিখিত (সিভিল)
২/প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সাক্ষাৎকার
৩/ISSB

১/ সিভিল লিখিত পরীক্ষাঃ
Total Mark-100
Total Question -10 ( 10 marks)
Time-1 hour

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট এর ক্ষেত্রে ১০০ মার্কের লিখিত পরীক্ষা হয়। কোন নন-টেকনিক্যাল পার্ট থাকেনা, সম্পূর্ন সিভিল থেকেই ১০০ নাম্বার এর প্রশ্ন থাকে।

আগে অনেক রিটেন টাইপ প্রশ্ন করলেও, রিসেন্ট এক্সাম গুলোতে ম্যাথ বেশী থাকে আর কিছু রিটেন টাইপ কোশ্চেন থাকে। মোটামুটি ৮০/২০ রেশিও হতে পারে।

বুয়েট/MIST প্যাটার্ন এর প্রিপারেশন থাকলে আর বেশি কিছু দেখার দরকার হয়না, ওই প্রিপারেশন ই যথেষ্ট।

আগের কিছু কোশ্চেন এনালাইসিস করলে দেখা যায় মোটামুটি সব পার্ট থেকেই ১/২ টা প্রশ্ন থাকে তবে এক্ষেত্রে এগিয়ে রাখতে পারেন ম্যাটেরিয়ালস। ম্যাটেরিয়ালস থেকে স্টিল/আর.সি.সি একটা এস্টিমেট থাকে সিম্পল টাইপের

মার্ক ডিস্ট্রিবিউশন কম/বেশী এরকম থাকে….

Materials-15-20
Surveying-10 (অনেক সময় থাকেনা)
Geotech-10
Rcc/Structure -20
Water+Ocf+Fluid+Environment -15-20
Geotech-10
Transport -10

প্রিভিয়াস কোশ্চেনঃ
https://drive.google.com/file/d/1CthzT_F3QuYJ8skjwK3h4bVyoVF9RAAZ/

২/প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সাক্ষাৎকার

রিটেন পাশ করলে,প্রাথমিক কল-আপ লেটারে একটি নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট স্থানের কথা উল্লেখ থাকবে। আপনাকে সেই রিপোর্টিং টাইমে উপস্থিত থাকতে হবে। একই দিনে এই দুটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উচ্চতা, ওজনসহ প্রাথমিক কিছু বিষয় দেখা হয়।

আর সাক্ষাৎকারে নাম, ঠিকানা, বাবা-মা’র নাম ও পেশা, ভাই-বোনদের নাম ও পেশা, পরিবারের কেউ সামরিক বাহিনীতে আছেন কিনা, কেন সেনাবাহিনীতে আসতে চান ইত্যাদি প্রশ্ন সাধারণত করা হয়। এছাড়া কিছু জেনারেল নলেজ থেকে প্রশ্ন করবে, আর টেকনিক্যাল থেকে খুটিনাটি প্রশ্ন থাকে।

ইংরেজিতে প্রশ্ন করলে ইংরেজিতে উত্তর দেয়াটা ভালো। তাই ফ্লুয়েন্টলি ইংরেজি বলার অভ্যাস থাকাটা জরুরী। আর হ্যাঁ, অবশ্যই ফর্মাল পোশাকে যাবেন।

৩। ISSB

ISSB ধাপটি হলো সেনা অফিসার হিসেবে যোগ দেওয়ার সবচেয়ে কঠিন ধাপ। মনস্তাত্ত্বিক, বুদ্ধিমত্তা, ব্যক্তিত্ব, বিচারবোধ, উপস্থিত বুদ্ধি, পরিকল্পনা ক্ষমতা, নেতৃত্বের দক্ষতা, শারীরিক দক্ষতা ইত্যাদি দেখা হয় এ পরীক্ষায়।

সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রার্থী এখানেই বাদ পড়ে। ISSB সাধারণত চারদিন হয়ে থাকে। চলুন, দেখে নেওয়া যাক-এই চারদিন কী কী হয়ে থাকে –

প্রথম দিন
সাধারণভাবে সকাল সাড়ে ৭টার মধ্যে প্রার্থীকে কেন্দ্রে উপস্থিত হতে হয়। প্রথমেই বুদ্ধিমত্তা (I.Q) পরীক্ষা হয়। এ পরীক্ষার দুটি অংশ থাকে-ভাষাগত ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য। ভাষাগত (VERBAL) পরীক্ষায় ১০০টি প্রশ্নের জন্য ৩৫ মিনিট ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য (NON-VERBAL) পরীক্ষায় ৩৮টি প্রশ্নের জন্য ৩৫ মিনিট সময় দেওয়া হয়।

বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষার পর প্রার্থীকে পিকচার পারসেপশন অ্যান্ড ডেসক্রিপশন টেস্টে (পিপিডিটি) অংশ নিতে হয়। ছবি দেখে ইংরেজিতে একটি গল্প লিখতে হয় এবং এর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করতে হয় এ পরীক্ষায়। এ দুই পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে ফল ঘোষণা করা হয়। যারা উত্তীর্ণ হতে পারে না, তাদের বিদায় নিতে হয়।

টিকে যাওয়া প্রার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এখানে থাকে বাংলা ও ইংরেজি বাক্য রচনা, বাক্য সম্পূর্ণকরণ, ছবি দেখে গল্প লিখন, অসম্পূর্ণ গল্প সম্পূর্ণকরণ ও আত্মসমালোচনা।

এরপর প্রার্থীদের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বাংলা ও ইংরেজিতে রচনা লিখতে হয়। এর মাধ্যমে শেষ হয় প্রথম দিনের পরীক্ষা।

দ্বিতীয় দিন

এ দিন কোনো লিখিত পরীক্ষা নেই। প্রার্থীকে নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বাংলা ও ইংরেজিতে দলগত আলোচনা, বক্তৃতা, শারীরিক সামর্থ্যের পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এরপর একজন ডেপুটি প্রেসিডেন্টের কাছে দিতে হয় মৌখিক পরীক্ষা।

এই মৌখিক পরীক্ষা প্রার্থীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডেপুটি প্রেসিডেন্ট এই মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থীর সাহস, আত্মবিশ্বাস, তাৎক্ষণিক বুদ্ধি ইত্যাদি বিষয় পর্যবেক্ষণ করে থাকেন।

তৃতীয় দিন
এ দিন প্রার্থীকে প্ল্যানিং ও কমান্ড টেস্টে অংশ নিতে হয়। এ দুটি পরীক্ষায় প্রার্থীর নেতৃত্ব ও পরিকল্পনার দক্ষতা সম্পর্কে যাচাই করা হয়।

চতুর্থ দিন
চতুর্থ দিন ফল ঘোষণা করা হয়। সাধারণত দুপুর ১২টার পর নিজ নিজ গ্রুপের ডেপুটি প্রেসিডেন্ট ফল ঘোষণা করেন। যারা উত্তীর্ণ হয় তাদের গ্রিনকার্ড দেওয়া হয়। আর যারা উত্তীর্ণ হতে পারে না, তাদের দেওয়া হয় রেড কার্ড।