কেউ বিজ্ঞান এবং গণিতে খুব ভালো। তাকে বলা হলো তোমাকে এখন এইসব বিষয়ে এত জানার দরকার নাই। তাই গণিত ও বিজ্ঞান কম শিখিয়ে তার স্থলে জোর করে তার অপছন্দের কিছু বিষয় শেখানো হলো।

আর কেউ শিল্প, সাহিত্য, ভূগোল, নাট্যকলা, সংগীত ইত্যাদিতে ভালো। তাকে এইসব কম শিখিয়ে তাকে গণিত ও বিজ্ঞান একটু বেশি করে গেলানো হলো। অর্থাৎ সবাইকে ঘাড়ে ধরে এক বানানোর চেষ্টা করা হলো।

শুনতে ভালো শোনায় যে দশম শ্রেণী পর্যন্ত কোন বিভাগ থাকবে না। সবাই একই বিষয় নিয়ে একই বই পড়বে। এর ফলে আমরা গড় মানুষ তৈরী করব। গড় মানুষ দিয়ে দেশ খুব বেশি আগাতে পারবে না।

এমনি এমনি কি ইংরেজি মাধ্যম জনপ্রিয় হচ্ছে। যারা এখন বাংলা মাধ্যমের কারিকুলাম থেকে বিভাগ উঠিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে খোঁজ নিয়ে দেখুন তাদের ছেলেমেয়েরা বাংলা মাধ্যমে পড়ে না অথবা তাদের সন্তানরা স্কুলের গন্ডি ইতিমধ্যে পার হয়ে গেছে।

একটু আগে ও-লেভেলের সাবজেক্টগুলো দেখছিলাম। ওখানেও কোন বিভাগে বিভাজন নাই। কিন্তু যে যার ইচ্ছেমত বিষয় নির্বাচন করতে পারে।

যে ইতিমধ্যে জানে সে শুধু সংগীত ও নাট্যকলা তার প্রিয় সে ইচ্ছে করলে এই বিষয় সংক্রান্ত বিষয় এবং পছন্দমত কিছু আনুসাঙ্গিক বিষয় নিতে পারে।

অনেক ছাত্র আছে যারা অষ্টম শ্রেণীতে থাকা অবস্থাতেই বুঝে ফেলে তার প্রিয় বিষয় গণিত ও বিজ্ঞান। সে তখন ওভাবেই বিষয় নির্বাচন করতে পারে।

যে মনে করে সে এখনো নিশ্চিত না সে মানবিক বিভাগের বিষয়ের দিকে যাবে নাকি বিজ্ঞান বিভাগের দিকে যাবে নাকি ব্যবসা প্রশাসনে যাবে।

যারা এইরকম দোদুল্যমানতায় তারা ইচ্ছে করলে সব কিছুরই কম্বিনেশন নিতে পারে। ইচ্ছে করলে ন্যূনতম সাবজেক্টের বেশি বিষয়ও নিতে পারবে।

এটাকেই বলে ফ্রিডম। এই ফ্রিডম থাকলে বৈচিত্রতা আসে।

আজকের পত্রিকায় দেখলাম বিভাগ উঠিয়ে দিয়ে সবার জন্য অবশ্য পাঠ্য যেই বিষয়গুলো থাকবে সেগুলো হলো: ভাষা ও যোগাযোগ, গণিত ও যুক্তি, জীবন ও জীবিকা, সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব, পরিবেশ ও জলবায়ু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি।

বোঝাই যাচ্ছে প্রযুক্তি ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উপর বিশাল গুরুত্ব। বোঝাই যাচ্ছে গণিত ও বিজ্ঞানের উপর গুরুত্ব কমানো হলো। এমনিতেই পদার্থবিজ্ঞানে যেইসব ছাত্র পাচ্ছিলাম তারা গণিতে দুর্বল।

আর পরিবর্তিত সিলেবাস পড়ে কিরকম ছাত্র পাব বিষয়টা ভাবলেই গা শিহরে উঠে।

আমি আগেও বলেছি এবং আবারও বলছি নবম দশম শ্রেণী থেকে বিভাগ উঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত একটি যুগান্তকারী ভালো সিদ্ধান্ত কিন্তু আমরা যা করছি তা ভালোর চেয়ে বরং আমাদের নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করবে।

এটি ভালো সিদ্ধান্ত তখনই হবে যখন বর্তমানে বিভিন্ন বিভাগে যেই যেই বিষয় আছে তার সাথে আরো অনেক বিষয় যোগ করে সকল বিষয়কে অপশনাল করলে। ধরাবাধা দশটি বিষয় সবাইকে পড়ালে ফল খুব খারাপ হবে।

I repeat ফল খুব খারাপ হবে।

এমনিতেই লেখাপড়ার মান নিম্নগামী। এমনিতেই সৃজনশীলতার নামে শিক্ষার বারোটা বাজিয়েছে। আবার বিভাগ উঠিয়ে দিয়ে নির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয় সবাইকে পড়ালে কফিনে শেষ পেরেকটা সফলতার সাথে ঢুকানো হবে।

– কামরুল হাসান মামুন
অধ্যাপক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাবি

পড়ুনঃ যা থাকছে নতুন শিক্ষাক্রমে